হরলিক্স দুধ কিংবা বাদাম

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

1000033140.jpg
source

সেই হাইস্কুল শিক্ষকের কথা, যে আমাকে বলেছিল প্রতিনিয়ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, সঠিক পথে চলবে কিংবা সত্য কথা বলবে, আজ সেই শিক্ষক কালের বিবর্তনে পথ হারিয়ে ফেলেছে। তোষামোদি কে বন্ধু বানিয়েছে,নৈতিকতা কে বিসর্জন দিয়েছে, তার বড্ড জানের ভয়, পরিবারের প্রতি পিছুটান, পারিপার্শ্বিক চাপ নতুবা তার শেখানো বুলি গুলো সত্যিই ভন্ডামি ছিল, তাকে আজ অনেকটা মুখোশধারী মনে হয়।

কলেজে এসেও সাময়িক সময়ের জন্য যে শিক্ষক নামক মানুষগুলোকে পেয়েছিলাম, তারাও অনেকটা মুরগি ধরার কায়দায় যেন প্রতিনিয়ত সজাগ থাকতো । বই খাতা নিয়ে ঠিকই কলেজে যেতাম, তবে পাঠ্যক্রম চলতো তার মুরগির খোঁয়াড়ে,আমাদের মত মুরগি গুলোর জায়গা হতো তার প্রতিষ্ঠিত কোচিং সেন্টার নামক স্থানে। যেখানে অতি যত্ন সহকারে কলেজের শিক্ষক নামক ভন্ডগুলো, প্রতিনিয়ত লেকচার দিয়ে যেত।

আর এইদিকে স্কুল ফি, টিউশন ফি, কলেজ ফি, কোচিং ফি এসব দিতে দিতে আমার বাপের অবস্থা নাস্তানাবুদ।

সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে, এখানকার শিক্ষকরা ছিল বিগত জীবনের শিক্ষকদের থেকে কয়েক ধাপ উপরে। এদের কায়দা কৌশল কে শেখানোর প্রক্রিয়া বলা যায় না। এরা শুরু থেকেই আমাদেরকে যেন ওদের প্রতিযোগী ভাবা শুরু করেছিল।

খুব কাছ থেকে দেখেছি, যারা একটু শিক্ষকদের সঙ্গে তোষামোদি কিংবা সখ্যতা গড়ে তুলেছিল,তারাই বরাবর এগিয়ে থাকতো। আর আমার মত স্বাধীনচেতার কপালে থাকতো অকৃতকার্য নামক বিশেষণ। মেডিকেল নামক কারাগারের ঘটনা দুই এক লাইনে বলে শেষ করা যাবে না কিংবা গ্রন্থ লিখলেও হয়তো অনেক কথা অপ্রকাশ্য থেকেই যাবে। তবে আর যাইহোক শিক্ষক নামক ভদ্রবেশী জানোয়ার গুলোর মুখ মেডিকেল কলেজেই বেশি দেখেছিলাম।

ইন্টার্নশিপ শেষ করার পরে, যখন নিজের এলাকায় ছোট্ট একটা চেম্বার দিয়েছিলাম, সে সময় একটা রোগীকে আমার ওরাল সার্জারি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর এর চেম্বারে রেফার করেছিলাম, পরবর্তীতে সেই রোগীর সঙ্গে যখন আমার কথা হয়েছিল, তার কথা শুনে রীতিমতো আমি ভীষণ বিব্রতবোধ করেছিলাম।

প্রফেসর, সেই রোগীকে বলেছিল আরে ওতো কিছুই জানেনা, কোনরকমে টেনেটুনে পাস করেছে আর আপনারা গিয়েছিলেন ওর কাছে ট্রিটমেন্ট নিতে।

একটাবার ভাবুন তো, সদ্য পাস করা নবীন ডাক্তারের নামে যদি এমন কথা তার প্রফেসর বলে, তাহলে তার চেম্বারের প্র্যাকটিসের অবস্থা কেমন হতে পারে। এরকম যে কত অজস্র ঘটনা আছে, তার কোন হিসাব নেই। প্রবীণ ডাক্তাররা কখনোই নবীনদের সুযোগ দিতে চায় না, ওরা নিজেরাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।

পুঁথিগত বিদ্যা যারা আমার মাথায় ঢুকিয়েছিল, তাদেরকে শুরুর দিকে বড্ড নিষ্পাপ মনে হতো, তবে যত সময় গড়িয়েছিল সেই নিষ্পাপ মানুষগুলোর আসল চেহারা যেন আমার চোখের সামনে প্রতিনিয়তই ধরা পড়েছিল।

এই যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই শৈশব থেকে দৌড়ঝাঁপ করেছি, এরা শুধুমাত্র আমাকে সার্টিফিকেট নামক কিছু কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, এর বেশি আর কিছুই না।

তবে হ্যাঁ, জীবনে এখন পর্যন্ত যা শিখেছি বা প্রতিনিয়ত যা শিখছি, তা নিতান্তই হরলিক্স, দুধ কিংবা বাদাম খেয়ে শিখিনি, বলতে পারেন ধাক্কা খেয়ে খেয়ে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা বেড়েই যাচ্ছে আর এই ধাক্কা খাওয়া শিক্ষাই আমাকে পরিপক্ক করে তুলছে।

1000020537.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 days ago 

সেই স্কুল জীবনের শিক্ষকদের নৈতিকতা এখন আর চলে না। এমনও অনেক শিক্ষক দেখেছি যারা শ্রেণীভেদাভেদ করে কথা বলে এবং বৈষম্যতা তৈরি করে। তবে কলেজ জীবন কিংবা ইউনিভার্সিটি জীবনে এমন বৈষম্যতা অনেক লক্ষ্য করা যায়। তবে একজন সিনিয়র ডাক্তার হয়ে একজন জুনিয়র ডাক্তারের প্রতি এমন মতামত ব্যক্ত করাটা মোটেও উচিত হয়নি।

 3 days ago 

দিনশেষে বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে আপু, যতই আমরা আন্দোলন করি না কেন, এসব কোন না কোন ভাবে থেকেই যায় ।

 4 days ago 

প্রফেসর, সেই রোগীকে বলেছিল আরে ওতো কিছুই জানেনা, কোনরকমে টেনেটুনে পাস করেছে আর আপনারা গিয়েছিলেন ওর কাছে ট্রিটমেন্ট নিতে।

একজন প্রফেসর হয়ে আপনার ব্যাপারে কিভাবে এমন মন্তব্য করতে পারে, সেটা আমার বোধগম্য হয় না। এরা আসলে মুখোশধারী শয়তান। এদের মতো প্রফেসরদের কাছ থেকে ভালো কিছু কখনোই শেখা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যদি এমন বাজে মেন্টালিটির লোকজন থাকে, তাহলে জাতি আর কি শিখবে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 days ago 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বহু আগেই বাণিজ্যিক হয়ে গিয়েছে , এসব ঘটনা ভীষণ স্বাভাবিক।

 4 days ago 

হরলিক্স বা দুধ বাদাম খেয়ে যে জিনিস গুলো মানুষ শিখে তা কতটুকু মনে থাকে জানিনা। কিন্তু ধাক্কা খেয়ে শেখা জিনিসগুলো মানুষ কখনো ভোলে না। আর আপনার মেডিকেলের টিচারের কথা শুনে আমিও অবাক হয়ে গেলাম। আপনিই তার কাছে রেফার করলেন আর সেই কিনা উল্টো আপনার নামে দুর্নাম করলো। এদেরকে শিক্ষক নামের কলঙ্ক বলা যেতে পারে। যাই হোক ভাইয়া আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।

 3 days ago 

বাস্তবতা অনেক নিষ্ঠুর আপু।

 10 hours ago 

সিনিয়র ডাক্তার রা যে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিদ্বন্দী মনে করেন, এর প্রমাণ আমিও পেয়েছি কাছের কারোর মাধ্যমে। আর আপনি যে কথাগুলো লিখেছেন, তা মানতে খারাপ লাগলেও, সত্যি! আমার ভাগ্য ভালো আমি বেশ কিছু ভালো শিক্ষক পেয়েছি শিক্ষা জীবনে। তবে আপনি যাদের কথা বলছেন, তেমন ও কম পাই নি। আমিও মাস্টার্স এ জয়েন করে পরে ছেড়ে দিয়েছিলাম এই শিক্ষক নামক অমানুষ গুলোর অমানুষিক আচরণ এর জন্য। যেখানে শিক্ষক দের দেখলে শ্রদ্ধা আসে না, সেখান থেকে আর কি ই বা উচ্চতর শিক্ষা লাভ করা সম্ভব!

 10 hours ago 

আপনার ব্যাপারটা যেন বেশ ব্যথিত হলাম, তবে এই অমানুষগুলো সর্বত্র বিরাজমান।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 60898.61
ETH 2626.61
USDT 1.00
SBD 2.61