বছর সাতেক আগের ঘটনা
বছর সাতেক আগে, সেসময় কোন এক কোরবানির ঈদে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নাইট ডিউটি করছিলাম। এমনিতেই ঈদের সময়ে হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার স্বল্পতা থাকে, কেননা অনেকেই ছুটিতে চলে যায়। যেহেতু স্থানীয় বাসিন্দা ছিলাম আর তাছাড়া বাবা হাসপাতালেই চাকরি করতো, সেই সুবাদেই ক্লিনিকাল কাজগুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করতাম।
বাংলায় বলতে গেলে, অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে ছিলাম। কোন বেতন-ভাতা ছিল না, শুধুমাত্র কাজ শেখার তাগিদে হাসপাতালে যেতাম। যেহেতু সদ্য ডাক্তারি পাস করে বসেই ছিলাম, তাই একপ্রকার পরিবারের চাপেই প্রতিনিয়তই হাসপাতালে যেতে হতো। বছর দুয়েকের মতো হয়তো সেসময় ডিউটি করেছিলাম, দিনের বেলা করে নিজের চেম্বার সামলানো আর রাত্রিবেলা করে ইমারজেন্সি ডিউটি। অন্যান্য সময় খুব একটা অসুবিধা হতো না, তবে বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে ডাক্তার স্বল্পতার সময় বেশ চাপ সামলাতে হতো। কত রকম অভিজ্ঞতার যে সম্মুখীন হয়েছি, তা বলাবাহুল্য।
উনিশ বছরের টগবগে যুবক, বড্ড জেদ করে বাড়ি থেকে বাইক কিনে নিয়েছিল। এমন জেদগুলোর পরিণতি খুব একটা ভালো হয় না। এই বয়সটা বড্ড দুরন্ত, কোন জায়গাতেই যেন স্থির থাকতে মন চায় না। তার ভিতরে তো, এমন দ্রুতগতির বাইকগুলোর কথা আর কি বলব।
নতুন জিনিসের প্রতি আকর্ষণ যেমন সবার থাকে, তেমনটা সেটা নিয়ে কৌতূহল মোটামুটি সকলের মাঝেই বিরাজমান। এমনিতেই উঠতি বয়সী যুবক, তার ভিতরে দ্রুতগতির মোটরবাইক। সন্ধ্যার ঠিক খানিক বাদেই, ফাঁকা রাস্তা পেয়েই সেকি দ্রুতগতিতে তারা তিন বন্ধু বাইক চালানোর প্রতিযোগিতা করেছিল।
ছোট্ট একটা ইটের টুকরো মোটর বাইকের চাকার নিচে পড়ে হঠাৎই আছড়ে পড়েছিল ছেলেটা রাস্তার উপরে। তারপর যা হয় আর কি, সজোরে মাথায় আঘাত সঙ্গে হাত-পা গুরুতর জখম। নাক কান মুখ দিয়ে ক্রমাগত রক্ত ঝরছিল।
এমনিতেই ঈদের সময়, ডাক্তার স্বল্পতা ছিল হাসপাতালে। তাছাড়াও তেমন একটা সন্ধ্যা বেলায় চাপ ছিল না, তবে মুহূর্তেই যখন এই কেস চলে এসেছিল, হাসপাতালের চিত্র যেন ক্রমেই পরিবর্তন হয়ে গেল।
একজন সদ্য পাস করা নবীন ডাক্তার, দুজন সহকারীকে নিয়ে কিভাবে যে কেসটা সামলিয়ে ছিল, তা যেন ভাবলেই এখনো শরীর শিউরে ওঠে। যেহেতু বয়সে তরুণ ছেলে, তার সঙ্গে অনেকেই চলে এসেছে, মুহূর্তেই হাসপাতালে যেন চেঁচামেচি শুরু হয়েছিল।
এমতাবস্থায় সব থেকে আগে করণীয় রোগীর সঙ্গে থাকা লোকদের ম্যানেজ করা। খুবই ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করছিলাম সহকারীদের মাধ্যমে রোগীর লোককে স্থির করার জন্য। কেননা যদি এখানে একটু ভুলত্রুটি হয়, তাহলে সব দোষ ডাক্তারের ঘাড়ে পড়বে।
অতঃপর এগিয়ে গিয়ে রোগীর অবস্থা দেখার চেষ্টা করলাম, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। রক্ত বন্ধ করার জন্য প্রাথমিক ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছিল, তবে অবস্থা বেগতিক। তাছাড়া অন্যান্য জায়গায় যেসব স্থানে কেটে গিয়েছিল সেগুলোতে ইতিমধ্যেই সেলাই দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মাথায় আঘাত পেয়েছিল, তাই ব্যাপারটা একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম। অতঃপর পুলিশ কেসের খাতায় ঘটনার বিবরণ লিখে, তারপর অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে রোগী রেফার করার চেষ্টা করলাম।
এই যে রোগীর সঙ্গে যে ছেলেগুলো এসেছিল,তারা এসে শুরুতেই বেশ হাসপাতালের পরিবেশ গরম করে তুলেছিল, যেই না ছোট কাগজে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বাহির থেকে কিনতে পাঠিয়েছিলাম তাতেই যেন সব হাওয়া। অতঃপর মুঠোফোনের মাধ্যমে রোগীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। ভদ্রলোক এসে ছেলের অবস্থা দেখে বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। তখনই কথাগুলো শুনেছিলাম, মাত্র তিন দিন আগেই বাইকটা কিনেছিল আর আজ তার ছেলের এই অবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে আসলে রোগীকে দ্রুত রেফার করা জরুরী, ছেলের বাবাকে কাছে ডেকে বলেছিলাম আগে দ্রুত মেডিকেল কলেজে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন, তারপর না হয় অন্যান্য বিষয় ভেবে দেখবেন।
এসব বিষয়ে লিখতে মন চায় না, আজকে সন্ধ্যাবেলাতেও ঠিক এমন একটা ঘটনা ঘটেছে বাসার সামনে। না জানি, এর পিছনেও কত কাহিনী জড়িয়ে আছে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ঘটনাটা অনেক আগের হলেও শুনে খারাপ লাগলো। আসলে বেশিরভাগ যুবক ছেলেরা নতুন নতুন বাইক হাতে পেয়ে সাবধানে না চালিয়ে চেষ্টা করে উচ্চ গতিতে চালানোর জন্য। আর সাবধানে না চালানোর কারণে অনেক সময় এরকম এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হয়। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক পুরনো একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এমন ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বড্ড জরুরী। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
উঠতি বয়সের তরুণেরা বাইক পেলে তো কোনো কথাই নেই,মনে হয় যে তারা রাস্তায় বাইক চালাচ্ছে না বরং আকাশে উড়ছে। আর সামনে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে তো বাইকের স্পিড একেবারে বেড়ে যায় 😂। যাইহোক এভাবে বাইক চালানো মোটেই উচিত নয়। কারণ বাইকের এক্সিডেন্ট খুবই মারাত্মক। ২০১৯ সালে আমি খুবই ভয়াবহ একটি বাইক এক্সিডেন্ট দেখেছিলাম রাস্তায়। যাইহোক আপনার শেয়ার করা ঘটনাটি জেনে বেশ খারাপ লাগলো ভাই। আসলে সবার উচিত একেবারে সাবধানে বাইক চালানো। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, এই উঠতি বয়সী তরুণ ছেলেরা এই ধরনের কাজেই লিপ্ত থাকে।