বেশ ভালোভাবে সম্পন্ন হলো
সেদিন বলেছিলাম যে, আজকে যেহেতু শুক্রবার। তাই আমাকে দাদু বাড়িতে যেতে হবে। ঠিক সেই কথা থেকেই মূলত, দাদু বাড়িতে গিয়েছিলাম, আমার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী কে কেন্দ্র করে।
যাইহোক যেহেতু এটা তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, তাই মোটামুটি সকল আত্মীয়স্বজনরা একটু দ্রুতই আসার চেষ্টা করেছে। সময় যে কত তাড়াতাড়ি চলে যায়, সেটা আসলে যখন ভাবা যায়, তখন অনেকটাই গুলিয়ে যাই। এই তো সেদিন সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল তারপর হঠাৎ করেই যেন, সবকিছুই আবারও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ।
এটাই হয়তো জগতের নিয়ম আর এভাবেই প্রতিনিয়ত সবকিছু হচ্ছে। মূলত গতরাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ভোরবেলার দিকে। তারপরেও খুব কষ্ট করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছি এবং উঠেই পুরো পরিবার নিয়ে রওনা দিয়েছি দাদু বাড়ির উদ্দেশ্যে।
যেহেতু দাদু বাড়ি আমার একদম অত্যন্ত অঞ্চলের নদীর তীরবর্তী এলাকায়, তাই মোটামুটি সেখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোন উপক্রম নেই বললেই চলে। একমাত্র পায়ে হেঁটেই কাঁচা রাস্তা ও নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হবে দাদু বাড়িতে ।
যখন একদম ছোট ছিলাম, ঠিক সেই সময়টাতে এখানে জীবনের অনেকটা বছর কেটেছিল। তারপরে অবশ্য পরবর্তী সময়ে এখানে আর সেভাবে থাকা হয়নি। আসলে পরবর্তীতে সময়ে জীবন-জীবিকা ও পেশাদারিত্বের কারণে হয়তো গন্তব্য আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তাও যেহেতু নিজের অস্তিত্ব মিশে আছে এই বাড়িতে, তাই মূলত সময় সুযোগ পেলেই চলে আসি এখানে। তবে এখন আর সেই আগের মতো আমেজ নেই।
ছোট মা যখন বেঁচে ছিল, তখন টুকটাক মাঝে মাঝেই গ্রামের বাড়িতে আসতাম। তবে ছোট মা চলে যাওয়ার পরে, এইবার প্রথম আসলাম । তাও এক বছর পরে। আসলে সবকিছুই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং সবকিছুই মেনে নেওয়া লাগছে, এটাই হয়তো নিয়তি ।
এই যে আজ এত আত্মীয়-স্বজন এই বাড়িতে এসেছে, তারা ঠিকই বিকেল বেলার দিকে আবারো যে যার গন্তব্যে চলে যাবে। তবে এই যে সাময়িক দেখা, এটাই তো অনেকদিন পরে হল। হয়তো আজকাল জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে-শাদীতেই শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাছাড়া তো কোনোভাবে,দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ।
দাদু ভাইয়ের সময় এখন বেশ একাকীত্বেই কাটে। কারণ তাকে দেখাশোনার মতো লোক এখন নেই বললেই চলে। কিচ্ছু করার নেই, এটাই হয়তো জীবন। যাইহোক মোটামুটি সকাল বেলার ভিতরেই পৌঁছে গিয়েছি সেখানে। গিয়ে ম্যানেজমেন্টের কিছু দায়িত্ব ছিল এবং যেহেতু অনেক লোকের আয়োজন করা হয়েছে এবং আজকে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে, মোটামুটি এলাকার লোকজনদের কে মিলাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, তাই বেশ ভালোই চাপের ভিতরে ছিলাম ।
সময়টা যে কিভাবে চলে গেল, বুঝে উঠতেই পারলাম না । যাইহোক সকল আত্মীয়-স্বজন এসেছিল, সবাইকে নিয়ে বেশ ভালোই একটা সময় কেটেছে পারিবারিকভাবে। তবে তারপরেও যেন আলাদা একটা শূন্যতা কাজ করছিল নিজের ভিতরে। এটা হয়তো বুঝতেই পারছেন। কারণ যে মানুষটাকে নিয়ে আজকে এত আয়োজন, সেই মানুষটাই আজ আমাদের ভিতরে নেই। বড্ড খারাপ লাগছিল, বারবার স্মৃতিগুলো যেন মনে ভেসে উঠছিল ।
যতদূর পেরেছি নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এই অনুষ্ঠানে শামিল হওয়ার জন্য এবং সকলের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য। তারপরেও একটা সত্য কথা, একা আসলে সবকিছুই পেরে ওঠা যায় না বা সকলের মনটাও জয় করা যায় না। তাও মনে হয়, অনেক কষ্ট হলেও বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ছোট মার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি।
তবে আজ, অদ্ভুত একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। হয়তো আমি-আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকবো ঠিক ততক্ষণ পর্যন্তই আপনাকে মানুষ মনে রাখবে। তাছাড়া শুধুমাত্র কালে ভদ্রে আপনার কথা মানুষের মনে হতে পারে, জাস্ট এতোটুকুই।
খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, যখন ছোট মায়ের কবরের কাছে গিয়েছিলাম ঠিক সেই সময়ে। সেই অনুভূতিটা আমি কোনভাবেই ব্যক্ত করতে পারবো না। ভালো থাকুক ছোট মা সৃষ্টিকর্তার পরম যত্নে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
মানুষ এখন এতো ব্যস্ত যে কোন অনুষ্ঠান ছাড়া আত্মীয়দের সাথে তেমন দেখা হয় না। আপনার ছোট মা ওপারে যেন শান্তিতে থাকেন এ দোয়া করি। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যে।
আসলে একজন মানুষ জন্ম নিলে তার মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে দিন দিন প্রায় সবার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনের সাথে বছরে একদিন বা দুই দিনই দেখা হয়। যাই হোক আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী টা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো। আর আপনার ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া রইল।
খুব সত্যি কথা ,মানুষ কিছু সময় পর সব ভুলে যায়।অনেক দোয়া করি ভাইয়া আপনার ছোট মায়ের জন্য আল্লাহ জান্নাত দান করুন। যতই দিন যাক না কেন ,প্রিয় মানুষগুলোর মনে কিছু ভাল লাগা স্মৃতি রয়েই যায়। অনেক ভাল থাকবেন ভাইয়া।
আপনার দাদুবাড়ি দেখছি অনেক ভেতরের দিকে। নৌকা বা পায়ে হাঁটা ছাড়া যাওয়াই যায় না। আপনার দাদু ভাইয়ের দেখাশোনা তাহলে কে করে এখন? বয়স তো অনেক হয়েছে মনে হচ্ছে। বয়স হলে মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে যায়। তাছাড়া ঠিকই বলেছেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্য মৃত্যু, বিয়ে ছাড়া উপায় নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগের কারণে সরাসরি উপস্থিত দেখা খুব কমই হয় মানুষের মধ্যে। তাছাড়া ছোটবেলায় দাদুবাড়ির প্রতি যেরকম টান থাকে আস্তে আস্তে বড় হতে হতে সেই টানটা চলে যায়। যাই হোক সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে দেখে ভালো লাগলো।
আপাতত গ্রামের একজন মানুষ দাদু ভাইয়ের দেখা শোনার দায়িত্বে আছে,তবে দাদু ভাই তার বাড়ি থেকে অন্যত্র কোথাও গিয়ে থাকতে চায় না, এটাই হলো সমস্যা আপু। তবে দাদু বাড়ি বেশ ভালোই প্রত্যন্ত এলাকায়।
মৃত্যুবার্ষিকীতে খাওয়া দাওয়া আমাদের ধর্মেও হয়। আবার মৃত্যুর ১৩ দিন পর খাওয়া দাওয়া করানো হয় মৎসমুখী নাম করে।কিন্তু এই রীতিটা কেন যে আমার কাছে বড়ই অমানবিক লাগে জানি না।একটা মানুষ চলে গেলো, আর সেই উপলক্ষ্যে খাওয়া দাওয়া।কিন্তু কিছু করার নেই, যা রীতি মানতেই হবে।
জানেন দাদা, আমআর কোথাও এখন মনে হয় কি আমাদের ঠাকুরদা ঠাকুমা অথবা দাদু, দিদা এরাই যেন আসলে শিকড় যা পুরো পরিবার নামের বৃক্ষকে আঁকড়ে ধরে রাখে। এরা যতদিন থাকে আত্মীয়দের মধ্যে সম্পর্ক, যোগাযোগ ঠিক থাকে। এরা চলে গেলে সম্পর্কগুলো ছিন্ন হয়ে যায়। আমি নিজের পরিবার দিয়ে যেনো উপলব্ধি করতে পারি।
এটাই হয়তো জগতের নিয়ম আপু।
এই ব্যাপারগুলো ভাবতেই ভেতরে কেমন একটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যুই এই পৃথিবীর একমাত্র প্রকৃত সত্য। আর বাদবাকি সব কিছুই যেন বেঁচে থাকার জন্য অভিনয় করে যাওয়া। আর সবশেষে একদম যথার্থ কথা বলেছেন ভাই, চলে যাওয়ার পর কেউ আর কারোর থাকে না। যাক সবকিছু যে ভালোভাবে মিটে গেছে এটাই বড় কথা। আর বর্তমান সময় গুলো কেমন যেন, আগে সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হতো, গল্প হতো, কথা হতো। কিন্তু ইদানিং পরিবারগুলোর মাঝে সেই মিলন মেলা খুবই কম দেখতে পাই।
যে সময় চলে যায় তা আর ফিরে আসে না রে ভাই। জগতের ঘূর্ণিপাক বোঝা বড় মুশকিল।
আমাদের নিয়তি বড়ই নির্মম, আর তাইতো সময়ের সাথে সাথে সকল নির্মমতাকে মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হয়। ভাইয়া আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে জেনে খুবই ভালো লাগলো। আবার আপনার দাদুর একাকিত্বের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। এই বয়সে এসে একাকীত্ব তাকে ঘিরে রেখেছে। কি আর করার, ওই যে আমরা সময়ের হাতে বন্দি, তাই আর কিছুই করার নেই। ভাইয়া আপনার নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠান ভালোভাবে সম্পন্ন করেছেন এবং সেই বিষয়গুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি বরাবরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভাই, আপনাদের মতো পাঠকের মনে স্থান করতে পেরেছি এটা ভেবে।
আসলে আজকাল পায়ে হাঁটা এবং নৌকায় করে যাওয়ার ব্যাপারগুলো দেখাই যায় না। আমার কাছে কিন্তু ভালোই লেগেছে আপনাদের কথাগুলো শুনে। আসলে ঠিকই বলেছেন এখন কোন অনুষ্ঠান ছাড়া সবাইকে একসাথে পাওয়াই যায় না। যদিও আপনার ছোট মায়ের জন্য খুবই খারাপ লাগলো। কিন্তু তার মৃত্যুবার্ষিকীতে সবাই একত্রিত হয়েছে এমনকি আপনি নিজে প্রায় এক বছর পর আসলেন এটা কিন্তু বেশ আনন্দের। সবাইকে দেখলাম নদীর পাড়ে ভীষণ আনন্দ করছেন। আসলে নিয়মটাই এরকম পৃথিবীতে যতদিন সবাই মনে রাখে ততদিন।
হুম, আসলেই দীর্ঘদিন পরে সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে বেশ প্রাণবন্ত একটা সময় কেটেছে আপু।
নিয়তির কাছে আমরা সবাই হার মেনে যাই। আসলে এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন যে আমরা যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন সবাই আমাদেরকে মনে রাখে। কিন্তু আমরা যখন চোখের আড়াল হয়ে যাই তখন হয়তো সবার মনের আড়াল হয়ে যাই কিন্তু আমাদের আপনজনেরা যখন হারিয়ে যায় তখন তাদের স্মৃতিগুলো সারা জীবন থেকে যায়। দেখতে দেখতে একটি বছর পূর্ণ হয়ে গেল। কিন্তু সেই মানুষটি আর কখনোই ফিরে আসবে না। যাইহোক সব আত্মীয়-স্বজন যেহেতু এসেছে তাই সবার সাথে বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বুঝতে পারছি ভাইয়া। আপনার ছোট মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। তিনি যেন পরপারে ভালো থাকেন।