শৈশবের স্মৃতি।
শুভেচ্ছা সবাইকে।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই ? আশাকরি ভালো আছেন। আমিও আপনার দোয়ায় ভালই আছি। আর প্রত্যাশা করি সবাই সবসময় ভালো থাকেন। আজ ১৩ই ভাদ্র ১৪৩১বঙ্গাব্দ।শরৎ-কাল। ২৮শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।প্রতিদিনের মতো নতুন আর একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজ শৈশবের একটি মজার স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশাকরি ভালো লাগবে আপনাদের ।
শৈশব শব্দটির সাথে জড়িত রয়েছে অনেক ভালো ,মন্দ,আনন্দময় অনুভূতি । শৈশবের অনেক স্মৃতি এখনও আমাদেরকে আনন্দ দেয়, নাড়া দেয় ।কি সুন্দর ছিল যেই সব দিন গুলো। চিন্তা,ভাবনাহীন অবিরাম ছুটে চলা।ইচ্ছে করে সেই দিন গুলোতে ফিরে যাই! যদিও সেই দিন গুলোতে এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়,তবুও সেই সব স্মৃতি মনে করে কিছুক্ষনের জন্য হলেও ফিরে যাই অতীতে। আর সেই ফিরে যাওয়া হয় যখন শৈশবের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়-আড্ডা হয়। বন্ধুদের শৈশবের সেই সব দিনের কথাই আলোচনায় অনেকটা সময় দখল করে নেয়। সেই শৈশবের অনেক স্মৃতিময় ঘটনার মধ্য থেকে একটি মজার ঘটনা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আমাদের গ্রামের বাড়ি যদিও টাঙ্গাইল,তবে বাবার চাকরীর সুবাধে আমার জন্ম বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম শহরে। বাবা যেহেতু সরকারী চাকরী করতেন তাই আমরা সরকারী কোয়াটারেই থাকতাম। বেশ বড় জায়গা নিয়ে ছিল আবাসিক এলাকাটি। এলাকায় ছিল প্রাইমারী ও হাই স্কুল। স্কুলের মাঠও ছিল বড়। তবে আমাদের বিল্ডিং এর সাথেও ছিল বড় মাঠ। সেখানে আমরা বন্ধুরা মিলে বিকালে কত ধরনের যে খালাধুলা করতাম তার হিসাব নেই। তখন ছেলে মেয়ের কোন তফাৎ ছিল না। সব ধরনের খেলা খেলতাম আমরা সবাই মিলে। ক্রিকেট,ফুটবল সহ সব ধরনের খেলা খেলেছি প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময়। আর যেহেতু সবাই সবাইকে চিনতাম তাই কোন বারন ছিল না খেলতে। যা আজকাল ছেলে মেয়েরা চিন্তাও করতে পারে না। কারন তারা ফ্ল্যাট কালচারে বেড়ে উঠেছে। শৈশবের এসব গল্প যখন আমার ভাগ্নি,ভাস্তিদের সাথে শেয়ার করি তারা বিশ্বাস করতে পারে না। তারা এখন মোবাইল ও পার্কে ঘুরেই বেড়ে উঠছে।
অনেক কথা হলো ,এখন আসি মূল গল্পে। এলাকার স্কুলে ফাইভ পাশ করার পর বাসা থেকে বলা হলো আমাকে বাহিরের মেয়েদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করা হবে। যে স্কুলে আগে থেকেই আমার বড় বোন পড়তো। দু'জন একই স্কুলে পড়লে সুবিধা। এক সাথে যাওয়া আসা করতে পারবে। তাই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলাম। এখানে বলে রাখা ভালো যে,আমি খুবই ভিতু প্রকৃতির ছিলাম। একা একা কখনও কোথাও যাইনি।আবাসিক এলাকের মধ্যেই থাকতাম। আর যেহেতু আমার বড় দুই বোন ও দুই ভাই ছিল তাই শাষনটাও ছিল কড়া। বেশ ভয় পেতাম আমার বড় ভাইকে। তাই একা একা কোথাও যাওয়ার সাহস ছিলনা। যা কিছু ছিল সেই আবাসিক এলাকার মধ্যেই। কিন্তু আমার বড় বোন দু'বছরের বড় হলেও বেশ সাহস ছিল। কোন কিছুতেই ভয় পেতনা। স্কুলে ভর্তি হলাম, ডিসেম্বরে।আর যথারীতি ক্লাস শুরু হলো জানুয়ারী মাসে। আর সেই সময় জানুয়ারী মাস হলো স্পোর্টস এর মাস। আমাদের স্কুলেও ফাইনাল স্পোর্টস এর দিন বিভিন্ন খেলেধুলার আয়োজন করা হতো। বাহিরের বিভিন্ন অতিথীদের আমন্ত্রন করা হতো। আর সেই দিন সাবাই আমাদের স্কুলে ঢুকতে পারতো।যেহেতু মেয়েদের স্কুল অন্য দিন কাউকেই ঢুকতে দেয়া হতো না। সেই দিন স্কুলে খুব ভিড় হতো। কাউকে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল ছিল। যেহেতু সরকারী স্কুল এরিয়াটা বেশ বড় ছিল। বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান শেষে যখন বাড়ি ফিরবো তখন আমি আর আমার বোনকে খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক্ষন অপেক্ষা করে যখন পেলাম না। তখন অন্যান্য মেয়েদের সাথে বাসার দিকে রওনা দিলেম। মোটামুটি হেঁটেই আসা যেত বাসায়। স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটা তখন আজকের মতো অতো ভিড় ছিল না। এরই মধ্যে আমার বোন আমাকে না পেয়ে বাসায় চলে এসেছে। এবং যথারীতি ব্বাড়ীতে বলেছে আমাকে খুঁজে পায়নি। ,তখন বাবা,বড় ভাই , হাউস টিউটর ও এলাকার অংকেলরা খুঁজতে বের হলো। কিছু দূর যাওয়ার পর যখন আমার ভাই এর সাথে দেখা হলো, তখন আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না। বুক ফেটে কান্না আসছে ভয়ে। আর যখন বাসায় গেটে ঢুকার সাথে সাথে আম্মাকে দেখে গলা ফাটিয়ে কান্না জুড়ে দিলাম। আর এই কান্না দেখে সবাই হাসাহসি করলো। সেই সাথে আমার বোনকে সবাই খুব বকলো আমাকে সাথে না নিয়ে আসার জন্য। এই ঘটনা মনে পরলে আজও বেশ হাসি পায় । কি বোকা ছিলাম। অনেক দিন সবাই খেপিয়েছে এই ঘটনা নিয়ে এখনো খেপায়!
শৈশবের মজার স্মৃতি থেকে একটি স্মৃতি আজ আমি আপনাদের শেয়ার করলাম। আশাকরি ভালো লেগেছে আপনাদের। এমন অনেক স্মৃতি নিয়েই চলছে আমাদের গতিময় জীবন। সবাই আনন্দে থাকুন। আনন্দে বাঁচুন।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেনি | শৈশবের স্মৃতি |
---|---|
ক্যামেরা | Redmi Note A5 |
পোস্ট তৈরি | @selina75 |
তারিখ | ২৮শে আগস্ট, ২০২৪ |
লোকেশন | ঢাকা,বাংলাদেশ |
আমার পরিচয়
আমি সেলিনা আখতার শেলী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা। এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।
https://x.com/selina_akh/status/1828841852008866089
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.