বিদায় লিটন

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago (edited)

tree-2487889_1280.jpg
source

এ শহরের রিকশা চালক ভাইদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বলতে গেলে অনেকটাই নিবিড়। বিশেষ করে বাসার সামনে চৌরাস্তার মোড়ে যে রিকশা চালক ভাইয়েরা অবস্থান করে, ঠিক তাদের সঙ্গে।

প্রতিনিয়ত বিকেলবেলা করে কমপক্ষে ঘন্টাখানেক হলেও রিকশায় চড়ে বাবু কে সঙ্গে নিয়ে এ শহরের অলি-গলি থেকে শুরু করে এদিক সেদিক ছুটে বেড়ানো আমার অনেকটা পুরনো অভ্যাস।

দিন যত গড়িয়ে গিয়েছে, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা ক্রমশ পরিবর্তন হয়েছে। মুঠোফোন ভর্তি কতো যে রিকশাচালক ভাইয়ের নাম্বার আছে, তা বলা মুশকিল ।

মাঝে মাঝেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, বাসার গলির সামনে বের হলেই, অনেকেই একসঙ্গে আমাকে নেওয়ার জন্য ছুটে আসে। আমি অবশ্য সবার রিকশাতেই কমবেশি চড়ার চেষ্টা করি।

এইতো বিগত সপ্তাহেই বেশ দীর্ঘ সময় ধরে লিটনের রিকশায় ঘুরে বেড়িয়েছে। বয়স কতই হবে ছেলেটার আর যাইহোক কোন অবস্থাতেই ত্রিশ অতিবাহিত হবে না।

যেহেতু আমি বাবুকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করি আর ওরো আমার বাবুর মত ছোট বাচ্চা আছে, তাই বলা যায়, ওর পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনের কথা আমার সঙ্গে প্রায়ই ভাগ করে নিত। মাঝে ও আমাকে বলেছিল, ভাই দিনদিন পারিবারিক সমস্যা কিছুটা বেড়েই যাচ্ছে, হয়তো শ্বশুরবাড়ির দিকে গিয়ে থাকবো। শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও ছিল ও । চেষ্টা করছিল সেখানেই নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য।

যেহেতু ওর ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ছিল, তাই আর যাইহোক ভাতের জন্য কখনোই ওকে চিন্তা করতে হতো না। শ্বশুরবাড়ির এলাকায় গিয়ে বেশ ভালই রিকশা চালাচ্ছিল ও । তবে বেশি ভালো কপালে সহ্য হয়নি। গত কয়েকদিন আগে রাত্রিবেলা মহিমাগঞ্জ থেকে ফাঁসিতলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে দু-থেকে তিনজন লোক, ওর রিকশা ভাড়া করে।

অবশেষে যখন রাত্রিবেলা লোকগুলোকে নিয়ে, ও ফাঁসিতলার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল , তখন পথিমধ্যে লোকগুলো ওকে বেদম প্রহার করে এবং ওকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে, ওর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

আসলে যা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ হয়, তা তো আর সহজে কেউ দিতে চায় না। হয়তো সেখানে পরিস্থিতি বড্ড ঘোলাটে ছিল, তাই হয়তো নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ও। পরে অবশ্য ঐ রাত্রিবেলাই স্থানীয়দের সহযোগিতায়, অচেতন অবস্থায় ওর জায়গা হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে।

তবে ওর শারীরিক অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, সোজা ওকে ভর্তি করানো হয়েছিল আইসিইউ তে। ওর মাথায় প্রচুর আঘাত করা হয়েছিল , তাছাড়া নাক মুখ দিয়ে ক্রমাগত রক্ত ঝরছিল। বেশ কয়েকদিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পরেও, কোনভাবেই ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।

অবশেষে আজ সন্ধ্যেবেলার পরে, লিটনের প্রাণবায়ু ফুরিয়ে গিয়েছে। মৃত্যু ওকে আলিঙ্গন করেছে। আজ থেকে লিটনের অধ্যায় শেষ। লিটন নামে যে কেউ ছিল, সেটা হয়তো কয়েকদিন পরে সবাই ভুলেই যাবে। তবে লিটনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে। ওর হাসিমাখা মুখটা বারবার ভাসছে আমার চোখের সামনে। সারারাত কেটে গেল, দুটো চোখের পাতা যেন একত্রিত করতে পারলাম না।

লিটন তো আমার রক্তের কেউ না, তবে কেন ওর জন্য আমার এতটা চিন্তা হচ্ছে। এসবের উত্তর কোনটাই আমার কাছে নেই। ওর ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য মনটা ভীষণ ছটফট করছে। না জানি, কি অবস্থায় আছে ওরা !

অটো রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের এলাকায় নতুন না। তবে এমন ঘটনা কেন যে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তা আমাকে বড্ড ভাবায়।

এসবের থেকেও বেশি অবাক হয়েছি, এত নির্মম একটা ঘটনা ঘটলো, তবে কোন স্থানীয় সাংবাদিক এই বিষয়টা নিয়ে নিউজ করলো না।

Banner-22.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

শহরের রিকশা ওয়ালা গুলোর সাথে আপনার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। আপনি আপনার মুঠোফোনের আশে পাশের বেশ অনেক গুলো রিকশা ওয়ালার নাম্বার সেভ করে রাখছেন। আজকে আপনার গল্প টি পড়ে আমার অনেক খারাপ লাগলো। আসলে এখনো সমাজের মধ্যে এরকম অনেক চক্র রয়েছে , তারা মানুষ কে মানুষ মনে করে না। আমি মন থেকে লিটন ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, সে যেন পরপারে ভালো থাকে।

 4 months ago 

গতকালকের হ্যাংআউটে আপনার কথাগুলো শুনে বুঝতে পারছিলাম যে আপনার হৃদয় কতটা ভরাক্রান্ত হৃদয় লিটন ভাইয়ের জন্য। আসলে ভাই আমাদের সমাজে রিক্সাচালকদের কেউই দাম দেয় না। এই রিকশাচালক ভাইয়ের জায়গায় অন্য কোন বিত্তশালী লোকের এভাবে হত্যা করা হলে অবশ্যই দেখতে অনেক বড় বড় চ্যানেলের সাংবাদিকরা এসে নিউজ করতো। একজন গরিব মানুষ সব সময় দুবেলা দুমুঠো ভাতের চিন্তা করে। রিকশাচালক লিটন ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

দিনশেষে নিরীহ ও সাধারণ মানুষের পাশে কেউ নেই। এটাই তো আজকাল দেখছি।

 4 months ago 

লিটন ভাইয়ের ব্যাপারটা শুনে খুবই খারাপ লাগছে ভাইয়া। রিকশাটাও নিল সাথে মারধর করলো। ফাইনালি জীবনের কাছে হেরে গিয়ে বিদায় নিল। আসলে এ ঘটনাগুলো অজানায় থেকে যাবে। লিটন ভাইয়ের মানুষজন এতোটাও হয়তো ক্ষমতাশালী না বা টাকা নেই যে থানায় গিয়ে কিছু একটা করবে। আর এগুলার বিচারই বা কি হবে? খুবই খারাপ লাগছে 😓

 4 months ago 

বিচার হওয়াটা আসলেই খুব জরুরি, তবে হবে কিনা সেটা নিয়ে খুব সন্দেহ প্রকাশ করছি।

 4 months ago 

গতকাল রাতে হ্যাংআউট এর সময় আপনার মুখ থেকে সংক্ষেপে এই ঘটনাটি যখন শুনেছিলাম,তখন সত্যিই ভীষণ খারাপ লেগেছিল। লিটন ভাইয়ের পরিবারের জন্য খুবই খারাপ লাগছে। এই ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে শোনা যায়। কিন্তু দিনদিন এই ধরনের ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্যিই অবাক হলাম এই ঘটনাটি নিয়ে কোনো সাংবাদিক নিউজ করেনি। আসলে সাংবাদিকরা মিডিয়ার লোকজন নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া ইউটিউবারদের নিয়েও ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। ভাবতেই অবাক লাগে, আমাদের দেশের মানুষজন দিনদিন কতোটা নিচে নেমে যাচ্ছে। লিটন ভাইকে এভাবে মারধর করার সময় তাদের একটুও খারাপ লাগেনি। যাইহোক লিটন ভাইকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক,সেই কামনা করছি।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

সাংবাদিকরা যে আসলে কোথায় ব্যস্ত, সেটা ভাবতেই যেন মাঝে মাঝে আমি এমনিতেই অবাক হয়ে যাই।

 4 months ago 

আপনি যখন বিষয়টি গতকাল হ্যাংআউটে শেয়ার করেছিলেন তখন ভালোভাবে বুঝতে পারি নাই। কারণ আমি দুই মিনিট লেটে জয়েন করেছিলাম। আজকে বিস্তারিত লেখা গুলো পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। একজন রিক্সা চালকের উপর এমন নির্মম নির্যাতন আসলেই খুবই অমানবিক। কারণ একজন টাকা ওয়ালা মানুষের উপরে এমন খারাপ করা টা কিন্তু মন্দ হতো না। হয়তো মনটাকে বুঝানো যেত বেশি টাকা তাই এমন করলো। একজন নিরীহ মানুষের উপর এমন অত্যাচার হইতো সৃষ্টিকর্তা সহ্য করবে না। উপারে ভালো থাকুন লিটন ভাই।

 4 months ago 

নিরীহ মানুষের সঙ্গে অত্যাচার, কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।

 4 months ago 

ইশ লিটন নামের লোকটির জন্য অনেক খারাপ লাগলো।আল্লাহ তাকে বেহেশত বাসি করুন দোয়া করি।মানুষ এখন অনেকটা নিচে নেমে গেছে।না হলে নিজে রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে আর একজন মানুষকে কিভাবে পেটাতে পারে।আর এমন ভাবেই পিটিয়েছে যে সে তার জীবনটাই হারালো।লোকটিকে আবার রাস্তার পাশে ফেলে চলে গেছে ।অসহায় গরীব লোকদের উপর নির্যাতন বন্ধ হোক।সত্যি খুব খারাপ লাগলো লোকটির জন্য।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 56924.47
ETH 3086.51
USDT 1.00
SBD 2.41