ফার্মেসি ব্যবসার A to Z. পর্ব - ৪ - প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট।
প্রথম পর্বে আমি আলোচনা করেছিলাম ফার্মেসির ধরণ নিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছি ট্রিটমেন্ট বেইজড খুচরা ব্যবসায়ী নিয়ে। তৃতীয় পর্বে আলোচনা করেছি ট্রিটমেন্ট ও প্রেসক্রিপশন; দুটির উপরেই ফোকাস থাকে এমন ফার্মেসি নিয়ে। আজ থাকলো চতুর্থ পর্ব যেখানে আমি আলোচনা করব কেবল মাত্র প্রেসক্রিপশনের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত ফার্মেসিগুলো নিয়ে।
পর্ব ১- ফার্মেসি ব্যবসার A to Z. পর্ব -১ - ফার্মেসির ধরণ
পর্ব ২- ফার্মেসি ব্যবসার A to Z. পর্ব - ২ - খুচরা ব্যবসায়ীঃ ট্রিটমেন্ট বেইজড
পর্ব ৩- ফার্মেসি ব্যবসার A to Z. পর্ব - ৩ - খুচরা ব্যবসায়ীঃ ট্রিটমেন্ট ও প্রেসক্রিপশন বেইজড
অবস্থান
সাধারণত হাসপাতাল, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারের সামনে বা আশেপাশে অবস্থান থাকে এসব ফার্মেসিগুলো। গ্রাম এলাকায় কিংবা শহরে ও মফঃস্বলে খুবই জনসমাগম হয় এমন স্থানে অবস্থান এসব ফার্মেসির। প্রতিদিনই কোম্পানির গাড়ি আসে এমন স্থানে অবস্থান হয় এধরণের ফার্মেসিগুলোর।
ঔষধ কেনার ধরণ
সরাসরি কোম্পানির সাথে বাণিজ্য করে থাকেন এসব ফার্মেসি মালিকরা। এখানে প্রতিনিয়তই মেডিসিনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সাপ্লাই চেইন স্ট্রং থাকতে হয় সবসময়। এজন্যই প্রতিদিনই কোম্পানির গাড়ি আসে এমন স্থানে অবস্থান হয় এসব ফার্মেসিগুলোর। ঔষধ কোম্পানিগুলোও আলাদা সাপ্লাই ভ্যান দিয়ে থাকে এদের জন্য। পাশাপাশি এক সাথে অনেকগুলো এমন ফার্মেসি থাকে। তাই এদের যে প্রোডাক্ট শর্ট পড়ে তা পাশের ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসা হয়। এজন্য কোন হোলসেল বা পাইকারদের সাথে এদের সম্পর্ক খুব একটা থাকে না।
টার্গেটেড ক্রেতা
ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারে আসা রোগী এবং হাসপাতালের রোগী হচ্ছে এদের প্রধান টার্গেট কিংবা প্রধান ক্রেতা। স্থান ভেদে এক একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন দুইশ থেকে এক হাজার রোগীও এসে থাকে। বাংলাদেশের এমনও কনসাল্টেশন সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে যেখানে প্রতিদিন ৫ হাজার রোগীও হয়। সরকারি হাসপাতালের অবস্থাতো আপনারা জানেনই। নিজ মহল্লায় মেডিসিন পাবো কি পাবো না; এই চিন্তায় বেশির ভাগ রোগীই এসব ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে থাকে।
এসব ফার্মেসির কোন স্থায়ী কাস্টমার নাই। শহরের বেশির ভাগ রোগীই দেখা যায় গ্রাম থেকে কিংবা অনেক দূর থেকে এসেছে। তারা এখান থেকে একবার ঔষধ নিয়ে গেলে হয়ত দ্বিতীয় বার এদিকে নাও আসতে পারে। এজন্য স্থায়ী কাস্টমার এখানে হয়না। কিন্তু প্রতিদিনই যত নতুন প্রেসক্রিপশন বের হয়, তার সার্ভিসও যদি ঠিক মত দেয়া যায়; দেখা যায় দিন শেষে বেশ ভালো একটা সেলস পাওয়া যায়।
ইনভেস্ট
এখানে ইনভেস্ট খুব বেশি করা লাগে না সেলসের তুলনায়। আপনি ১০ লক্ষ টাকা দিয়েও শুরু করতে পারেন। কিন্তু ভালো হয় যদি আপনি ৩০ লক্ষ এর বেশি টাকা ইনভেস্ট করেন। এখানে টাকার রোলিং সবচেয়ে বেশি হয় বলে খুব বেশি ইনভেস্টের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু প্রায় সকল রকমের মেডিসিনের জোগান রাখতে হয় বলে এককালীন ইনভেস্ট বেশি করতে হয়। এজন্যই দেখা যায় ২০-২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আবার, আশাপাশের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি খুবই রেপুটেড হয় তখন যোগান আরও বেশি লাগে। কখনও কখনও নিজেদের আলাদা স্টোর-রুমেরও প্রয়োজন হয়ে যায়। এখানে খরচও একটু বেশি। একেতো আপনার এডভান্স বেশি লাগবে, তার উপর স্টাফও দরকার হয় একাধিক। একা এসব ফার্মেসি সামলানো অসম্ভব। দোকানের ভাড়াও একটু বেশি হয়ে থাকে।
বিক্রি
এখানে ইনভেস্টের যেমন কোন লিমিটেশন নেই, তেমনি বিক্রিরও কোন লিমিটেশন নেই। আপনার মজুদের উপর ভিত্তি করে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকাও প্রতিদিন বিক্রি করতে পারবেন। আর ডিসকাউন্টের পরিমাণ কম বলে লাভটা একটি বেশিই থাকে যেহেতু পার্মানেন্ট কাস্টমার এসব ফার্মেসিতে নেই। এজন্য খরচ বেশি হলেও তা উঠে যায়।
এই ছিল চতুর্থ পর্ব। কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন এই কামনায়।
|
|