ফাঁদ
দুপুরবেলা ভরপেট খেয়ে কোন রকমে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই জুনায়েদের মুঠোফোনটা বেজে উঠলো । এমন অলস দুপুরে বিশ্রামের সময় ফোন কলটা তার সত্যিই বিরক্ত মনে হচ্ছিল। অবশেষে বিরক্তি কাটিয়ে যখন, কোনরকমে কলটা রিসিভ করল, তখন যেন সে এক প্রকার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মিষ্টি কন্ঠে ক্রমাগত ইংরেজি বলে যাচ্ছিল, অজানা এক মেয়ে। জুনায়েদের সবেমাত্র অনার্স সম্পন্ন হয়েছে। এখনো বাপের হোটেলে রীতিমতো দিব্যি খেয়ে যাচ্ছে, নিজে যে কর্মের একটা ব্যবস্থা করবে তেমনটা অবস্থাও তার এখনো নেই।
এই বয়সটা বড্ড জটিল একটা গোলকধাঁধার ভিতরে ফেলে দিয়েছে জুনায়েদকে, না পারছে কোন কর্ম যোগাতে, না পারছে পরিবারকে সহযোগিতা করতে। বড্ড সিদ্ধান্তহীনতায় তার দিনকাল যাচ্ছে।
ইংরেজিতে বারবার বলার চেষ্টা করছিল, আমাদের কোম্পানি নতুন ভাবে এদেশে শাখা খুলেছে, মূলত আমরা তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আপনি যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পার্ট টাইম কাজ করতে পারেন। আয়ের পরিমাণটাও বেশ ভালই, দৈনিক আপনাকে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
জুনায়েদের চোখে মুখে যেন মুহূর্তেই আনন্দের ছাপ দেখা দিয়েছে, সে হিসেব করে দেখলো দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা হলে, মাসে তার ইনকাম হচ্ছে দেড় লাখ টাকা।
জুনায়েদের মত আমরা আসলে অনেকেই আকর্ষণ প্রবণ স্বভাবের মানুষ, প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গে যেমনটা হয়, তার বাইরে গিয়ে কোন একটু ভিন্নতা দেখলেই, সেখানে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। বিচার বিশ্লেষণ তো দূরের কথা, আগে যেন যুক্ত হতে পারলেই স্বস্তি মেলে।
ইংরেজিতে মেয়েটা বারবার বলছিল, দেখুন আপনি যদি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান, তাহলে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন বাবদ দশ হাজার টাকা এই কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে বিকাশের মাধ্যমে দিতে হবে এবং আপনাকে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলেই আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে, ট্রেনিংয়ের সময়সূচি ও আপনার কার্যবিধি। তাছাড়া আপনি অনেকটাই ভাগ্যবান, কেননা আমাদের কোম্পানি থেকে লটারির মাধ্যমে আপনার ফোন নাম্বারটি মনোনীত হয়েছে।
মেয়েটা ইংরেজিতে এমনভাবে গুছিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছিল, তাতে যেন জুনায়েদ টাকা সন্ধানের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মরিয়া হয়ে পড়েছিল। অবশেষে মাকে যখন বিষয়গুলো বলেছিল, তখন মা কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে জুনায়েদকে টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
সংসারের খরচ বাঁচিয়ে তার মা টাকাগুলো বহু কষ্টে জমিয়েছিল, সেই টাকা নিয়ে যখন সে বিকাশ করতে যাবে, তখন বিকাশের দোকানদার এতগুলো টাকা দেখে জুনায়েদকে প্রশ্ন করেই বসলো, কি খবর জুনায়েদ আজ এত টাকা বিকাশ করছো ঘটনা কি, জুনায়েদ এবার কিছুটা হাসিমুখেই বলে ফেলল তার চাকরির খবরটা।
এবার বিকাশের দোকানদার কিছুটা বিচলিত হয়ে, জুনায়েদ কে বলেই ফেললো, কদিন আগে তোমার মত আর একজন মাঝবয়সী তরুণ আমার এখান থেকে এভাবে বিকাশ করেছিল, তবে পরবর্তীতে সে প্রতারিত হয়েছিল।
এবার যেন জুনায়েদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা, ভাগ্যিস এখনো টাকাটা বিকাশ করেনি, তার মাথার ভিতরে নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক করছিল, সে তো আসলে শুধুমাত্র মেয়েটার কথায় সম্মতি জানিয়েছে, তবে সে তো নিজের থেকে কোন প্রশ্ন তাকে করেনি। কৌতূহল বসত এবার যখন সে একই নাম্বারে ফোন দিয়েছিল , তখনই যেন তার সন্দেহ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
সে আসলে মূলত প্রতারকের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছিল, ভাগ্যিস বিকাশের দোকানদার তার মাথা খুলে দিয়েছিল, নইলে তো বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তাকে হতে হতো।
সমসাময়িক সময়ে এমন ঘটনা আশেপাশে প্রতিনিয়তই ঘটছে, আমরা সবাই চালাক কিংবা সচেতন, তবে তারপরেও প্রতারকের অভিনব কৌশলে পড়ে অনেকেই কিন্তু প্রতারিত হয়েই যাচ্ছে, সুতরাং সাবধান।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গল্পটা পড়ে প্রথমে ভেবেছিলাম জুনায়েদের হয়তো চাকরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যখনই ১০ হাজার টাকার কথা বলল তখনই আমারও সন্দেহ হয়েছিলো। ভাগ্য ভালো বিকাশের দোকানদার এই খপ্পরের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো। তা না হলে তো দশ হাজার টাকা খুইয়ে বসেছিলো। অনেকে লোকজনই আছে এরকম খোঁজখবর না নিয়ে টাকা দিয়ে মোটা অংকের টাকা হারায়। যাই হোক ভাইয়া শিক্ষণীয় একটি গল্প শেয়ার করেছেন। ভালো লাগলো।
আসলেই আপু, জুনায়েদের ভাগ্য ভালো। ভাগ্যিস, বিকাশ দোকানদার তার মাথা খুলে দিয়েছিল।
এমন ঘটনার স্বীকার আমার পরিচিত কয়েকজন হয়েছে। এরা হয়তো শিক্ষিত বেকার চাপে আছে এমন মানুষ দেখেই কল করে। এই ধরনের যুবক এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট বেশি হয়। তবে জুনায়েদের কপাল ভালো ঠিক সময়ে দোকানদার তাকে সাবধান করে দিয়েছে। না হলে সে পুরো টাকা টাই হারাতো।
আপনার পরিচিত যাদের সঙ্গে এমনটা ঘটেছে, সেটা সত্যিই খুবই দুঃখজনক। সচেতনতা বৃদ্ধি বড্ড জরুরি।
হাহাহা! জনেবা তো আমাকেও কল দিয়েছিল। তবে আমার কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। উল্টো কিছু ইংরেজি বানিয়ে শুনিয়ে দিয়েছিলাম। এটা বর্তমানে প্রতারকের অভিনব কয়দা। সোস্যাল মিডিয়াতে এটা নিয়ে দেখলাম বেশ শোরগোল হচ্ছিল। তো জুনাইয়েদ সাহেব যে শেষ অবধি টাকা পাঠায়নি এটা খুবই ভালো লাগলো। বিকাশের দোকানদার না থাকলে তো টাকা পাঠিয়েই দিতো!
আপনার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে জেনে অবাকই হলাম ভাই। বেশ ভালই করেছেন উল্টো ইংরেজি বলে।
ভাই বিগত ৫/৬ মাসে ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে আমার মোবাইলে বেশ কয়েকবার এমন কল এসেছিল। প্রথম দিন তো একটি মেয়ের কন্ঠে ইংরেজি কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। গুড আফটারনুন স্যার বলার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে, আমার হাতে সময় আছে কিনা কথা শোনার জন্য। আমি তো ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি এটা যে ফাঁদ। সাথে সাথে বলেছি যে আমার হাতে সময় নেই এবং কলটা কেটে দেই।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার ম্যাসেজও এসেছিল। ভেবেছিলাম এসব নিয়ে একটি পোস্ট করবো,কিন্তু পরবর্তীতে আর করা হয়নি। যাইহোক বিকাশের দোকানদারের জন্য জুনায়েদ এই যাত্রায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছে। এমন সচেতনতামূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
সচেতনতা ছড়িয়ে যাক সর্বত্র ভাই।
এই কথাটার মাধ্যমে যে কত লোক প্রতারিত হয়েছে দাদা, যার কোন শেষ নেই। আমাদের সমাজে জুনায়েদের মতো অনেক ছেলে রয়েছে যারা এসব ভুলানো কথায় টাকা হারিয়ে বসে থাকে। বিশেষ করে প্রতারকরা বেকার ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে বেশি। তবে শেষ পর্যন্ত যে ছেলেটা সেই ফাঁদে পড়েনি , এটাই সবথেকে ভালো ব্যাপার। আপনার এই পোস্টটা কিন্তু অনেক সচেতনতা মূলক একটি পোস্ট ছিল দাদা।