স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যঃ পান্তা-ভাত ( বাঙালির ঐতিহ্য ) // [ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ] 10 % to @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

10-09-2021

২৬শে ভাদ্র ১৪২৮

স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যঃ পান্তা-ভাত ( বাঙালির ঐতিহ্য )



Desert Safari Facebook Cover (5).png

থ্যাম্বনেইলটি ক্যানভা দিয়ে বানানো হয়েছে!



স্থান, কাল, গোত্র ভেদে একেক জায়গায় একেক রকম লোকসংস্কৃতি বিরজমান। লোকসংস্কৃতি গোত্রের বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছানোর জন্যে চর্চা করতে হয়। চর্চা না করার ফলে, একসময় এই সব লোকসংস্কৃতিগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় অতল সমুদ্রে। শত চেষ্ঠা করেও আর ফেরানো যায় না সেই সব সংস্কৃতিগুলো। লোকসংস্কৃতি বলতে প্রাচীনকাল থেকে যে রীতিনীতি ধুমধাম করে পালন করে আসা হয়, সেই সবকে বোঝানো হয়। আমাদের দেশের বা কলকাতার বাঙালীদের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি আছে। তন্মেধ্যে, সকাল বেলা পান্তা ভাত খাওয়ার সংস্কৃতিটি বহুল পুরোনো। আজকে আমি সেই বিষয় নিয়ে এ সপ্তাহের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি।



পান্তা-ভাত নিয়ে আমার কিছু কথাঃ

পান্তা ভাত প্রাচীন বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার ছিলো। রাতের খাবারের পর যে ভাতগুলো বেঁচে যেতো, সেগুলো নষ্ট যাতে নষ্ট না হয় এবং পরবর্তী সকালে যেনো সেটি আবার খেতে পারে, তার জন্যে সেই ভাতগুলোতে পানি দিয়ে রাখতো। ঠান্ডা ভাতে পানি দিয়ে কয়েক ঘন্টা রাখলে সেটি পান্তা-ভাত নামে পরিচিতি পায়। পান্তা ভাত চিনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে কেউই এই সংস্কৃতিটি ধরে রাখতে চায় না। কেউই এখন আর সকাল বেলায় পান্তা ভাত খায় না। যেটার কারণে আমি বলতে পারি, পান্তা-ভাত হচ্ছে বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় একটি লোকসংস্কৃতি।

Primo_GF7_20210910_141313.jpg

পানি দিয়ে রাখা ঠান্ডা বাসি ভাত। পেঁয়াজ, লবণ, কাচা মরিচ, সরিষার তেল দিয়ে খেতে যে কতটা মজা লাগে, সেটা যে একবার খেয়েছে সেই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে পান্তা-ভাত যে খায় তাকে ক্ষ্যাত বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমার ধারণা মতে, এই ক্ষ্যাত নামক শব্দটার কারণে দিন দিন পান্তা-ভাতের প্রচলণ কমে যাচ্ছে। আবার অনেকে ইচ্ছা করেই এখন আর পান্তা-ভাত খায় না। আমার দাদু ও নানুর কাছ থেকে আমি শুনেছিঃ দাদু আর আমার নানু যখন সকালবেলা মাঠে কাজে যেতো তখন তারা পান্তা-ভাত খেয়েই কাজে যেত। যেদিন তারা পান্তা-ভাত না খেয়েই কাজে যেতো, সেদিন নাকি তারা কাজ করার শক্তিই পেত না। আমি আমার আরেক দাদুর কাছ থেকে শুনেছিলাম, তিনি নাকি সকাল, দুপুর ও রাত তিন বেলাতেই পান্তা খেতে পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই। আর তার সাথে সাথে পান্তা-ভাত খাওয়ার প্রচলনটাও আমাদের বংশ থেকে ধীরে ধীরে উঠে যেতে লাগে।



পান্তা-ভাত এর আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ

আমি মনে করি, এটি নিদির্ষ্ট কোনো সময়ে আর নিদির্ষ্ট কারো হাত ধরে আবিষ্কার হয় নি। কালের বিবর্তনে, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে খাদ্য অপচয় রোধ করতেই পান্তা ভাতের আবিষ্কার হয় বলে আমি মনে করি। তবুও, এর কিছু প্রাচীন প্রেক্ষীতে আমরা উইকেপিডিয়া হতে কিছু তথ্য জানতে পারি।

মুঘল শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো, আগত দর্শক শ্রোতাগণ ঐতিহ্যবাহী পান্তাভাত খেতো।উৎস উইকেপিডিয়া

Primo_GF7_20210910_141342.jpg

একটা সময় ছিলো যখন বাঙালিরা ভাত নষ্ট করার চেয়ে তা পান্তা করে পরবর্তী দিন সকালের নাস্তা হিসেবে খেত। কিন্তু, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঙালি আর সকালের নাস্তা হিসেবে পান্তা-ভাত খায় না। পান্তা-ভাতের জায়গা দখল করে নিয়েছে কিছু কিছু আধুনিক খাবার যেমনঃ বিরিয়ানী, খিচুরী, বার্গার, ডিম, ফল-মূল, সালাদ, পরোটা-ডাল ইত্যাদি। তাই দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে পান্তা-ভাতের সাথে বাঙালির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

বাঙালীদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের দিন বর্তমানে ঘটা করে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেটিও বিলুপ্তির পথে।

আমি মনে করি, যদি পান্তা-ভাতকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাতেই হয় তাহলে আমাদের মাসে ৪-৫ বার পান্তা-ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ, পান্তা-ভাত আমাদের রোগপ্রতিরোধের ব্যবস্থা করে দেয়। শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়িয়ে দেয়। এতে খুব সহজে রোগ বালাই আক্রমণ করতে পারে না।

Primo_GF7_20210910_141335.jpg

Primo_GF7_20210910_141407.jpg

Primo_GF7_20210910_141348.jpg

Primo_GF7_20210910_141324.jpg

বাঙালি মানে আমরা সবাই ভাই-ভাই। আমরা সবাই একই গোত্রের, আমরা সবাই একই পরিবারের। তাই আমরা সবাই স্থানীয় মানে বাঙালি। বাংলা আমাদের ঐতিহ্য। আর পান্তা-ভাত আমাদের লোকসংস্কৃতি।



CameraWalton
ModelGF7
Locationhttps://what3words.com/supply.forge.eternally


আশা করি, আমার এই ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগেছে। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।

sagor bordar.png

Untitled-1s.jpg

আমার সম্পর্কে কিছু কথাঃ-


আমি মোঃ আবু হেনা সরকার। আর আমার ডাক নাম সাগর। আমি একজন স্বাধীন চেতনাময়ী ছেলে। যে সবসময় স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেই। আমি লিখতে, পড়তে, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, বিশ্লেষন এবং কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ভীষণ আগ্রহী ও ভালোবাসি। আমি একজন মিশুক ছেলে। সবার সাথে মিশতে আমার অনেক ভালো লাগে।

sagor bordar.png

আমার সাথে যোগাযোগ করুনঃ-

ফেসবুক | টুইটার | ডিস্কোর্ড | ইউটিউব

sagor bordar.png

Sort:  
 3 years ago 

আসলেই পান্তাভাত বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু এই পান্তা ভাতের ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও আমার কাছে পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, ডাউল এবং ইলিশ মাছ ভাজা খেতে খুবই মজা লাগে। আপনার পোস্ট থেকে একটি নতুন জিনিস জানতে পারলাম। এটা হচ্ছে পান্তা ভাত ইমিউনিটি বাড়ায়। আমি যতদূর জানি ভাতে আছে কার্বোহাইড্রেট। যেটা শরীরে শক্তি যোগায়। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

জ্বি ভাইয়া আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। পান্তা-ভাতে আরো অনেক ধরণের উপকারী পদার্থ আছে, যেটা আমাদের জ্ঞানের ও বাহিরে।

 3 years ago 

আপনার পোস্ট আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। লোক সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ধরনের মেলায় তুলে ধরা হতো এখন আর দেখা যায় না।যেটা আধুনিকতার ছোয়ায় বিলিন হয়ে গেছে।অনেক সুন্দর একটি পোস্ট।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আসলেই, আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে।

খুবই সুন্দর একটি পোস্ট যা আমাদের বাংলার ঐতিহ্য বহন করে আসতেছে যুগ যুগ ধরে। পান্তা ভাত আমাদের লোকজ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আমরা প্রতি বছর ১লা'বৈশাখে পালন করে থাকি।ধন্যবাদ আমাদের এ রকম একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।

 3 years ago 

শুধু পহেলা বৈশাখে পালন করলে হবে না ভাইয়া।

 3 years ago 

২০১৮ সালে স্কুলের পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে পান্তা ভাত সাথে ইলিশ দিয়ে খেয়লছিলাম। এরপর আর খাওয়া হয়নাই।পান্তা ভাত বাঙালির ঐতিহ্য ও বলা যায়।খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছে লোক সংস্কৃতির উতিহ্য পান্তা ভাত সম্পর্কে।

 3 years ago 

আমি আজকে খেয়েছি ভাই। আহহহহহ কি স্বাদ ও গন্ধ। আমি অসুস্থ ছিলাম, তা আমাকে সুস্থ বানিয়ে দিয়েছে,

 3 years ago 

ভালো তাহলে ভাই😐

ভাই একদম সত্যি কথা কতদিন থেকে যে কাচা মরিচ আবং পিয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খাইনি নিজেও জানিনা। অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।

 3 years ago 

পান্তাভাত আমার অনেক প্রিয় কিন্তু পরিবারের জন্য আসলে খেতে পারিনা। বলে ভুঁড়ি বেড়ে যাবে তাই নাকি পান্তা ভাত খাওয়া যাবে না। লবন, মরিচ আর কোন তরকারির ঝোল পান্তা ভাতের সাথে অনেক চমৎকার লাগে সকাল বেলা এবং আমি প্রায়ই খাওয়ার চেষ্টা করি পরিবারের শত বাধা সত্বেও। আপনার পান্তাভাতের এই আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে।

 3 years ago 

ছোট এই আয়োজন লোকসংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার ভাইয়া। আসলেই পান্তা ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী।

 3 years ago 

গ্রামের মানুষ এখনও সকালবেলা করে আলু ভর্তা দিয়ে পান্তা
খায়।তবে এখন আর তিনবেলা খায় না হয়তো।যাইহোক ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

 3 years ago 

গ্রাম বাংলায় এখন আর পান্তা ভাত দেখা যায় না কারণ উন্নত বিশ্বের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও তাই ধন্যবাদ আপনার এই রকম পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 3 years ago 

খুব সুন্দর বিষয় তুলে ধরেছেন ভাইয়া।তবে এটি এখনো গ্রামের দিকে দেখা যায়।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

আমাদের বাংলাদেশে এটি এখন বিলুপ্তির পথে আপু।

 3 years ago 

আমাদের বাংলার মধ্যে ও বিলুপ্তির পথে ভাইয়া।তবে বাংলার বাইরের কথা ঠিক জানি না।

 3 years ago 

বাঙ্গালী হয়ে যে পান্তা ভাতের মজা নেয় নি তার জীবনটাই বৃথা রে ভাই। দারুন একটা জিনিস তুলে ধরেছেন। আমি তো ভীষণই পছন্দ করি। সত্যি বলতে ভার্সিটিতে থাকা অবস্থাতেও আমি ডাইনিং থেকে ভাত এনে জল দিয়ে রাখতাম সকালে পান্তা ভাত খাবো বলে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের অনেকই আজ পান্তা ভাত পছন্দই করেন না। আমার মনে হয় ওনারা নিজেরা জানেনই না যে এই পান্তা ভাতের পুষ্টিগত গুণাগুণ কত। ধন্যবাদ ভাই বাঙালির প্রাচীন এই ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য।

 3 years ago 

জ্বি ভাই,
আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম। কথায় আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বর্তমানে পান্তা-ভাত খেলে নাকি মানুষ ক্ষ্যাত হয়ে যায়, সেই ভয়ে তারা অনেক পুষ্টিগত গুনাগুন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57946.22
ETH 3059.94
USDT 1.00
SBD 2.34