চাঁদনী রাতে পুকুর পাহারা করার অভিজ্ঞতা

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago


আসসালামু আলাইকুম




হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি এক চাঁদনী রাতে একলা পুকুর পাহারা করার অভিজ্ঞতা নিয়ে। আশা করি এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

IMG_20231121_063503_5.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন


রাতের ফটোগ্রাফি ও অনুভূতি:



রাতে একা পুকুরপাহারা করার অভিজ্ঞতা আমার অনেকদিনের। তবে এই অভিজ্ঞতাটা আমার এসেছিল মন খারাপ থেকে। এমনিতেই ছোট থেকে ভয় বলে কোন কিছু আমার মধ্যে বেশি একটা কাজ করে না। কোন এক মন খারাপের দিন বাড়িতে ছিলাম না, বারবার মন চাচ্ছিল ফাঁকাই নিজেকে রাখি। এতে মন ভালো থাকবে। আর এরপর থেকেই নিজেদের পুকুর পাহারার যাত্রা শুরু। কিছুদিন আগে পুকুর পাহারার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলাম। তখন রাত বারোটা পার হয়ে গেছে। রাস্তায় বের হয়ে দেখলাম কোন মানুষ নেই। শুধু আকাশের দিকে লক্ষ্য করলাম চাঁদ মামা জেগে আছে। আল্লাহর নাম নিয়ে পথচলা শুরু করলাম। ঘন অন্ধকার রাতে বাগান পেরিয়ে পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এত চাঁদনী রাত,এটা আমার কাছে আরো সহজ বিষয়। তবে আমি বীর নয়। বিপদ কাউকে বলে আসে না। যতটা পারি নিজের সাবধানতার সাথে দোয়া দরুদ পাঠ করতে করতে চলে যায়। এই দিনও ঠিক একইভাবে পথ চললাম।


IMG_20240229_001709_9.jpgIMG_20240229_001708_7.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



রাস্তা থেকে নামতেই বাঁশের বাগান। তবে চাঁদের আলোয় পাওটা পথ ভালই দেখা যাচ্ছিল। আর বড় একটা বিষয়ে আমি কখনো টস জ্বালিয়ে পুকুরে যায় না। হোক সেটা চাঁদনী রাত অথবা ঘন কালো অন্ধকার রাত। তবে চাঁদনী রাতে একলা বাগানের মধ্যে দিয়ে পথ চলার মজা আলাদা। আর তখন যদি ঝিরিঝিরি বাতাস বয় তাহলে বেশি ভালো লাগে। ঠিক সেভাবে চলতে থাকলাম। প্রায় ১০-১৫ বিঘা বাঁশ বাগান এর পথ অতিক্রম করতে থাকলাম। গাছে গাছে মেহেগুনীর পাতা ঝরেছে। আরো একটু যেতে আমাদের এক বড় ভাইয়ের মোটর ঘর। এরপর মাঠের পুকুরপাড় শুরু। বাগানের মধ্যে বারবার যেন পাতার উপর জোরে জোরে আওয়াজ কানে আসতে থাকলো। তবে এতেও আমি আতঙ্কিত হয় না পুরানো অভ্যাস হয় শিয়াল দৌড়ায়, অথবা বন-বিড়াল এছাড়া আরো অনেক কিছুই থেকে থাকে। তবুও টচ জ্বালায় না। চলতে থাকি নিরবে। শুধুমাত্র আপনাদের মাঝে ফটো শেয়ার করার জন্যই টস জ্বালিয়ে ফটো ধারণ করা। তাছাড়া অন্যান্য দিন টস জ্বালায় না।


IMG_20240229_001538_6.jpgIMG_20240229_001404_0.jpgIMG_20240229_001341_7.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



এরপর কিছুটা পুকুরপাড় হাঁটতে হাঁটতে আমার প্রথম সবজি বাগান। সেখানে লাউ গাছ ও পেঁয়াজ লাগানো রয়েছে। শুধু আপনাদের দেখানোর জন্য একটু জ্বালিয়ে ফটো ধারণ। এরপর আবারো হাঁটতে থাকলাম। তারপর একটি কলা ঝাড়ের পাশে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলাম চারিপাশের ভাবমূর্তি বোঝার জন্য। কারণ রাতে পুকুরে চোর থাকতে পারে,অন্য পুকুর মালিক থাকতে পারে, আশেপাশে আরো ভয়-ভীতি জনক সমস্যা থাকতে পারে তাই একটু সজাগ হতে হয়।


IMG_20240229_001132_0.jpgIMG_20240229_001129_4.jpgIMG_20240229_001035_8.jpg
IMG_20240229_001037_5.jpgIMG_20240229_001058_7.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



এদিকে আমার পুকুর পাড়ের দ্বিতীয় সবজি বাগানে শিমের বান। গাছ দেখলেই বুঝতে পারছেন কত শিম ধরেছিল। আর এই বানটা ছিল সম্পূর্ণ একটা পুকুর পাড় জুড়ে। দুই পুকুরের এক পাড়ের উপরের অংশ সম্পূর্ণ বান তৈরি করেছিলাম। অনেক শিম নষ্ট করেছে ইঁদুরে। এরপরেও নিজেদের চাহিদা পূরণ করে আত্মীয়দের দেয়ার পরেও তিন হাজার টাকার মত শিম বিক্রয় করতে পেরেছিলাম।


IMG_20240229_000946_9.jpgIMG_20240229_000910_8.jpg
IMG_20240229_000927_6.jpgIMG_20240229_000926_6.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



এরপর আরো সামনে এগিয়ে আমাদের মোটর রানিং ছিল। তাই একটি পুকুরে পাইপ দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছিল। পানি পড়ার শব্দ কানে আসতে থাকলো। পানি পড়ার স্থানে হালকা টস জ্বালিয়ে দেখলাম ঢোড়া সাপ। ভেবেছিলাম তার ফটো বা ভিডিও ধারণ করে আপনাদের দেখাবো কিন্তু তার আগেই সে পালিয়ে গেল। পানি পড়ার জায়গায় ছোট মাছগুলো লাফাতে থাকে, হয়তো মাছ খাওয়ার আশায় সে সেখানে উপস্থিত ছিল। এরপর মোটর টা ভালোভাবে দেখলাম, লাইনে পানি ঠিকঠাক আছে কিনা ইত্যাদি দেখাশোনা করলাম। এরপর চলে গেলাম আরো তিনটা পুকুর পাড়ে। সেদিকে ঘোরাফেরা করলাম। শুধু সাইট কেটে শিয়াল বের হয়ে গেল। তেমন কোন মানুষের সারা শব্দ পেলাম না। আর আশেপাশের বেশ শিয়ালের ডাক। এই মুহূর্তে প্রটেকশন হিসেবে আমার কাছে তেমন কিছুই রাখা ছিল না। আমি মাঝেমধ্যে হাতে বাঁশের নড়ি রাখি, আবার খালি হাতে চলে যায়। তবে পুকুরের বাগান গুলোর মধ্যে জায়গায় জায়গায় দুই হাত করে বাঁশের লাঠি কেটে রাখা হয় প্রটেকশন হিসেবে। অবশ্য সেইগুলা ছিল জায়গামতো।


IMG_20240229_000848_4.jpgIMG_20240229_000846_3.jpgIMG_20240229_000735_1.jpg
IMG_20240229_000730_8.jpgIMG_20240229_000753_3.jpgIMG_20240229_000802_7.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



জানিনা আপনারা কেউ কখনো আমার মত এভাবে রাত অতিক্রম করেছেন কিনা। তবে আমার এমনও অনেক রাত গেছে এগারোটার সময় পুকুরপাড়ে এসেছি এদিকে ফজরের আজান হওয়ার মুহূর্তে বাড়ি ফিরেছি। তবে আমার থেকে আপনার অনেক কবিতা পেয়েছেন এই কমিউনিটিতে, সে সমস্ত কবিতাও কিন্তু পুকুর পাড়ে রাতে অন্ধকারে বসে লেখা রয়েছে। হয়তো অনেকে প্রশ্ন করেন একা কিভাবে সময় পার করেন। ঠিক এভাবেই সিনেমা দেখা বা কবিতা লেখা বা গান শোনা বা এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ানো এভাবেই দীর্ঘ টাইম পার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার অনেক। তবে প্রথমত বেশ অস্বস্তিকর মনে হতো দীর্ঘ টাইম জেগে থেকে পার করা। অনেকে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাথে চ্যাটিং করে এটা সেটা করে টাইম পার করা চিন্তা করে কিন্তু এমন ফালতু অভিজ্ঞতা আমার এই কাজের মধ্যে নেই। একা বলতে একদমই একা এভাবে অনেক রাত পুকুরে থেকেছি। এমনকি রাতে চাঁদের আলোয় পুকুর পাড়ের সবজি লাগানোর জায়গা কোদাল দিয়ে কুপিয়েছি। জানিনা এমন অভিজ্ঞতা কোন কৃষকের রয়েছে কিনা। শুধু সঙ্গী হিসেবে থেকে যত চাঁদনী রাতের চাঁদ। যাই হোক এরপর পুকুরপাড়ে ঘোরাফেরা, চলাচল,দেখাশোনা, টস না জ্বালিয়ে এদিক থেকে সেদিকে যাওয়া। এরপর সজাগ অনুভূতি দেখে বাড়ি ফিরে আসা। তখনো পথে ঘাটে কোন জন মানুষের দেখা নেই। শুধু পাড়াগাঁয়ের কয়েকটা কুকুর যেন দূর থেকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে। আর এভাবেই যেন কোন এক সময় রাত শেষে ভোর হয়ে আসে।


IMG_20240229_001215_9.jpgIMG_20240229_001218_9.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন

পোস্ট বিবরণ
বিষয়রাতে পুকুর পাহারা
ফটোপুকুর সংক্রান্ত
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনগাংনী-মেহেরপুর
ব্লগার@sumon09
দেশবাংলাদেশ


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

চাঁদনী রাতে পুকুর পাহারা দেওয়ার অভিজ্ঞতা পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাই। আপনার তো দেখছি বেশ সাহস আছে ১০-১৫ বিঘার বাঁশবাগান পেরিয়ে নিজের পুকুর পাহারা দিতে যান। পুকুরের পাড়ে সবজি বাগানের সবজি দিয়ে নিজেদের চাহিদা ও আত্মীয় স্বজনদের চাহিদা মিটিয়ে তারপর সেই সবজি বিক্রি করেন এটা খুবই ভালো ব্যাপার। পুকুর পাহারা দেওয়ার সময় আপনি রাতে বসে একা একা কবিতা লেখেন কিংবা গান, মুভি দেখেন জেনে বেশ ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করে বেশ ভালো লাগলো ভাই।

 5 months ago 

হ্যাঁ ভাই পুকুর পাড়ে মোটামুটি বেশ সবজি চাষ করে থাকি।

 5 months ago 

এ পুকুর পাড়ের অনেক পোষ্ট পড়ছি ৷ চাঁদনী রাতে একলা পুকুর পাহারা আহা অসাধারণ ইন্টারসেটিং বিষয়৷ রাতের আধারে করা ফটোগ্রাফ গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে ৷ তবে আমি থাকলে ভয় পাবো ভাই ৷ বাড়ি থেকে এতো দুরে পুকুর পাহারা ৷ আবার একা একা রাতে না জানি কি হয় ৷ যা হোক আপনার সাহস বলতে হবে তো

 5 months ago 

অভ্যাস হয়ে গেলে কোন ভয় নেই

 5 months ago 

আপনি রাতের বেলা একাই পুকুর পাহারা দেন, এটা আসলেই একটি সাহসিকতার কাজ। আপনি অনেক ভয়ংকর প্রাণী কে উপেক্ষা করে পুকুর পাহারা দেন। আপনার সাহসিকতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। চাঁদনী রাতে পুকুর পাড় একদম পরিষ্কার ছিল। চারদিকে খুবই সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছে কোন ধরনের লাইট ছাড়া। চাঁদনী রাতে পুকুর পাড়ে খুবই সুন্দর একটি রাত উপভোগ করেছেন।

 5 months ago 

হ্যাঁ ভাই মোটামুটি চাঁদনী রাত থাকায় বেশ ভালো লাগছিল।

Steem/SBD doller sell korle inbox. 01700817832 ডলার বিক্রি করলে যোগাযোগ করেন ধন্যবাদ.💖
Whatapp 01700817832

 5 months ago 

আসলে ভাইয়া চাঁদনী রাতে পুকুর পাহারা করার মজাই আলাদা। খুব বেশি ভালো লাগে কারণ পুকুরপাড়ে হিমেলি হওয়ার বাতাস। এই বাতাস যখন গায়ে লাগে তখন তো খুবই ভালো লাগে। সেই সাথে আকাশ পরিষ্কার ঝকমকে চাঁদনী রাত সত্যিই দারুণ একটা সময় অতিবাহিত করেছেন আপনি এবং সেখান থেকে বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি করে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 5 months ago 

কমবেশি আমারও পুকুর পাহারা দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলায় আব্বুর সাথে মাঝে মাঝে যেতাম পুকুর পাহারা দেয়ার জন্য। গরমের সময় পুকুরের ধারে বসে ঠান্ডা বাতাস খেতে খুবই ভালো লাগতো। চাঁদনী রাতে বসে পুকুর পাহারা দেয়ার অভিজ্ঞতা আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার কেমন জানি ভয় ভয় করছিল। ধন্যবাদ ভাই অনেক সুন্দর একটা মূহুর্ত শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

ভয়ের কিছুই নেই এখানে। অভ্যাস হয়ে গেলে সবই স্বাভাবিক।

 5 months ago 

হ্যা ভাই সেটা ঠিক বলেছেন।

 5 months ago 

অনেক সুন্দর বর্ণনা করেছেন কিন্তু বেশ কিছু বানান ভুল রয়েছে, একবার রিভিশন দিলে অন্তত সেগুলো ঠিক করা যেতো। আশা করছি এ ব্যাপারে যত্নশীল হবেন।

 5 months ago 

ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। Gboard ভয়েস টাইপিং এর জন্য এই সমস্যাটা হয়ে থাকে, সংশোধন করার পরেও কয়েকটা ওয়ার্ড এর লেখা ব্যতিক্রম হয়ে যায়। কমেন্ট করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি। ইনশাল্লাহ এখন থেকে ঠিক ভাবে লেখা দেখে সাবমিট করার চেষ্টা করব।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60327.79
ETH 2348.25
USDT 1.00
SBD 2.53