ক্ষমা করে দিস রুশো
রুশোর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল সাত বছর আগে, তাও সেটা নিজেদের এলাকাতেই। সময় যে আজকাল কিভাবে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তা যেন কোনভাবেই বোঝা যায় না।
সেদিনের সেই পড়ন্ত বেলায় বেশ দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়েছিল ওর সঙ্গে। ও আসলে বরাবরই নিজেকে আড়াল করতে চাইতো, কেননা ছোটবেলা থেকেই অনেকটা মানসিক ধাক্কা খেয়ে বড় হয়েছে ও। আমার আপনার মত সহজ স্বাভাবিক জীবন ছিল না ওর।
ও যখন প্রাইমারিতে পড়তো, তখন ওর বড় ভাই ও মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একটাবার চিন্তা করে দেখুন, ও তখন নিজেই ছোট তার উপর এত বড় একটা মানসিক ধাক্কা, সেটা মেনে নেওয়ার জন্য ওকে কতটা পরিমাণ কষ্ট করতে হয়েছিল, তা হয়তো ওর জায়গায় না দাঁড়ালে কেউ বুঝতে পারবে না।
যদিও ওর বাবা যথেষ্ট ভদ্র ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিল বিধায়, তার ছোট ছেলের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি। চেষ্টা করেছিল বাকি সময়টা চাকরির পাশাপাশি, রুশো কে ভালোভাবে বেড়ে তোলার জন্য । এভাবেই চলেছিল দীর্ঘ সময়, অবশেষে বার্ধক্য জনিত কারণে রুশোর বাবাও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
যখন নিজের বলতে আর কেউ থাকেনা, তখন পৃথিবীতে একা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা বড্ড কঠিন হয়ে যায়। রুশোর কাছে পুরো পৃথিবীটা যেন প্রতিনিয়ত নরকের মত লাগতো, আমরা বন্ধু মহল থেকে ওর সঙ্গে মাঝে মাঝেই দেখা করার চেষ্টা করতাম। তবে সত্য কথা বলতে গেলে কি, একটা সময়ের পরে ও নিজের থেকেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়।
সাত বছর আগে শেষ যখন দেখা হয়েছিল, সেদিনও বেশ হাসিমুখে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করেছিল। ভুলেও বুঝতে দেয়নি, ও কি পরিস্থিতির ভিতরে আছে। আমরা বন্ধুরা, বড্ড স্বার্থপরতার মত আচরণ করেছিলাম। সবাই নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, ওর সঙ্গে একটু ভালোভাবে মিশে কথা বলব, তেমনটা সুযোগ তৈরি করিনি।
ওর বাবা মারা যাওয়ার পরেই, ও শহর থেকে চলে যায়। গ্রামেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে ওর জীবনে সেই সময় থেকেই প্রচুর পরিবর্তন চলে আসে। একটা সময়ের পরে তো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়, দু এক বছর যেতে না যেতেই ও পুত্র সন্তানের বাবা হয়।
তবে এতো কিছুর পরেও, কিছু কালো ছায়া ওর কখনোই পিছু ছাড়েনি, সেটা মূলত মাদক কেন্দ্রিক। ওর একাকী জীবনে মাদক ওকে প্রচুর ভাবে ঘায়েল করেছিল, যা পরবর্তীতে ওর সংসার জীবনেও খুব বাজে ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। যদিও প্রতিনিয়ত ও চেষ্টা করত নিজেকে সংযত রাখার জন্য, তবে তা কোনোভাবেই সম্পূর্ণ পেরে উঠতে পারেনি।
একটা সময়ের পরে তো, বয়স ত্রিশ অতিবাহিত না হতেই ওর শরীরে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও লিভার সিরোসিস এর মত গুরুতর রোগ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন থেকে যদিও ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ সেবন করে আসছিল, তবে খুব একটা লাভ হয়নি। বরং ধীরে ধীরে ও শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
আজ ঘুম থেকে উঠেই যখন সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিড দেখার চেষ্টা করছিলাম, তখন মুহূর্তেই রুশোর মৃত্যুর খবরটা জানতে পারলাম। ও গতরাতে বগুড়া মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
রুশোর জন্য যতোটা না খারাপ লাগছে, তার থেকেও বেশি খারাপ লাগছে, ওর ছোট বাচ্চাটার জন্য।
তবে বন্ধু হিসেবে, নিজেকে এখনো অনেকটাই অপরাধী মনে হচ্ছে। কেননা, ও যখন বিপথে পা বাড়িয়েছিল, তখন যদি ওকে ভালোভাবে আমরা সঙ্গ দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো আজ এমনটা নাও হতে পারতো।
ক্ষমা করে দিস, রুশো।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাই কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো কোনো কাল্পনিক গল্প। কিন্তু শেষে এসে বুঝতে পারলাম পুরো বিষয়টা। খুব খারাপ লাগছে।
আমার নিজেরও গতকাল থেকে মনের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই ভাই।
শুনে খুব খারাপ লাগলো🥹🥹🥹
আসলেই ভাই আমরা অনেক সময় নিজেকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে,কাছের মানুষদেরও সঙ্গ দিতে পারি না। আমি মাদককে কখনোই সাপোর্ট করি না,তবে কিছু কিছু মানুষ একাকীত্ব এবং ভীষণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। আসলে মাদকাসক্ত হওয়ার জন্য তাদেরকে সেভাবে দোষারোপও করা যায় না। কারণ তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে যায়। আপনার বন্ধু রুশো ভাইয়ের জন্য এবং তার ছোট্ট সন্তানের জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। যাইহোক দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন উনাকে বেহেশত নসিব করেন।
ওর ছোট বাচ্চাটার জন্য আমারও ভীষণ খারাপ লাগছে। বাস্তবতা সত্যিই অনেক কঠিন।
বাবা মা চলে গেলে কতটা যে টাফ হয়ে যায় বেচেঁ থাকতে সেটা তারাই বুঝে যাদের বাবা মা অকালে হারিয়েছে। রুশো ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে। সবকিছু ঘুছিয়ে নেয়ার পর মাদকের সাথে এভাবে জড়িয়ে যাওয়াটাও ঠিক হয়নি। ছোট ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হলেও এসব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। তবে মৃত্যু বলে কয়ে আসে না। রুশো ভাইয়ের খবরটা শুনে ব্যথিত হলাম 😥
জীবনটা বড্ড অদ্ভুত, কখন কার কি হবে তা বলা মুশকিল। আসলেই ব্যাপারটা বেশ বেদনাদায়ক।