ফিরে দেখা সময়

in আমার বাংলা ব্লগlast month

1177.jpg

বহুদিন হলো খুব একটা বেশি নিজের কথা লিখি না, তবে মাঝে মাঝে লিখতে মন চায়। তাতে আর যাইহোক, নিজের ভেতরের জমে থাকা কথাগুলোর হয়তো কিছুটা মুক্তি মেলে।

জীবনটা আমার কাছে অনেকটা সংগ্রামের একটা জায়গা, যেখানে প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছি। এই দেখুন না, আজ যে কথাগুলো লিখব সেগুলোর বয়স কিন্তু খুব একটা বেশি দিন না। মোটামুটি ২০২০ সালের পর থেকে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া, ঘটনার কথাগুলোই তুলে ধরব।

করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে, কি পরিমাণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে নিজের বাস্তব জীবনের পেশা চালিয়ে গিয়েছিলাম তা একদম বলাবাহুল্য। মহামারী শুরুর প্রথম দিকে কিছুটা দিন প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছিলাম, পরে যখন দিন দিন লাগাতার লকডাউন বেড়েই যাচ্ছিল তখন বাধ্য হয়েই পেটের তাগিদে আবারো প্র্যাকটিস করা শুরু করে দিয়েছিলাম।

এমনিতেই সরকারি চাকরি পাই নি, তার ভিতরে জুনিয়র ডাক্তার। চেম্বারের প্র্যাকটিসটাও সেভাবে সেইসময় জমিয়ে তুলতে পারি নি। ব্যাপারটায় আসলে আমার নিজের মন সায় দেয়নি, গলায় পাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত রুগীর কাছ থেকে পয়সা নেওয়া, বিষয়টাতে বড্ড অনীহা প্রকাশ করতাম। তাই সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তার কলিগদের কাছ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিলাম। স্থানীয় ডাক্তার সোসাইটির বেশিরভাগের আমি চোখের বিষ ছিলাম,ওরা আমাকে দেখলেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠতো।

ভেবেছিলাম এসব একসময় ঠিক হয়ে যাবে, হয়তো সরকারি চাকরিটা হয়ে গেলে অন্যত্র চলে যাব, তাই কে হিংসা করছে আর কে আমাকে দেখে জ্বলছে, এসব ভেবে খুব একটা তখন সময় নষ্ট করিনি। নিজের মতো করেই মহামারীর সময়ে টুকটাক রোগীদেরকে যথা সম্ভব সেবা দিয়ে গিয়েছি।

আমার তো খুব ভালোভাবে মনে আছে, হীরা সেসময় মাত্র কনসিভ করেছিল। নিজেকে প্রতিনিয়তই পরিবার থেকে আইসোলেট করে রাখতাম। মানে সারাদিন চেম্বারেই রোগী দেখেছি, চেম্বারেই খাওয়া-দাওয়া করেছি, এমনকি পড়াশোনা-ঘুম চেম্বারেই হয়েছিল।

সময় গড়িয়ে যায়, তবে লকডাউন শেষ হয় না। বরং দিন দিন মহামারী যেন আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করছিল। পৃথিবীর সেই সময় যে কঠিন রূপ আমি দেখেছিলাম, তা যেন এখনো ভাবলে অনেকটাই আঁতকে উঠি।

এতসবের মাঝেও সেসময় বেশ বড়সড় একটা স্বাস্থ্য সেক্টরে সরকারি চাকরির সার্কুলার হয়। মানে স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রতিটি পদেই প্রচুর জনবল নিয়োগ হবে। ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য পদে। বেশ ভালোভাবে সেসময় নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম এবারই বুঝি আমার ভাগ্য খুলবে।

প্রচুর পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছিলাম, ছাত্র যে খুব একটা খারাপ ছিলাম, তেমনটা না। বলতে গেলে, সরকারি চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্যতা আমার ছিল। তবে আমার আত্মবিশ্বাসের জায়গায় যে বড্ড ভুল ছিল, সেটা আমি পরীক্ষার হলে গিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম।

এমনিতেই মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা হয়েছিল, তার মধ্যে প্রশ্ন খুব আহামরি কঠিন ছিল না। চেষ্টা করেছিলাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দেওয়ার জন্য। তবে যেদিন রেজাল্ট হল, সেদিন আমি অনেকটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।

বারবার অনলাইনে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছিলাম, তবে কোন জায়গাতেই আমার রোল নাম্বার ছিল না। পরে অবশ্য কারণ খুব ভালোভাবেই জানতে পেরেছিলাম, কেননা প্রশ্ন যেমন ফাঁস হয়েছিল, তেমনটা একেকটা পদের জন্য ২৫ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছিল। যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল পুরো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এই আমার পূর্বের অভিজ্ঞতা কিংবা ফিরে দেখা সময়, যেখানে আমার পয়সার অভাবে সরকারি চাকরি হয়নি। যদিও পরবর্তীতে চেম্বারের প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়েছি, তবে এখন আর আফসোস হয় না বরং ভালই আছি ।

1000020537.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

আসলে ভাইয়া প্রতিটি মানুষের আশা থাকে সরকারি একটা চাকরি করবে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারি চাকরি পেতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন এখানে মেধার কোন দাম নেই। যার টাকা আর মামা খালু আছে তাদের চাকরির অভাব নেই। সত্যি কঠিন সময় গুলো মনে পড়লে অনেক খারাপ লাগে। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 last month 

মামা আর তামা ছাড়া যে এখানে কিছু হয় না, সেটা আমি ঐ সময়েই বুঝতে পেরেছিলাম, তাই আর কখনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসিনি।

 last month 

আমাদের দেশে সরকারি চাকুরি পাওয়া অনেকটাই টাফ।এছাড়া পূর্বে কোটা সিস্টেম ছিল।আর দুর্নীতি তো রয়েছে।আপনি ফিরে দেখা করোনার সময়টাকে তুলে ধরেছেন পোস্টটির মধ্যে দিয়ে ।ওই সময়টাতে অনেকে কর্ম সংস্থান হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল।আমাদের সারা বিশ্বের জন্য একটি অশুভ সময় ছিল ২০২০।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 last month 

সৎ ভাবে চাকরি পাওয়া একটু কঠিন, তাছাড়া অন্যান্য ভাবে চাকরি পাওয়া কিছুটা সহজ।

 last month 

আমাদের দেশে ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি আসলেই হয় না। তাইতো মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন চাকরি প্রার্থীরা হতাশ হয়ে যায়। আপনার ব্যাপারটা জেনে খুব খারাপ লাগলো ভাই। যদিও এই ব্যাপারটা আগেও শুনেছি। যাইহোক ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরি না নিয়ে খুব ভালো করেছেন ভাই। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া কখনোই উচিত নয়। যাইহোক ভালো থাকবেন সবসময়।

 last month 

অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না দেখেই, অতঃপর কখনো আর সরকারি চাকরিতে বসিনি কিংবা বসার ইচ্ছাও নেই।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 57730.16
ETH 2445.18
USDT 1.00
SBD 2.34