শৈশব স্মৃতি- চোখের সামনে খেলার সাথীর মৃত্যু||

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। আর নিজের অভিজ্ঞতা কিংবা শৈশব স্মৃতি নিয়ে লিখতে বেশি ভালো লাগে। তাই আজ আমি আমার স্কুল জীবনের একটি মর্মান্তিক ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটেছে। চলুন তাহলে মূল ঘটনায় যাওয়া যাক।

চোখের সামনে খেলার সাথীর মৃত্যু:

kids-3503767_1280.jpg
source


স্কুল জীবনে আমরা অনেকেই অনেক ধরনের দুষ্টুমি করে থাকি। এছাড়াও স্কুল জীবনে আমরা অনেক ধরনের খেলাধুলাও করেছি। আমি খেলাধুলায় তেমন পারদর্শী ছিলাম না। শুধুমাত্র টিফিন টাইমে একটু কেরাম খেলতাম। আমার বান্ধবীদেরকে দেখতাম মালা লুকানো এবং কানামাছি খেলতো। কিন্তু আমি কখনো এই ধরনের খেলা খেলিনি। তবে আমাদের একটি ফুটবল খেলার টিম ছিল। সময় পেলেই আমরা মাঠে ছুটে যেতাম। আমাদের টিমে কয়েকজন বড় ভাই এবং আমরা কয়েকজন বন্ধু ছিলাম। প্রতি শুক্রবার হলে আমাকে আর বাড়িতে খুঁজেই পাওয়া যেত না। কারণ শুক্রবার মানেই ছুটির দিন। আর শুক্রবার মানেই খেলার দিন। স্কুল বন্ধ থাকলেও আমরা স্কুল মাঠে যেতাম ফুটবল খেলতে। ছুটির দিনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা বন্ধুরা ও কয়েকজন বড় ভাই মিলে ফুটবল খেলায় মেতে উঠতাম।

আমি যেহেতু ফুটবল খেলা বেশি পছন্দ করতাম তাই সেদিন শুক্রবার বিকেল বেলায় ফুটবল খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। আমি যখন ফুটবল খেলার মাঠে পৌঁছাই তখন শুধুমাত্র একজন ভাই ফুটবল খেলতে এসেছিল। আমি তার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প গুজব করার সময় পেয়েছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে বাকি বন্ধুরাও চলে এলো। যথারীতি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা ফুটবল খেলা শুরু করলাম। সেদিন রোদের তাপমাত্রা একটু বেশিই ছিল। ছোটবেলায় খেলাধুলার জন্য আমরা রোদকে তেমন ভয় পেতাম না। কারণ ছুটির দিন মানেই আমাদের খেলাধুলার দিন। এই খেলাধুলার জন্য বাবা-মায়ের অনেক মাইরও খেয়েছি।

সেদিন শুক্রবার রোদের তাপমাত্রায় এতই বেশি ছিল যে কিছুক্ষণ খেলাধুলা করার পর আমরা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম। কিন্তু যে ভাইটি ফুটবল খেলার জন্য প্রথমে মাঠে এসেছিল সেই ভাইটি বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ও আচ্ছা আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি ওই ভাইটির নাম ছিল সবুজ। ওই ভাইয়া আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম আর সবুজ ভাই তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো। ওই ভাইয়া যখন তীব্র তাপমাত্রায় হাপাচ্ছিল তখন আমরা বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আমরা বুঝতে পারিনি তার প্রচুর পানির পিপাসা পেয়েছে। তিনি যখন পানির জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। তখন আমরা অনেকেই দৌড়ে গিয়েছিলাম স্কুলের টিউবওয়েলের পাশে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তখন টিউবওয়েলের উপরের অংশের হাতল ছিল না। সেই সময় চুরি অনেক হতো। তাই চোরের হাত থেকে টিউবওয়েল বাঁচানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল ছুটির পর টিউবওয়েলের উপরের অংশ খুলে অফিসে রেখে যেত। তাই আমরা ঐ টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। স্কুলটি এমন জায়গায় ছিল যে পাশেও কোন বাড়ি ছিল না।

যেহেতু আমরা অনেক চেষ্টার পরেও পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। অবশেষে সবুজ ভাই আরো বেশি করে পানি পানি করে চিৎকার করতে লাগে এবং একপর্যায়ে তিনি স্কুলের পাশের ধান ক্ষেত থেকে দুই হাত দিয়ে পানি তুলে পান করে। আমরা পিছে পিছে গিয়ে দেখি সবুজ ভাই দুই হাত দিয়ে বারবার পানি তুলছে আর খাচ্ছে। চোখের সামনে দেখতে পেলাম সবুজ ভাই পানি খেয়ে আরো ছটফট করছে। ধান ক্ষেতের পানি খেয়ে এক মিনিটের মধ্যেই সবুজ ভাই নিচে পড়ে গেল। আমরা কয়েকজন মিলে আমাদের খেলার সাথী সবুজ ভাইকে কোলে তুলে নিয়ে আসলাম। মাঠে নিয়ে এসে যখন আমরা তাকে ঘাসের উপর শোয়াতে গেলাম তখন দেখতে পেলাম তার শরীরের ওজন হঠাৎ বেড়ে গেল।

হঠাৎ করেই তিনি তার হাত-পা সব ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা তাকে নানাভাবে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু সবুজ ভাইয়া কোন উত্তর দিচ্ছে না। আমাদের মধ্যে অনেকে কান্নাকাটি করা শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর একজন আরেকজনকে বলতে লাগলো সবুজ ভাই আর নেই। এই কথা বলতে বলতে কয়েকজন দৌড়ে যায় সবুজ ভাইয়ের বাসায় খবর দিতে। সেদিন আমিও অনেক কান্নাকাটি করেছি। অনেক ভয়ও পেয়েছিলাম। ঐদিন নিজের চোখের সামনে ফুটবল খেলার সাথীকে হারিয়েছি। সেই স্মৃতি আজও আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। এরপর আমি যে কত রাত ঘুমাতে পারিনি এটা আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। সবুজ ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমার জীবন থেকে ফুটবল খেলা সারা জীবনের জন্য হারিয়ে গেল। সেই সাথে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমার চিরচেনা সেই খেলার সাথী সবুজ ভাইকে।

খেলাধুলা প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রয়োজন। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনোই খেলাধুলা করা উচিত নয়। আমাদের প্রত্যেকের পরিবার রোদের মধ্যে খেলাধুলা করার জন্য নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমরা কেউই সেই বাঁধা মানিনি। পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করে রোদের মধ্যে ফুটবল খেলার নির্মম পরিণতি আমি নিজের চোখের সামনেই উপলব্ধি করেছি। পরিশেষে আমি সকলকে একটি বিষয়ে অনুরোধ করবো এই তীব্র তাপমাত্রায় কেউ খেলাধুলা করবেন না। যদি একান্তই এই তীব্র গরমে খেলাধুলা করতে চান তাহলে খেলাধুলার মাঝে অবশ্যই বিশ্রাম নিবেন। খেলাধুলা চলাকালীন হঠাৎ পিপাসা পেলে একটু বিশ্রাম নিবেন তারপর পানি পান করবেন।


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20240504_102129.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। ব্যক্তিজীবনে আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং ও ব্লগিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।

Sort:  
 last month 

অতিরিক্ত গরমের মধ্যে ফুটবল খেলার কারণে সবুজ ভাইয়া হাঁপিয়ে গিয়েছিল।যেহেতু তিনি সবার আগে এসে খেলছিল তাই পিপাসা টা বেশি লেগেছিল।স্কুলের গিয়ে পানি না পাওয়া কারণে ধান ক্ষেতের থাকা বিষাক্ত পানি খেয়েছিল।অবশেষে ভাইয়া কি জীবনের মায়া ত্যাগ করতে হয়।সত্যি খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 last month 

আসলে আপু ধান ক্ষেতে বিষাক্ত কিছু ছিল কিনা জানিনা। তবে এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

আহারে কতো কষ্ট পেয়ে মারা গেছে আপনার খেলার সাথী ভাইটি।কি কষ্টকর দৃশ্য তা আপনার পোস্টে ফুঁটে উঠেছে। আসলে পানি পানি করে এরকম ভাবে চোখের সামনে কারো মৃত্যু দেখাটা ভীষণ কষ্টের।রাতে ঘুমা না হওয়াই স্বাভাবিক। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last month 

সত্যি এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

কখনকার এমন আকর্ষিক মৃত্যু হয় কে বলতে পারে না ভাইয়া। খেলার জন্য মাঠে খেলতে আসলেন, এদিকে একটি পানির কল চুরির ভয়ে স্কুলের কল খুলে রাখা হয়। এজন্য প্রচন্ড পানি পিপাসাতে পানি পাওয়া গেল না। এখন হয়তো সবুজ ভাই পানি পিপাসাতে মারা গেছে অথবা ধানের জমির ওই পানিতে কোন বিষাক্ততা ছিল তাই আরো দ্রুত ক্ষতি হয়ে গেল। এখন না জানিয়ে ঐ দিনই তার হায়াত লেখা ছিল। আর চোখের সামনে এমন মৃত্যু দেখলে খুবই খারাপ লাগে

 last month 

গ্রাম অঞ্চলে সেই সময় টিউব ওয়েলের উপরের অংশ চুরির প্রচলন ছিল ভাইয়া। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি টিউবয়েলের উপরের অংশ খুলে না রাখতো তাহলে হয়তো আমরা পানি সংগ্রহ করতে পারতাম। জমিতে বিষাক্ত কিছু ছিল কিনা জানিনা। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

আপনার মুখে এমন ঘটনা শুনে আমার নিজের কাছেও বেশ খারাপ লাগলো। দারুন একটি কষ্টের অভিজ্ঞতা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আশা করি উনি যেখানেই থাকুক না কেন ভালো থাকবেন।

 last month 

দোয়া করবেন আপু আমার খেলার সাথী যেখানেই থাকুক তিনি যেন ভাল থাকেন। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

আপনার চোখের সামনে আপনার খেলার সাথীর মৃত্যু হয়েছে জেনে খুব খারাপ লাগলো। আসলে ভাইয়া মৃত্যু যার যেখানে লিখা থাকে সেখানে হবেই। সবুজ ভাইয়ের ভিতরে কি যে হয়েছিল তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। সত্যি আপনার জন্য এটি খুব কষ্টের একটি বিষয়। আমি চোখে দেখিনি আপনার পোস্টে গল্প পড়ে আমার ভেতরটা কেমন জানি কেঁপে উঠল। এরকম মৃত্যু আমরা যেমন সহজে মেনে নিতে পারি না তেমনি ভুলতেও পারিনা। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।

 last month 

এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের আপু। দোয়া করবেন আমার খেলার সাথীর জন্য উনি যেখানে আছেন সেখানে যেন ভালো থাকেন। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ।

 last month 

আপনার পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম। খুব কষ্ট লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। সবুজ ভাইয়ের মৃত্যুটা আসলেই মেনে নেওয়ার মতো না। আমার মনে হচ্ছে ধানের ক্ষেতের পানিতে বিষাক্ত কিছু মিশ্রিত ছিল। ওটাই হয়তো ওনার মৃত্যুর কারণ।

 last month 

ধানক্ষেতের মধ্যে বিষাক্ত কিছু ছিল কিনা সেটা বলতে পারবো না । তবে এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যি অনেক কষ্টের। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

আহারে পোস্টটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো।ফুটবল খেলতে গিয়ে পানি তৃষ্ণা লাগে ভাইটির এরপর বিষাক্ত পানি খেয়ে তার মৃত্যু হলো।এই কথাটা প্রায় শুনি মানুষের মৃত্যু যেখানে সেখানে সে পায়ে হেঁটে গিয়ে মারা যাবে।আপনার অনেক খারাপ লেগেছিল চোখের সামনে এটি দেখে।মর্মান্তিক ছিল গল্পটি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 last month 

এটা ঠিক বলেছেন আপু মানুষের মৃত্যু যেখানে থাকে সেখানে সে পায়ে হেটে যায়। তবে এই বয়সের মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64544.47
ETH 3417.27
USDT 1.00
SBD 2.48