নবান্ন উৎসব
গতপর্বে:
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই উৎস কে কল দিলাম।এরপর রেডি হয়ে অল্প সময়ের মাঝেই চলে আসল। দুইজন মিলে চলে গেলাম মেলায়। মেলায় পৌছাতে ১০মিনিট লাগল।গিয়ে দেখলাম মেলায় লোকে লোকারণ্য। প্রথমেই দেখলাম একটি অস্থায়ী ছাউনীতে গরম গরম জিলাপী ও মিষ্টি বানানো হচ্ছে।দেখেই জিভে জল চলে আসল,কিন্তু নবান্নের দিনে আজ নতুন চাল,ফসল ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা না পর্যন্ত কিছু খাওয়া যাবে না।তাই জিভে জল চলে আসলেও খাওয়ার উপায় ছিল না।
এরপর একটু এগোতেই দেখতে পেলাম কিছু কসমেটিক ও ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান।এরপর ভিড় ঠেলে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম।
বর্তমান পর্বে:
যতই এগিয়ে যেতে থাকলাম মানুষ আর দোকানপাটের ভিড় যেন বাড়তেই থাকল।এই বিশৃঙ্খলার মাঝেও একটা শৃঙ্খলা ছিল।প্রত্যেক জিনিসের দোকানের আলাদা আলাদা ভাগ ছিল।অর্থাৎ যেখানে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছিল সেখানে শুধুই মিষ্টি,যেখানে শাক সবজী বিক্রি হচ্ছিল সেখানে শুধুই শাক সবজী। আমরা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।কারন আমাদের উপর কেনাকাটার ভার নেই। ওগুলো বাড়ির বড়রা করবে। আমরা এসেছি মেলা দেখতে আর অল্প নতুন চাল নিতে।
এবার ভিড় বেশি হলেও অন্যবারের তুলনায় লোকসংখ্যা অনেক কম ছিল।এর কারন হয়ত দুইটি একটি হল অবরোধ হরতালের কারনে মানুষের অর্থনৈতিক মন্দা,দ্বিতীয় কারন হল এখানে সব জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। যে জিনিস বাজারে ১০০ টাকা সেটা এখানে ১৪০-১৫০ টাকা। তাই এখানে শুধু শৌখিন মানুষরাই বাজার করে। বাকিরা আমার আর উৎসের মত দর্শনার্থী।
আর দর্শনার্থীরাও রয়েছে বিভিন্ন বয়সের। বাচ্চা থেকে বুড়ো সব বয়সের লোকজনই ছিল।ছোট বাচ্চারা বাবার হাত ধরে চলে এসেছে মেলা দেখতে। বড়রা কেনাকাটা করছে আর তারা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে, কেউ বা আবার খাবার জিনিস খেলনা কেনার জন্য বায়না করছে।
মেলার সব জায়গায় মোটামুটি ভিড় থাকলেও সব থেকে বেশি ভিড় দুইজায়গায়। প্রথমত দই চিড়ার দোকানে আর দ্বতীয় মাছ বাজারে। আমি মাছ খাইনা, তাই মাছের প্রতি আগ্রহও নেই। কিন্তু মাছের বাজারে গিয়ে বড় বড় মাছ দেখে মনে হল যেকোন শৌখিন লোক মাত্রই এই বাজারে আসলে মাছ না নিয়ে ফিরে যাবে না। বলে রাখা ভালো ঐতিহ্যগত ভাবেই নবান্নে মাছই খাওয়া হয়,মাংস খাওয়া হয়না।
আর দই চিড়াটাও ঐতিহ্যগত খাবার। নবান্নের খাওয়াদাওয়া হয় সাধারণত শেষ বিকাল বা রাতে। সকাল বেলা সবাই বাজার করে নিয়ে যাবে।তারপর নতুন চাল,সব্জী ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করে তারপর কোটাবাছা করে তারপর রান্না। যেহেতু নবান্ন করা হয় পুরোপরিবার একসাথে তাই অনেক জনের রান্নাতে সময় লাগে।এত সময় খালিপেটে থাকা একটু চাপের তাই ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করা নতুন চাল, সবজী খাওয়ার পর দই, চিড়া,গুড় দিয়ে সকালের নাস্তা সারা হয়। এজন্যই এই দিন দই চিড়ার এত কদর।যাই হোক এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি চলে আসলাম।নতুন চাল নিয়ে।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নবান্ন উৎসব নিয়ে বেশে সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন দাদা। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। গ্রামগঞ্জে এখনও নবান্ন উৎসব বেশ ঘটা করে পালিত হয়ে থাকে। যদিও দিন দিন আয়োজন গুলো কমে যাচ্ছে। আপনার এলাকার নবান্ন নিয়ে মেলার বর্ননা বেশ ভালো লেগেছে। আপনি ঠিকই বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা কম থাকায় গতবারের তুলনায় ভীড়ভাট্রা কম মেলায়। তার উপর হরতাল-অবরোধ। শুভ কামনা আপনার জন্য।
উৎস ভাইয়ের সাথে আপনি মেলায় ঘুরাঘুরি করেছেন দেখে বেশ ভালো লাগছে। তাছাড়া এটা ঠিক বলেছেন সৌখিন মানুষ এবং টাকাওয়ালা মানুষরাই মাছ বাজার থেকে বড় বড় মাছ কিনবে। মাছগুলো দেখে সত্যিই বেশ বড় মনে হচ্ছে। তবে এরকম শাকসবজি বা মাছের মেলা হলে কিছু না কিছু কিনতে ইচ্ছে করেই। মেলায় কিন্তু বিভিন্ন বয়সের মানুষ দেখা যায়। তবে আপনারা শুধুমাত্র নতুন চাল কিনে ঘরে ফিরেছেন এবং খাওয়া-দাওয়াও করেননি ঈশ্বরকে ভোগ দিবেন বলে। মোটামুটি দর্শনার্থী হয়ে বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন মনে হচ্ছে।
নবান্ন মানেই হলো নতুন চালের আগমন।তার সাথে তো এখন শীতকাল এসেছে তাজা তাজা শাক-সব্জির সময়। সবকিছু মিলিয়ে বেশ সুন্দর মেলার আয়োজন হয়েছে।তার পাশাপাশি বাচ্চা এবং মেয়েদের জন্য কসমেটিক্স এবং খেলার সামগ্রী রয়েছে। গরম গরম জিলাপি দেখলে কার খেতে ইচ্ছে না করবে, আমি নিজেই তো বসে খেয়ে ফেলবো। তবে আপনারা তো ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা না পর্যন্ত কিছু খাবেন না,যার যার ধর্ম রীতি অনুযায়ী ভিন্ন বিষয় তা পালন করতেই হবে। খুব ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পড়তে পেরে, কেনাকাটা ভারী কিছু না করলেও ঘুরতে পেরেছেন এটাই তো আনন্দের বিষয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।