আজও ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে।। //১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা,


আশা করি সবাই ভালো আছেন।সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের সাথে হারিয়ে যাওয়া দিনের কিছু মুহূর্ত ভাগ করে নিলাম।


গত দুদিন ধরে আমার ভীষণ জ্বর। হয়তো ওয়েদার চেঞ্জের জন্যই হচ্ছে, ভীষণ ঠান্ডা লেগে গেছে। যাই হোক শরীর যখন আছে খারাপ তো হবেই। যেহেতু সামনে পুজো তাই তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েছি কালকেই ।ওষুধ দিয়েছে আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো । যেহেতু আমি টোটালি রেস্ট নিচ্ছি তাই শুয়েই আছি সারাটা দিন । আজ একটা কথা ভাবছিলাম ,আজ বিশ্বকর্মা পুজো।বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী হচ্ছে একটি হিন্দুধর্মীয় উৎসব।শরৎ ঋতুর প্রথম আনন্দই শুরু হয় বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে। এই সময়ে পুজো পুজো রব প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের অন্তরালে। এদিনই যেন পুজোর সূচনা পর্ব।হিন্দু স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পূজা করা হয়। তাঁকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি দেবতা কৃষ্ণের রাজধানী পবিত্র দ্বারকা শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, পাণ্ডবদের মায়া সভা,রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা।কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেন। তাঁকে স্বর্গীয় ছুতারও বলা হয়।


WhatsApp Image 2022-09-18 at 1.33.09 AM.jpeg

ছোটবেলা আর আজকের এই বিশ্বকর্মা পূজার মধ্যে কত পার্থক্য। স্কুল কলেজ এই দিন ছুটি থাকতো। আর ছোটোবেলাতে আমাদের স্কুলে এই সময় হাফ ইয়ারলি এক্সাম হতো আর পুজোর আগে শেষ হতো ।পরীক্ষা শেষ হতে হতে পঞ্চমী হয়ে যেত আর এমন ভাবে রুটিন ফেলতো পঞ্চমীর দিনেই পরীক্ষাটা শেষ করতো। যাই হোক আমি যখন ছোটো ছিলাম, ছোটো বলতে যখন আমি ওয়ান টুতে পড়ি, এই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ভীষণ আনন্দে থাকতাম। সারাদিন আকাশে ঘুড়ির দিকে মন থাকতো। আর আমাদের পরীক্ষা ফেলতো ঠিক বিশ্বকর্মা পূজার পরের দিন । তার মধ্যে সেদিনকে আমার একটুও বইয়ের দিকে মন থাকতো না। পুরো মনটাই ঘুড়ির দিকে থাকতো ।শুধু মনে হত কটা ঘুরে বাড়ির ছাদে এসে পড়েছে ।কটা ঘুড়ি কেটে যাচ্ছে।এমনও হয়েছে কিছু সময় ঘুড়ির সুতো দেখতে পেলে ওটাকে আমি হাত দিয়ে ধরে থাকতাম। আর তখনকার সময় তো ফোন ছিল না তাই ওই দিন বেশির ভাগ ছেলেরাই সারাদিন ছাদে ঘুড়ি ওড়াতো। আর চারপাশ দিয়ে সারাক্ষণ ভোকাট্টা আওয়াজ শুনতে পেতাম।আকাশ জুড়ে সেদিন শুধুই রঙের খেলা। ভো-কাট্টা’ চিৎকারটা বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে হয়ে উঠত ‘জাতীয় শব্দ’। আর যত এরকম শুনতে পেতাম ততই যেন মন চঞ্চল হয়ে উঠতো। আর আমি ভীষণ চঞ্চল ছিলাম ছোটবেলায় তাই ওই দিনকে মন বসানোর মতো সাধ্য এক ফোটাও কারো ছিল না ।মন তো বসতো কিন্তু সেটা ওই সন্ধ্যার পর । সত্যি কথা বলতে আমি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালোবাসি । খুব একটা না পারলেও ছোটবেলায় আমার কাকার সাথে সবসময় কাকার পার্টনার হিসেবে থাকতাম ওই লাটাই ধরার জন্য🤪।আজ ভীষণ যেন সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল । আজ হয়তো সবকিছুই আছে কিন্তু এখন অনেক স্থিমিত হয়ে আছে।সেই সময়গুলো ভীষণ সুন্দর ছিল ।যত দিন যাচ্ছে তত ফোনের যুগটা চলে এসেছে ।ততই যেন এই দিনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন থেকে। এক কথায় আমরা যান্ত্রিক হয়ে পড়ছি।


WhatsApp Image 2022-09-18 at 1.31.20 AM (1).jpeg

WhatsApp Image 2022-09-18 at 1.31.15 AM.jpeg

WhatsApp Image 2022-09-18 at 1.33.09 AM (1).jpeg

WhatsApp Image 2022-09-18 at 1.31.17 AM.jpeg

সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে ঘুড়ি ধরতে যাওয়া সেই সব ছেলেগুলো। পেটকাটি, চাঁদিয়ালদের কদর কমেছে। ঘুড়িতে লেগেছে চোখ ধাঁধানো এলইডি আলো। বদলে গিয়েছে মাঞ্জার উপকরণ, লাটাইয়ের নকশা।কোনও ঘুড়ি কেটে দেওয়ার মধ্যে কী যে আনন্দ। আজকের এই নতুন প্রজন্মের কাছে এই আনন্দ অজানা। কারণ এখন দিলকাল বদলেছে।এখন বিশ্বকর্মা পুজোর সারা দিনে সেভাবে ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। এখন বাড়িতে ঘুড়ি কিংবা মাঞ্জা তৈরির চল স্বপ্ন মাত্র।বর্তমানে এই ঐতিহ্য ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এখন আকাশে আর ক’টা ঘুড়ি চোখে পড়ে! শিশুরা এখন বড় হচ্ছে বন্দী খাঁচার মধ্যে। ঘরে বসে শিশুরা শুধু কম্পিউটার কিংবা ভিডিও গেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ঘুড়ি ওড়ানো খেলা এখন মিটমিট করে টিকে আছে। জায়গার অভাব না ডিজিটাল যুগ, কোনটা যে প্রকৃত কারণ সেটাই স্থির করা কঠিন।কিন্তু আজও ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে।


ধন্যবাদ

Sort:  
 2 years ago 

খুব একটা না পারলেও ছোটবেলায় আমার কাকার সাথে সবসময় কাকার পার্টনার হিসেবে থাকতাম ওই লাটাই ধরার জন্য🤪

আপু আপনি অসুস্থ জেনে খুবই কষ্ট পেলাম। আসলে এই সময় জ্বর হলে খুব সহজে ভালো হতে চায় না। আপনি যেন পুজোর আগেই একেবারে সুস্থ হয়ে ওঠেন এই কামনা করি।আমি কখনো নিজে থেকে ঘুড়ি উড়াইনি। তবে ঘুড়ি উড়ানো দেখতে আমার খুবই ভালো লাগতো। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে গেছে। প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। তাইতো এখনকার সময়কার বাচ্চাকাচ্চারা মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে গেম খেলতেই ব্যস্ত। আগেকার দিনের সেই খেলা এখন আর নেই। ঘুড়ি উড়ানো থেকে শুরু করে সব আনন্দই যেন আজকাল হারিয়ে গেছে। এখনকার দিনের ছেলেমেয়েরা চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে গেছে। আপু আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ছোটবেলার অনুভূতিগুলো এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপু অতি চমৎকার লিখেছেন আপনি। আসলে যে কোন ধর্মীয় উৎসবের সময় পরীক্ষা দেওয়াটা সত্যিই অনেক বিরক্তি করছিল। তবে অতীতে ঘুড়ি উড়ানো ও অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে সত্যিই খুবই আনন্দ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সময়ের কিশোর কিশোরীরা সকল খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। তারা বর্তমানে টিভি, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের কাছে কেমন যেন বন্দী হয়ে গেছে।

 2 years ago 

দিদি গত দুই দিন ধরে আমারও জ্বর । আমার গত দুই দিনের ব্লগে আমি সেই কথা অলরেডি শেয়ার করেছি সবার সাথে। ওয়েদার চেঞ্জ এর কারনেই অনেকের হচ্ছে এই জ্বর। একদিক থেকে এই জ্বর হয়ে যাওয়া ভালো কারণ সামনে পুজো আসছে তাহলে পুজোর সময় জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা ছিল না সেগুলো জানতে পারলাম দিদি তোমার আজকের ব্লগের মাধ্যমে।
অনেক কাল আগে ঘুড়ি উড়ানোর সময় আমরা সুতোয় এই মাঞ্জার ব্যবহার করতাম। এখনকার সময় এসব আর দেখা যায় না। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুতেই পরিবর্তন চলে এসেছে। এখন সেই কেটে যাওয়া ঘুড়ি দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে ধরা ছেলেগুলোকেও দেখা যায় না ।একটি ঘুড়ি কেটে গেলে দোকান থেকে অন্য একটি ঘুড়ি কিনে নিয়ে চলে আসে তারা এখন।

 2 years ago 

প্রার্থনা করছি জলদি সুস্থ হয়ে উঠবেন দিদি।বাংলাদেশে আমরা এই মজা টা থেকে বঞ্চিত।বিশেষ করে আমরা যেদিকে থাকি সেখানে এই ঘুড়ির লড়াই টা হয়না।আসলেই আমরা দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি।এখন তিনজন একসাথে বসে থাকলেও আড্ডা দেওয়ার বদলে সবাই ফোন চালায়।ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর পোস্টের জন্য।

 2 years ago 

দিদি আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি, সামনে পূজা তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া ভীষণ জরুরি।বাঙালির বড়ো উৎসব এটি।ঠিক বলেছেন দিদি,বিশ্বকর্মা পুজোর দিন স্কুল ছুটি থাকতো কিন্তু পরের দিন পরীক্ষা থাকলে তা খুবই বিরক্তিকর ছিল।তাছাড়া আমরা গ্রামে নিজ হাতে কাগজ ও ভাতের মাড় দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে উড়াতাম আকাশে ছোটবেলায়,সবই এখন বিলুপ্তির পথে।বর্তমান সমাজের বাচ্চারা ঘরবন্দি থাকতেই বেশি ভালোবাসে।
দিদি মাঞ্জা আর ঘুড়ি কি একই জিনিস!

 2 years ago 

প্রথমেই আপনার শারীরিক সুস্থতা কামনা করি। অসুস্থ থাকলে আসলে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। এই জন্য সুস্থ থাকা খুবই জরুরী।

আপনার অনুভূতিগুলো আমি যখন পড়ছিলাম আপনার ফিলিংসটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছিলাম। ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির পাশের মাঠে শত শত ঘুড়ি উড়তে দেখতাম। দিগন্তবিস্তৃত মাঠে ছেলেপেলে সবাই বিকেল বেলায় ঘুড়ি উড়াতো। আমিও বিভিন্ন রকম ঘুড়ি বানিয়ে চলে যেতাম মাঠে।

কতই না সুন্দর ছিল দিনগুলি ।আমি ওরকম মুহূর্ত পার করে আসছি তো এজন্য আপনার ফিলিংস এর গভীরতা টা আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি ।

 2 years ago 

দ্রুত আপনার সুস্থ‍্যতা কামনা করছি। সত্যি আমরা ক্রমেই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। বিশ্বকর্মা পূজো নিয়ে আপনার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো শুনে বেশ ভালো লাগল। সত্যি কী সুন্দর দিন ছিল সেগুলো এখন আর নেই।।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু ঠিকই বলেছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিশেষ করে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই প্রত্যাশাই করি। তাছাড়া বর্তমান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন অগ্রগতির কারণে পুরনো ঐতিহ্য সাংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। এই যে আপনাদের পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি উৎসব যেটা এখন খুবই কম দেখা যায় ছোটবেলার সেই অনুভূতিটা আপনার খুবই মনে পড়ছে। আমার অনেক অনুভূতি আছে এরকম আপু।

 2 years ago 

আপু আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে আমরা ছোটবেলায় অনেক খেলাধুলা করতাম ঘুড়ি উড়ানো, সাইকেল চালানোর, টায়ার নিয়ে খেলা করার। ছোটবেলার সেই দিন গুলো খুবই মনে পড়ছে। আর বর্তমানের বাচ্চারা টিভি এবং ভিডিও গেম নিয়ে থাকে। তারা আর অতীতের সেই আনন্দময় মুহূর্ত গুলো উপভোগ করতে পারে না। আর উৎসবের সময় পরীক্ষা সত্যি অনেক বিরক্ত করে। যাইহোক আপু আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

 2 years ago 

সত্যি দিদি সময়ের সাথে সাথে সেই দিন গুলো হারিয়ে গেছে। ছোটবেলার সাথে এখন তো পার্থক্য থাকে।ছোটবেলা আমরা ও অনেক খেলাধুলা করতাম কিন্তু দিদি এখন করের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করা না বলেই চলে।সত্যি আপু নতুত প্রজম্নের কাছে ঘুড়ি ধরতে যাওয়া পেটকাটি, চাঁদিয়ালদের কদর কমেছে। ঘুড়িতে লেগেছে চোখ ধাঁধানো এলইডি আলো। বদলে গিয়েছে মাঞ্জার উপকরণ, লাটাইয়ের নকশা ইত্যাদি।আপনি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালোবাসেন জেনে ভালো লাগল। ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41