প্রামাণ্য চিত্রঃ"বে অব ব্লাড" বাংলায় "রক্তে রাঙা সাগর"। আমার অনুভূতি।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

সবাইকে শুভেচ্ছা।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ ১৮ই ভাদ্র, শরৎকাল,১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ০২ সেপ্টেম্বর,২০২৩ খ্রীস্টাব্দ। ভাদ্র মাসের ১৮ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু গরম কমছে না।আজও একটু বৃষ্টি হয়েছে তাই গরম থাকলেও কিছুটা সহনীয়। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল গুলোতে উপচে পড়ছে রোগী। বিভিন্ন গনমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসা করতে অল্প আয়ের মানুষরা হিমশিম খাচ্ছে-নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সরকারের চেষ্টা করছে কিন্তু তা অপ্রতুল। আশাকরি খুব শীঘ্রই ডেঙ্গুর আতংক থেকে মুক্ত হবে মানুষ। বন্ধুরা, আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিংয়ে আজ হাজির হয়েছি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে। আশাকরি সবার ভালো লাগব। আর জেনারেল রাইটিংটি হচ্ছে বাংলাদেশের গণহত্যা উপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র "বে অব ব্লাড" বাংলায় "রক্তে রাঙা সাগর" নিয়ে আমার অনুভূতির কথা। এই প্রামাণ্য চিত্রের বাংলাদেশে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে শেয়ার করেছিলাম।আশাকরি "বে অব ব্লাড" বাংলায় "রক্তে রাঙা সাগর" প্রামাণ্য চিত্র দেখার আমার অনুভূতি ভালো লাগবে আপনাদের ।

g2.jpg

ভারতীয় প্রখ্যাত নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বোস বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মান করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম মৃত্যবার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশে প্রথমবাবের মত প্রামাণ্য চিত্রটির প্রদর্শন হয়েছে গত ১৯ আগস্ট বিকেল ৪ টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তন ছিল দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বোসের প্রতিনিধির মাধ্যমে আমন্ত্রিত হয়ে আমার বর সহ আমি উপস্থিত ছিলাম। প্রামাণ্য চিত্রের মত একটি রস-কষ হীন মুভি মানুষ পিন পতন নিরবতায় দেখলো, অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলো । ৯৫ মিনিটের প্রামাণ্য চিত্র যেন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল। নির্মাতা দর্শক-শ্রোতাদের একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু মনে হচ্ছিল আমার সামনেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। আমিও একজন তার অংশী। নির্মাতা এখানেই সফল হয়েছেন।

g1.jpg

মুক্তিযুদ্ধের মত একটি বড় ক্যানভাস মাত্র ৯৫ মিনিটে ক্যামেরা বন্দী করে তুলে ধরা এত সহজ নয়। নির্মাতা চেষ্টা করেছেন, ইতিহাসের অমর বাক গুলো নির্মহ থেকে তুলে ধরতে। যেহেতু প্রামাণ্য চিত্রটি ৭১ এর গণহত্যার তাই ইতিহাস তুলে ধরার চেয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বর চিত্র তুলে ধরেছেন। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি বাপ-চাচা-দাদা-দাদীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি এই প্রামাণ্য চিত্র তার জীবন্ত স্বাক্ষী মনে হয়েছে। সারাদেশেই পাকিস্তানীদের নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন কিন্তু এই প্রামাণ্য চিত্রে ২৫ মার্চের গণহত্যার সবচেয়ে নারকীয় তান্ডব হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তার চিত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে তুলে ধরেছেন। এছাড়া পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও খুলনার চুকনগরের গণহত্যার কথা তুলে ধরেছেন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান শুনে চোখে কখন পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি। পাকিস্তানী সেনারা কত বর্বর ছিল তার প্রমাণ চুকনগরে এক দিন দশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল এই হায়েনারা।

g3.jpgমাহফুজ আনাম

g4.jpgব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম

g5.jpg রাকিবুল ইসলাম

বে অব ব্লাড" বাংলায় "রক্তে রাঙা সাগর"প্রামাণ্য চিত্রে দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ,মুক্তিযুদ্ধপূর্ব ২৫ বছর, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বরবর্তা,আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা সব বিষয়ে ইতিহাসের সত্য তুলে ধরেছেন নির্মাতা,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,ইতিহাসবিদ,বীবমুক্তিযোদ্ধা,বীরাঙ্গনা ও প্রত্যক্ষদর্শী,শহীদের স্বজন,সাংবাদিক ও গবেষকের বয়ানে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচয়িতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম,ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার কন্যা মেঘনাগুহ ঠাকুরতা,সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বীবমুক্তিযোদ্ধা রাকিবুল হাসান, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, গবেষক ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর প্রমূখ।বে অব ব্লাড" বাংলায় "রক্তে রাঙা সাগর"প্রামাণ্য চিত্রটি বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জানিক স্বীকৃতির জন্য জনমত গঠনে কাজ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

প্রামাণ্য চিত্রের নির্মান শৈলী বিশ্বমানের। সাউন্ড,সংগীত, আলোক নির্দেশনা অসাধারণ। প্রামাণ্য চিত্রটি নির্মাণে প্রতিটি সেক্টরে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।বাংলাদেশ,ভারত ও আমেরিকায় শুটিং হয়েছে প্রামাণ্য চিত্রটির।
রচনা ও পরিচালনাকৃষ্ণেন্দু বোস
প্রযোজককৃষ্ণেন্দু বোস ওমধুরিমা সেন বোস
ফিল্ম এডিটরডেভিড
মিউজিকসুমিত সেন
সাউন্ডসুস্মিত নাথ
ফটোগ্রাফিজেরামী জেফস
সময়৯৫ মিনিট
ভারতীয় নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বোসে বাংলাদেশের গণহত্যার উপর প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণে সফল হয়েছেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।প্রদর্শণী শেষে দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে নির্মাতা জানান খুব শীঘ্রই ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাবে বে অব ব্লাড। তখন আপনারাও দেখতে পাবেন এই অসাধারণ প্রামাণ্য চিত্রটি। সবাই সুস্থ্য থাকুন-ভালো থাকুন। আবার দেখা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে।

পোস্ট বিবরণ

পোস্টজেনারেল পোস্ট
পোস্ট তৈরিselina 75
ডিভাইসSamsung A10
তারিখ২সেপ্টম্বর ২০২৩ইং
লোকেশনঢাকা

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পাড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।
সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

বাহ আপু! আপনি আর ভাইয়া দুজনে মিলে এমন একটা প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখার সুযোগ পেয়ে তা উপভোগ করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার অনুভূতি পড়ে আমারো প্রামাণ্যচিত্র টি দেখার আগ্রহ তৈরী হচ্ছে। খুব দ্রুত ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাবে জেনে ভালো লাগলো। এটা মিস করবো না, অবশ্যই অবশ্যই দেখবো।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59596.75
ETH 2659.83
USDT 1.00
SBD 2.45