ছোটবেলায় মৌমাছির চাকে ঢিল মারার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


IMG-20240705-WA0002.jpg


মৌমাছির চাকে ঢিল মারার গল্প:



তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। সম্ভবত ক্লাস থ্রি অথবা ফোরে পড়ি। স্কুল থেকে এসে বিকেল টাইমে আমরা বন্ধুরা সব শিশু বাগানে খেলা করতাম। শিশু বাগানটা আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিম সাইডে ছিল। বর্তমানে সে জায়গাটা পুকুরে পরিণত হয়েছে। জায়গাটা খেলাধুলার জন্য বেশ উপযুক্ত। পূর্ব এবং পশ্চিম সাইডে ছিল ধানের ক্ষেত। উত্তর সাইডে বেশ কয়টা পুকুর ছিল। আর দক্ষিণ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ মাঠ অর্থাৎ ফসলের মাঠ। শিশু বাগানটা আমাদের শৈশবের অন্যতম একটা স্মৃতি। যাহোক একদিন আমরা স্কুল থেকে বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করে খেলাধুলার জন্য বন্ধুদের সব গুছানো হচ্ছে কে কোথায় রয়েছে জেনো শিশু বাগানে চলে আসে। আমার বড় ভাই আমার আগেই বাড়ি থেকে চলে গেল এবং আমাকে বলে গেল খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ পর শিশু বাগানের দিকে আসতে। ততক্ষণে সে সব বন্ধুদের গুছিয়ে নিয়ে শিশু বাগানে খেলতে আসবে,আর আমি যেন বাড়ি থেকে তাদের দেখে চলে আসি।


এবার আমি খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম বেশ কিছু কাজ করলাম আম্মার সাথে। দেখলাম আমার ভাইসহ চার-পাঁচজন মত শিশুর বাগানের দিকে এসে উপস্থিত হয়েছে, কি যেন খেলছে। তাদের দেখে আমি দ্রুত দুইটা পুকুর অতিক্রম করে চলে গেলাম। তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম পুকুরপাড়ে একটি ভেটুল গাছে মৌমাছির চাক রয়েছে, সেই মৌমাছির চাকটিতে ঢেলা দিয়ে আঘাত করছে আর আনন্দ করছে। তবে একটা বিষয় আমি ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখছিলাম তারা যতই ঢিল মারছে না কেন বোল্লার চাকে আঘাত করতে পারছে না, তেমন একটা অর্থাৎ সঠিকভাবে তাদের ঢিলগুলো চাকে পড়ছে না। তাদের দেখাদেখি আমিও বেশ কয়েকটা ঢিল নিলাম এবং মৌমাছির চাকে মারলাম কিন্তু একটাও ঠুকতে পারলাম না।


এরপর আবার এসে ঢিল নিলাম একটু দূর থেকে যেগুলো একটু বড় আর মোটা। ভেটুল গাছের নিকটে গিয়ে ঢিল মারলাম। তখন লক্ষ্য করে দেখলাম হ্যাঁ আমি ঠুকতে পেরেছি, একটা জোরে গিয়ে আঘাত লাগলো আওয়াজ হল। তখন আমার মনের মধ্যে আরও সাহস বেড়ে গেল এবং উৎসাহ বেড়ে গেল ঢিল মারলাম মৌমাছি একটাও উড়ল না। এরপর আমি মোটা ঢিলা আনার জন্য একটু দূরের দিকে চলে গেলাম। সে মুহূর্তে আমার বন্ধু পলাশ রানা আর আমার বড় ভাইয়ের বিদ্যুৎ ঢিল মারায় ব্যস্ত। আরেক দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম আম গাছের নিচ দিয়ে রাজু আসছে। সেও আমাদের সাথে ঢিল মারায়যুক্ত হবে। এবার আমি ঢিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে দেখি আমার ভাই আর রানা দৌড়ে চলে আসছে আমার দিকে। ভাই আমাকে বলছে সুমন দৌড় মার বোল্লা ছুটেছে, কামড় দিবে।


আমিতো সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। মৌমাছি উপর দিয়ে যেমন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলে যায় ঠিক তেমনভাবে ছুটে আসছে আমাদের দিকে কামড়ানোর জন্য। ইতিমধ্যে আমার বড় ভাই আমাকে বলল সুমন দৌড়াতে থাক। আমিও দৌড়াতে থাকলাম। তবে দেখলাম রানা আমাকে অতিক্রম করে পাটের জমির দিকে চলে যাচ্ছে। আমিও আলহামদুলিল্লাহ পাড়ার মধ্যে দৌড়াতে পারতাম সবচেয়ে বেশি। রানার পিছু পিছু আমিও দৌড়ে চলে গেলাম। ইতোমধ্যে রাজ বলল মাটির সাথে শুয়ে পড়, পলাশ একটু এগিয়ে গিয়ে এক জায়গায় বসে পড়ল। পলাশ আমাকে বলল সুমন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড় নাই বোল্লা তোর পিছে দৌড়াবে। তাদেরকে কে যেন বলেছিল দাঁড়িয়ে পড়লে বা বসে পড়লে মৌমাছি কামড়ায় না। আমি তাদের এই কথা শুনলাম না কারণ পেছনে প্রচুর মৌমাছি। দেখা যাচ্ছে বসে পড়লে হয়তো ঠেসে ধরলে, আমার জীবন শেষ। তাই আমি রানাকে অতিক্রম করে দৌড়ে চলে গেলাম বজলু মিয়ার পাটের জমির শেষ প্রান্তে। সেখান থেকে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম পলাশ রাজু দুইজন দুই জায়গায় খ্যাড়ের আচটের জমিতে বসে পড়েছে।


এদিকে আমার বড় ভাই পুকুরের পাড় দিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছে। এরপর আমরা পাটের জমি অতিক্রম করে দূর প্রান্ত দিয়ে রাস্তা দিয়ে আমাদের বাড়িতে। ইতোমধ্যে আমার ভাইয়ের চার-পাঁচটা মৌমাছি কামড় দিয়েছে। দৌড়ানোর মাঝখানে আমার গায়ে একটা বসতে গিয়েছিল কিন্তু পারেনি। থাবা দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলাম। অতঃপর আধা ঘন্টা এক ঘন্টা পর দেখা গেল পলাশ অজ্ঞান অবস্থা। পাড়ার মানুষজন পলাশকে কোলে করে নিয়ে আসছে গ্রামের দাসপাড়া দিয়ে। কারণ পলাশকে এতটা মৌমাছিতে কামড় দিয়েছিল যা ছিল অনেক। রাজু আগে মাটিতে শুয়ে পড়েছিল তাই মৌমাছি তাকে খেয়াল করেনি। পলাশ আমার আগেই দৌড়াতে দৌড়াতে দাঁড়িয়ে পড়েছিল তারপর আমি তাকে অতিক্রম করে চলে গেছিলাম। সে আমার পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে আবার মাটিতে শুয়ে পড়েছিল‌ রাজুর কথা মত। এক কথায় মৌমাছি গুলো তাকেই ফলো করে ফেলেছিল বেশি। পলাশ যদি আমার কিছু কিছু দৌড়ে চলে আসতো অনেকদূর তাহলে আর এত কামড়াতে পারত না। কিন্তু পলাশ তো এত দৌড়াতে পারবেনা ছোট থেকে সে মোটা। এরপর পলাশকে বিভিন্নভাবে ট্রিটমেন্ট করা হলো। দীর্ঘ ১০-১৫ দিন পর পলাশ সুস্থ হয়েছিল। তবে যেই ঢেলার আঘাতে মৌমাছি উড়ছিল সেটা ছিল রানার বড় ঢেলার আঘাত। কারণ আমি দূর থেকে বড় বড় ঢেলা হাতে করে তুলে আনছিলাম, এই দেখে ভাই আমার পানের তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসছিল ঢেলা গুলো নেওয়ার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে দোষারোপ সব এসে পড়েছিল আমার বড় ভাইয়ের ঘাড়ে। কারন সে খেলার জন্য সবাইকে ডেকে এনেছিল। খেলার লোকজন ওই মুহূর্তে কম এসেছিল,তাই তারা কি করবে বুঝতে পারছিল না। তিনজন মিলে বল্লার চাকে ঢেল মারছিল। এদিকে দুই দিক দিয়ে আমি আর রাজু এসেছিলাম। তবে যাই হোক এখানে দোষারোপের আর কি আছে ছোট সবাই, সবাই তো ঢিল মেরেছিলাম। জীবনে এই শিক্ষা আর এরপর কোনদিন আমরা কেউ মৌমাছির চাকে ঢিল মারতে যায় নাই।


IMG-20240705-WA0003.jpg

গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিঘটনাস্থল এরিয়া
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া আপনাদের সুন্দর এই গল্প করে। এই গল্পের মধ্যে বেশ শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। কখনো মৌমাছির চাকে ঢিল মারতে হয় না। আর তার ফল কিন্তু সাথে সাথেই পাওয়া যায়। যেমন আপনাদের শিক্ষা মিলেছে তেমনি পলাশ ভাইয়ার বিপদ এসেছিল ঢিল মারার কারণে। হয়তো এই পোস্ট পড়ে অনেকেই সজাগ হবে।

 2 months ago 

এই মোমাচির চাক এর কথা মনে পরে আমারো একটা ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো।বন্ধুরা মিলে ক্রিকেট খেলার সময় বল মেরে ছিল আমার এক বন্ধু আমি চাকের নিচে দারায়ে ফিল্ডিং করছি।বলটা চাকের উপর লাগলে মাছি গুলো উরে যায় আর সবাইকে আক্রমণ করে আমার তো মাছির কামর খেয়ে কয়েকদিন জ্বর ছিলো।

 2 months ago 

ভয়ংকর কাজ করেছিলেন ভাইয়া আপনারা মৌমাছির চাকে ঢিল আপনার পোস্টটি পড়েই তো গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। মৌমাছির কামড় নাকি অনেক বেদনাদায়ক হয় আপনার বন্ধু অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।ভাগ্যিস দৌড়াতে পারতেন অনেক নইলে আপনারও সেম অবস্থা হতো। আসলে সবাই ছোট মানুষ এখানে কারো উপরে একক ভাবে দোষারোপ করা উচিত নয়। ধন্যবাদ ভাইয়া শৈশবের ভয়ঙ্কর স্মৃতিচারণ করে পশ্চিম ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 2 months ago (edited)

@sumon09 পোস্টের মধ্যে সব লেখা বোল্ড হরফে লেখা বন্ধ করুন, নাহলে নোমিনেশন অফ করে দেবো এরপর থেকে। অনলি যে লেখাটা হাইলাইট করা দরকার, সেটা বোল্ড করবেন।

 2 months ago 

আচ্ছা দাদা,ঠিক আছে। এখন থেকে আর হবে না। ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 months ago 

আরে তখন আপনাদের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভাবছিলাম আর মনে মনে হাসছিলাম। ছোটবেলা আমাদের এরকম অনেক মজার কাহিনী রয়েছে যা এখনও মাঝে মাঝে মনে পড়লে হাসি পায়।তবে আপনাদের ছোটবেলার এই গল্পটি অনেক ভয়ঙ্কর ছিল। মৌমাছির কামরে অনেক কষ্ট। ইট মারবেন আর পাটকেল খাবেন না তা কি হয়। মৌমাছিকে আঘাত করবেনা আর মৌমাছি কি বসে থাকবে। যাইহোক বোঝা যাচ্ছে এই ঘটনার পর থেকে আপনাদের কিছুটা শিক্ষা হয়েছে।

 2 months ago 

একদম তাই হয়েছে আমাদের।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56890.04
ETH 2356.22
USDT 1.00
SBD 2.39