পরিণতি

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

couple-1850073_1280.jpg
source

পার্থর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল সেই স্কুল জীবন থেকেই। সে আমার শৈশবের বন্ধু ছিল। বন্ধুত্ব এখনো আছে, তবে আমাদের সম্পর্কের মাঝে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আসলে কিছুই করার নেই, বাস্তবতার চরম নির্মম পরিহাসের কারণেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আজ এই অবস্থা। আমি অকপটে সব কথা বলতে পছন্দ করি। শুধু পার্থই না বরং শৈশবের অনেক বন্ধুর সঙ্গেই যোগাযোগ নেই বললেই চলে। হয়তো সময়ের পরিবর্তন , পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন নতুবা সবাই সবার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে।

তবে পার্থর ব্যাপারটা আমাকে এখনো একটু ভাবিয়ে তোলে। মাধ্যমিকের পর থেকে ওর সঙ্গে আর সেভাবে কখনো দেখা হয়নি। আমারও স্কুল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল, কলেজে অন্যত্র ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। তার পরবর্তীতে তো আবার মেডিকেলের শিক্ষা জীবন। সবমিলিয়ে দীর্ঘ সময়ের বিরতি। পার্থর ব্যাপারটা আমাকে একটু অন্যভাবে ভাবায়, সেই মাধ্যমিক সময় থেকে সমবয়সী যতগুলো ছেলেমেয়েরা চুটিয়ে প্রেম করেছিল তাদের ভিতরে পার্থ ছিল।

যদিও হাতে গোনা কিছু সম্পর্কের শেষ পরিণতি বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছিল, তবে সেই যাত্রাতেও পার্থ আর প্রিয়া একসঙ্গেই সফল হয়েছিল। এটা হয়তো সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র দুজনের প্রবল ইচ্ছে শক্তির কারণে। যেহেতু একই স্কুলে দুজন মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছিল, তারপরে আবার কলেজ জীবনেও একই জায়গায়। তারথেকেও বড় মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল, সেখানেও ভাগ্যক্রমে একই বিষয়ে দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিল।

কিছু কিছু সম্পর্ক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন বিশ্বাসের দরকার হয়, তেমন ইচ্ছা শক্তির আকর্ষণ থাকতে হয় দৃঢ়। অনেকটা চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়ের এই সম্পর্কে। যদিও দুজনের পরিবারই জানতো, তবে তাও তারা জেনেও নিশ্চুপ ছিল। কারণ দুজনেই ছাত্র ছিল এবং জীবিকার কারো তেমন কোন গতি ছিল না।

একটা সময়ের পরে তো সড়ক দুর্ঘটনায় পার্থর বাবা-মা উভয়েই মারা যায়। সেই সময় পার্থ ভীষণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রিয়া প্রতিনিয়ত ওর মনের অবস্থা বুঝতো। তখন মূলত প্রিয়ার টিউশনির পয়সা দিয়েই পার্থর অনার্সের শেষের দিকের পড়াশোনার খরচাটা হয়েছিল। সেই সময় তারা বিয়েটাও করে ফেলেছিল পরিবারের অমতে। এক্ষেত্রে পার্থ যদিও প্রিয়াকে কোন জোর করেনি, তবে প্রিয়া বুঝতে পারছিল, ওর এই কঠিন মুহূর্তে যদি ওকে ও ছেড়ে যায়, তাহলে পার্থ হয়তো আরো হতাশাগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে তো পার্থর পরিবার আর নেই বললেই চলে, তবে অন্যদিকে প্রিয়ার পরিবার বেশ সজাগ ছিল। তারা চেষ্টা করছিল শেষের দিকে প্রিয়ার অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু প্রিয়ার অনার্স শেষ, তাই এমন চেষ্টা পরিবার থেকে করা ভীষণ স্বাভাবিক। সেই সময় তো পারিবারিক চাপের কারণে, প্রিয়া তার পরিবারের কাছে পার্থর কথা বলতেই পারেনি। প্রিয়া শুধু চাচ্ছিল, কোনভাবে যেন দুজনের একটা ভালো চাকরি জুটে যায়।

৪০ তম বিসিএস এর রেজাল্ট কিছুদিন আগেই বেরিয়েছে, মোটামুটি এবার পরীক্ষা তারা দুজনেই বেশ ভালো দিয়েছে। দুজনেরই নন ক্যাডারে সরকারি ব্যাংকে চাকরি হয়ে গিয়েছে। প্রিয়ার পরিবার বেশ খুশি হয়েছে প্রিয়ার ফলাফলে। সেই খুশির মুহূর্তেই প্রিয়া তার পরিবারকে বলে দিয়েছে, সে বহু আগেই বিবাহ বন্ধনে জড়িয়ে গিয়েছে পার্থর সঙ্গে। যদিও এমনটা শুনে পরিবারের লোকজনের কিছুটা মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল, তবে তারা পার্থর সাফল্যেও বেশ খুশি। এখন আর পার্থকে জামাই হিসেবে গ্রহণ করতে কোন ঝামেলা নেই। ফ্যাকাসে মুখগুলোতে মুহূর্তেই যেন আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল। শেষমেষ পার্থকে তো ফোন দিয়ে সেদিন সন্ধ্যাতেই প্রিয়ার বাড়িতে ডাকা হল এবং এবার নিয়ে পার্থ আর প্রিয়ার দ্বিতীয়বার আবারো বিয়ে হল।

কিছু কিছু সম্পর্ক এভাবেই কোন না কোন ভাবে, অনেকটা ঝুট ঝামেলা পাড়ি দিয়ে হলেও, শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সফলতার মুখ দেখে। পার্থর ব্যাপারটা আমার শেষ পর্যন্ত জানা ছিল না, যদি না সেদিন ওর মুখ থেকে না শুনতাম। একটা বিশেষ কাজে সেদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলার সোনালী ব্যাংকে গিয়েছিলাম, তখনই ঘটনাচক্রে পার্থর সঙ্গে দেখা আর তখনই যেন অনেক কথার মাঝে এই কথাগুলো শোনা হয়েছিল।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

বাস্তবতা ভাইয়া। এতটাই কঠিন যে ভালো বন্ধুত্ব দূরে ঠেলে দেয়। কিন্তু এটা জেনে ভালো লাগলো যে শৈশবের বন্ধুত্বটা এখনো টিকে আছে কিন্তু বর্তমান সময়ের যে বন্ধুত্ব এটা বন্ধু বলে আমার মনে হয় না। সবটাই সার্থ।সময়ের পরিবর্তনের কারণে আস্তে আস্তে প্রতিটা মানুষ নিজ নিজ কর্ম জীবন এবং নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তাই ইচ্ছা থাকলেও সে রকম ভাবে কারো সাথে যোগাযোগ রাখা যায় না ।এখনকার সম্পর্ক যদি এগোতে হয় তাহলে বিশ্বাস এর দরকার এবং ইচ্ছাশক্তিরও অনেক প্রবল দরকার। একজন যদি ঠিক থাকে তাহলে হবে না দুজনকে একসঙ্গে লড়ে যেতে হবে। আর ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দুঃখজনক যে সড়ক ঘটক দুর্ঘটনায় পার্থর বাবা মা মারা যায়।আমরা শুনে যাচ্ছি কিন্তু এটা বাস্তবে যার সাথে ঘটছে সে বুঝতে পারছিল যে কতটা কঠিন ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহ তাআলা তাকে কতটা ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছিল। বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছাড়া কখনই কোন ভালোবাসা সফল হয় না। একটা কথা সঠিক যে টাকা ছাড়া পুরুষের কোন মূল্য নেই।দুজন দুজনের প্রতি বিশ্বাস ছিল যে ওরা সফল হয়ে বিয়ে করবে এবং একটা জিনিস ভালো ছিল যে ওরা আগেই বিয়ে করে রেখেছে সফল হলে সেটা প্রকাশ করেছে। সত্যি তাদের বিশ্বাসের সাথে সাথে তাদের ইচ্ছা শক্তি ও প্রবল ছিল এবং ভালোবাসার প্রতি অনেক সম্মান ছিল। যাক ঘটনাচক্রে আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো।ভালো লাগলো বেশ কথা বললেন। সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন। ভালবাসি ভাইয়া আপনাকে 💗💗🫡🤲

 10 months ago 

এটা সত্য যখন আমার পার্থর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সময়টা বেশ ভালোই কেটেছিল দীর্ঘদিন পরে।

 10 months ago 

ভালোবাসা এমনি ভাইয়া। আসলে এক্ষেত্রে প্রিয়াকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। প্রিয়া ঠিক করেছে সুখের সময় পাশে থাকবে আর দুঃখের সময় দূরে যাবে এটা একদম ঠিক নয়।আসলে প্রিয়ারা দুজনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে কথা বলার কারণে ফ্যাকাসে মুখ গুলো মূহুর্তে খুশিতে ভরে গেল। যাইহোক অবশেষে দুজন মিলিত হয়েছে যেন অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 10 months ago 

বেশ ভালোই সেক্রিফাইস করেছে দুজন, তাই হয়তো সফলতার মুখ দেখেছে আপু।

 10 months ago 

স্কুল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় অনেকেই সমবয়সীদের সাথে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে যায়,কিন্তু বেশিরভাগ সম্পর্ক একটা সময়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তবে আপনার বন্ধু পার্থ এবং প্রিয়ার মতো কিছু কিছু সম্পর্ক সফলতার মুখও দেখতে পায়। যাইহোক আপনার বন্ধু খুবই ভাগ্যবান, এমন একজন সঙ্গিনী পেয়ে। পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

এই খবরটা আমি যখন জানতে পেরেছিলাম, তখন আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছিল ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।

 10 months ago 

হয়তো কিছু কিছু সম্পর্ক সত্যি সত্যি এইরকম পূর্ণতা পাই। কিন্তু সবগুলো না। তবে পার্থ এবং প্রিয়ার প্রেম একসঙ্গে যাএা লেখাপড়া। এবং পার্থের কঠিন মূহূর্তে প্রিয়ার তার পাশে থাকা। দুইটাই গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করে। সবমিলিয়ে দারুণভাব তারা একসঙ্গে থেকে যায়। শেষ পথে প্রিয়ার পরিবারও তাদের সাফল্যে খুশি হয়ে সব মেনে নেয়।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

আসলে ভাই ভালোবাসার মানুষ যদি সবসময় পাশে থাকে এবং সাহস যুগিয়ে যায় তাহলে সফলতা আসবেই। আর একটা কথা বললেন না আপনি যে, সম্পর্কে বিশ্বাস এবং দুজনের প্রবল ইচ্ছা থাকা প্রয়োজন। এতে করে সম্পর্ক পূর্ণতা পেতে বাধ্য। আসলে প্রিয়া যে পার্থকে তার বিপদের সময় ছেড়ে যায়নি এটাই তো ভালোবাসার পরীক্ষা। ভালো লাগলো লেখাটি ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 59218.43
ETH 2534.91
USDT 1.00
SBD 2.44