নরেন কাকুর দোকানে || @shy-fox 10% beneficiary
ঠিক কত আগে থেকে নরেন কাকুকে চিনি । একথার সঠিক কোন উত্তর আমার এই মুহূর্তে জানা নেই । তবে যদি বলি বাবার সঙ্গে যখন, প্রথম হাত ধরে হাঁটে যেতাম ঠিক তখন থেকেই সম্ভবত নরেন কাকুর সঙ্গে আমার পরিচয় । আমার তো এখনো মনে আছে, ঐতো সেদিন নরেন কাকু আমাকে গরম জিলিপি দিয়ে বললো খাওরে বেটা ।
হাঁটে এসেছো আর জিলিপি খাবে না , তা কি হয় নাকি রে । বাবা আমাকে মাঝে মাঝেই তার দোকানে রেখে হাঁটে বাজার করতে যেত । ব্যাপারটা বেশ ভালোই উপভোগ করতাম । ছোটবেলা থেকেই খাদক স্বভাবের ছিলাম । যাইহোক নরেন কাকুর দোকানে গেলেই, যেন তৃপ্তি করে জিলাপি খেতাম । আজও আমার সেই দিনগুলোর কথা চোখের সামনে ভাসে কিন্তু চাইলেও আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারি না । হয়তো শুধুমাত্র সময়ের ব্যবধান । কারণ বড় হয়ে গিয়েছি আমি, সঙ্গে বয়স বেড়েছে নরেন কাকার ।
জীবিকার তাগিদে হয়তো সময়ের ব্যবধানে আমার কর্মস্থল আমার ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নরেন কাকুর সঙ্গে যে আমার আত্মার একটা সম্পর্ক ছিল তা কিন্তু এখনো পরিবর্তন হয়নি । এইতো গতকাল যখন শবে বরাতের রাতে মসজিদের মুসল্লিদের জন্য জিলাপী কিনতে গিয়েছিলাম, তখন দীর্ঘদিন পরে নরেন কাকুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ।
সেই হালকা-পাতলা গড়নের দেহটা ঠিক আগের মতই আছে। খালি মাঝ থেকে তার বয়সটা যে বেড়ে গিয়েছে, সেটা খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে । কিগো নরেন কাকু চিনতে পেরেছ আমাকে । আরে তুই শুভ না, কেমন আছিস তুই । কতদিন পরে আসলি । এখন কই থাকিস, বাড়ির সবাই কেমন আছে । তোর বাপ কেও আর আগের মতো দেখা যায় না । বুঝলে নরেন কাকু, জীবনটা অনেক গতিশীল গো । চাইলেও আর আগের মতো করে সবকিছু ঠিকঠাক করে চলা খুব মুশকিল । বাড়ির সবাই ভালো আছে, ঝটপট দু কেজি জিলাপি দাও তো , মসজিদে দিতে হবে ।
আজকাল নরেন কাকু আর নিজে হাতে জিলাপি বানায় না । বয়স হয়ে গিয়েছে , এখন বেশ ভালো কয়েকটা কারিগর নিয়েছে তার দোকানে । তারাই সেই সকাল থেকে শুরু করে মাঝরাত অবধি জিলাপি বানায় । নরেন কাকুর দোকানের বড় নামডাক আছে এই তল্লাটে । তার শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। যাইহোক তার আজকের অবস্থান দেখে বড্ড গর্ব হচ্ছে ।
আসলে মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে । যদি তার সততা পরিশ্রম আর চিন্তাভাবনা ঠিক থাকে । তাহলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো মানুষের পক্ষে সম্ভব । এটা কেউ বিশ্বাস না করলেও, আমি এটা ভীষণ বিশ্বাস করি । নরেন কাকু ক্যাশ বাক্সের সামনে থেকে নিজেই উঠে আসলেন। আজ নরেন কাকুর দম ফেলার সময় নেই কারণ আজকে শবে বরাতের রাত । সবারই কমবেশি লক্ষ্য থাকে নরেন কাকুর দোকানের জিলাপি কেনার। কারণ এই দোকানের জিলাপির যে স্বাদ , তা আসলে মুখে না খেলে বলা খুব মুশকিল ।
আমি তখনো দেখছিলাম কারিগররা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে , জিলাপি বানানোর নিয়ে । নরেন কাকুর সেই মায়াভরা চেহারার একটা ছবি তুলে রাখলাম , হয়তো স্মৃতি হিসেবে । আবার যে কবে দেখা হয়, তা তো বলা মুশকিল । এমন সময় তো আর বারবার আসে না । আর এখন যে দিনকাল পড়েছে, কখন যে কার কি হয়ে যায়, তাও বলা মুশকিল ।
নরেন কাকু আমাকে বললো তুই এমন দিনে এসেছিস, তোর সঙ্গে যে একটু গল্প করবো সেই সময়টা আমার কাছে নেই । তাও তুই আগে বস চেয়ারে । আগে তুই জিলাপি খেয়ে নে , তারপর না হয় নিয়ে যাস । নরেন কাকুর কথাটা ফেলতে পারলাম না । আর তাছাড়াও তার জিলাপির প্রতি আমার আলাদা একটা দুর্বলতা আছে। হয়তো সেই জায়গা থেকেই বসে পড়লাম তার দোকানের চেয়ারে । বেশ কয়েকটা গুড়ের জিলাপি খেয়ে নিলাম । নরেন কাকু নিজের হাতে বেছে বেছে জিলাপি দিল আমার জন্য এবং আরো খানিকটা জিলাপি দিল অন্য ব্যাগে এবং বলল এই কয়েকটা তোর বাপকে দিস। তোর বাপের সঙ্গেও দেখা হয় না , বহুদিন ধরে ।
কিছু সম্পর্কের কোন মানে থাকেনা । হয়তো থাকে না কোন রক্তের বন্ধন । কিন্তু তারপরেও সেই সম্পর্ক গুলো বেঁচে থাকে যুগ থেকে যুগান্তর । যদিও সময়টা অল্প ছিল, তারপরেও সেই চিরচেনা মুখের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে বেশ ভালোই বোধ করেছিলাম । এমন মানুষগুলো বেঁচে থাকুক বহুদিন, এমন প্রত্যাশাই করি ঈশ্বরের কাছে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
নরেন কাকুর মতো মানুষের সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও এই মানুষগুলো হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। আমাদের এলাকায় এক লোক সদাই নিয়ে আসতো তার ব্যবহার এতো ভালো ছিলো সবাই তার কাছ থেকে জিনিস কিনতো। লোকটার নাম জানা নেই। তবে সেই লোকটির গায়ের রং ছিলো অনেক কালো। তাই তার নাম কেমনে যে কালা ব্যাটা হইছে জানা নেই। সবাই কালা ব্যাটা বলেই চিনতো।লোকটি মারা গেছে অনেক দিন হইছে তবে এখনো মাঝে মাঝেই তার কথা উঠে। নরেক কাকুর গল্প পড়ে তার কথা মনে পড়ে গেলো। অনেক ধন্যবাদ নরেন কাকুর গল্পের জন্য। ❣️❣️
আপনি শেষের কথাগুলো আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্ক হলেই যে সম্পর্ক বেঁচে থাকে অটুট থাকে তা কিন্তু নয় এরকম নরেন কাকুর মত মানুষদের সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও খুবই ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায় এবং সেটা অটুট থাকে তার প্রমাণ আপনার আজকের এই লেখা।ভালো থাকবেন অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাইয়া♥♥
ভাইয়া অসাধারন লিখেছেন আপনি। সত্যি ভাইয়া কিছু সম্পর্কের কোনো মানে হয় না। সেই মানুষগুলোর সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও এমন এক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় যা রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অনেক বেশি হয়। আসলে পুরনো দিনের সেই মানুষগুলো হয়তো চেহারার দিক থেকে বদলে গেছে কিন্তু তাদের আন্তরিকতা আগের মতই আছে। নরেন কাকুর মতো মানুষেরা সারা জীবনই আন্তরিকতার সাথে মানুষের সাথে মেলামেশা করে। সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আপনি আপনার সেই পুরনো স্মৃতি আবারও মনে করলেন এবং নরেন কাকুর দোকানে জিলাপি খেতে ও কিনতে গিয়েছেন। নরেন কাকুর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সে যেন ভালো থাকেন এই কামনাই করি।
একদম ঠিক বলেছেন আপু । পুরোনো সম্পর্কের মাঝে আলাদা সতেজভাব কাজ করে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল আপু ।
কিছু সম্পর্ক সত্যি এরকম যেগুলো রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। নরেন কাকুর সাথে এরকম ভাবে কথা বলতে শুনে অনেক ভালো লাগলো। সব সম্পর্কেই আসলে এমন হওয়া উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আসলে ছোটবেলায় আমাকেও মিষ্টির দোকানে রেখে বাবা হাট করতে যেত। আসলেই ছোটবেলার কথা খুবই মনে পড়ে । তখনকার মুহুর্ত গুলা অনেক ভাল ছিল। আসলে চাইলেও আমরা হেঁটে যেতে পারবো না। আমরা ভাবতাম বড় হলে ভালো কিছু হবে অনেক কিছু হবে কিন্তু যতই বড় হচ্ছি দিনেদিনে আনন্দ নামক জিনিসটা কমে যাচ্ছে । আসলে এটা ঠিক মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে। যদি ক্ষমতা পরিশ্রম চিন্তাভাবনা ঠিক থাকে এই কথাটার সাথে একমত। আসলে মানুষ চেষ্টা করতে চায় না এটাই।আসলে বর্তমান সময়ে কার কখন কি হয়ে যায় বোঝাই মুশকিল। আজ আছে কাল নাই, 😰।অনেকদিন পর দেখা হয়ে বেশ ভালই লাগলো।
হুম যতো দিন গড়িয়ে যাচ্ছে ততোই সময় ও সম্পর্ক গুলো জটিলতাপূর্ন হয়ে যাচ্ছে । ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
গ্রামের এই সুন্দর মুহুরত গুলো সত্যি এক সময় কাল্পনিক হয়ে যায়।আমার বাবা ঠিক এভাবেই ছোট বেলায় সাপ্তাহিক হাটে যেতেন বাজার করতে কাধে চরে আমিও যেতাম গড়ম গড়ম জিলাপি নিয়ে বসে পরতাম। মনে পরলে এখন কেমন লাগে।ব্লগ টি পরে অনেক ভালো লাগল ভাইয়া।
অতীত বড়ই আবেগপ্রবণ ভাই । আগের দিন গুলোই ভালো ছিল ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ছোটবেলার সেই নরেন কাকুর সাথে আজও যে আপনার সেই আগের মতই সম্পর্কটা অমলিন আছে এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। বয়স বাড়ে সময় বদলায় কিন্তু সম্পর্ক গুলো অমলিন থেকে যায়। ভালো থাকবেন সবসময়❤️
এমনটাই তো দেখছি ভাই , বেঁচে থাকুক বহুদিন পুরানো সম্পর্ক গুলো । ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
নরেন কাকু একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।সাদাসিধা প্রকৃতির মানুষটার মন-মানসিকতা আগের মতই আছে।শৈশবের বন্ধনে নরেন কাকু আপনাকে ভুলে যায় নাই।সততা আর বিশ্বাস মানুষকে ভালো মানুষ করে তোলে।নরেন কাকুও তার ব্যতিক্রম নয়।চমৎকার উপস্থাপনায় নরেন কাকুর জীবনদর্শন জানাগেলো।
ধন্যবাদ ভাই । এমন মানুষগুলো বেঁচে থাকুক বহুদিন। আমি কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ।
ভালবাসা অবিরাম শ্রদ্ধেয়।
ভাইয়া, আপনার লেখা গল্পগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আপনার লেখা বাস্তব জীবন কাহিনী তুলে ধরলেও আমার কাছে সেগুলো গল্পের মতো মনে হয়। মনে হচ্ছে আমি কোন লেখক এর গল্প পরছি আর সেই গল্পে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। এত সুন্দর করে আপনার লেখাগুলোকে উপস্থাপন করেন যা হৃদয়ের এক কোণে জায়গা দখল করে বসে। ভাইয়া, আপনি একদম ঠিক কথাই বলেছেন, মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। যদি তার সততা পরিশ্রম আর চিন্তা ভাবনা ঠিক থাকে তাহলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো মানুষের পক্ষে সম্ভব। এটা কেউ বিশ্বাস না করলেও আপনি এটা ভীষণ বিশ্বাস করেন। আপনার এই কথাটুকু আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। কারণ আমিও বাস্তবে এরকম দুই একজন মানুষের সংস্পর্শে এসেছি যারা সততার পরিচয় দিয়ে ধৈর্য ও পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন করেছে। আবার অনেককেই দেখেছি ধৈর্য পরিশ্রম সততা সবকিছুকেই উপেক্ষা করে পথে বসে যেতে। যাইহোক ভাইয়া, নরেন কাকুর সাথে আপনার আত্মার মিল দেখে খুবই ভালো লাগলো। সেই ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত এই নরেন কাকুর দোকানে আপনার যাতায়াত আছে এবং ভীষণ রকম সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। আর এই সম্পর্ক চিরদিন অটুট থাকুক এই কামনাই করছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্মতৃপ্তি । কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ভাই ।
ভাইয়া আজকে আপনার পোস্টটা পড়ে আমার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, কারণ ছোটবেলা আমি যখন বাবার সাথে হাটে যেতাম, তখন বাবা আমাকে একটি জিলাপির দোকানে বসিয়ে জেলাপি কিনে দিয়ে বাজার করতে যেত। তখন আমার খুবই কষ্ট হতো। বসে থেকে জিলাপী শেষ হয়ে যেত কিন্তু বাবা আসত না। বাবা অনেক বাজার করে অনেকক্ষণ পরে আসতো। তখন আমার কান্না পেত। আসলে অপেক্ষার এই সময়টা আমার ভাল লাগতোনা। বাবার সাথে হাটে এসেছি,হাটের পরিবেশ ঘুরে ঘুরে দেখব কিন্তু বাবা জিলাপি কিনে দিয়ে আমাকে বসিয়ে রেখে চলে যেত। আপনার বাবা আপনাকে হাটে জিলাপি কিনে দিয়ে বাজার করতে যেত, এই কথাটা পড়ে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। যাই হোক আপনার সাথে অবশেষে নরেন কাকুর সাথে আবারো দেখা হয়েছে। অনেকদিন পরে এরকমই আছে কিন্তু সে অনেকটাই পরিবর্তন বয়সের ছাপ পড়েছে। সে এখনো জিলাপি বানায় না তবে কারিগরদের দিয়ে জেলাপি বানায়। আসলেই আপনার গল্পটা আজকে আমার খুবই ভালো লেগেছে। মানুষ সময়ের পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে আমাদের সব কিছু পরিবর্তন হয়। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
অতীত বড়ই আবেগপ্রবণ ভাই। এমন ঘটনা কমবেশি সবার জীবনেই আছে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।