পরিস্থিতি
জীবনে না বলা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে মাঝেমধ্যে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অনেক সময়, না বলা যায় না। বিষয়টা দিন দিন এমন জটিল হয়ে গিয়েছে আমার জীবনের সঙ্গে, তারই একটু সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করছি আপনাদের সঙ্গে।
এমনিতেই আমার মুঠোফোনে খুব একটা তেমন কারো কল আসে না, বলতে গেলে ঘুরেফিরে ঐ আত্মীয়-স্বজন আর কিছু বন্ধুদের কাছে আমার মুঠোফোনের নাম্বারটা দেওয়া আছে। সরাসরি কল করলে, এরাই করে। এ বাইরে আর কেউ না।
তবে অবাক করার বিষয়, আজকে সকাল থেকে একদম রাত্রি পর্যন্ত, মোট তিনটে কল এসেছিল। সবগুলোই আত্মীয়-স্বজনের কল। যারা কল করেছে, তারা অনেকটা বহুদিন পরেই আমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিল। ফোন দিয়ে, দু-এক কথা বলতে না বলতেই, শুধু টাকা ধার চাওয়ার কথা !
এই বিষয় গুলোকে আমি একদম পাত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি না। হয়তো আপনাদের জায়গা থেকে মনে হতে পারে যে, আমি মানুষটা খুব একটা সুবিধার না, তবে সত্যিকার অর্থে পরিস্থিতি আমাকে এমন বানিয়েছে। বলতে গেলে, খুব কাছের মানুষজন আমাকে শিখিয়েছে, জীবনে আরেকটু কঠিন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হওয়া উচিত।
দুজনকেই আমি মুখের উপরে সরাসরি না বলে দিয়েছি। কেননা এমনিতেই তারা দীর্ঘদিন পরে শুধুমাত্র সৌজন্যবশত আমার খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তারা ভুলেও জানার চেষ্টা করেনি সত্যিকার অর্থে আমি কেমন আছি বরং তাদের সমস্যার কথা নিয়েই তারা ব্যস্ত ছিল ।
প্রয়োজনেই সবাই সবাইকে কল করে,একটা ভীষণ স্বাভাবিক। তবে প্রয়োজন উদ্ধার হয়ে যাওয়ার পরে, যারা কাউকে মনে রাখে না, তাদের প্রতি আমি একটু বেশিই কঠোর। সেটা যত কাছের আত্মীয়-স্বজনই হোক না কেন, সেক্ষেত্রে আমি বরাবরই, না বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
হয়তো তারা আমাকে তাদের জায়গা থেকে ভুল বুঝতে পারে কিন্তু এতে আমার কিছুই করার নেই। দেখুন, আপনি বাহির থেকে আমাকে দেখে মনে করতে পারেন যে, আমি অনেক সাজানো-গোছানো জীবনযাপন করছি ! হ্যাঁ এটা সত্য যে, আমি অনেকটা সাজানো-গোছানো জীবনযাপন করছি, তবে তার মানে এই না যে আমি সমস্যার ভিতরে নেই।
বিষয়টা হচ্ছে আমি স্বল্পতে খুশি থাকার চেষ্টা করছি কিংবা স্বল্পতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি বা নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করছি। তবে এটা দেখে যদি, আপনার ভিতরে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হয়, এক্ষেত্রে আমি সত্যিই দুঃখিত।
ঠিক সন্ধ্যা বেলায়, তৃতীয় যে কলটা এসেছিল তাকেও না বলতেই চেয়েছিলাম, তবে পরিস্থিতির কারণে বলতে পারিনি। এ কলটা বেশ অদ্ভুত ছিল, আমাকে কোনরকম জোর করেনি, শুধুমাত্র বলেছিল তোর ভাবীর বিকেল থেকে পেটের ডান পাশটাতে ভীষণ ব্যথা করছে, কিছু খেলেই বমি করছে, দেখতো কিছু করতে পারিস কিনা ।
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আসা এমন কথাগুলো মুহূর্তেই আমাকে বেশ চিন্তিত করে ফেলেছিল , কত দ্রুত যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সিরিয়াল ম্যানেজ করেছি, তা বলে বোঝাতে পারবো না। এবার নিজের থেকেই সেই পরিচিত বড় ভাইকে, ফোন করার চেষ্টা করলাম, ভাই তখনও বেশ সাবলীলভাবে কথা বলছিল। শুধু বললাম, তুমি ভাবীকে নিয়ে ক্লিনিকের দিকে এগিয়ে যাও, বাকিটা আমি দেখছি।
আবারো ঘন্টা দুয়েক পরে যখন কথা হল, তখন সেই ভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম সে কিছুটা চিন্তিত। এমনিতেই মাসের শেষ, বুঝতেই পারছি তার বেতন এখনো হয়নি, এর মধ্যে তার স্ত্রীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন হবে সকাল বেলা, এই রাতে ডাক্তার মুখে সম্পূর্ণ খাবার খাওয়া নিষেধ করে দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে শুধুমাত্র শিরায় স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়েছে। হয়তো সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল সকাল বেলা অপারেশন হবে। যদিওবা অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের খরচ খুব একটা ব্যয়বহুল না, তবে মাস শেষে মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে, এমন খরচ গুলোই অনেকটা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।
যেহেতু মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমার পূর্বের পরিচিত কলিগ ছিল, তাই মোটামুটি সে চেষ্টা করেছে সেই ক্লিনিকের সার্জারি ডাক্তারের কাছে রোগীকে রেফার করার জন্য, অতঃপর তার পরামর্শেই রোগী এখন ক্লিনিকে ভর্তি। ক্লিনিকের ম্যানেজার আর সেই বড় ভাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনেই কথা বলার চেষ্টা করলাম, বললাম সবকিছু ঠিকঠাক মত চলুক, বাকিটা দেখা যাবে সকালবেলা।
আপাতত ভাবীর সুস্থতা বড্ড জরুরী।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
মানুষ বড়ই আজব জিনিস ভাইয়া।আমি আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বুঝেছি স্টাব্লিস একটা সাপোর্ট না থাকলে আত্বিয় স্বজন কেউ কারো না।শুধু দরকারের সময়েই খোজ নিবে।
না বলতে শেখা উচিত আমার মনে হয় কারন এই ধরনের মানুষের কাছে হ্যা বলাটা নিজের সাথে জুলুম এর সমান তাই না বলাটাই উচিত।
শেষের কথা গুলো খারাপ লাগলো আসলে পরিস্থিতি মানুষ পালটে দেয়।
আপনার ব্যাপারটার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত ভাই, আপনার ব্যাপারটা আমাকে মাঝে মাঝে বেশ ভাবায়। এটা সত্য মানুষ পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় বদলে যায়।
কিছু কিছু বিষয়ে না বলা দরকার।আত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে এরকম লোক অনেক আছে যারা দরকারই কল করে।তবে শেষের কলটি তে না বলেননি এটা ভালো লাগলো।অসুস্থ মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছেন।আপনার ভাবীর সুস্থতা কামনা করি ।তিনি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
অপারেশন হয়ে গিয়েছে, সে এখন ক্লিনিকে আছে। আরও কয়েকটা দিন লাগবে পুরোপুরি সুস্থ হতে।
কিছু কিছু মানুষ আছে তারা শুধু টাকা ধার নেওয়ার জন্যই খোঁজখবর নেয়। তবে কিছু কিছু মানুষ সত্যিই অনেক বিপদে পড়ে সাহায্য চায়। তাদেরকে আর না বলা যায় না। ভাইয়া আপনার সেই ভাবির সুস্থতা কামনা করছি। দোয়া করছি উনার অপারেশনটা যেন ভালোভাবেই হয়। আসলে তারা অনেক বিপদে রয়েছে বুঝতে পারছি ভাইয়া।
অপারেশন বেশ ভালোভাবেই হয়ে গিয়েছে আপু, ভাবী এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ।
প্রথমেই আপনার সেই পরিচিত বড় ভাইয়ের ওয়াইফের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। উনার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। যাইহোক এখনকার আত্মীয় স্বজনেরা মনে হয় এমনই, দরকার ছাড়া কোনো খোঁজ খবর থাকে না। আর সবাই শুধু টাকা চায়। কি যে একটা বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নিজের সংসার সামলিয়ে মানুষজন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে, তার মধ্যে টাকা ধার দিতে গেলে একটু ঝামেলায় পরতে হয়। মুখের উপর না বলে দিয়ে খুব ভালো করেছেন ভাই। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
পরিস্থিতি মাঝে মাঝে এমন অবস্থা সৃষ্টি করে যে, অনেক কিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। আপাতত ভাবী সুস্থ আছে, অপারেশন হয়েছে।
না বলা ব্যাপার টা আমার দ্বারা একেবারেই হয় না একেবারেই না। যেকোনো বিষয়ে আমি কাউকে না বলতে পারি না। আর এই ব্যাপার টা খুবই অপ্রীতিকর লাগে টাকার জন্য ফোন দেওয়া খোজখবর নেওয়া। যদিও আপনি প্রথমে না বললেও পরবর্তীতে আর না করা সম্ভব হয়নি। আর ভদ্রলোকের সমস্যা টাও বেশ জটিল ছিল দেখছি।
যারা শুধুমাত্র টাকা চাওয়ার জন্য ফোন করে এবং খোঁজ খবর নেয়, তাদের মুখের উপরই না বলে দেওয়া উচিত দাদা। এই কাজটা আপনি একেবারেই ঠিক করেছেন । কারণ আমি মনে করি যারা বিপদের সময় পাশে থাকে না, তাদের বিপদের সময়ও পাশে থাকা উচিত না। তারপরেও যে আপনি একজনকে বেশ কিছুটা সাহায্য করেছেন তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা শুনে, এইটুকুও তো আজকাল কেউ করে না।