রক্তযোদ্ধা
মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকেই দেখেছি, যারা প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়, তাদের কাছে রক্ত দান করা এক প্রকার নেশা। এই মানব সেবামূলক নেশা এতটাই গভীর ও তীব্র যে, যা বলে বোঝানো যাবে না।
যদিও সবার মাঝে এই নেশা জাগ্রত হয় না, তবে যারা এই কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে স্বেচ্ছায় জড়িত, তাদেরকে কখনো এ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা যায় না বরং তাদের কার্যক্রম দেখে, অন্য অনেক মানুষরাই উৎসাহ পায়।
এক কথায় বলতে গেলে, এ মানুষগুলোর সম্মান আমার চোখে অনেক ঊর্ধ্বে। যারা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এরকম কাজে জড়িত, তাদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভেচ্ছা জানাই প্রতিনিয়ত।
সেবার সম্ভবত আমরা দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষে পড়ি। যেহেতু পঞ্চমতলা থেকে অষ্টমতলা পর্যন্ত কলেজ একাডেমি আর নিচে হসপিটাল, তাই দেখা যায় অনেক সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকে,তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহিরাগত লোকজন উপরে চলে আসে।
কমিউনিটি মেডিসিন ক্লাস চলছিল, বেশ কঠিন সাবজেক্ট। লেকচারার মশাই তার নিজের গতিতে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে, পুরো ক্লাসরুম যেন নীরব নিস্তব্ধ, হঠাৎই দরজার সামনে এক মাস বয়সী ছেলের আগমন। সবার নজর তখন সেদিকে, এমনকি স্যারের নজরো।
মাছ বয়সী ছেলেটা এবার খুব আকুতি-মিনতি করে বলেই ফেলল, নিচে তার মা হসপিটালে ভর্তি আছে। খানিকবাদেই ডেলিভারি হবে, তবে এখনো একব্যাগ বি নেগেটিভ রক্ত সংগ্রহ হয়নি। তাছাড়া ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত নেই। তাই বাধ্য হয়ে উপরে চলে এসেছি, কি করব বুঝতে পারছি না।
পড়াশোনা তে আমাদের সবার থেকে মনি অনেক পিছিয়ে। ওর আসলে মেডিকেলের এত গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনা মাথায় ঢোকে না বললেই চলে। অনেকটা বাবা-মার মন রক্ষার্থেই এই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে।
এমনিতেই রোজার মাস চলছিল, তার ভিতরে ভোররাত পর্যন্ত ও যে ঠিকমত ঘুমায়নি, তা যেন মনির চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ও মূলত লেকচার গ্যালারি রুমের পিছনে বসে নিজের মতো করে ঘুমোচ্ছিল, হঠাৎই যখন এমন খবর কানে ঢুকেছে ওর , তখন মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে বলল স্যার আমি তাহলে যাই, রক্ত এক ব্যাগ দিয়ে আসি।
মনির এমন কর্ম দেখে সবাই হতবাক হয়েছিল, কেননা নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সহজে কেউ কাউকে দিতে চায় না। তার ভিতরে, ও নিজেও রোজা ছিল। তবে ছেলেটার আকুতি-মিনতি ওর মন গলিয়ে দিয়েছিল। এরপর স্যারের অনুমতি নিয়ে মনি চলে গিয়েছিল ছেলেটার সঙ্গে।
অবশেষে ক্লাস শেষে যখন আমরা নিচে গিয়েছিলাম, তখন জানতে পারলাম সেই ছেলেটার নতুন ভাই হয়েছে, তার মা সুস্থ আছে এবং এদিকে মনি দিব্যি রক্ত দান করে বিশ্রাম নিচ্ছে। মনিকে স্যালুট জানাই অন্তর থেকে, তবে মনির মত যারা এমন মহৎ কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের জন্য ভালোবাসা নিরন্তর।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে ভাই যারা মেডিকেল সাইটে পড়াশোনা করে, তাদের কাছে রক্ত দেওয়া নেশার মত। তারা রক্ত দিতে ভালোবাসে। আর আপনাদের মেডিসিন ক্লাস চলতে ছিল সেখানে এক ছেলে এসে আকুতি করে বি নেগেটিভ রক্তের জন্য,আসলে বি নেগেটিভ রক্ত সহজে পাওয়া যায় না। নেগেটিভ যে কোন রক্ত পাওয়া খুবই কঠিন। আর তার মা ডেলিভারি হবে। তখনই আপনাদের ক্লাসের মনি নামে স্টুডেন্ট যে পড়াশোনা বেশি করে না ঘুমিয়েছে বসে, ওর ভিতরে মানবতা বোধ কাজ করেছিল। আর ওর রক্তে দিলো, ছেলেটি নতুন একটা ভাই হয় এবং মা ছেলে সবাই সুস্থ ছিলো বিষয়টি জানতে পারি খুবই ভালো লাগলো।
রক্ত দান শুধু দান নয় এটা একটা বিশাল দান যার বিনিময় একটা জীবন আবার নতুন করে বাঁচতে পারে ৷ সত্যি তাদের কে স্যালুট যারা রক্ত দান করে ৷ আমি দু-বার রক্ত দিয়েছি ৷ এবং ভবিষ্যৎ তেও কারো প্রয়োজন দিব ৷ কারন একটা জিনিস বিশ্বাস করি ৷ মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য ৷
আপনার ক্লাসের সেই মনি সঠিক কাজ টাই করেছে ৷
তোমার ব্যাপারটা জেনে বেশ ভালো লাগলো ভাই, তোমার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আমার মতে ভাইয়া রক্তদান হলো একটি মহান কর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রক্তদান কর্মকে আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। এত কঠিন একটি সাবজেক্টে ক্লাস নেওয়ার সময় ওই ছেলেটি এসে মিনতি করে বলছিল তার মায়ের নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন ডেলিভারির জন্য। তখন মনি এর স্বেচ্ছায় রক্তদানের কথাটি শুনে সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগলো। মনি সহ সকল রক্তদান যোদ্ধাকে আমি পুনরায় স্যালুট প্রদর্শন করছি।
বিষয়টি বুঝতে পেরে মন্তব্য করার জন্য, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রক্তদাতাদের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের রক্তদানের মাধ্যমেই বেচেঁ যায় একটি প্রাণ, হাজার স্বপ্ন। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে রক্তদাতা স্বেচ্ছাসেবী এখন অনেক। তাদের একটাই লক্ষ্য স্বেচ্ছায় রক্তদান। মনি আপু রক্তদানের মাধ্যমে বেচেঁ গেল মা ও শিশু। বি নেগেটিভ রক্ত এমনিতেও কেউ দিতে চাই না।
সমাজে মনির মত মানুষজন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাক এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
মনির মতো এইরকম হাজার হাজার যুবক আছে যারা রক্তদান করতে সবসময় প্রস্তুত থাকে। কখনো তারা ভয় পাই না। এইটা একটা মজার বিষয় বাংলাদেশে যেখানে পানিও ফ্রীতে পাওয়া যায় না কিনে খেতে হয় সেখানে রক্ত পাওয়া যায় বিনামুল্যে। মনির মতো এইরকম লক্ষ লক্ষ রক্তযোদ্ধা ছড়িয়ে আছে পুরো বাংলাদেশে।
এজন্যই ভাই রক্ত যোদ্ধাদের দেখলে এমনিতেই শ্রদ্ধা ভিতর থেকে কাজ করে।
এই মানুষ গুলো প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা এমনই চলে আসে ৷ যারা এভাবে মানুষের পাশে এসে দারায় ৷ নিজের কথা চিন্তা না করে সবটুকু দিয়ে অন্যের বিপদে সাহায্য করে ৷ আসলে এমন মানসিক মানুষ আজকাল খুবই কম ৷ যারা মনি মতো এমন মানুষ আছে তাদের জন্য ভালোবাসা সম্মান শ্রদ্ধা আমাদের যেনো সব সময় থাকে ৷ ধন্যবাদ দাদা
আসলেই সেদিন মনি বেশ ভালো কাজ করেছিল, ব্যাপারটা এখনো আমাকে বেশ ভাবায়।
আপনার আজকে পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুবই ভালো লাগলো। আসলে যারা মেডিকেল সাইটে পড়ে তারা রক্ত দিতে খুবই ভালোবাসে। কারো বিপদে পড়লে রক্ত দিয়ে থাকে। আপনারা ক্লাস করতে ছিলেন এমন সময় এক ছেলে এসে কান্না শুরু করে দিল, তার মায়ের অপারেশন নেগেটিভ রক্ত লাগবে। আসলে এই নেগেটিভ রক্তগুলো পাওয়া খুবই কঠিন কারণ নেগেটিভ রক্ত মানুষ কম,যার কারণে পাওয়া যায় না। আর আপনাদের ভিতরে যে পড়াশোনা করে না ঘুমায় সেই নেগেটিভ রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচালো। আসলে এরকম মানবতা মানুষের ভিতরে কাজ করে কখনো সেটা বলা যায় না। যাইহোক মা ও সন্তান তখন সুস্থ ছিল এটাই যেন সার্থকতা।
এটা সত্য যে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না। ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি পড়ার জন্য।
আসলেই ভাই নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত কেউ সহজে দিতে চায় না। তাইতো নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না। যাইহোক এমন মহৎ কাজগুলো অবশ্যই বেশ প্রশংসনীয়। সেদিন যদি মনি রক্ত না দিতো,তাহলে হয়তোবা গর্ভবতী মহিলার কোনো বিপদও হতে পারতো। আমি প্রায় ৬ মাস আগে জীবনে প্রথম বারের মতো রক্ত দান করলাম আমার বন্ধুর ওয়াইফকে। রক্ত দান করার পর আসলেই খুব ভালো লেগেছিল। যাইহোক রক্তযোদ্ধারা আসলেই আমাদের গর্ব। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার ব্যাপারটা জেনে বেশ ভালো লাগলো, এমন মহৎ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।