আফসোস
আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম, সেই সময়ে বোর্ডিং স্কুলে থাকতাম। মানে আমার ছোটবেলা থেকেই জীবনটা কেটেছে, বাহিরে পড়াশোনা করে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার শিবরামে পড়েছিলাম দীর্ঘ তিন বছর। তার পরবর্তীতে খোলাহাটী ক্যান্টপাবলিক স্কুলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক আমার নিজের এলাকায়। তারপরে তো বগুড়া ঠেঙ্গামারা মেডিকেলে পড়াশোনা করেছিলাম। আমার পড়াশোনার যাত্রাটা ঠিক এতোটুকুই।
উচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার কখনো সুযোগ হয়নি, তাছাড়া নেওয়ার ইচ্ছেও ছিল না। সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলাম মোটে একবার, তারপরে সেটাও আর চেষ্টা করিনি। আমি শুরু থেকেই জীবনটাকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেছিলাম, হয়তো সেই ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, কখনোই সেই সুযোগগুলো গ্রহন করিনি।
ঘটনাটা ২০১৮ কি ১৯ সালের দিকে, আমাদের এই মফস্বল শহরে জেনারেল সার্জারির একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট এফসিপিএস সম্পন্ন করা ডাক্তারের হঠাৎই আগমন হয়। যেহেতু অনেক বড় মাপের ডাক্তার, তাই এলাকায় এসে বেশ ভালই সুনাম কুড়িয়েছিল স্বল্প দিনের ভিতরেই। আসলে তার এই মফস্বলে আসার পিছনে একটাই কারণ ছিল, সে মূলত পিজি হসপিটালে থাকাকালীন সময়ে, ইন্টারনাল পলিটিক্স এর শিকার হয়েছিল।
যার কারনে ভদ্রলোকের পোস্টিং হয় আমাদের এই মফস্বলে। খুব বেশিদিন তাকে আমাদের এখানে থাকতে হয়নি, বছর দুয়েক যেতে না যেতেই সে যেমন আমাদের এলাকার ছেড়ে গিয়েছে তেমনটা পাড়ি জমিয়েছে কানাডাতে। আমের দেশের সরকারি চাকরি কে, বিদায় জানিয়ে, সে এখন কানাডাতেই অবস্থান করছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই ডাক্তার, মোটামুটি দেশে ফেরার আর তাদের ইচ্ছে নেই।
যেহেতু আমার বাবা এই সরকারি হসপিটালে চাকরি করে মূলত পরিসংখ্যান বিভাগে, তাই সেই সুবাদে ঐ সার্জারির ডাক্তারের সঙ্গে আমার বাবার সখ্যতা হঠাৎই গড়ে ওঠে। কেননা তার শুরুর দিকে, থাকার জায়গার বেশ ভালই সমস্যা হয়েছিল এই মফস্বলে। কোনভাবেই সে মানিয়ে নিতে পারছিল না এখানকার পরিবেশ। তাছাড়া খাওয়া দাওয়ার সমস্যা তো থাকতোই।
যদিও পরবর্তীতে সে হসপিটালের কোয়ার্টারে উঠেছিল, তবে রেগুলার খাবার আমাদের বাসা থেকেই পাঠানো হতো কিংবা সে আমাদের বাসাতে এসেই খাওয়া-দাওয়া করত। আমার সঙ্গেও বেশ ভালই আন্তরিকতা পূর্ণ সম্পর্ক ছিল। একটা সময়ের পরে তো সম্পর্ক এতটাই গভীর হয়ে গিয়েছিল যে, মাঝে মাঝে তার সঙ্গে বিভিন্ন ক্লিনিকে ওটি এসিস্ট করতে যেতাম।
যেহেতু তখন আমার রানিং ডেন্টাল প্র্যাকটিস, আমিও বেশ ভালোই উপভোগ করছিলাম সময়গুলো। সারাদিন নিজের প্র্যাকটিস, পরবর্তীতে সেই ডাক্তারের সঙ্গে বিভিন্ন ক্লিনিকে ওটি করতে যেতাম। ঐ যে বললাম দু বছর, তারপরেই ভদ্রলোক সরকারি চাকরি ইস্তফা দিয়ে, সোজা কানাডা। তবে যাওয়ার আগে আমাকে কিছু কথা বলে গিয়েছিল, বলেছিল শুভ এখানে ডেন্টাল প্র্যাকটিসের যে অবস্থা, তোমার দ্বারা এখানে ভালো কিছু করা কষ্টসাধ্য হবে।
তার থেকে বরং আমার সঙ্গে কানাডা চলো। ওখানে গিয়ে কোন বড় ডেন্টিস্টের আন্ডারে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে থাকলেও ভালোই ইনকাম করতে পারবে এবং তাছাড়া পরবর্তীতে আরো সুযোগ-সুবিধা হাতের নাগালে চলে আসবে। আসলে আমাদের এখানে থাকাকালীন সময়েই, ভদ্রলোক তার কানাডা যাওয়ার ফুল প্রসেসিং, সম্পূর্ণ কমপ্লিট করে ফেলেছিল। আর এই সময়টাতেই মূলত সে এখানে এসেছিল।
আমার প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সুযোগের কথা যদি বলি, হয়তো সেই সময় কানাডা যাওয়ার প্রস্তাবটা আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছিল, তবে কিসের কি কথা চিন্তা করে যে সেই সময়, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাইনি, তা এখনো আমাকে প্রচুর ভাবায়।
সেদিন মেসেঞ্জারে তার সঙ্গে কথা হল, বেশ ভালো আছো তারা, মোটামুটি সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে তারা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। আমার কথা যখন জিজ্ঞাসা করল, তখন আমি তেমন কোন কিছু উত্তর দেইনি, শুধুমাত্র বললাম ইচ্ছে করেই ডাক্তারি পেশা ইস্তফা দিয়েছি। যদিও কারণ জানতে চেয়েছিল, তবে তাকে কিছুই বলিনি। তাছাড়া বলে আর কোন লাভ নেই, সুযোগ তো আর বারবার আসে না।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
আফসোস শিরোনামে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। খোলাহাটি ক্যান্টে পড়েছেন আপনি,আমার শ্বশুড় বাড়ী থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরত্ব। প্রাইমারী থেকেই আপনি বাইরে বাইরে ছিলেন। কানাডা যেতেই পারতেন,যেহেতু বাইরে বাইরে থাকার কারণে হোমসিকনেস কম ছিল আপনার। তবে যা হয় মঙ্গলের জন্য হয়। আফসোসের কিছু নেই ভাইয়া, কানাডা না যাওয়াতেও অন্য কোন মঙ্গল নিহিত আছে। শুভ কামনা আপনার জন্য।
এটা সত্য যা হয় মঙ্গলের জন্যই হয়, তাই হয়তো সেসময় আর কানাডা যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1746443002506321997?t=HfhlHyoAJH1gP0vaxFX-bg&s=19
ভাই জীবনে ভালো একটা সুযোগ এসেছিল। যেটা এখন বুঝতে পারছেন । বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি এই পরিবেশে ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও হয়ে ওঠেনা। যেমনটা আপনার প্রিয় কাছের ডাক্তার তিনি বুঝতে পেরেছেন। সেজন্যই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। আপনাকে ভালোবেসেই নিতে চেয়েছিল গেলে আজকে জীবনটা সার্থক হয়ে যেত। ভাই সে জন্যই এখন আফসোস হচ্ছে আসলে ভাগ্যে যা থাকে তাই হয় কিছুই করার নেই।
সেই ডাক্তার আসলে তার কর্মজীবনে পলিটিক্স এর শিকার হয়েছিল, তাই বাধ্য হয়ে অবশেষে দেশ দেশ ত্যাগ করেছিল, এক হিসেবে ভালই করেছে, আসলেই সুযোগটা কাজে লাগানো যেত, তবে কেন যে অগ্রসর হইনি তা বুঝতে পারিনি।
ভাই সুযোগ জীবনে বারবার আসে না,তাই সুযোগ আসলে সেটা লুফে নিতে হয়। নয়তো কিছু কিছু সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে, সারাজীবন আফসোস করতে হয়। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়, আপনার বাহিরে যাওয়ার বা সেটেল্ড হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। সেটা ভেবেই মূলত আপনি যাননি। তবে যেটা হয়, সেটা আমাদের মঙ্গলের জন্যই হয়। তাই আফসোস করবেন না ভাই। সেসময় যদি আপনার রিজিক কানাডায় থাকতো, তাহলে ভাগ্য অবশ্যই আপনাকে কানাডায় টেনে নিয়ে যেতো। যাইহোক সবসময় ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সেই কামনা করছি।
এটা একদম ঠিক বলেছেন ভাই, যে সুযোগ আসলে লুফে নিতে হয়, না হলে তো আমার মত পরে আফসোস করতে হয়, তারপরেও খুব যে খারাপ আছি তা না, তবে কানাডা গেলে হয়তো আরো অনেক কিছু পরিবর্তন হতো। যাইহোক মানিয়ে নেওয়ার নামই তো জীবন।