অমলিন থাকুক মুখের হাসি

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago (edited)

ball-1845546_1280.jpg
source

হাসি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিল, তখন শেষ বর্ষে গিয়ে হাবিবের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। পরিচয়টাও হয়েছিল একটু ভিন্নভাবে, যেহেতু সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করতো হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাই কোন একটা প্রজেক্ট এর কাজেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল হাবিব। আর পরিচয়টা সেভাবেই।

কিছু পরিচয় শুভ প্রণয়ে পরিণত হয়। হাসি আর হাবিবের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। এদিকে হাসির অনার্স সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল আর অন্যদিকে হাবিব ততদিনে প্রথম আলো পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। বেশ ভালোই চলছিল হাবিব হাসির দিনকাল। কয়েক বছর যেতে না যেতেই, তাদের সংসারে ফুটফুটে এক সন্তানের আগমন ঘটে। নাম তার রাদ।

এ ব্যস্ত শহরের বুকে তিনজন মানুষের ছোট্ট একটা সংসার হয়, ১২০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে। হাসি আর সেই সময় চাকরির সন্ধান করেনি। সারাদিন ব্যস্ত থাকতো রাদকে নিয়ে। হাবিবের ইনকামে সংসার চলে যেত বেশ স্বাচ্ছন্দে। দেখতে দেখতে রাদ বড় হতে থাকলো। রাদের বয়স যখন দুই, তখন থেকেই হাসির সংসারে অশনি সংকেত ক্রমাগত আসতে থাকলো।

একটা সুন্দর সংসার কিভাবে শেষ হয়ে যায়, তা যেন সকলের চোখের সামনেই হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কেউ আটকাতে পারেনি। রিপোর্ট সংগ্রহ করার কাজই ছিল হাবিবের, তাছাড়া ইতিমধ্যে বেশ ভালই সুনাম কুড়িয়েছে হাবিব। সেদিনও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রিপোর্ট সংগ্রহ করে, হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে যখন বাসায় ফিরছিল, তার আগ মুহূর্তেও হাসির সঙ্গে কথা হয়েছিল।

আমরা মানুষরা বড্ড অদ্ভুত সত্যের সন্ধানে যারা ক্রমাগত ভালো কাজ করতে চায়, তাদেরকে প্রতিনিয়তই থামিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন হাতিরঝিলে হাবিবের লাশ পাওয়া গিয়েছিল। কে বা কারা যেন, পিছন থেকে তার মোটরসাইকেলকে বড় গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিল। আর তাতেই স্পট ডেথ হয়েছিল হাবিব।

একটাবার চিন্তা করুন, ঘরে তার দু বছরের ছোট সন্তান আর তার স্ত্রী হাসি। এ শহরে তাদের কেউ নেই, তখন কেমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় এই মানুষগুলোকে, একটাবার ভাবলেই যেন শরীরে কাঁটা দিয়ে যায়।

হাসি আমার বান্ধবী, সেই ছোটবেলার বান্ধবী। তারপর থেকে প্রায়ই ওর সংগ্রামী জীবনের টুকটাক খন্ড চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারতাম ও দেখতে পারতাম। ও বেশ সাহসী মানসিকতার মেয়ে, বলা যায় হেরে যাওয়ার মানুষ ও নয়। এত বড় একটা মানসিক ধাক্কা কেটে উঠে, তারপর প্রচুর পরিমাণে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছিল। সব কিছুই করেছিল মূলত ওর ছোট বাচ্চার জন্য ।

সেদিন যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের ফলাফল বেরিয়েছিল, তাতে ও প্রথম সারির দিকে স্থান পেয়েছিল। এই যে দীর্ঘ সময়ের এত কষ্ট, সবকিছু যেন মুহূর্তেই কিছুটা হলেও লাঘব হয়ে গিয়েছিল। হাসি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছে গাজীপুরের হেড অফিসে।

ওর চেষ্টা ও হার না মানা মানসিকতা, ওকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বহুদূর। আসলে মানুষ চাইলেই তার নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে, যদি তার দৃঢ় সংকল্প থাকে। হাসির মুখের হাসি যদিও কিছুটা শুরুতে মলিন হয়ে গিয়েছিল, তবে এখন তা আবারো প্রাণবন্ত হয়েছে। বন্ধু হিসেবে চাই, ওর মুখের হাসি সারা জীবন অমলিন থাকুক।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

আপনার পোস্ট পড়ে হাসির জন্য অনেক ভালো লাগলো। আসলে জীবন মানে যুদ্ধ। আর আমাদের সংগ্রাম করেই চলতে হয়। সত্যি অন্য কোন মানুষ হলে হয়তো একেবারে ভেঙে পড়ত কিন্তু হাসির জন্য গর্ব করতেই হয়। যাইহোক সংগ্রাম করেই আজ তার মুখে হাসি অমলিন রয়েছে। দোয়া করি জীবনে আরো ভালো হতে পারবে।

 10 months ago 

আসলে ও অনেক কষ্ট করেছে ওর জীবনে, যার কারণেই আজ ওর এই সফলতা।

 10 months ago (edited)

ভাইয়া হাসির জীবনের সত্য কথাগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, পড়তে পড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। ভাবতে ছিলাম কি যুদ্ধ করলো এই হাসি জীবনের জন্য। আমাদের সমাজটা বড়ই আশ্চর্যজনক। এখানে বেশি দিন সুখে থাকা যায় না। শুভকামনা রইল আপনার বান্ধবীর জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

এটা সত্য ও বেশ জীবনের সঙ্গে ভালোই যুদ্ধ করেছে, যার কারণেই হয়তো আজ কিছুটা হলেও সফলতার মুখ দেখেছে।

 10 months ago 

আসলে ভাই বর্তমান যুগে সৎ পথে চলতে গেলে এবং ভালো কাজ করতে গেলে,একের পর এক বিপদ আসতেই থাকে। হাবিবের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পিছনে অবশ্যই কোনো রহস্য রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলো আড়ালেই রয়ে যায়। যাইহোক হার না মানা সংগ্রামের পর, অবশেষে আপনার বান্ধবী হাসি ভালো একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে, এটা জেনে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো। আসলেই মানুষের তীব্র প্রচেষ্টা এবং ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। যাইহোক শুভকামনা রইল হাসি আপু এবং তার বাচ্চার জন্য। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

অবশ্যই রহস্য আছে, ঐ যে বললাম ভালো কাজে প্রত্যেককে থামিয়ে দেওয়া হয়।

 10 months ago 

হাবিবের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যাদের স্বাধীন চিন্তা করার মাথা আছে সেটা প্রকাশ করতে পারে আমাদের দেশে সাধারণত তাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকতে দেওয়া হয় না। হাবিবের মৃত্যুর পরে হাসির লড়াইটা প্রমাণ করে তার মানসিকতা। আজ সে সফল একজন মানুষ।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

এটা সত্য হাবিবের ব্যাপারে ভাবলে বেশ খারাপই লাগে, তবে হাসি তার নিজের সফলতা অর্জন করেছে এটা খুশির বিষয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61320.84
ETH 2394.93
USDT 1.00
SBD 2.56