পরিবার এবং খালাতো বোনদের সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা ও হাজির বিরিয়ানি খাওয়ার গল্প ( শেষ পর্ব)।
যাইহোক এই পরিকল্পনা করার পরপরই আমরা সরোয়ারদী উদ্যান থেকে বের হয়ে টিএসসির ওখানে যে মেট্রো স্টেশন আছে সেখানে গিয়ে মেট্রোর টিকিট কেটে মেট্রোতে চেপে মতিঝিল পৌঁছে গেলাম। সমস্ত কিছু করতে আমাদের সময় লাগলো মাত্র কয়েক মিনিট। তারপর মতিঝিল মেট্রো থেকে নেমে আমরা রিকশা নিয়ে গেলাম নাজিরা বাজার আসল হাজির বিরিয়ানি দোকানের ওখানে। হাজির বিরিয়ানি আমি এর আগেও অনেকবার খেয়েছি। কখনো ভালো লেগেছে আবার কখনো খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে এইভাবে পরিবারের অনেকগুলো লোক মিলে একসাথে কখনো যাওয়া হয়নি। যাইহোক যখন আমরা হাজির বিরিয়ানির সামনে পৌছালাম তখন সেখানকার অবস্থা দেখে মনে হোলো আজকে আর হাজির বিরিয়ানি খাওয়া হবে না। কারণ সেখানে তাদের ছোট্ট দোকানের ভেতরে তিল ধারণের জায়গা ছিলো না। আবার বাইরেও বেশ কিছু লোকজন সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
তখন আমি আর আমার খালাতো বোনের হাজবেন্ড দুজন মিলে আলোচনা করতে লাগলাম কি করা যায়? এত লোকজন দেখে আমার মনে হল আজকে আর হাজির বিরিয়ানি খাওয়া সম্ভব হবে না। তখন আমি সবার সাথে পরামর্শ করে ঠিক করলাম সামনে আরও একটা বিরিয়ানির দোকান আছে যেটার নাম হানিফ বিরিয়ানি। সেটার স্বাদও অনেকটা হাজির বিরিয়ানির মতোই। চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করলাম সবাইকে নিয়ে সেখানেই খেতে যাবো। আমরা সবাই মিলে লোক ছিলাম মোট নয়জন। অবশ্য ৯ জনের ভেতর চারজনই ছিলো বাচ্চা। চিন্তাভাবনা করে আমি আর আমার খালাতো বোনের হাজবেন্ড দুজন মিলে গেলাম হানিফ বিরিয়ানিতে। সেখানেও দেখলাম বেশ ভিড়। তবে সেখানে হয়তো বসার ব্যবস্থা করা যাবে। সেখানকার পরিবেশ দেখে যখন আমি আমার স্ত্রী আর খালাতো বোনদের কাছে এলাম। তখন তাদেরকে হানিফ বিরিয়ানি খাওয়ার কথা বললে দেখলাম তারা খুব একটা আগ্রহী না। তারা একটু কষ্ট করে হলেও হাজির বিরিয়ানিই খাবে।
তখন আমি আমার খালাতো বোনের হাসবেন্ড দুজন হাজির বিরিয়ানি ভেতর গিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে লাগলাম। দোকানের লোকজন জানালো তাদের কিছু করার নেই। আমাদের কে পরামর্শ দিলো টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। তারপর সেটা খালি হওয়ার সাথে সাথেই আমাদেরকে দখল নিতে বললো। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল কোন একটা বিয়ে বাড়িতে খেতে এসেছি যেখানে প্রচুর মানুষের ভিড়। যাইহোক আমরা দুজন দুটো টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম আর মানুষের খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি যে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানকার তিনটা ছেলে দেখলাম খুব আয়েশ করে খাচ্ছে। ঘাড়ের উপরে যে লোক দাঁড়িয়ে আছে এটা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। তারা ধীরেসুস্থে চেটেপুটে খেতে লাগলো। দৃশ্যটা দেখে মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছিলো। অবশ্য অন্য টেবিলের পাশে যেখানে আমার খালাতো বোনের হাজবেন্ড দাঁড়িয়েছিলো সেই লোক গুলো দেখলাম অবস্থাটা বুঝে তারা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো। যাই হোক শেষ পর্যন্ত বহু যুদ্ধের পরে আমরা দুটো টেবিলের দখল নিতে সমর্থ হলাম।
আগে থেকেই তাদেরকে অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। যার ফলে আমরা বসার সাথে সাথেই আমাদের সামনে বিরিয়ানি আর বোরহানি পরিবেশন করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কাঙ্খিত খাবার পেলে যে অবস্থা হয় আমাদেরও তাই হয়েছিলো। আমরা সবাই বিনা বাক্যে খাবার খেতে শুরু করলাম। খাবারের সাদ যে খুব আহামরি ভালো মনে হয়েছিলো সেটা নয় বরং আমার কাছে সেদিনের হাজির বিরিয়ানি খুব একটা বেশি ভালো লাগেনি। তাছাড়া আড়াইশো টাকা প্লেট হিসাবে ভেতরে মাংসের পরিমাণও আমার কাছে কম মনে হয়েছিলো আমার। তাদের বেচাকেনা অবস্থা দেখে মনে হোলো তারা বেশি মুনাফা করতে গিয়ে খাবারের মান কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। আর এত ব্যাপক বেচাকেনা যে তাদের আসলে এখন মান নিয়ে খুব একটা চিন্তা না করলেও চলছে। যাই হোক আমরাও খুব একটা বেশি সময় নষ্ট না করে দ্রুত খাওয়া দাওয়া করে বিল দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে শান্তিনগর খালাতো বোনের বাসায় ফিরে এলাম। আমার ভেতরে তাড়াতাড়ি ফেরার তাড়া কাজ করছিলো কারণ বাইরে সময় কাটালে পরবর্তীতে আমার উপর কাজের অনেক চাপ পড়ে যায়। যাই হোক সেদিনের সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো সময় কেটেছিলো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | নাজিরা বাজার |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাই গত পরশুদিন প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে মেট্রোতে চড়লাম। মতিঝিল থেকে থেকে ফার্মগেট গিয়েছিলাম,তারপর আসার সময় বিজয় স্মরণী থেকে মতিঝিল এসেছিলাম। দারুণ লেগেছিল মেট্রোতে চড়ে। যাইহোক হাজির বিরিয়ানি এখন নামে চলে। নাজিরা বাজারের হাজির বিরিয়ানি আমার কাছেও ততটা ভালো লাগে না। তার চেয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জ চাষাড়ার সুমাইয়ার বিরিয়ানি আরও টেস্টি লাগে। তাছাড়া বিউটি লাচ্ছিও ততটা সুস্বাদু লাগে না। ইউটিউবাররা ব্লগের মাধ্যমে পরিচিতি বাড়িয়েছে বিউটি লাচ্ছির। যাইহোক এতো সিরিয়াল ধরে অবশেষে হাজির বিরিয়ানি খেতে পেরেছেন, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।