পরগাছা || @shy-fox 10% beneficiary
জীবনটা অনেকটা পরগাছার মত হয়ে গিয়েছে বলতে পারেন । কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নাই, হুটহাট কখন কি করছি না করছি, মানে অনেকটাই এলোমেলো জীবন । ঠিক যেমনটা পরগাছার হয়ে থাকে । মাঝে মাঝে ভয় হয়, এই বুঝি কেউ একজন ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো । এই বুঝি কেউ একজন আমাকে ছিঁড়ে ফেলল , ঠিক এমনটাই ঝামেলা ভিতর থাকতে হয় প্রতিনিয়ত ।
এমন চিন্তা আমার মাথায় আসতো না। যদি আজ আমি বাড়ির পাশেই পরগাছা গুলো না দেখতাম তাহলে । যাইহোক ঘটনাটা একটু বলার চেষ্টা করছি , দুপুরের পরে যখন বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটার একটু চেষ্টা করছি তখন দেখলাম, সমরেশ বাবুর বাড়ির পিছন পাশের দেয়ালটাতে , একদম পরগাছা দিয়ে ভরে গিয়েছে । স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় পরগাছা গুলোর যেন, অবাধ বিচরণ । যদিও কাছ থেকে দেখতে ব্যাপারটাকে অনেকটাই গিঞ্জি মনে হতে পারে কিন্তু যখন দূর থেকে দেখা যায়, ব্যাপার গুলোর মাঝে হালকা হলেও একটা সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় ।
সমরেশ বাবুর এতে অবশ্য তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। জীবনটাই তার বার্ধক্যে কেটে যাচ্ছে আর এই সময়ে এসে দেয়ালে পরগাছা জন্মালেই কি বা বাড়িতে পরগাছা জন্মালেই কি । জীবনের অর্ধেক বয়স তো শেষ ই হয়ে গিয়েছে। এখন যে একটু বয়স আছে, তা একটু নিজের মতো করেই কাটিয়ে দিচ্ছে বাড়ির ভিতরে। তাই আশেপাশে কি হচ্ছে, এটা নিয়ে তার খুব একটা মাথাব্যথা নেই ।
তবে সমরেশ বাবুর একটা সময় ছিল, যখন প্রচুর ব্যস্ততা এবং প্রচুর পরিছন্নতা নিয়ে থাকতে হত । বিশেষ করে যখন ছেলেগুলোর বিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করেছিল, সেই সময় বাড়িটাকে কত সুন্দর করে ঘষে মেজে রং করে সাজিয়েছিল । আশেপাশে যেন কোন পরগাছাকে ঠাঁই দেয় নি । সব যেন একদম নিট এন্ড ক্লিন এবং চকচকে তকতকে থাকতো ।
এই তল্লাটে যতগুলো বাড়ি দেখেছি, তার মধ্যে সমরেশ বাবুর বাড়িটা ছিল একদম চোখধাঁধানো কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, এখন তার বাড়িতে কেউ থাকেনা । সব ছেলেপেলে গুলো বিয়ে করে, যে যার গন্তব্যে চলে গিয়েছে । তারপর ঐ যে সমরেশ বাবুর স্ত্রী গত হলো , তারপর থেকে সমরেশ বাবুর যেন অনেকটাই মনের রং গুলো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে ।
এটা একদম চরম বাস্তবতা । সময় গুলো সবসময় একরকম যায় না । আজ হয়তো যেমনটা চকচকে যাচ্ছে কাল হয়তো এর বিপরীত রূপটা একটু ভিন্ন হতে পারে । আমি সমরেশ বাবুকে নিয়ে তেমন কোন কথা বলতে চাই না । কারণ ভদ্রলোক যা করেছে, সব তার পরিবারের জন্য করেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, সে শুধু আজ একাই আছে। কিন্তু তার পরিবার-পরিজন সব থেকেও যেন নেই। যাইহোক জীবনটা মনে হয় এমনই ।
আসলে ব্যাপারটা একটু যদি স্বাভাবিক করে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে তার সন্তান গুলো তারা মূলত তাদের গন্তব্যে গিয়েছে, বলতে পারেন তাদের যে কর্মস্থল আছে সেখানে । আসলে প্রথমত তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে অনুরোধ করেছিল কিন্তু সমরেশ বাবু অনেকটাই বাড়ি কেন্দ্রিক মানুষ, তারপরে আবার পত্নী বিয়োগ হয়েছে । তাই বাড়িতে থাকতেই নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলেছে । তাই আর ছেলেদের সঙ্গে যেতে পারেনি বা চায় নি । তার সময় গুলো কাটে এখন ঐ পত্রিকার পৃষ্ঠায় চোখ বুলিয়ে নতুবা বেলকুনির কোনায় বসে চায়ে চুমুক দিয়ে ।
দেয়ালে পরগাছা জন্মে গেছে, এদিকে তার কোনো চিন্তা নেই । কারণ তার জীবনটাই তো অনেকটা পরগাছার মতো হয়ে গিয়েছে । যে মানুষ আগে কয়েক রকমের তরকারি ছাড়া ভাত খেত না, সেই মানুষ এখন হাতের সামনে যা পায় তাই দিয়েই মূলত পেটের খিদে মিটিয়ে নেয় । পাশের বাড়ির তরুর মা এখন তার অনেকটাই দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে, যদিও তাকে মাইনে দেওয়া হয়। তারপরেও তরুর মায়ের কাছেই অনেকটা পরগাছার মতো হয়ে আছে সমরেশ বাবু ।
ঐ যে একদিন বলেছিলাম, আমি কখন কার ভিতরে কি সৌন্দর্য খুঁজে পাই, তা বলা মুশকিল । তাই আজকে যখন হুট করে হেঁটে যাওয়ার সময় পরগাছা গুলোর দিকে চোখ পড়েছিল , তখন কাছ থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। দোতলার বেলকুনি থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিল , কে ওখানে কে ।
আমি একটু সামনে আসার চেষ্টা করলাম। আমাকে দেখে বলল, তুমি ময়না আপার ছেলে নাহ। আমি বললাম , হ্যাঁ কাকু । তা কি করছো ওখানে । আমি খুব সাবলীল ভাবে বললাম, তেমন কিছুই না । কাকু, আপনার দেয়ালের পরগাছা গুলোর ছবি তুলছি । তখন সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল , ছবি তোলার কি দরকার । পারলে পরগাছা গুলো ছিঁড়ে বাড়িতে নিয়ে যাও । তাও যদি দেয়ালটা একটু মুক্তি পেত ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

আসলে ভাই আপনার পোস্ট পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। জীবনের বাস্তবতা সত্যি অনেক কঠিন। সমরেশ বাবুর মতো অনেকের বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে শেষ জীবণ অতিবাহিত করতে হয়। এই বৃদ্ধাশ্রম ও মূলত এক প্রকার পরগাছা লাইফ।
সমরেশ বাবুর কাহিনী শুনে একটা গান মনে পড়ে গেলো →আমার মতো এতো সুখী নয় তো কারো জীবন←
জীবন বড়োই নাটকীয়, কখন কার কি অসস্থা হয় সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারে না। সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি, শেষ বয়সে যাতে পরগাছের মতো জীবন কাটাতে না হয়।
ভাই আপনার লেখা সম্পর্কে কি আর বলবো, আপনার লেখা যে রিগুলার পড়বে, আপনার লেখার ভক্ত হতে সে বাধ্য থাকবে। এক কথায় অসাধারণ ছিলো।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
অসম্ভব সুন্দর লেখনি আপনার। আপনার লেখনীর মাঝে অদ্ভুত এক জাদু মিশে আছে। সত্যি ভাইয়া আজকের লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। সময় সব সময় এক রকম থাকে না। সময় যেমন বদলে যায় তেমনি সময়ের সাথে সাথে মানুষের রূপ বদলায়। সাজানো-গোছানো সেই বাড়িটির চার দেয়াল যখন রঙে রঙে রাঙিয়ে থাকতো তখন কত না সুন্দর লাগতো। আর আজ সময়ের পরিক্রমায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ। অপরিষ্কার স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের গায়ে জমে গেছে আগাছা। সবকিছুই সময়ের পরিক্রমায়। হয়তো সমরেশ বাবুর মত আমাদের এই জীবনটা একদিন বেরঙিন হয়ে যাবে। চার দেয়ালে সাজানো স্বপ্নগুলো সব আগাছায় ভরে যাবে। আর সেই আগাছাগুলো আর চোখে পড়বে না তখন। কারণ তখন আমাদের দেখার চোখ বদলে যাবে। অনেক সুন্দর কিছু কথা আমাদের সকলের মাঝে শেয়ার করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আমাদের এই মানব জীবন পরগাছার মত। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ নিজেকেই পরগাছার সাথে গুলিয়ে ফেলে। পরগাছা যেমন অন্যের ওপর নির্ভরশীল তেমনি শেষ বয়সে মানুষ অনেকটা অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। জীবনের এই চিরন্তন সত্য কথা আমাদের সকলকেই মানতে হবে। বাধ্যক্য যখন এসে পরবে তখন আমাদের অবস্থা সেই পরগাছার মতই হবে। সমরেশ বাবুর জীবন যেমন পরগাছার মত হয়ে গেছে তেমনি তার সাজানো-গোছানো বাড়ির দেয়ালে পরগাছা জন্ম নিয়েছে। সমরেশ বাবুর জীবনের কাহিনী গুলো আমাদের মানব জীবনের একটি অংশ। আমাদের মানব জীবনের এই পরিণতি হয়তো আমাদের সকলকেই ভোগ করতে হবে। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। অনেক সুন্দর কিছু কথা আপনি আপনার এই লেখার মাঝে তুলে ধরেছেন যেগুলো পড়ে আমরা সকলেই মুগ্ধ হয়েছি। ভাইয়া আপনার এই পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া আপনার পোস্ট টি পড়ে কিছুটা হলেও জ্ঞান অর্জন করলাম। জি ভাইয়া আপনি সত্যি বলেছেন জীবনটা এক ধরনের পরগাছার মতো। আমার খুব ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট টি পড়ে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাই আসলে মানুষের জীবনটাই এমন একটা সময় আসে যখন প্রায় প্রত্যেককেই পরগাছার মত জীবন অতিবাহিত করতে হয়। আর যারা এই দুর্ভাগ্য থেকে রেহাই পান আমি মনে করি তারা সত্যিই ভাগ্যবান।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া আপনার পোস্ট টি পড়ে কিছুটা হলে ও জ্ঞান অর্জন করতে পারলাম । হ্যাঁ ভাই আপনি ঠিক বলেছেন জীবনটা পরগাছার মত হয়ে গেছে। আজকে যেমন সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছে কালকে সবকিছু ঠিকঠাক না ও চলতে পারে। ভাইয়া অনেক সুন্দর লিখছেন। আপনার জন্য অনেক ভালোবাসা ও প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
কি লেখা রে বাবা🙏
লেখার ভাব গভীরতা জাস্ট অসাধারণ।লেখার প্রতি লাইন পড়ছিলাম আর মুগ্ধ হয়ে পরের লাইনে আকৃষ্ট হচ্ছিলাম।ভালোবাসা নিবেন ভাই🖤
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আসলে এখনকার সময় অনেক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পার হতে হয় চারদিকে ভালো মানুষের ভিড়ে অনেক মানুষকে চেনা যায় না। আসলে সময়ের পরিবর্তনে সবকিছু চেঞ্জ হয়ে যায়। যেমন মানুষ একটা জিনিস প্রথমাবস্থায় কিছু জিনিসের উপর খুব যত্ন নেয় তারপরে যত্ন নেওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। আসলে জীবন এরকমই কখন যে কার কি হয়ে যায়।কেউ জানে না।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া জীবনটা কেমন যেন অগোছালো মনে হয় শুধু অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে জীবনটা যে তছনছ করে ফেলছি সেটা মাথায় আসেনা
খুবই সুন্দর জ্ঞানমূলক এবং তথ্যবহুল একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন খুব ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য ❤️❤️
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আসলে ভাইয়া সময়ের পরিক্রমায় আমাদের অনেক কিছু করতে বাধ্য হয় বা আমরা অনেক কিছুই সম্মুখীন হতে হয়। সমরেশ বাবুর বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লাগলো একটা সময় তার বাড়িতে হয়তো অনেক হইহুল্লার ছিল, আনন্দঘন পরিবেশ ছিল যখন সন্তান সবাই বাসায় ছিল। কিন্তু বাস্তবতার কাছে আসলে আবেগ এর কোন স্থান নেই। জীবিকা নির্বাহ তাগিদে হয়তো তাদের কর্মস্থলে থাকতে হয়েছে। এদিকে সমরেশ বাবু তার এই বাসার মায়া হয়তো এখনো ছাড়তে পারেনি। এই পিছুটান আসলেই আমাদের পাগল করে দেয়। এজন্যই তো বেচে থাকা, এখানে তো বেঁচে থাকার সার্থকতা। জীবনের ছোট ছোট পিছুটান গুলোই আমাদের জীবনকে এত সুন্দর করে তুলেছে। সবাই চায় সামান্য কিছু স্মৃতি নিয়ে হলেও বেঁচে থাকতে ।ঠিক তেমনি সমরেশ বাবু হয়তো তার বাড়ির স্মৃতিটুকু নিয়েই শেষ জীবন কাটিয়ে দিতে চান তাই তো ছেলেদের অনুরোধেও যান না। খুব ভালো লাগলো ভাই আপনার বাস্তবিক লেখাটা।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।