ফুরিয়ে যাইনি
এই তো সেদিন নিজের টেবিলে বসে কাজ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জুবায়ের জানতো না, এই সুবিশাল উঁচু ভবনের মাঝে, তার কাজ করার আজকেই শেষ দিন। ফাইল গুলো ঠিকমতো দেখতে না দেখতেই, বড়বাবুর রুম থেকে ডাক পড়েছে জুবায়েরের।
বড়বাবু লোকটা, কিছুটা মাথা মোটা। সে আসলে যেটা বোঝে, সেটাই সবার মাঝে চাপিয়ে দিতে চায়। কোন রকমে জুবায়ের যখন বড়বাবুর রুমে প্রবেশ করে, সকাল সকাল বড়বাবুর কথা শুনে, জুবায়েরের হাসি মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
এর আগেও দুবার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল জুবায়ের, তবে সেইসব যাত্রায় নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করেছিল। কর্পোরেট চাকরিতে তো এসব টুকটাক হয়েই থাকে,তাই স্বেচ্ছায় মানিয়ে নিয়েছিল। তবে আজ সকালবেলা, জুবায়ের কোনভাবেই নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি বরং বড়বাবুর মুখের উপর সরাসরি বলেই দিয়েছে,আপনার মানসিকতার পরিবর্তন বড্ড জরুরি নতুবা কর্মস্থলে লোকবল কমে যেতে পারে।
জুবায়েরের এমন কথাতে, বড়বাবুর চক্ষু স্থির। সে আসলে অনেকটা, বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছে জুবায়েরের দিকে। এই প্রথম, কর্মস্থলের কেউ হয়তো তার মুখের উপর এভাবে কথা বলল, যেটা হয়তো মানিয়ে নিতে তার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে । রাগে গজগজ করছে,তবে নিজেকে কোনভাবেই শান্ত করতে পারেছ না।
জুবায়ের কোন কথা না বলেই, প্রস্থান করেছে বড়বাবুর রুম। আজ সকালটা তার এমন যাবে, সে যেন কোনভাবেই তা আন্দাজ করতে পারেনি। তবে মনের দিক থেকে সে বেশ হালকা বোধ করছে, যেখানে আসলে আত্মসম্মান নিয়ে টানাটানি হয়, সেখানে আর যাইহোক অহেতুক মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।
কোন রকমে একটা চিরকুট লিখে ফেললো সে,তাতে স্পষ্ট করে লেখা, বড়বাবু এই কোম্পানিতে চাকরি আমি নিজের যোগ্যতা ও চেষ্টায় পেয়েছিলাম, কারো দয়াতে নয়। আমি জুবায়ের চাকরি যেমন পেতেও জানি তেমনটা আবার ছাড়তেও জানি। আপনার মতো মাথা মোটা লোকের সঙ্গে আর যাইহোক, চাকরির মত দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোন অবস্থাতেই করা সম্ভব না। ভালো থাকবেন।
হঠাৎই যখন জুবায়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে মফস্বলে চলে আসে, তখন অনেকেই কানাঘুষা করছিল। তাছাড়া মাঝপথে দীর্ঘ দেড় মাসের বিরতি। যদিও তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল পুনরায় সে নতুন কোন চাকরিতে যুক্ত হবে, তবে এই সময়টাতেই পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থাতে, সে বেশ ভালই তীক্ষ্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল।
জুবায়েরের আত্মবিশ্বাস শুরুতেই যেমন প্রচন্ড প্রখর ছিল, তবে দেড় মাসের বিরতিতে তাতে যেন কিছুটা মরিচা পড়েছিল। আসলে এই কঠিন বাস্তবতার সময়ে, চাকরি ছেড়ে পুনরায় আবার নতুন চাকরি পাওয়া বেশ জটিল বিষয়। তবে সেই জটিল বিষয়কে সমাধান করে ছেড়েছে জুবায়ের।
তাই সে হয়তো, তার সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সমালোচনা কারীদের জবাব দিয়েছে, আমি জুবায়ের এখনো ফুরিয়ে যাইনি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রথমে মনে হলো নিতান্তই কোন গল্প। পড়ে যা বুঝলাম, হয়তো আপনার পরিচিত কারোরই বাস্তবিক কথা! আসলে কর্পোরেট লাইফে একজন ভালো বস পেলে কর্মচারী দের বেশ সুন্দর কাজের পরিবেশ মিলে। তবে বস যদি মাথামোটা হয়, তবে সেই কোম্পানির কর্মচারীদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। আত্নবিশ্বাসী হলেও এভাবে রাগের মাথায় কোন ডিসিশন নেয়া টা আসলেই বোকামো। হয়তো জুবায়েরের অপেক্ষা শুধু দেড় মাসের ছিলো ছিলো বলেই স্টাটাস্টা দিতে পেরেছে। তবে কে জানতো, এই অপেক্ষা দেড় বছরেরও হতেই পারতো! তখন?
এটা অবশ্য মন্দ বলেননি, তবে চাকরি করতে গিয়ে, জীবন যদি নরক হয়ে যায়, তাহলে নিজেকে মুক্তি দেওয়াই শ্রেয়। জীবন থেমে থাকে না, তাই হয়তো দেড় মাসেই সে জুটিয়ে ফেলেছে নতুন কর্মস্থল।
সেটা তো ঠিকই! শুধু চাকরি ক্ষেত্রে নয়, জীবনকে যে সব কাজ নরক বানায়, সে সকল কিছুর থেকেই যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, সরে আসাই উত্তমই বটে!
জুবায়ের সাহেবের এটিটিউড আমার কাছে ভালো লাগলো ভীষণ। নিজের যোগ্যতায় চাকরি আবার নিজের যোগ্যতায় চাকরি থেকে চলে আসা। বর্তমানে চাকরির বাজার খুবই কঠিন। তবে যোগ্যরা সবসময় প্রাধান্য পাবে চাকরির বাজারে। জোবায়ের সাহেবও তাই পেরেছে 🌼
যার ব্যক্তিত্ব যত পরিস্কার, সে ততো এগিয়ে। এমনটা বিশ্বাস আমিও করি ভাই।
প্রথমেই জুবায়ের নামক লোকটাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বর্তমান যুগে এমন লোক খুব কম দেখা যায়। কারণ চাকরির বাজার খুবই খারাপ। আর সেই সুযোগটাই অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়ে থাকে। তারা ভাবে যে আমরা যতই চাপ দেই না কেনো,সেটা মেনে নিয়েই সবাই চাকরি করে যাবে। এসব মানুষদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করার জন্য, জুবায়েরের মতো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক খুবই প্রয়োজন। তবে চাকরি ছাড়ার পর যারা সমালোচনা করেছে জুবায়েরের, তাদেরকে উচিত জবাব দিয়েছে জুবায়ের। আসলে মানুষদের কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
জুবায়েরের ব্যক্তিত্ব আমাকেও অনেকটা মুগ্ধ করেছে ভাই।
আমাদের বর্তমান সমাজে জুবায়েরের মত এরকম সাহসী যুবকের কিন্তু খুব দরকার। যে মুখের উপর বলতে পারে যে, আপনার এই সমস্যা আছে, আপনি নিজেকে সংশোধন করেন। যদিও যারা কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করে তারা সব সময় উচু পোস্টের মানুষের থেকে নির্যাতিত হয়, তবে তারা কিছু বলতে পারেনা চাকরি হারানোর ভয়ে। কিন্তু যাদের মনে চাকরি হারানোর ভয় নেই বা এই সাহস টুকু আছে যে, অন্য কোন জায়গায় আমি ঠিক কাজ খুঁজে নেব তারা আসলে মুখের উপর এভাবে কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। আমার তো মনে হয় ওই কোম্পানির বড় বাবুর যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে, এই কথা শোনার পর।