প্রযুক্তির গ্রাস
ডিজিটাল প্রিন্টের যুগে এসে সুধাংশু বাবুর কথা খুব মনে পড়ছে। ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল সেই শৈশবে। বিশেষ করে ছাত্র অবস্থায় থাকার সময় স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ব্যানার গুলো তার কাছ থেকে লিখে নিয়ে আসতাম। কি দারুণ ছিল তার হাতের লেখা, রং তুলির ছোঁয়ায় প্রতিটি কাপড়ের ব্যানারে যেন বিভিন্ন রকমের বার্তা জ্বলজ্বল করতো।
৩২ বছরের জীবনে এ শহরটার কত পরিবর্তন দেখেছি, সবকিছুতে যেন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেই আছে। চতুর্দিকে আজ উঁচু উঁচু দালানকোঠা, অতিরিক্ত জনবসতিতে পুরো গিঞ্জি হয়ে উঠেছে শহরটা। সময়ের পরিবর্তনে কত রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার কোন হিসাব নেই।
আজ মুহূর্তেই সুধাংশু বাবুর কথা বারবার মনে হচ্ছিল। হঠাৎই যখন সন্ধ্যেবেলা বড় রাস্তার পাশ দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম তখন সুধাংশু বাবুর দোকানের দিকে চোখ পড়েছিল, তবে দুঃখের বিষয় দোকানটা এখন আর নেই। কে রাখে কার খোঁজ, এই ব্যস্ত শহরে।
একসময় প্রচুর ভিড় লেগেই থাকতো এই জায়গাটায়। বিশেষ করে, যারা পা চালিত নতুন রিকশা কিনতো তারাই মূলত সর্বদা দোকানটাতে আসতো। নানা রকম ছবি অংকন কিংবা সতর্কীকরণ বার্তা লিখে নিয়ে যেত রিকশার পিছনে।
তাছাড়া অফিস-আদালত,স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন তো প্রতিনিয়ত ব্যানার লিখে নিতে আসতোই। আচ্ছা সুধাংশু বাবুর মতো যারা এমন কর্মের সঙ্গে আগে থেকেই যুক্ত ছিল, তাদের এখন কি খবর।
এখন তো কেউ আর কাপড়ের ব্যানারে কোন কিছু রং তুলি দিয়ে লিখে নিতে চায় না। এত সময় ব্যয় করার কারোই যেন কোন ইচ্ছে নেই। সবাই এখন খুব দ্রুত, প্রযুক্তির সাহায্যে ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিনের মাধ্যমে সব কিছু দ্রুত ছাপিয়ে ফেলছে।
এমতাবস্থায় একটা বিষয় আমার মাথায় খুব ভালোভাবেই ঢুকে গিয়েছে, তা হচ্ছে সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে যদি নিজেকে মানানসই করে না নেওয়া যায়, তাহলে বড্ড পিছিয়ে থাকতে হয় কিংবা কালক্রমে হারিয়ে যেতে হয়।
সুধাংশু বাবু কোথায় আছে, কেমন আছে কিংবা কিভাবে তার এখন জীবন জীবিকা চলছে, সেটা নিয়ে ভাবতেই যেন অনেকটা গুলিয়ে যাচ্ছি। তবে সময়ের পরিবর্তনে জনপ্রিয় মেধাবী মানুষটা যে আজ হারিয়ে গিয়েছে , তা বুঝতে আর বাকি নেই।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
যুগের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে সুধাংশ বাবুর মত আর অনেক মানুষের কর্ম ক্ষেত্রও। এ কথা সত্য যে এখন আর কেউ কাপড়ের ব্যানারে কোন ডিজাইন করায় না। এখন তো যুগের হাওয়া পরিবর্তন হয়ে গেছে। ধন্যবাদ ভাই এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু বিষয়টি বুঝতে পারার জন্য।
আসলে দাদা এখন আর ওইভাবে কেউ ব্যানার বানায় না। এজন্য সুধাংশু বাবুর মতো যারা ছিলেন তারা হয়তো এখন আর এই কাজের সাথে লিপ্ত নেই খুব বেশি একটা। এখন তো দাদা ডিজিটাল প্রিন্ট মেশিন চলে এসেছে। এতে করে কাজও সহজ হয়ে গেছে আর সস্তাও হয়ে গেছে। আসলে আজ থেকে বহু বছর আগে হাতের লেখা ব্যানারের অনেক চাহিদা ছিল, যেটা এখন হয়তো অতটাও নেই।
সময়ের পরিবর্তনে সব হারিয়ে গিয়েছে ভাই।
এই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগতো ভাই। বিশেষ করে রিকশার পিছনে ছবি অঙ্কন করা থাকলে দেখতে দারুণ লাগতো। এখন তো এসব একেবারেই দেখা যায় না। আসলেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে না চলতে পারলে অবশ্যই পিছিয়ে পরতে হয়। কাপড়ের ব্যানার তো এখন একেবারেই দেখা যায় না। কারণ সবকিছুই তো দিনদিন আপডেট হচ্ছে। সামনে আরও কতকিছু যে দেখবো সেটাই ভাবছি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা একদম ঠিক, সামনের দুনিয়ায় যে আরো কি অপেক্ষা করছে, কে জানে তা।
সুধাংশু বাবুর মত মেধাবী মানুষরা হয়তো এভাবেই হারিয়ে যান। আমরা তাদের খবর রাখি না। যখন আমাদের প্রয়োজন ছিল তখন তার খবর রেখেছি। কিন্তু প্রয়োজন যখন ফুরিয়ে গেছে কিংবা প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে তখন সেই গুণী মানুষটির খবর আর কেউ রাখেনি। তিনি এখন কেমন আছেন সেই খবরও কারো কাছে জানা নেই।