☆꧁জীবন থেকে নেয়া গল্পঃ-- "রুমাল"꧂☆
☆꧁ গল্পঃ "রুমাল"꧂☆
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন। এটাই প্রত্যাশা করি।
বন্ধুরা - বন্ধুরা আজ আমি খুবই চমৎকার একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। গল্পটি অনেকটা রহস্যে ঘেরা। মিষ্টি মধুর আনন্দদায়ক এবং বেদনাদায়ক। আমার বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া কলকাতার একটি গল্প। আশা করি আপনাদের কাছে খুব ভালো লাগবে।
প্রচন্ড গরমে যখন অস্থির কলকাতা শহর। ঠিক সেই সময় আমরাও বাংলাদেশ থেকে রওনা দিয়েছিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে। যাইহোক আমার কাছে মনে হয়েছিল ভীষণ গরম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কলকাতায়। কলকাতা কলেজ স্ট্রিটে আমরা ছিলাম দুদিন। এরপর আমরা চুঁচুড়ায় চলে গিয়েছিলাম এক দিদির বাড়িতে। সেখানে মূলত অবস্থান করছিলাম।
খুব প্রিয় একজন দিদি আছেন মুকুল দিদি যিনি খুবই চমৎকার গান করেন এবং কবিতা লিখেন। সেই দিদি বেশ কয়েকদিন ধরেই আমাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন কলকাতা ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তো দিদিকে যেদিন আমরা কথা দিয়েছিলাম ঠিক সে দিন চুঁচুড়া থেকে রওনা দিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে। আমরা ট্রেনে করে আসছিলাম। প্রচন্ড গরমে অঝোরে ঘাম ঝরে শরীরের কাপড় ভিজে যাচ্ছিল। আর মুখে ফোঁটা ফোটা শিশিরের মত ঘাম ঝরছিল। ব্যাগে যে টিস্যুগুলো ছিল ইতিমধ্যে সেগুলো শেষ করে ফেলেছি। তাই ট্রেন থেকে নেমে কিছুক্ষণ হাঁটতে গিয়েই দেখলাম রুমাল বিক্রি হচ্ছে। কলকাতায় বেশিরভাগ লোক রুমাল ব্যবহার করে। রুমাল কেনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। ঘাম মোছার জন্য। আরো পড়েছিলাম সাদা ড্রেস। একই কালারের একই রকম দুটো রুমাল কিনলাম। একটি আমার কবি বন্ধু আলমগীর কবীর হৃদয়কে দিলাম। অন্যটি আমার নিজের কাছে রাখলাম। এরপর থেকে রুমাল টি মনে হয় সঙ্গের সাথী হয়ে গেল। বিশেষ করে আমার মুখের স্পর্শ সবসময় রুমালটার সাথে মিলেমিশে একাকার হচ্ছিল।
এই প্রচন্ড গরমে একমাত্র সঙ্গী হল এই রুমালটি। হাত থেকে মোবাইল রেখে দিচ্ছিলাম ব্যাগ রেখে দিয়ে ছিলাম পানি খাচ্ছিলাম কিন্তু রুমাল রাখেনি কোথাও। এক মুহূর্তে রুমালটি খুব আপন মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল রুমালটির প্রেমে পড়ে যাচ্ছিলাম। সারা কলকাতা শহর ঘুরলাম এরপর আবার পুনরায় চুঁচুড়ায় ফিরে গেলাম। কিন্তু রুমাল আমার হাতের মধ্যেই ছিল। কিন্তু আমরা যেদিন দীঘায় গেলাম সেদিনও আমার হাতে রুমালটি ছিল। আমরা যখন দীঘা সমুদ্র সৈকতে নেমেছিলাম, পানিতে ভেজার জন্য, তখন আমাদের সবার মোবাইল ফোন মানিব্যাগ আরো যা যা টুকিটাকি জিনিসপত্র ছিল, সব উপকরণ গুলোই রুমাল টির মধ্যে রেখে বেঁধে রাখা হয়েছিল। আমরা অনেকক্ষণ ভিজলাম। পানিতে লাফালাফি করলাম। বল খেললাম। এরপর উঠে আসার সময় রুমালের ভেতরে যে জিনিসপত্রগুলো ছিল সেগুলো সহ রুমে চলে আসলাম। আশ্চর্যজনকভাবে কিছুক্ষণ পর রুমে আর রুমালটি খুজে পাচ্ছিলাম না। পুরো রুম আমার ব্যাগ সবকিছু খোঁজা হলো। কিন্তু সেই রুমালটি আর পাচ্ছিলাম না। আমরা চারজন ছিলাম। আমার সাথে আমার আরেক কবি বন্ধু মায়া শ্রাবন্তী আমার সাথে ছিল। অন্য রুমে আলমগীর কবীর হৃদয় এবং রাফিদ ভাই দুজন একসাথেই ছিল। রুমালটি খুজে না পাওয়াতে আমার মনের ভেতরে অজানা-অচেনা এক কষ্ট বয়ে যাচ্ছিল।
মুহূর্তে মনে হলো আমার বুকের ভেতর একটা ক্ষত তৈরি হচ্ছে। দেখুন রুমাল টির দাম কিন্তু খুব বেশি নয়।
তারপরেও সেই রুমাল টির জন্য, মনটা মুহূর্তই অশান্ত হয়ে উঠল। কোথাও আর রুমালটি খুঁজে পাওয়া গেল না। যে রুমালের প্রতি সুতায় সুতায় আমার ঘামে ভিজে আমাকে শীতল করেছিল।
যেদিন আমরা দীঘা থেকে আবারো কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলাম ঠিক তখনও আমি রুমালটি অনেক খুঁজেছি। আর মনে মনে অনেক দোয়া পড়েছি যদি খুঁজে পাই। কিন্তু আমার কোন দোয়াই কাজে লাগল না। এখন আমার কাছে টিস্যু নাই রুমালো নাই।
আমরা দীঘা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বাসে রওনা দিয়েছিলাম। বাসে বসে বসে যত ঘেমেছি শুধু ওড়না দিয়ে মুছেছি। আর রুমালটা কে খুব মিস করতেছিলাম। এক রুমাল হারানোর বেদনা আমাকে মুহূর্তেই নিরব করে দিয়েছিল। সারাটা রাস্তা আমি বাকরুদ্ধ ছিলাম । জানিনা আমার ঘামে ভেজা রুমাল টি এখন কার হাতে।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ" এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
বিষয়: জীবনের গল্প
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
তীব্র গরমে রুমাল কিন্তু বেশ দরকারী একটি জিনিস। আমি অনেক আগে রুমাল ব্যবহার করতাম সবসময়। তবে এখন রুমাল ব্যবহার করা হয় না। সবসময় পকেটের মধ্যে টিস্যু রাখি। যাইহোক আপনার ব্যবহার করা সেই রুমালটা হারিয়ে ফেলেছেন,জেনে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে কিছু কিছু জিনিসের প্রতি মায়া তৈরি হয়ে যাওয়ার পর যদি হারিয়ে যায়, তখন কিন্তু ভীষণ খারাপ লাগে। আপনার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। রুমালের দামটা কোনো ফ্যাক্ট না,বরং রুমালের প্রতি আপনার মায়াটাই মুখ্য বিষয়। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এই তীব্র গরমে রুমাল কতটা দরকারি, সেটা কলকাতায় গিয়ে খুব ভালো করে বুঝেছিলাম।
খুব প্রয়োজনীয় এবং মায়ায় জড়ানো যেকোনো জিনিস হারিয়ে গেলে, নিজের অজান্তেই কষ্ট পেতে হয়। ❤️🌹❤️