মুড়ির টিন

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

traffic-7859033_1280.jpg
source

মোটামুটি দীর্ঘ দশ দিনের বেশি সময় গ্রামে অতিবাহিত করে, আজ আবারও যান্ত্রিক শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দশটা দিন মানসিকভাবে বেশ ভালোই চাঙ্গা ছিলাম। তবে যেই না বাসায় ফেরার জন্য গাড়িতে উঠেছি, তখন থেকেই যেন নিজের ভিতরে অস্বস্তিবোধ কাজ করছিল।

গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে যখন শহরের ভিতরে আমাদের গাড়ি প্রবেশ করেছে তখন থেকেই যেন ট্র্যাফিক জ্যাম লেগেই আছে। তার ভিতরে রাস্তায় যানবাহনের প্রচুর শব্দ। মুহূর্তেই আমি ভুলে গেলাম, কোথায় ছিলাম আর কোথায় যাচ্ছি।

আমরা মূলত পাবলিক পরিবহনে ছিলাম, যেহেতু দীর্ঘ সময় রাস্তায় জ্যাম ছিল, তাই অনেকেই আমার মত অস্থির হয়ে গিয়েছিল। কেননা দশ হাত গাড়ি আগায় আবার দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে। যদিও স্বল্প দূরত্বের পথ, তবে এই সময়টুকু যেতেই যেন বহুৎ রকম ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল।

এক সময় তো গাড়িতে থাকা এক লোক বলেই ফেলল , এ শহরের বুকে এত প্রাইভেট কার এগুলোর আসলে মালিক কে। এগুলোর জন্যই যত জ্যাম রাস্তার বুকে। এ শহরে আর যাইহোক মানুষের থেকে হয়তো প্রাইভেট কারের সংখ্যাই বেশি। আমি লোকটার কথা শুনছিলাম আর গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কার গুলো গোনার চেষ্টা করছিলাম।

এখানে আসলে কারো কথা কারো শোনার সময় নেই। ঐ প্রাইভেট কারের ভিতরে বসে থেকে এসির হাওয়া খেয়ে, যে লোকটা গন্তব্যে ফিরছে তার কাছে হয়তো পাবলিক গাড়ি গুলো দেখে মনে হতে পারে, এ গুলোর জন্যই হয়তো রাস্তায় এতো জ্যাম আবার যারা ঠাসাঠাসি করে পাবলিক গাড়িতে করে গন্তব্যে যাচ্ছে, তাদের কাছে প্রাইভেট কার গুলোকে অনেকটা মুড়ির টিনের মতো লাগতে পারে ।

কিছুটা সময়ের মধ্যেই জ্যাম ছুটে গেল, গাড়ি যখন চলছিল ফুরফুরে বাতাস যেন গাড়ির জানালা দিয়ে বারবার ভিতরে প্রবেশ করছিল। যে লোকটা একটু আগেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিল, সেও এখন কিছুটা ঠান্ডা মাথায় সিটে বসে আছে। তবে খানিকটা দূর যেতে না যেতেই আবারও পূর্বের মতো অবস্থার পুনরাবৃত্তি হলো ।

মেজাজ হারিয়ে ফেলা লোকটার আজকে জানিনা কি হয়েছে, তবে ভদ্রলোক নিজেকে কোন অবস্থাতেই যেন আর গাড়ির ভিতরে মানিয়ে নিতে পারছিল না। সে এবার চেঁচিয়ে উঠে বলছিল, ড্রাইভার সাহেব, দেন একটা মুড়ির টিন গুঁড়িয়ে। এই হারামজাদারা, সব একেকটা শিক্ষিত চোর, শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করেছে আর উঁচু দালানে বসে বসে ফাইলপত্রে সই করে করে ঘুষের টাকায় প্রাইভেট কার কিনেছে আর এদের কারণে রাস্তাঘাটে একটু আরাম আয়েশ করে বের হওয়া যায় না। এরাই যতো ট্রাফিক জ্যামের মূল কারণ।

যদিও নিজেও আমি কিছুটা বিরক্তি বোধ করছিলাম, তবে আর যাইহোক সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে মেজাজ হারিয়ে ফেলা ভদ্রলোকের কথাগুলো কিছুটা হলেও যেন যৌক্তিক মনে হয়েছিল।

Banner-22.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 months ago 

আপনার পোস্টটি আমাদের শহরের যানজটের বাস্তবতা এবং তার প্রভাব সম্পর্কে একটি গভীর ধারণা দেয়। আপনার লেখনীতে একটি জীবন্ত চিত্র ফুটে উঠেছে যা পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যায়। আপনার লেখনীর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 6 months ago 

পাঠকের সন্তুষ্টি, লেখকের আত্মতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ।

 6 months ago 

গ্রাম্য পরিবেশ যতটা শীতল, সুন্দর এবং মনোরম তার বিপরীতে রয়েছে শহুরে পরিবেশ। এখানে অনেক বেশি শব্দ দূষণ,যানবাহনের কারণে প্রচুর জ্যাম লেগে থাকে। অল্প দূরত্বের পথ পাড়ি দিতেও যেন অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। গাড়িতে থাকা সেই ভদ্রলোকটার হয়তো কোনো কারণে এমনিতে মেজাজ খারাপ ছিল সে জন্যই জ্যামের মধ্যে বসে থেকে তার মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। তা যাই হোক এরকম পরিবেশ আসলে কখনোই কাম্য নয়।

 6 months ago 

রোজার দিন মেজাজ এমনিতেই গরম হয়ে যায়। জ্যামের মাঝে পরলে তো জীবনই শেষ। অসহ্যকর অবস্থা জ্যামের মাঝে বসে থাকতে। চাচার কথা অবশ্য ঠিক ছিল, এরাই তো ঘুষের টাকায় প্রাইভেট কার কিনে হাওয়া খেতে খেতে অফিসে যাওয়া আসা করে। একবারো ভাবে না সাধারণ পাবিলেকর কথা।

 6 months ago 

এটা জাদুর শহর ভাই, এখানে কারো কোন কিছু ভাবার সময় নেই, সবাই ব্যস্ত আপন চিন্তায় আপন ভাবনায়।

 6 months ago 

ট্র্যাফিক জ্যাম একটা অস্বস্তিকর বিষয় আমি ঢাকা গিয়ে বুঝেছিলাম বেশ কয়েকবার।আর রোজার দিন তো এমনিতেই আরো অসহ্য লাগে।চাচা যে কথা গুলো বলেছেন ঠিক।সবই তো ঘুষের টাকার প্রাইভেট কার।বাস্তবিক একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য। প্রেক্ষাপট অনেকটাই এরকম।

 6 months ago 

ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকলে এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তবে পাবলিক পরিবহনে চড়লে অনেক মানুষের কাছ থেকে অনেক ধরনের কথা শোনা যায়। কথাগুলো শুনতে আবার ভালোই লাগে😂। যাইহোক লোকটা কিন্তু খারাপ বলেনি। এতো এতো প্রাইভেট কারের মালিক কি আর এমনিতেই হয়ে যায় নাকি। সৎ পথে উপার্জন করে কয়জন আর প্রাইভেট কার কিনতে পারে। তবে আমাদের দেশে রাস্তার তুলনায় গাড়ি বেশি হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

জীবন যেখানে যেমন, যে যেভাবে দেখে আর কি ভাই। আপনার মন্তব্যটি ভালো ছিল।

 6 months ago 

ঐ ভদ্রলোক কথাটা খারাপ বলেনি ভাই। আমি নিজেও মনে করি যানজটের কারণ ঐ প্রাইভেট কারগুলো। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব‍্যবহার যানজট কম সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা বোঝে কতজন। গ্রাম এবং শহরের মধ্যে পার্থক্য এটাই ভাই। এক জায়গার জীবন প্রাণবন্ত এবং অন্য জায়গার জীবন স্থবির।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

এমনটা আমারও তাই মনে হয় ভাই, শহুরে জীবন অনেকটা জেলখানার মত ।

 6 months ago 

গ্রামের মনোরম সুন্দর পরিবেশের সাথে শহরের পরিবেশের তুলনা একেবারেই করা যায় না দাদা। তবে প্রাইভেট কার গুলো ট্রাফিক জ্যামের জন্য বেশি দায়ী, এ কথা সত্যি। তারপরও যদি ট্রাফিক সিস্টেম মোটামুটি কন্ট্রোল করা যায়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান কিছুটা সম্ভব। এটা ঠিক যে, যারা প্রাইভেট কার এর ভিতর থাকে তাদের কাছে এই পাবলিক বাস গুলো অনেকটা মুড়ির টিনের মতোই লাগে।

 6 months ago 

আপনার লেখা বিষয়ের টাইটেল মুড়ির টিন পড়ে মনে হয়েছিলো যে মুড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে হয়তো।কিন্তু ভিতরে পড়েই বুঝতে পারলাম জ্যামকে কেন্দ্র করে।আসলেই জ্যাম খুবই বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।আর আমার মনে হচ্ছে লোকটি তার সৎসাহস দেখিয়েছেন, একদম সত্যি কথা সবার সামনে বলে দিয়েছেন।ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 57983.67
ETH 2465.71
USDT 1.00
SBD 2.41