হাসি || @shy-fox 10% beneficiary
হাসি আমার বাল্যকালের বান্ধবী ছিল। আজ হুট করেই কেন জানি হাসির কথা মনে পড়ছে । এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না ,তাহলে আজ কেনইবা হাসির কথা আমার বারবার মনে পড়ছে, কেনইবা তার সেই ছোট্ট সংসারের কথা, আমার মনে আজ বারবার ধাক্কা দিচ্ছে ।
ভালোবেসে হাসি হাবিবকে বিয়ে করেছিল । হাবিব হাসির দু বছরের সিনিয়র ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় । হাসির যখন গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গিয়েছিল তখন হাবিব পেশায় একজন নামকরা সাংবাদিক হয়ে গিয়েছিল । ঢাকা শহরের বুকে বেশ তারা ভালোভাবেই সংসার করেছিল । তাদের সংসারে ছোট্ট একটা রাজপুত্র ছিল । যার নাম ছিল হাসিফ ।
বেশি ভালোবাসা নাকি হুট করে তিতা হয়ে যায় । তেমনটাই হয়েছিল হাসির সংসারে । আট বছর সংসার করতে না করতেই হঠাৎ একটা অন্ধকারে হাসির যেন পুরো সংসার দুমড়ে-মুচড়ে যায় । নির্বাচনের সংবাদ গ্রহণ শেষ করে রাত দুটোর দিকে যখন হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে হাবিব তার ছোট মোটরবাইক নিয়ে বাসায় ফিরতে ছিল, তার কিছু আগেও হাবিবের সঙ্গে হাসির মুঠোফোনে শেষ কথা হয়েছিল । হাবিব বলছিল আমি আসছি, এখনো ভাত খাইনি । বাসায় এসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবো ।
হাতিরঝিল এলাকার রাস্তা গুলো বড্ড ফাঁকা ও আঁকাবাঁকা । রাত্রিবেলা তো যেন আরো জনমানব শূন্য ও বেশ নিরিবিলি । রাস্তার বাঁক নিতেই যখন মোটরবাইকটা ঘুরিয়ে ছিল হাবিব, হুট করেই আচমকাই যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেল এবং ঘটনাস্থলেই হাবিব স্পট ডেড ।
ঢাকা মেডিকেলের গেটে যখন হাসি তার প্রিয় মানুষের, ঐ মৃতদেহটা দেখেছিল । হাসি অনেকটাই নিজেকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছিল না । হাসি যেন অনেকটাই পাগল হওয়ার মতো হয়ে গিয়েছে । হাসি বুঝে উঠতে পারছিল না কিভাবে এই শোক সে কাটিয়ে উঠবে । কিভাবে এই পৃথিবীতে তার ছোট্ট হাসিফ কে নিয়ে একা পথ চলবে । এসব ভাবতে ভাবতেই তার জন্য বহুটা সময় চলে গিয়েছিল ।
আজ দীর্ঘ দুই বছর পরে আচমকাই আমার যেন হাসির কথা বারবার মনে পড়ছে । আজ হুট করে যখন সন্ধ্যাবেলা চেম্বার থেকে আমি বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। তখন চেম্বার থেকে বের হতেই ছোট্ট একটা অটো পেয়ে গেলাম এবং অটোতে চড়েই মোটামুটি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । যাত্রাপথেই হীরাকে ফোন করলাম আর বললাম আমার জন্য খাবার রান্না করো । বড্ড ক্ষুধা লেগেছে, বাসায় এসে একসঙ্গে খাবো ।
কাঁটা মোড় পর্যন্ত বেশ ভালোই এসেছি । রাস্তা বেশ ফাঁকা , মোটামুটি অটো ভালো গতিতে আসছিল । অটোতে তেমন কেউ ছিল না । আমি আর অটো ড্রাইভার । যাইহোক কাটাঁ মোড়ের ওখানে রাস্তা একটু ভাঙ্গা । মানে ছোট গাড়ি গুলোর জন্য একটু এলোমেলো হয় ঐ জায়গাটাতে । মানে গতি কমিয়ে তারপরে ভাঙ্গা অংশটুকু ধীরগতিতে আবার যেতে হয় ।
আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে, অটো ড্রাইভার খুব সাবধানে খুব ধীরগতিতে ভাঙ্গা অংশটুকু পার হচ্ছিল কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা বড় বাস যখন আমাদের অটোকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তখন যেন আমাদের অটো গাড়ির সঙ্গে লাগে লাগে অবস্থা । মানে চার আংগুলের মত ফাঁকা ছিল শুধুমাত্র । স্বচক্ষে যখন এই ঘটনাটা আমি দেখেছি আজকে, মুহূর্তেই যেন আমার শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল এবং আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি বাসচালকের কর্মকান্ড দেখে ।
এমনিতেই এই স্বল্প রাস্তাটুকু ভাঙ্গা তার ভিতরে বাস চালক একদম জোর গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল এবং রাস্তায় যে ছোট গাড়ি চলাচল করছে, সেদিকে যেন তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । আমি কিভাবে যে বাকি পথটুকু এসেছি, তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না । আমার ভিতর যেন এখনও আলাদা একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে এবং সেই দৃশ্য যখন আমার বারবার মনে হচ্ছিল। তখন আমি নিজেকে কোনমতেই সামলিয়ে নিতে পারছিলাম না ।
প্রতিনিয়ত রাস্তার সংস্করণ করে রাস্তা বড় করা হচ্ছে । চেষ্টা করানো এবং বোঝানো হচ্ছে, সবাইকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ভালোভাবে সচেতন করানোর জন্য । তারপরেও আমরা যেন কোথায় থেকে প্রতিনিয়ত একটু দলছুট হয়ে যাচ্ছি । আমি বুঝে উঠতে পারছি না , রাস্তায় যারা বড় গাড়ি চালায়, তারা কি কখনো ছোট গাড়ির ভিতরে থাকা লোকজন গুলোর কথা চিন্তা করে । ব্যাপারটা আমার এমতাবস্থায় কোনোভাবেই বোধগম্য হয়ে উঠছে না ।
হাসির ঘটনাতো দু বছর আগের । হাসির মুখটা দেখলে এখনো আমার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে কিন্তু আজকে যদি আমার কোন কিছু হয়ে যেত, সেই দায় কে নিতো ? আমার পরিবারের কি হতো ? এটা ভাবছি আর আমি যেন কোথায় থেকে কোথায় গুলিয়ে যাচ্ছি ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আজকের পোস্টের লেখাগুলো যখন হ্যাংআউটে পড়ছিলেন মনোযোগ দিয়ে শুনছি। কি বলবো ভাই, আমাদের দেশের গাড়ির ড্রাইভাদের অনেকের লাইসেন্স ও নাই কিন্তু তারা গাড়ি চালাচ্ছে। তারা কি যে মনে করে নিজেদের আমি বুঝি না। আমাদের দেশে রোড় এক্সিডেন্ট লেগেই আছে। রোড় এক্সিডেন্টের মূল কারণই হচ্ছে অদক্ষ্য ড্রাইভার। কিছু দিন আগেও বাসের চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলো। রাস্তার যে অবস্থা আমাদের রাস্তায় বের হলে খুবই সতর্কতার সাথে চলতে হবে। ভাই ভালো লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম সঠিক কথা বলেছেন ভাই । কখন কার কি হয়ে যায় , বলা খুব মুশকিল। নিজেও সাবধানে ভাই । শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
হাসির মতো হাজারো হাসি তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আসলে একটি দুর্ঘটনা শুধুই একটি প্রাণ কেড়ে নেয় তা নয়। সেই সাথে কেড়ে নেয় একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ। একটি পরিবারের ভালো থাকা যে মানুষটি কে কেন্দ্র করে সেই মানুষটি যদি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তাহলে সেই পরিবারের মানুষগুলো হয়তো আর স্বাচ্ছন্দে বেঁচে থাকতে পারে না। একদিকে যেমন প্রিয়জন হারানোর বেদনা অন্যদিকে তেমন কাছের সেই ভরসার মানুষটিকে হারানো সবকিছু মিলে মিশে যেন হাহাকার তৈরি হয়। অন্য দিকে খেয়াল করলে হয়তো দেখতে পাওয়া যায় তাদের দায়িত্ব নিতে কেউ এগিয়ে আসে না। তবে যাইহোক ভাইয়া আপনি আল্লাহর অশেষ রহমতে নিরাপদে বাসায় ফিরে এসেছেন এটার জন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাইয়া।
হাসির ব্যাপারটি আসলেই বেশ দূ:খ দিয়েছে আমাকে । সকলের জন্য সড়ক গুলো নিরাপদ হোক এই কামনাই করি ।
এটা একেবারে সঠিক বলেছেন ভাই। আমি নিজেও মাঝে মাঝে এইটা চিন্তা করি। বড় বড় দূর্ঘটনা গুলো এই বড় গাড়ি দ্বারাই সংগঠিত হয়।
গতকাল হ্যাংআউটে আমি আপনার বলা হাসির গল্পটা শুনেছিলাম আজ পড়লাম। আসলেই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং ভাবনার বিষয়। এইরকম দিন যেন সৃষ্টিকর্তা কাউকে না দেখাই। এবং আমরা সবসময় নিয়ম না মেনে চলতেই পছন্দ করি। বিশেষ করে রাস্তায়।।
আসলেই ঘটনা গুলো বেশ কষ্টদায়ক। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
আসলে বর্তমান সময়ে যে জিনিসটা বেশি ভালোবাসা যায় সে জিনিসটা বেশি দিন থাকে না।আসলে কেন থাকে না এটাই অজানা।আসলে তাদের কি সুন্দর একটি সংসার ছিল। ছোট একটি রাজপুত্র জন্ম নিয়েছে। তারা সুন্দরভাবে সংসার করবে কিন্তু কি বিধাতার খেলা এভাবে সংসার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।সৃষ্টিকর্তা আপনাকে হেফাজত করছে আলহামদুলিল্লাহ। দুর্ঘটনা বলে আসেনা কিন্তু একটা কথা মৃত্যু কপালে থাকলে সৃষ্টিকর্তা কিছু-না-কিছুর উসিলাই নিয়ে যাবে।আসলেই ভাইয়া যারা বড় গাড়ি চালায় তারা ছোট গাড়িকে তোয়াক্কা করে না বললেই চলে। এমন দুর্ঘটনার প্রায় ঘটে যাচ্ছে। দুর্ঘটনায় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।
কিছু ব্যাপার ভীষণ সত্য কিন্তু মেনে নিতে কষ্টকর হয়ে যায় , যেমনটা হাসির সঙ্গে ঘটেছে । সড়ক গুলো নিরাপদ হোক এই কামনাই করি ।
আমাদের এই মানব জীবন খুবই ক্ষুদ্র। তাই কোনো দুর্ঘটনা যদি আমাদের এই মানব জীবনকে আরও বেশি ক্ষুদ্র করে দেয় তাহলে হয়তো এ জীবনের সব চাওয়া পাওয়া গুলো অপূর্ণ থেকে যায়। আসলে আমরা যারা আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি তারা যদি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হই তাহলে আমাদের পরিবার কোথায় দিয়ে গিয়ে দাঁড়াবে এ কথা ভাবলে মনের অজান্তেই বুক কেঁপে উঠে। হাজার হাজার দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের পরিবার বুঝতে পারে তারা প্রিয়জনকে হারিয়ে কতটা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। একদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষকে হারানোর বেদনা অন্যদিকে হচ্ছে তাদের দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জোগাড় করা। সবকিছু মিলে একটি পরিবার কোন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করে এটা শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারে। আমরা হয়তো তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে জানি কিন্তু কখনও তাদের দায়িত্ব নিতে জানি না। আসলে আপনি এত বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এটাই হচ্ছে অনেক বড় ব্যাপার। দুর্ঘটনায় যদি আপনার কিছু হয়ে যেত তাহলে আপনার পরিবারের মানুষগুলো অনেক বেশি অসহায় হয়ে পড়তো। তবে যাই হোক আপনি ভালো আছেন এবং সুস্থ ভাবে আপনার প্রিয় মানুষগুলোর কাছে ফিরতে পেরেছেন এজন্য অনেক ভালো লাগলো। আশা করছি আপনি সাবধানে চলাফেরা করবেন এবং ভালো থাকবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। 💝💝💝💝💝
ভাই ঐ এলোমেল চিন্তা গুলো এখনো মাথার ভিতর ঘুরপাক খায় । কি একটা অবস্থা । ভাবলেই শরীর থরথরে কাঁপে । আপনিও সাবধানে থাকবেন ভাই ।
ভাই হাসির প্রসঙ্গের মাধ্যমে আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরলেন তা নিয়ে বহু জল ঘোলা করা হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উন্নতি হয়নি বলেই আমার মনে হয়। সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অযোগ্য চালক আর আইন-কানুন না মানার ফলেই আজ এই অবস্থা কিন্তু পরিবর্তনের কোন আভাস এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
একদম সত্য, সঠিক ও সময়উপযোগী কথা বলেছেন ভাই । কবে যে এইসবের প্রতিকার হবে তাই মাঝে মাঝেই ভাবি ।
আমাদের সমাজটা এমন হয়ে গিয়েছে যে যতোই বদলাতে চাইনা কেনো,যতই আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাইনা কেনো আসলে পারিনা।কারণ আমরা চাই ই না!
নাহলে এতো এতো ঘটনার পরেও এসব ড্রাইভার শুধরায়না কেনো!
দেখেও যেন কেও দেখে না , শুনেও যেন কেও শোনে না । হীরক রাজার দেশে বাস করছি আপু ।
খুব খারাপ লাগলো ভাই আপনার বান্ধবী হাসি এবং তার স্বামী হাবিবের গল্পটা পড়ে। আর আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিও খুব দুঃখজনক ছিল। সাবধানে চলাচল করবেন। কারণ একজন মানুষের মৃত্যু করে পরিবার এবং সমাজে শোকের ছায়া বয়ে আনতে পারে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
হুম ব্যাপার গুলো বেশ দূ:খজনক । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। নিজেও সাবধানে থাকবেন ভাই ।
এই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য কত শত যে নিরীহ প্রাণ চাকার তলে পিষে গেছে ভাবতেই গা শিউরে উঠে। আসলে বিষয়টি কি জানেন আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা নেই, আর নয়তো ড্রাইভাররা যখন ড্রাইভিং সিটে বসে তারা হয়তো নিজেকে হিরোর মতো কল্পনা করে😁।
ব্যাপার গুলো সত্যিই কষ্টদায়ক। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।