উন্মুক্ত ইফতার
ইফতারের ঠিক ঘন্টা খানেক আগেই বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম, গন্তব্য ছিল ওষুধের ফার্মেসি। যেহেতু আজই গ্রাম থেকে ফিরেছি, তাই হঠাৎই শহরের আবদ্ধ পরিবেশে এসে, বলা যায় শরীরটা অনেকটাই কাহিল হয়ে গিয়েছে। তাছাড়াও, তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। এমতাবস্থায় খাবার স্যালাইনের কোন বিকল্প নেই।
লিটন চলে যাওয়ার পর থেকে, মনটা এমনিতেই বিষাদে ভরে আছে। আজ যখন বাসা থেকে বের হয়েছি, তখন মুহূর্তেই নজরুল ভাই সামনে এসে হাজির।
এসেই বলল, ভাইজান বহুদিন ধরে আপনার দেখা নেই, কই ছিলেন এতো দিন। বলেই ফেললাম, নজরুল ভাই গ্রামে ছিলাম, আজই ফিরেছি। শরীরটা খুব একটা ভালো ঠেকছে না, ফার্মেসির দিকে একটু নিয়ে যান তো।
অতঃপর রিকশায় চেপে, ফার্মেসির দোকানে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও স্যালাইন কিনে যখন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেব, ঠিক তখনই পারিপার্শ্বিক লোকজনের ভিতরে বেশ ব্যস্ততা লক্ষ্য করলাম। আর বুঝতে বাকি রইল না, ইফতারের সময় বড্ড ঘনিয়ে এসেছে।
নজরুল ভাইকে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, ইফতার কোথায় করবেন। সে এবার হেসে উত্তর দিল, বললো ভাই বাড়ি থেকে কিছু শুকনো খাবার এনেছি তা দিয়েই ইফতার হয়ে যাবে। উত্তরটা আমি সেভাবে গ্রহণ করতে পারিনি, বুঝলাম তার ইফতার অনেকটাই অনিশ্চিত।
এবার মাঝপথেই তাকে রিকশা থামিয়ে দিতে বললাম। আচ্ছা নজরুল ভাই, আজ দুই ভাই একত্রে ইফতার করলে কেমন হয়। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো সে। অবশেষে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে চাহিদা মত ইফতার কিনে নিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যখন ইফতার কিনছিলাম তখন সঙ্গে বাবুও ছিল এবং ও দেখার চেষ্টা করছিল আমরা কি কিনছি। তাৎক্ষণিক ওর সমবয়সী আর একজন ছোট বাচ্চার আগমন।
বুঝতে পারলাম, এই ছোট বাচ্চাটা হচ্ছে ইফতার দোকানীর বাবু। আমরা যে সময় ইফতার কিনছিলাম, সেই মুহূর্তেই আমার বাবু ও সেই বাবুর ভিতরে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ রসায়ন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা আমাকে সেই মুহুর্তে বেশ অভিভূত করেছিল । অতঃপর দোকানীর পয়সা মিটিয়ে, খুব দ্রুত নজরুল ভাইকে বললাম, আশেপাশের কোন ফাঁকা স্থানে যাওয়ার জন্য।
তারপর যেমন ভাবনা তেমন কাজ, যে জায়গাটাতে আমরা গিয়েছিলাম, সেখানে গিয়েও দেখি আমার আমাদের মত আরো অনেকেই উন্মুক্ত পরিবেশে ইফতারের আয়োজন করেছে। অবশেষে আমরা দু'ভাই মিলে উন্মুক্ত পরিবেশে ইফতার সেরেই ফেললাম।
অভিজ্ঞতার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে এক কথাতেই বলবো, স্বল্প সময়ের সিদ্ধান্তে আমাদের যে ইফতারের আয়োজন ছিল, মোটামুটি তা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং আমি নিজেও বেশ প্রশান্তি পেয়েছি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শহরে এসেই প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সাক্ষাৎ । তারপর তাদের সাথে উন্মুক্ত পরিবেশে ইফতার করার মুহূর্তটা সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে মানুষের মানসিকতা যদি সবার এরকম হত তাহলে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়ে এভাবে ভালো সময় কাটালেই পৃথিবীটা সুন্দর হতো। তাছাড়া খোলা মাঠে ইফতারের সময় আপনার ছোট্ট বাবুর সাথে আরেকটি বাবু এসে ভালোই রসায়ন তৈরি করেছে। এই বিষয়টা সত্যিই দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমাদের সাথে ইফতার করার মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
রমজান মাসে কাউকে ইফতার করাতে পারলে সত্যিই এটা অনেক বড় সোয়াবের ব্যাপার। আপনি ওই ভাইটিকে নিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে ইফতার করেছেন, সত্যি বলতে এটা হয়তো আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে করতো না। যাইহোক এগুলো অনেক বড় মানসিকতার বিষয়। আর সায়ান বাবুকে দেখলাম আরেকটি বাচ্চার সাথে কিছু সময়ের মধ্যে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে। যাইহোক ভাই আপনার এই পোস্টটি থেকে কিছু শিক্ষনীয় জিনিস রয়েছে। আশা করি যাদের বুঝার মানসিকতা আছে তারা নিশ্চয় বুঝবে। অনেক ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার মন্তব্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভাই, শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
এমন খোলামেলা পরিবেশে ইফতার করার মাধ্যমে মনের মধ্যে অন্যরকম তৃপ্তি কাজ করে। কাউকে ইফতার করাতে পারলে এমনিতেই প্রচুর সওয়াব পাওয়া যায়। শায়ান তো দেখছি অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ছেলেটার সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গিয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে শায়ান খুব মিশুক প্রকৃতির। যাইহোক বেশ ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে। এতো চমৎকার মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
এটা ঠিক বলেছেন ভাই, আমি প্রায়ই মাঝে মাঝে লক্ষ্য করি শায়ান সবার সঙ্গেই বেশ আন্তরিকভাবে মিশে যায় মুহূর্তেই।
কথায় তো আছে- বাপ কা বেটা সিপাহী কা ঘোড়া, কুচ নেহী তো থোরা থোরা। আমাদের শায়ান বাবুও ঠিক সেই রকমের । বাবার থেকে মানবতা শিক্ষা নিচ্ছে। আসলে সমাজের উচু তলার মানুষ গুলো যদি এমন করে প্রতিটি রিক্সা চালকের মনের কথা বুঝে যেত তাহলে সমাজটা অনেক সুন্দর হতো। যাই হোক স্যালুট বস। এমন মানবতা ধরে রাখেন চিরদিন।
আমি উঁচু তলার মানুষ নই আপু, আমিও ওদের মতই।
গ্রামের পরিবেশ থেকে শহরো আসলে এমনি হয়। শরীরটা যেন দূর্বল হয়ে যায়। আমিও কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে আসলাম। কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলাম। যাক, নজরুল ভাইয়ের সাথে ইফতার সেরে ভালো করেছেন। আমার এটা খুব ভালো লাগে, আপনি সবসময় শ্রমজীবী মানুষদের নিয়েই কথা বলেন ও পাশে থাকেন।
শ্রমজীবী মানুষ আছে বলেই তো, আমরা বেঁচে আছি ভাই। তাদের গুরুত্বই হোক সর্বদা, সর্ব প্রথমে।
জি ভাইয়া একদম ঠিক বলেছেন। তার আছে বলেই আমরা বেচেঁ আছি।
আপনার এই ধরনের কাজগুলো আমার মন ছুয়ে যায় ভাই। আপনার মতো করে অনেকেই ভাবতে পারে না। নজরুল সাহেব কে নিয়ে আপনার ইফতার করার বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে বলব না আমার মন ছুয়ে গেছে। নিজের অনূভুতির চেয়ে বড় কিছু নেই। আপনার পোস্ট সম্পর্কে আর কিছু বললাম না। শুধু বলব আপনার জন্য শুভকামনা।
দেখুন আমি কিছুই করিনি, আমার শুধু মনে হয়েছে তাকে নিয়ে ইফতার করা দরকার, তাই করেছি, ঠিক এতোটুকুই।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ইফতার করার অভিজ্ঞতা আমার খুব বেশি একটা নেই দাদা। তবে উন্মুক্ত ইফতার করার যে অনুভূতি সেটা কিছুটা অনুমান করতে পারছি। আমি মনে করি আপনি কাজটা ঠিকই করেছেন, একজন অসহায় ব্যক্তি যার ইফতার অনেকটাই অনিশ্চিত তাকে সাথে নিয়ে ইফতার করে। এর থেকে ভালো কাজ আর কি হতে পারে। একদিকে নতুন অভিজ্ঞতা হলো, অন্যদিকে একজনের পাশে দাঁড়াতে পারলেন। এটা নিঃসন্দেহে পুণ্যের কাজ।
আপনি যে হুট করে বাইরে নজরুল ভাইয়ের সঙ্গে ইফতার করে উঠতে বসে গেলেন হীরা আপু আপনার জন্য অপেক্ষা করেনি? নিশ্চয়ই ইফতার সাজিয়ে বসেছিল। তারপরেও ভাল লাগল ভাইয়া। এরকম কাজ কয়জনই চিন্তা করে। আপনার এরকম কাজগুলো দেখে আসলেই খুব ভালো লাগে। ওয়েদার এখন খুবই খারাপ। সবাই এরকম অসুস্থ হচ্ছে। দোয়া করি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।