জেনারেল রাইটিংঃযানজট।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, কেমন আছেন? আশাকরি বরাবরের মত সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। অসহনীয় গরম শুরু হয়েছে আবার। আশ্বিন মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গরম কমছে না! প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে আমাদের আপাতত করার কিছুই নেই।এই নিয়েই থাকতে হবে আমাদের। তবে প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণে মানুষ হিসেবে দায় আছে আমাদের। প্রিয় বন্ধুরা, আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিং এ আজ আমি আপনাদের সামনে যানজটের উপর একটি জেনারেল রাইটিং উপস্থাপন করবো। আশাকরি ভালো লাগবে আপনাদের এবং চিন্তার খোরাক যোগাবে।

যানজট আমাদের একটি জাতীয় সমস্যা।যানজট শুধু ঢাকা শহরেই নয় এর ব্যাপ্তি দেশের বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা শহরে বিস্তার লাভ করেছে।অনেক উপজেলা শহরেও যানজটে নাকাল মানুষ। যানজট মুলত সকাল বিকাল না কমবেশি সারাদিনেই লেগে থাকে।বিশেষ করে সকাল ৭.৩০ থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। কিন্তু কেন এই যানজট? এত চেষ্টার পরেও পরিত্রাণ মিলছেনা যানজটের হাত থেকে। এত এত ফ্লাইওভারে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল নির্মাণেও যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ঢাকার মানুষ। বুয়েট কর্তৃক এক গবেষণা রিপোর্টে জানিয়েছিল প্রতিদিন ৫০ লক্ষ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। টাকার হিসেবে ১৪০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সমান। এছাড়া শারীরিক ও মানষিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে মানুষ।মুমূর্ষু মানুষকে সময়মত হাসপাতালে না নিতে পারার কারণে জীবন নাশের মত ঘটনাও ঘটে থাকে যানজটের কারণে।প্রচুর সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয় মানুষকে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ,অবৈজ্ঞানিক ট্রাফিক ব্যবস্থা,ট্রাফিক আইন না মেনে চলা,অপ্রতুল পার্কিং ব্যবস্থা, অনিবন্ধিত ও ফিটনেস বিহীন গাড়ী,রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে সমন্বয়হীনতা ও ফুটপাত গুলো দখল হয়ে যাওয়াই যানজটের মূল কারণ।এছাড়া আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষের অনিহা, অদক্ষ চালক এবং বিভিন্ন গতির গাড়ী লেন না মেনে যত্রতত্র চলাও যানজটের কারণ।

যানজট নিরসনে নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিয়ে কারণ গুলোর যথাযথ উত্তরণের পদক্ষেপ নিলে হয়ত যানজট মুক্ত নগর একদিন আমরা পারো।এজন্য সরকার ও সিটি কর্পোরেশনকে যৌথ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।রাস্তা সংস্কারে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি সাধারণ মানুষকে ও চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।এবং ট্রাফিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।তাহলে হয়ত একদিন আমরা যানজট মুক্ত নগরের দেখা পাবো।

একটা আশার কথা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো।ধবংসের মধ্যেই ভাল কিছু সৃষ্টির হয়।যানজট যেমন আমাদের শ্রমঘন্টা ও আর্থিক ক্ষতি করছে আবার সেই সাথে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এই যানজট। ঢাকা শহরে যারা নিয়মিত চলাফেরা করেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন,যানজটের সময় প্রচুর মানুষ ফেরি করে পানি,ফুলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করছেন। এর আর্থিক মূল্য কিন্তু কম নয়। হয়ত কোন গবেষক একদিন যানজটে ব্যবসার আর্থিক মূল্য আমাদের সামনে হাজির করবেন।এছাড়া ঘুমকাতুরেরা ঘুমিয়ে নেয়,অনেকে নাটক,সিনেমা দেখেন আবার কেউ কেউ বই পড়ে যানজটের অভিশাপ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেন। আর এভাবেই যানজট আর আমরা ঢাকাবাসী সমার্থক হয়ে গিয়েছি।সবার মঙ্গল হোক।

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পাড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।