একদিন ভোররাতে পাকা তাল কুড়ানোর ভয়ানক ঘটনা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG-20240414-WA0002.jpg


পাকা তাল কুড়ানোর গল্প:



ছোটবেলার একটি ঘটনা। সম্ভবত আমি তখন প্রাইমারিতে পড়ি। প্রথমে বলে রাখি আমাদের একটি তালের গাছ রয়েছে। আমাদের বাড়ির পরে রয়েছে একটা পুকুর, তারপরে রয়েছে আমাদের তালগাছ। অনেক ছোট থেকে লক্ষ্য করে আসছি আমাদের গাছটাতে প্রচুর পরিমাণ তাল ধরে। তাল গাছের দুই পাশে রয়েছে বাঁশের ঝাড়। অনেকেই তল্লাবাঁশ চিনে থাকবেন। যে বাঁশগুলো চিকন হয়ে থাকে। বিশেষ করে এ বাঁশগুলো লগা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই আমাদের তালগাছে অর্ধেক তাল শাঁস খাওয়ার জন্য বাঁশের লগা দিয়ে পেড়ে ফেলা হতো। আর বাকি অর্ধেক রাখা হতো পাকা খাওয়ার জন্য। অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন আসতো, পাড়া-প্রতিবেশী তাল কুড়াতো,আর এভাবেই সকলের হয়ে যেত।



IMG-20240414-WA0005.jpg



তবে আমরা বুদ্ধি করে গাছে তাল রেখে দিতাম পুকুরের সাইড করে। পাকা তাল পড়লে পানির মধ্যে পড়তো এবং ভাসতে ভাসতে চলে আসতো আমাদের বাড়ি যেই পাশে সেই দিকে। অর্থাৎ তালগাছ রয়েছে দক্ষিণ সাইডে আমাদের ঘর রয়েছে উত্তর সাইডে, আর পুকুরটা মাঝখানে। রাতে তাল পড়লে সকালবেলায় ভাসতে ভাসতে এই পাশে চলে আসতো তাই ও পাশে যাওয়া লাগত না, খুব সহজে পুকুর থেকে তাল কুড়িয়ে নিতাম। একদিন বিশেষ প্রয়োজন অনেকগুলো তালের। সকাল ভোরে উঠেই উপরের দিকে লক্ষ্য করে কোন তাল পেলাম না। তাই চিন্তাভাবনা নিলাম আগামীকাল যদি না পাই তাহলে গাছের গোড়ার দিকে যাব। একটু দেরি করে গেলে আবার পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে কুড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে। তাই ভোরে ভোরে উঠেছিলাম। যেমন চিন্তাধারা ঠিক তেমনি সময়মতো উঠে লক্ষ করলাম পুকুরে আজকেও তাল নেই। তাই তাল গাছের গোড়ার দিকে গেলাম। আমাদের তাল গাছ থেকে কিছুটা বাঁশের সাইডে মুস্তাফিজুর দের তালগাছ। তাদের গাছে অবশ্য তাল পড়া শুরু হয়নি তখনো, আমাদের গাছে আগে থেকেই তাল-পেকে পড়ে যায়। আর এই জন্য মানুষজন তাল কুড়ানোর জন্য আমাদের গাছে উপস্থিত হয়ে যায়। যাইহোক তাল গাছের নিকটে গেলাম।


IMG-20240414-WA0001.jpg



তাল গাছের পাশে গিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখলাম বেশ অনেকগুলো পাকা তাল পড়ে রয়েছে। আমি সর্বোচ্চ তিনটা হাতে নিতে পারব তার বেশি তো নিতে পারব না। এদিকে তাল পড়ে রয়েছে অনেকগুলো সবগুলোই ভালো। চিন্তাভাবনা করলাম কি করি, তিনটা হাতে করে নিয়ে বাড়িতে যায় আবার একটা ব্যাগ নিয়ে আসি। যেহেতু আত্মীয় স্বজনরা চেয়েছে তাদের দিতে হবে বলে কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে যদি আমি বাড়িতে চলে যাই কেউ এসে তালগুলো নিয়ে যেতেও পারে। তাই আমি তাল গুলো সংরক্ষণ করে একটু বাঁশ গাছের নিচে রাখলাম। এরপর তিনটা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতেই বাঁশ গাছের নিচ থেকে লক্ষ্য করলাম সাদা কাপড় পরা মানুষ মত কি যেন আসছে মুস্তাফিজুর দের তাল গাছের গোড়া দিয়ে। তার হাত পা কিছুই দেখা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে না যে মানুষ। কিছুটা অন্ধকার ঘুটঘুটে। ভোর বেলা হলেও অন্ধকার রয়েছে। দেখলাম সে দু একটা করে আগাচ্ছে আবার মুস্তাফিজুর দিয়ে তাল গাছের দিকে ঘুরপাক করছে। মনে সাহস রেখে তিনটা তাল দুই হাত আর বুকের সাথে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মনে মনে ভাবছিলাম কোন যদি সমস্যা করে তাল ছুড়ে মারবো তার গায়ে।


IMG-20240414-WA0004.jpg



কিছুক্ষণ পর সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো। তখন আমি ভয়তে সত্যি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম এবং আমার বুকের ভেতর ধরফর করতে। ওই মুহূর্তে সে কথা বলছে না আর আমাকেও তো সে লক্ষ্য করেনি। যাইহোক আমি বাঁশঝাড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর সে আমার পাশে এসে উপস্থিত হল। তারপর আমাকে দেখে কথা বলল। কণ্ঠস্বর শুনে বুঝে ফেললাম আমাদের পাড়ার দাস বাড়ির বৃদ্ধ বিধবা মহিলা। সে এমন ভাবে কাপড় পরিধান করে, বর্তমান মা-বোনেরা যেন কাপড় পরা ভুলে গেছে। তাদের কাছ থেকে কাপড় পরা শিক্ষা নেওয়া দরকার। যাই হোক সে আমাকে দেখে যখন কথা বলে উঠল তখন আমার ভয় কেটে গেছিল। কিন্তু ওই মুহূর্তে সে যদি কথা না বলত তাহলে সত্যি আমি খুব ভয় পেতাম, কারণ অন্ধকারে তো আমি বুঝতে পারছিলাম না সে মানুষ নাকি অন্য কিছু। তার গায়ে ছিল সাদা বিধবার শাড়ি। এরপর আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম এগুলা বাড়িতে নিয়ে যাব আর কিছু রেখে আসলাম ও গুলা নিয়ে যাব। আমাদের আত্মীয় আসবে আত্মীয়রা তাল নিবে। আমার কথা শুনে উনি ঘুরে গেলেন। এরপর আমি সাহসে সাহসে তিনটা তাল বাড়িতে রেখে গেলাম এরপর পাত্র নিয়ে গিয়ে বাকিগুলা নিয়ে আসলাম। আর এভাবেই কিন্তু আস্তে আস্তে ভূতের ভয় বলে আমার মধ্য থেকে ভয় কমে গেছে ছোটবেলায়। আর সে থেকে যেন ভয় শব্দটা আমার কাছে হাস্যকর। যাই হোক কাল গুলো বাড়ি আনার পর পরিবারের সদস্যরা দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছিল, যেহেতু খুবই প্রয়োজন ছিল ওই মুহূর্তে।


IMG-20240414-WA0000.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিতাল ও তালের গাছ
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
গল্পঅতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

ভাই আমি তো প্রথমে সাদা কাপড় পড়া ওই বিধবা মহিলাকে আপনার মতই ভুত ভেবে বসে ছিলাম। পরে পোস্ট পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম তিনি একজন সাদা কাপড় পরিধানকারী বিধবা মহিলা। আপনার বড্ড সাহস ভাই, তা না হলে ভোর বেলায় অন্ধকার অবস্থায় কেউ তাল কুড়াতে যায়। যাইহোক ভাই, আপনার ঘটনাটি সত্যিই ভয়ানক ছিল, শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 months ago 

আমরা গ্রামের ছেলে বলে কথা

 2 months ago 

আমার আম্মুর মুখে শুনেছি সকালবেলা ভোরে তাল কুড়াতে যেত। এবং আম কুড়াতে যেত। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। তবে যখনই সাদা কাপড় পরা কাউকে দেখেছেন বললেন তখন আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। হয়তো ভেবেছিলাম ভূত। যাই হোক পরে আস্তে আস্তে সামনে আসাতে দেখলেন একজন বিধবা নারী। আপনার কোন ক্ষতি হয়নি জেনে ভালো লাগলো। সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 months ago 

হ্যাঁ আমি তো এমনই ধারণা করে ফেলেছিলাম

 2 months ago 

তাল কুড়ানোর ঘটনাটি ভয়ংকর হলেও বেশ মজার ছিলো ভাইয়া।দাস বাড়ির ওই সাদা কাপড় পড়া মহিলাকে দেখে আপনি ভুত ভেবেছিলেন। আসলে ভুত বলতে কিছু নেই আপনার মতোই দেখে অনেকেই তবে আপনি ভুত নয় এটা ক্লিয়ার হয়েছেন সাহস করে দাড়িয়ে ছিলেন জন্য।যদি ভুত ভেবে দৌড়ে পালাতেন তবে আজীবন আপনাকে সত্যিকারের ভুত ভাবতে হতো।আমি যদি কখনো ভয়ংকর কিছু দেখি তা খুব ভালো করে দেখার চেষ্টা করি কারণ না দেখলে আসলে কি দেখলাম তা ক্লিয়ার হওয়া মুসকিল। ধন্যবাদ আপনাকে তাল কুড়ানোর মজার গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার মন্তব্য পড়ে

 2 months ago 

ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুন একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। ভাইয়া আমিও এই ভোর রাতে অনেকবার তাল কুড়িয়েছি। আসলে ওই ভোররাতে তালগাছ তলায় যেতে একটু ভয় ভয় লাগে যে কারণে আমার বাসা থেকে যেতে দিত না। তারপরেও ছুটে চলে যেতাম কিন্তু আপনার এই ভয়ানক গল্পটি পড়ে আমারও বেশ ভয় লাগছে এখন। তবে আমি মনে করি সাহস থাকলে কোন ভয় কাবু করতে পারবে না ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 2 months ago 

গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ

 2 months ago 

তাল কুড়ানোর চমৎকার একটি গল্প পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তাল কুড়াতে গিয়ে এরকম দৃশ্য দেখলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এর আগে তাল কুড়াতে গিয়ে অনেকেই এরকম ভাবে ভয় পেত। যদিও এখন আর তেমন কোনো কিছু দেখা যায় না। যাহোক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 months ago 

তা অবশ্য ঠিক বলেছেন

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66195.81
ETH 3505.33
USDT 1.00
SBD 3.18