কটকটি ওয়ালা

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব শৈশব স্মৃতি

উপরের ছবিটাতে দেখতে পাচ্ছেন একজন লোক,একটি ভার নিয়ে বসে আছে।ছবিটা খুব সাধারণ, ছবির মানুষটা আরো সাধারণ।কিন্তু এই ছবির পেছনের যে গল্পটা থাকে সেটা কিন্তু আলাদা থাকে।এই চাচার দুই ভারে আটকে আছে আমাদের শৈশব। ওপার বাংলার পাঠকদের কথা জানিনা।কিন্তু এপার বাংলার যারা আছেন তারা নিশ্চয় চিনতে পারছেন,বা আন্দাজ করতে পারছেন ইনি কে? দু:খিত ভুল বললাম ইনার পেশা কি?

হ্যা ঠিকই ধরেছেন ইনি একজন কটকটিওয়ালা।এলাকা ভেদে হয়ত নাম ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি শৈশবে ইনার সাথে জড়িত স্মৃতি সবার একই। প্রথমে এই চাচার নাম জানাই। চাচার নাম সাত্তার। বাড়ি ফুটানি বাজার। শহর থেকে প্রায় ৭কি.মি. দুরে।চাচার ভাষ্য অনুযায়ী চাচার বয়স ৭০।আমি জানিনা সত্য নাকি মিথ্যা। তবে সেই বাল্যকাল থেকে চাচার বয়স এমনই দেখে আসছি।সেই শৈশবের স্মৃতির মত চাচার বয়স ও মনে হয় আটকে আছে সেই অতীতে।

আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি শেয়ার করি। আমার জন্ম গ্রামে।গ্রাম বলতে গ্রামই,যেখানে শহরের ছিটেফোটা পর্যন্ত নাই।না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা।করতোয়া নদী পার হয়ে,১০মিনিট হাটার পর পাওয়া যেত শহরে যাওয়ার ভ্যান।তাই বলতে পারেন আমার বড় হওয়া শহরে হাওয়া বাতাসের বাইরে। আবার সেই সময় এমন সময় ছিল যখন বাবা মা ছেলে মেয়েদের হাতে টাকা পয়সা দিতেন না।

তখন আমাদের একটু আধটু বাদাম, চানাচুর খাওয়ার টাকা চাইতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হত,কান্নাকাটি তো কান্নাকাটি মাঝে মাঝে মাটিতে গড়াগড়ি পর্যন্ত করতে হত। তারপরেও সব দিন মাতৃদেবীর মন গলতো না।উলটো দুইচার টি উত্তম মধ্যম জুটত। তখন আমাদের কাছে নির্ঘাত স্যান্টা ক্লস এর মত ছিলেন এমন কটকটি ওয়ালারা। কারন ইনাদের কাছে বাদাম,চানাচুর,আচার পাওয়া যেত একদম বিনাপয়সায়। বিনাপয়সায় বললাম,তার মানে একদম ফ্রিতে দিতে যে তা নয় কিন্তু।

কারন এটাই উনার রুটি রুজি। ফ্রি দিলে তো আর পেট চলবে না। উনারা টাকার বদলে নিতেন বাড়ির ভাঙ্গা-চুরা প্লাস্টিক, বোতল,লোহা-ধাতুর জিনিসপত্র,রদ্দি-কাগজ।আমার ছোট বেলায় খুব কৌতুহল হত।যেসব জিনিস আমরা ফেলে রেখেছি তা এই লোক নেয় কেন? আর বিনিময়ে আবার, খাবার ই বা দেয় কেন? যাই হোক আমি ছোট থেকেই একটু বোকা। ও কিছু মনে করবেন না।যাই হোক এই কটকটিওয়ালাদের ডমরুর মত একটা বাজনা থাকত। পাড়ায় ঢোকার সাথে সাথেই সেটা বাজাত।

এটা শুনলেই ছেলেপেলেদের মাঝে যেন আলাদা একটা জোশ চলে আসত। সবাই ছুটত কোথায় ভাঙ্গাচুরা কি আছে তা জোগাড় করতে।এটার সাথে অনেকটা হ্যামোলিনের বাশিওয়ালার বাশির শব্দের মিল পাওয়া যায়। যেটা শুনে ছেলেরা তার পিছে পিছে ছুটে গিয়েছিল।যাই হোক ছেলেপিলেরা যে শুধু ভাঙ্গা জিনিসই আনত তা নয়,আমার এক বন্ধু ওর বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে ভাল হাড়িপাতিল নিয়েও হাজির হত। এর জন্য ও কম মার খায়নি।কিন্তু কটকটিওয়ালা আসলে ও বেমালুম ভুলে গিয়ে আবার একই কাজ করত।

অনেকে হয়ত হাইজিন এর বিষয়টা ভাবছেন,যে হাতে ওসব ভাঙ্গাচুড়া জিনিসপত্র ধরত সেই হাতেই খাবার জিনিস দিত। কিন্তু ছোটবেলায় হাইজিন টা নিয়ে কে মাথা ঘামাতো। কেইবা পেটখারাপ হবে ভয়ে মজার খাবার মিস করতে চায়। যাই হোক আজকে একটা কাজ সেরে বাসায় আসছিলাম।বৃষ্টি পড়ছিল,কিন্তু বরাবরের মতই আমি কেয়ারলেস।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই ফিরছিলাম। আর তখনই এই চাচার দেখা। বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য একটি ভবনের ছাদের আলসের নিচে বসে আছেন। অনেক দিন পর দেখা হল। হাল-হকিকত জিজ্ঞাস করার পর একটি ছবি তুলে রাখলাম অনুমতি নিয়ে। কখন যে ছোট বেলার এই আনন্দের ফেরিওয়ালারা হারিয়ে যায় বলা তো যায় না।

ব্লগেও পোস্ট করে রাখলাম,যদি ভবিষ্যতে কখনো কেউ সার্চ করে তবে সেও এই জাদুকরের দেখা পাবে।যারা রদ্দির বিনিময়ে ছোট-ছেলেমেয়েদের মুখে ফুটিয়ে তুলত হাসি।

আজকের স্মৃতিচারণা এপর্যন্তই।জানিনা আপনারা বিরক্ত হলেন কিনা,যদি বিরক্ত হন তবে দু:খিত।ধন্যবাদ সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

দাদা আপনার এই পোস্টটি পড়ে শৈশবের অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। আমার শৈশবটাও ঠিক আপনার মতোই কেটেছে। আসলে ছোটবেলায় তো এটাই মনে থাকতো না যে কিছু খেলে পেট খারাপ হবে। শুনেছি না জেনে নাকি সাপের বিষ খেলেও হজম হয়ে যায়। আর এটা তো শৈশবের শখের কটকটি ভাজা। আমার জীবনেও ঠিক এমন একজন কটকটিয়ালা আছে যাকে শৈশব থেকে দেখছি এখনো কটকটি বিক্রি করে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া কটকটি ওয়ালার সাথে সবার পরিচিত আছে। সত্যিই তো অনেকেই বাড়ির ভাঙ্গাচুরা বাদে ভালো জিনিস দিয়ে কটকটি খেত। আর ছোটবেলার কটকটি দেখে পেট খারাপ হবে এই ভেবে মাথা ঘামানোর সময় ছিল না।যাইহোক ভাই আপনার পেস্ট করছিলাম আর ছোটবেলার স্মৃতি মনে করছিলা। সত্যি এমন স্মৃতি সবার জীবনে জড়িয়ে আছে ধন্যবাদ ভাইয়া।

 11 months ago 

কটকটি ওয়ালা নামটি শুনেই শৈশবের পছন্দের জিনিস এর নাম মনে পড়ে গেলো। আসলে শৈশব আমরা যে কত কটকটি ওয়ালা কাছে থেকে কটকটি খেয়েছি তা বলে বোঝানো মুশকিল। তবে বেশ জমিয়ে কটকটি খেতাম। এমনকি মায়ের মাথার চুল দিয়ে ও কটকটি খেয়েছি। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।

 11 months ago 

আসলেই যেন হ্যামীলিয়নের বাঁশিওয়ালার গল্পই বললে পোস্ট জুড়ে.... এখনো যে কটকটিওয়ালা রাস্তায় বের হয়, তা তোমার পোস্ট দেখে জানলাম। আমি যদিও শহরে বড় হয়েছি বলে তেমন একটা পাই নি এদের দেখা। তবে গ্রামের বাড়িতে গেলে মাঝে মধ্যে এদের দেখা পেতাম। আর বাবার বা বড়দের মুখেও অনেক গল্প শুনেছি/এখনো শুনি। তোমাকে ধন্যবাদ বৃত্ত এত সুন্দর স্মৃতিগুলো শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আমাদের শৈশবের দারুণ একটা বিষয়ে আজ লিখেছেন ভাই। সত্যি বলতে আমাদের সবার জীবনেই একরকম একজন কটকটিওয়ালা আছে। এটা দেখে আমাদের এলাকায় আসা কটকটিওয়ালা কুদ্দুস কাকার মনে পড়ে গেল আমার। যদিও উনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু ক্রমেই এই কটকটিওয়ালা আমাদের মাঝে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আপনার শৈশবের কথাগুলো শুনে বেশ ভালো লাগল ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আপনার মন্তব্যটি অনেক সুন্দর ছিল।এভাবেই স্মৃতিতে বেচে থাক আমাদের শৈশব।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আপনার পোস্টটি পড়তে গিয়ে নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় এই কটকটি ওয়ালার সাথে আমাদের কমবেশি সবারই পরিচয় আছে। অনেক ভাঙা-চুরা,প্লাস্টিক দিয়ে অনেক খাবার কিনে খেয়েছি। আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 11 months ago 

অনেক উৎসাহিত হলাম আপনার মন্তব্য থেকে।ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

পোস্ট টি পড়তে পড়তে ছোটবেলায় হারিয়ে গেছিলাম।কটকটি গ্রামের বাচ্চাদের একটি খুব প্রিয় খাবার ছিলো সহজলভ্য ও ছিলো।এখন কটকটি আওলা আসে গ্রামে মাঝে সাঝে।ছোট বেলায় খেয়েছি এখন মেয়েকে কটকটির সাথে পরিচয় করে দেই না কারন ঐ যে নোংরা হাতে দেয় কটকটি।এখনও গ্রামে টিন ভাংগা চুড়ায় নেন কটকটি আওলারা,তবে টাকার বিনিনয়েও দিয়ে থাকেন।

 11 months ago 

ভাল করেছেন।হাইজিন বড় বিষয়। ধন্যবাদ মামি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59934.86
ETH 2666.82
USDT 1.00
SBD 2.45