গল্প: শৈশবের মাছ ধরতে গিয়ে ভয়ংকর এক ঝড়ের সম্মুখীন

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। আমরা জানি একজন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গল্প প্রকাশ পায় লেখা অথবা বলার মধ্য দিয়ে। তাই আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তার জন্য পারফেক্ট একটি কমিউনিটি। যেখানে অতীতের ঘটনাবলী খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব মাতৃভাষায়। আর এভাবে একে অন্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা ঘটনা জানতে পারা যায় এই কমিউনিটির মাধ্যমে। ঠিক তেমনি আমিও আমার অতীতের একটি ভয়ানক ঘটনা আপনাদের সম্মুখে প্রকাশ করতে এলাম। আশা করি এই গল্প পড়ে আপনারা দারুণ এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন।


একদিন ঝড়ের সম্মুখীন:

IMG_20230310_161514_290.jpg



তখন আমি খুবই ছোট। প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে খালে বিলে মাছ ধরতে যেতে ভালো লাগতো। পাড়াগাঁয়ের বন্ধুদের সাথে চলে যেতাম। একা কখনো মাছ ধরতে যায়নি ভয় লাগতো। বড়দের সাথে অথবা সমবয়সীদের সাথে চলে যেতাম মাছ ধরতে। আমাদের গ্রামটার মাঠগুলো বেশ জলাবদ্ধ বিলের মত ছিল। তাই অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন সে সমস্ত জায়গায় সব পুকুর হয়ে গেছে। যাইহোক মেন ঘটনায় আসি। মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বন্ধুরা মিলে সবাই বের হয়েছিলাম, পাশের গ্রামে যেতে রাস্তার পাশে একটা পুল বা ছোট ব্রিজ ছিল সেই জায়গায়। এই ব্রিজের নিচ দিয়ে বর্ষার সময়ের অতিরিক্ত পানি খাল দিয়ে পার হয়ে চলে যেত। আর শীতের আগে আশ্বিন কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস,এই সমস্ত জায়গায় পানি শুকিয়ে আসতো, তাই মানুষের মাছ ধরার জন্য ভিড় কত। কাঁচা রাস্তার পাশের এই ব্রিজের নিচ থেকে শুরু করে বিলের বিভিন্ন জায়গায় তখন মানুষের মাছ ধরতে দেখা যেতে। কারন সেই সময় পুকুর খুব কম ছিল। ঠিক এমনই একটা দিন দুপুর টাইমে আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু মাছ ধরতে বের হয়েছিলাম। এসে উপস্থিতি হলাম সে ব্রিজের নিচে। ব্রিজের পাশে এখন মাটি ভরাট করে খাল খননের অফিস নির্মাণ হয়েছে। পাশে একটি পুকুর, পুকুর পাড়ে মাছের খাবার রাখা ঘর ইত্যাদি। তার অপজিটে একটি বটগাছ এখনো রয়েছে।


IMG_20231124_162228_881.jpg

IMG_20231124_162315_165.jpg

IMG_20231124_162700_979.jpg



আমরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ব্রিজের পাশের গর্তগুলোতে মাছ ধরলাম। মাছ ধরতে ধরতে বিকেল হয়ে আসলাম। জায়গায় জায়গায় পানি বেশি ছিল, পানিগুলো দূর করে মাছ ধরছিলাম সেই জন্য বেশি দেরি। কিন্তু হঠাৎ কখন যে আকাশে মেঘ জমে গেছে, আমরা খেয়াল করিনি। যেহেতু ছোট ছিলাম, তাই এত কিছু আমাদের মাথায় খেলেনি। হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় উঠে পড়ল। আমরা প্রথমে ব্রিজের নিচ থেকে উঠে বাড়ির দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম। এরপর আমাদের মধ্য থেকে একজন বলল বাড়ি পৌঁছাতে পারবো না, বটগাছের নিচে বসি। তখন বট গাছের পাশ দিয়ে জলাবদ্ধ পুকুর মতো ছিল। রাস্তায় মাটি দেওয়ার কাজে সে জলাবদ্ধর শুকিয়ে গেলে সেখান থেকে মাটি তুলে রাস্তায় দেয়া হতো,তাই রাস্তার পাশ দিয়ে লম্বা এমন নিচু স্থান ছিল। এখন মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করে উঁচু করে ফেলেছে। তবে যাই হোক আমরা সবাই বন্ধুরা মিলে বট গাছের নিচে আশ্রয় নিলাম। কিন্তু রাস্তার ধুলাবালি আমাদের চোখে মুখে লাগতে থাকলো প্রচন্ড বেগে। আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন পন্ডিত আবার গাছে উঠে বসতে থাকলো। গাছের মোটা মোটা ডালের আড়ালে বসে থাকলে গায়ের ধুলাবালি লাগবেনা এমন চিন্তায়।


IMG_20231121_065340_5.jpg

IMG_20231124_162759_232.jpg



কিন্তু গাছে উঠেও কোন ফায়দা হলো না। এরপর হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এমন মুহূর্তে আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। আমাদের বাড়ি ওখান থেকে অনেক দূরে। আমারা ছোট মানুষ। রাস্তার পাশে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। অনেক দূর অতিক্রম করে স্কুল তার আরও দূর অতিক্রম করে একটা ঘর মেলে। তাই আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বুদ্ধি করলো, বলল চল আমরা ব্রীজের নিচে দাঁড়ায়। কিন্তু ব্রিজের নিচে ছিল পায়ের টাকলু পুঁতে যাওয়ার মত কাঁদা। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই, যেমনি ঝড়-বৃষ্টি আর বিদ্যুৎ চমকানো। হঠাৎ করে এমন অবস্থা হয়ে যাবে আমরা ভাবতেও পারিনি। আমরা সবাই মিলে চলে গেলাম ব্রিজের নিচে, ব্রিজটা তেমন মোটা বা দৈর্ঘ্য প্রস্থ বেশি নয়। তবে সেখানে ১০-১৫ জন মানুষ অনায়াসে লোকাল বাসের মতো দাঁড়ানো যায়। কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলাম। চোখের সামনে জোরে জোরে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকলো। আমরা আগে থেকেই ভিজে গেছিলাম। এদিকে ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থেকেও বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছিলাম। কারণ এলোপাতাড়ি বাতাসে গায়ে পানি এসে লাগতে থাকলো। এই মুহূর্তে আমরা কতটা যে অসহায় অবস্থায় ছিলাম কাউকে বুঝাতে পারব না। চোখের সামনে যে জায়গায় পানি দূর করেছিলাম সেই জায়গা পানি পূর্ণ হয়ে গেল বৃষ্টির পানি আর আশেপাশে থেকে সেই পানি গড়িয়ে এসে। আমরা যে বেশি মাছ পেয়েছি তা কিন্তু নয়। এরপর আমাদের পায়ের নিচে পানি এসে পুরে গেল। আমরা ভয় করতে থাকলাম,পানিতে পানিতে না জানি জোক এসে আমাদের গায়ে লাগে। এর অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি থামলে। তারপর আমরা রাস্তায় উঠলাম। রাস্তা তখন কাঁচা রাস্তা, যত পা ফেলি তত পা যেন কাদায় জুতা হয়ে যেতে লাগলো। চলতেও বেশ কষ্ট হলো আমাদের। সামনে এগিয়ে যেতে দেখলাম বেশ কিছু গাছের মোটা মোটা ডাল ভেঙে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। যেদিকে লক্ষ্য করছিলাম কোন জন-মানুষ নেই। শুধু ফাঁকা কাচা রাস্তার মাঝখানে আমরা কয়েকজন ছোট ফোর ফাইভে পড়া মানুষ। এরপর অতি কষ্টে আমরা সবাই কাদার রাস্তা পার হয়ে স্কুলের পাশে হাই রোডে উঠলাম। অতঃপর সবাই বাড়ির দিকে চলে আসলাম। এদিকে আমাদের সবার বাড়ির গার্জিয়ানরা আমাদের জন্য অস্থির। সে কখন বাড়ি থেকে বের হয়েছি কোথায় গেছি কেউ জানতো না। শুধু একটুকু জানতো মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। তাই বাড়ির মানুষ বেশি আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি আর বাজ পড়েছিল বলে। তবে যাই হোক ভালোভাবে আমরা সবাই বাড়ি ফিরেছিলাম।


IMG_20230310_161554_619.jpg

IMG_20231124_162810337_BURST0002.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিঘটনাস্থল এরিয়া
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

ছোটবেলায় মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ার চমৎকার একটি স্মৃতিময় গল্প শেয়ার করেছে তুমি। যখন ঘূর্ণিঝড় হয় তখন ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়েও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। আর এরকম পরিস্থিতিতে বাড়ির অভিভাবকরা দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হবে এবং আতঙ্কিত হবে---এটাই স্বাভাবিক। দারুন একটি শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 5 months ago 

পুরা গল্পটি পড়ে বুঝতে পেলাম মাছ ধরতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। ছোট ছিলেন জন্য আকাশের ভাবগতিক বুঝতে পারেনি।বট গাছের তলায় আশ্রয় দিয়েছেন কিন্তু ধুলাবালির কারণে থাকতে পারছিলেন না।বুদ্ধি করে ব্রিজের নিচে গেছিলেন যা উপস্থিত বুদ্ধিটা বেশ ভালো ছিলো। কারণ আশেপাশে না ছিলো বসত বাড়ি আবার আপনাদের বাড়িও খানিকটা দূরে।ব্রিজের নিচে গিয়েও জোকের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। সব মিলিয়ে ভয়াবহ একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন আপনারা। ধন্যবাদ ভাইয়া শৈশবের মাছধারার স্মৃতিচারণ করে পোস্টটি আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 5 months ago 

হ্যাঁ আপু। তবে অবশেষে ব্রিজের নিচে গিয়ে ঠাই মিললেও ভয় কিন্তু যায়নি।

 5 months ago 

শৈশবে মাছ ধরা সুন্দর একটি কাহিনী আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এমন পরিবেশের সম্মুখীন আমিও একদিন হয়েছিলাম। আসলে ছোটবেলায় আবহাওয়া সম্পর্কে সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এরকম পরিবেশে সম্মুখীন হতে হয়। যেহেতু ওই সময় জোরে জোরে বাজ এবং বৃষ্টি পড়ছিল। তারপরও আপনারা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন এটাই অনেক।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কম বেশি সকলের রয়েছে আশা করি।

 5 months ago 

জ্বি ভাই এমনটা সবার সাথে হয়েছে বলে আমি মনে করি।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

এরকম ঝড় বৃষ্টি হলে বাড়ির গার্জিয়ানরা অস্থির হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনাদের প্রথমদিকে বটগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ানোটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু বিদ্যুৎ চমকাতে পারতো। আর আপনার বন্ধু যে গাছের মাথায় উঠে বসে পড়লো ঝড়ের সময়, সেটাও কিন্তু অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তবে আপনারা যে ব্রিজের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এটা কিন্তু একদিক থেকে ঠিক ছিল। এতে করে বড় গাছপালা ভেঙে পড়লেও হয়তো আপনাদের গায়ের উপর সেগুলো পড়তো না। আসলে এরকম সিচুয়েশনে আমি একবার পড়েছিলাম। তাই আমিও বুঝি এই মুহূর্তে কি রকম অনুভূতি হয়।

 5 months ago 

হ্যাঁ ভাই এটা কিন্তু আমাদের জন্য কঠিন মুহূর্ত ছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 59060.44
ETH 2608.94
USDT 1.00
SBD 2.43