রবিবারের আড্ডা -৮০ | উন্মুক্ত আড্ডা - ৭ পর্ব
ব্যানার ক্রেডিটঃ @hafizullah
আমার বাংলা ব্লগের আয়োজন রবিবারের আড্ডার নতুন সংযোজন হচ্ছে এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা । মূলত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে তাদের সামনে একটা বিষয় তুলে ধরা হয়। যে সকল সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হয়, তাদের নিয়েই মূলত এই অনুষ্ঠানটা পরিচালিত করা হয়।
তাছাড়া এই অনুষ্ঠানটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেহেতু চার-পাঁচজন অতিথি থাকে প্রথমত দুইবারে সকল অতিথির মতামত শোনা হয়, দ্বিতীয়তঃ কিছুটা বিরতি দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং নিজেদের পছন্দের গান শোনা হয়। সর্বশেষে উপস্থিত সকল দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য থাকে শুভেচ্ছা পুরস্কার ।
আলোচ্য বিষয়ঃ পারিবারিক শিক্ষা | শৈশব শিক্ষা
প্রথম অতিথিঃ @neelamsamanta
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ আজ যে ঘটনাটা বলছি, সেটা আমার সঙ্গে খুবই সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে। যেহেতু আমার ঘুরে ফিরে বসবাস, তাই আমার সঙ্গে আমার মেয়েকেও বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। ও এ যাবৎ অনেকগুলো স্কুল পরিবর্তন করেছে। এখন আমরা যেখানে আছি, সেখান থেকে ও প্রতিদিন স্কুল বাসে করে স্কুলে যায়, তবে এখানকার অন্য এক মেয়ে যে ওর সমবয়সী, সে কিছুতেই আমার মেয়েকে সহ্য করতে পারছিল না। ওই মেয়েটা চাচ্ছিল না, যে এখানে কেউ ভাড়াটিয়া থাকুক আর ওদের স্কুলে পড়ুক। এই ভেবে নিজেদের ভিতরে একটা গ্রুপিং তৈরি করে ফেলেছে। যদিও আমার মেয়ে প্রথম দিকে বিষয়টা আমাকে বলেনি, তবে যখন ধীরে ধীরে ব্যাপারগুলো আমার কাছে বলেছিল, তখন আমি আমার মেয়েকে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলাম। পরবর্তীতে যখন দেখলাম বিষয়টা আরো অধিক দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে, তখন আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত স্কুলে যাওয়ার সময় গল্পের বই পড়তে দিতাম, কেননা ও বই পড়তে ভালোবাসতো। যখন আমার মেয়ে ওদেরকে পাত্তা দিচ্ছিল না, তখন তারা গাড়ির সিটের স্পঞ্জ ছিঁড়ে কিংবা কাগজ গোল করে ওর দিকে ছুঁড়ে মারতো। আমার মেয়ে ভীষণ মানসিক ট্রমায় ভুগে ছিল। শেষমেশ এমন হয়েছিল যে, আমার মেয়ে আমাকে বলেই ফেলল যে আমি আর স্কুলে যাব না। যদিও পরবর্তীতে আমি সেই গ্রুপিং করা মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম এবং আপাতত আগের থেকে কিছুটা পরিবেশ ঠিকঠাক আছে। তবে ওই যে বললাম ওই মেয়ের বাবা মা প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকার কারণে মেয়ে কে ঠিকঠাক মতো পারিবারিক শিক্ষা দিতে পারেনি, যার কারণে মেয়েটা এমনটা ঘটিয়েছে।
দ্বিতীয় অতিথিঃ @hafizullah
এক্সিকিউটিভ এডমিন, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ আমাদের সময়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে একটা প্যাটার্ন ছিল। বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবাই আমরা বেশ তৎপর ছিলাম। তবে বর্তমান সময়ে সেই প্যাটার্ন আর আগের মত নেই। আমি যখন আমার বাচ্চাকে আগে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে যেতাম, তখন আমি নিজে কানে শুনেছি, এক অভিভাবক তার বাচ্চাকে বলছে, ও তোকে দুইটা মেরেছে তুই তাকে চারটা মারতে কেন পারিস নি, মানে শুরু থেকেই বাচ্চাদের কানে বিষ ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। যার ফল এখন আমরা বেশ ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছি। তবে আমাদের বেলায় কিন্তু বিষয়টা এমন ছিল না, আমি একটা ছোট ঘটনা শেয়ার করছি। যখন আমি ছোট ছিলাম সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি, সে সময় সন্ধ্যা বেলায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আমি পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে ছিলাম। যেহেতু আমরা কলোনী এলাকায় থাকতাম, তাই সেই সময় সন্ধ্যাবেলায় এক বয়স্ক মানুষ আমাকে পুকুর পাড়ে দেখে বলেই ফেলল, এই ছেলে তুমি এইখানে এত রাতে কি করছো, এখানে তো এত রাতে চোর ডাকাতেরা থাকে, তখন তাদের ভিতরে এক পরিচিত লোক আমার বড় ভাইকে চিনত। তখন সেই ধমক দিয়ে বলেছিল যে, যাও দ্রুত বাসায় যাও, গিয়ে পড়তে বসো। তাছাড়াও দেখবেন, আমাদের বেলায় বাচ্চাদের ভিতরে শেখার কৌতূহল থাকতো, কোন নতুন জিনিস দেখলেই প্রশ্ন করতো আর এখন স্মার্টফোন পেয়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। বাচ্চারা স্মার্ট ফোনে ডুবে থাকছে আর বাবা-মা রা টিভির সিরিয়াল দেখা নিয়ে ব্যস্ত। সবমিলিয়ে জগাখিচুড়ি অবস্থা।
তৃতীয় অতিথিঃ @selinasathi1
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ আমি যখন প্রথম মা হই, তখন আমার বয়স তেরো । সেই ছোটবেলা থেকে শুরু করে আমার বাচ্চারা যখন বড় হচ্ছিল তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ওরা ভার্সিটিতে পড়ছে, আজ পর্যন্ত ওরা কোন খারাপ কাজের সঙ্গে লিপ্ত হয়নি। কেননা ওদেরকে পারিবারিক শিক্ষা আমি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনদিন ওদের নামে আমাদের বাসায় কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। যেহেতু আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, তাই সেই শিক্ষাগুলো ওদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ওরা আজ পর্যন্ত কোন সিগারেট খায় না এবং এটাও বলেছি কেউ যদি তোমাদেরকে বলে সিগারেট না খেলে তো পুরুষই হয় না, তাহলে তোমরা বলে দিবে সিগারেট খেয়ে যদি পুরুষ হতে হয়, তাহলে সেই পুরুষ আমদের হওয়া দরকার নেই। তাছাড়া নারীর প্রতি সম্মান ও অন্যান্য আদব কায়দাগুলো যতদূর সম্ভব আমি নিজের থেকে ওদের কে শেখানোর চেষ্টা করেছি। সবমিলিয়ে বলতে গেলে আমার সন্তানদের বড় করার পিছনে, পারিবারিক শিক্ষার অবদান ছিল অপরিসীম।
চতুর্থ অতিথিঃ @mohinahmed
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
মতামতঃ আমি যে ছোটবেলা থেকে এত বড় পর্যন্ত হয়েছি, তার পিছনে মুখ্য অবদান হচ্ছে আমার পারিবারিক শিক্ষার। যেহেতু আমরা দু ভাই ছিলাম, তাছাড়া বাবা ছোটবেলা থেকেই দেশের বাহিরে থাকতো, তাই আমার মা আমাদেরকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় থাকতো। এজন্য বাহিরে কারোর সঙ্গেই তেমন একটা চলাফেরা করতে দিত না, আমরা নিজেরাই দুই ভাই একত্রে বড় হয়েছি এবং নিজেরাই খেলাধুলা করেছি। মা এই জন্যই বাহিরের কারো সঙ্গে মিশতে দিতো না, কেননা বাহিরের ছেলেপেলের সঙ্গে যদি মিশে খারাপ হয়ে যাই এজন্য। সত্যি বলতে গেলে কি, আমাদের সময়ের ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এখনকার দিনের ছোট বাচ্চারা সবাই তো বিভিন্ন ডিভাইসে আসক্ত, যার কারণে তারা ঠিক মতো খেলাধুলা করে না, এজন্য তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তেমন একটা নেই।
তাৎক্ষণিক অতিথি ও শ্রোতার মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কারের স্পন্সর কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা @rme দাদা
মূলত এভাবেই আয়োজন করা হয়েছিল এবিবি উন্মুক্ত আড্ডা। আমাদের চিন্তাধারা প্রতিনিয়তই ব্যতিক্রম, তাই সব ব্যতিক্রম চিন্তা-ভাবনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই প্রতিনিয়ত সামনের দিকে। আশাকরি আমাদের সঙ্গে সকলেই থাকবেন, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
গতকালের উন্মুক্ত আড্ডা অনেক বেশি ভালো লাগলো।সবাই পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু কথা তুলে ধরেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কালকের টপিকটি সত্যিই চরম বাস্তবিক ও সমাজ রসাতলে যাবার কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য৷ প্রত্যেকেই খুব ভালো বলেছেন৷ এই আলোচনায় অংশ নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে৷
আপনি নিজেও, নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অনেক যৌক্তিক কথা বলেছিলেন। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
গতকালকের আড্ডার টপিকটা সত্যিই দারুণ ছিলো। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ করেছি সম্পূর্ণ আড্ডাটি। পারিবারিক শিক্ষাটা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক এই রিপোর্টটি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম যথার্থ বলেছেন, পারিবারিক শিক্ষা প্রতিটি সন্তানের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যেক সপ্তাহের ন্যায় এই সপ্তাহে ও আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির পক্ষ থেকে রবিবারের উন্মুক্ত আড্ডার আয়োজন করা হয়েছিল। এই সপ্তাহে আমাদের মাঝে বেশ দারুন একটি টপিকস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আজকে আমাদের মাঝে চারজন অতিথি ছিল সকলেই বেশ দারুন ভাবে গুছিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছিল সত্যি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আসলে এবারে রবিবারের আড্ডার টপিক্স টা ছিল দারুন। আমার কাছে মনে হয়েছে এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশি বেশি আড্ডা হওয়া দরকার। কারণ এই আড্ডার আলোচনা থেকেও অনেকে শুধরে যেতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। আড্ডায় প্রত্যেকেরই কথাগুলো ছিল অসাধারণ এবং মূল্যবান অসংখ্য ধন্যবাদ শুভ ভাই আপনাকে।
এটা ঠিকই বলেছেন আপু, সচেতনতা মূলক আড্ডা প্রতিনিয়তই বেশি হওয়া দরকার, তাহলে সব দিকে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে।
একদম ঠিক বলেছেন এটা হওয়া জরুরী। কিংবা বিষয়ভিত্তিক টক সো ও করতে পারি।
তর্কে বিতর্কে তাহলে জমে উঠবে আরও বেশি দারুন ব্যাপার।
কালকের আড্ডাটা সত্যি অনেক দারুণ হয়েছিলো, বেশ উপভোগ করেছি।
এটা সত্য ভাই, আপনার কথাগুলো বেশ যৌক্তিক ছিল আড্ডায়।
গতকালকের রবিবারের আড্ডায় বেশ সুন্দর একটি টপিকস নিয়ে আলোচনা করা হয়। পারিবারিক শিক্ষা বিষয়টি প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যার পারিবারিক শিক্ষা যত সুন্দর তার ভবিষ্যৎ জীবন তত সুন্দর হয়। সবার কাছ থেকে এত সুন্দর মতামত জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছিল।
রবিবারের আড্ডার পুরো পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো।ক্লাস থাকার জন্য আড্ডাতে থাকতে পারিনি কালকে।আমার বাংলা ব্লগের ভিন্নধর্মী আয়োজন আসলেই অনেক আনন্দের।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
সমস্যা নেই আপু, পরবর্তী সময় আমাদের সঙ্গে যুক্ত হইয়েন এই কামনাই করি।
https://x.com/sharifShuvo11/status/1825468675702611973?t=PjUNmcM4oIavqipBX8N9lw&s=19