ঈদ পূর্ববর্তী আড্ডা ও একটি অপূর্ণ ইচ্ছা।
দুদিন হল ফেরদৌস ফরিদপুর এসেছে। প্রথম দিন দুজন মিলে সকালে একটু বাইরে বের হয়েছিলাম ঘোরাফেরার জন্য। তখনই দুজনে ঠিক করেছি বিকালের দিকে আড্ডা দিতে রাফসানের এলাকায় যাবো। বিকালে যখন দুজন একত্রিত হলাম তখন খেয়াল করে দেখি আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। আষাঢ় মাসের আকাশ যেমন হওয়ার কথা ঠিক তেমন। যাইহোক দুজনে এক জায়গায় মিলিত হওয়ার পর আমরা রওনা দিলাম রাফসানের এলাকার উদ্দেশ্যে। দুই বন্ধু গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। আবহাওয়াটা এতই চমৎকার ছিল মোটরসাইকেলে করে যেতে বেশ ভালোই লাগছিলো। রাফসানের এলাকা আমাদের শহর থেকে খুব একটা দূরে নয়। যার ফলে অল্প সময় সেখানে পৌঁছে গেলাম।
সেখানে পৌঁছে দেখি ইতিমধ্যে সোয়া পাঁচটা বেজে গিয়েছে। তাই আমি ফেরদৌসকে বললাম তুমি রাফসানের শো রুমে গিয়ে বসো আমি নামাজ পড়ে আসি। এই কথা বলে আমি সরাসরি মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে। নামাজ শেষ করে আমি রাফসানের শো রুমে গিয়ে দেখি সেখানে রাফসান একা বসে রয়েছে কিন্তু ফেরদৌস নেই। আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেরদৌসকে ফোন দিতে গিয়ে দেখি ফেরদৌস রাফসানের শোরুমের দিকে আসছে। তারপর ফেরদৌস এলে তিন বন্ধু মিলে শুরু হোলো জম্পেশ আড্ডা। প্রতি ঈদের আগে রাফসানের শোরুমে আমাদের বেশ ভাল রকমের আড্ডাবাজি হয়। সেই সমস্ত আড্ডায় অবশ্য আরো বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব থাকে। তবে এবার গতকাল পর্যন্ত কোন বন্ধু-বান্ধব এলাকায় এসে পৌঁছায়নি। যার ফলে আড্ডা দিতে শুধু আমি আর ফেরদৌস গিয়েছিলাম।
কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পরে খেয়াল করে দেখি বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার আর ফেরদৌসের পরিকল্পনা ছিল রাফসানের এলাকা থেকে কিছুটা দূরে একটি ব্রিজ আছে। সেই ব্রিজের উপর গিয়ে বসে কিছুটা সময় কাটাবো। কারণ সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ সুন্দর। আমাদের দুজনের কাছে জায়গাটা অত্যন্ত পছন্দের। কিন্তু বৃষ্টি দেখে মনে আশঙ্কা জাগলো আজ হয়তো আমাদের আর সেখানে যাওয়া হবে না। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেলো। তখন আমরা দুজন রাফসানকে বললাম চল আমরা তিনজন মিলে সেই ব্রিজের উপর বসে কিছুটা সময় কাটায়। প্রস্তাব দেয়ার সাথেই রাফসান রাজি হয়ে গেলো। তারপর তিন বন্ধু মিলে ফেরদৌসের মোটরসাইকেলে করে আমরা সেই ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় আমরা অল্প সময়ে সেই ব্রিজে পৌঁছে গেলাম।
আমরা মনে করেছিলাম সেখানে গিয়ে আরো অনেককে দেখতে পাবো। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর দেখলাম আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। হয়তো মানুষজন বৃষ্টির ভয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না সেজন্য। যাই হোক আমরা সেখানে পৌঁছে তিন বন্ধু মিলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম। সেই ফাঁকে আমি কিছু ছবিও তুলেছিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর হঠাৎ করে আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হোলো। আমরা খেয়াল করে দেখলাম সেই ব্রিজের আশেপাশে তেমন কোনো লোকালয় নেই তখন বন্ধু রাফসান আমাদের বলল তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যেতে হবে। কারণ জোরে বৃষ্টি শুরু হলে ভেজা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আমরা বুঝতে পারলাম রাফসান সঠিক কথাই বলছে। তাই আমরা তাড়াহুড়া করে করে মোটরসাইকেলে উঠে রাফসানের এলাকার উদ্দেশ্যে ফিরতে লাগলাম।
কিন্তু কিছুদূর আগানোর পরে হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে। কারণ আমরা তখন একটি বাজারের কাছে ছিলাম। বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমরা দৌড়ে একটি দোকানে আশ্রয় নিলাম। দোকানটি ছিল একটি ভাজাপোড়ার দোকান। সেই দোকানে সিঙ্গারা, পুরি ছোলাভুনা এগুলো বিক্রি হচ্ছিলো। বৃষ্টির ভিতর এমনিতেই ভাজাপোড়া খেতে অনেক মজা লাগে। তাই হাতের কাছে এমন মজাদার খাবার পেয়ে আমরা অপেক্ষা না করে খেতে শুরু করলাম। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার পর আমরা বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এর ভেতরে ফেরদৌস আমাকে প্রস্তাব দিল চলো দুজনে ভিজতে ভিজতে বাড়িতে ফিরি। প্রস্তাবটি আমার কাছে বেশ পছন্দ হলো। কিন্তু ততক্ষণে মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে। তাই আমি ফেরদৌস কে বললাম তাহলে আমি আগে নামাজ পড়ে নেই। তারপর দুজনে মিলে ভিজতে ভিজতে বাড়ির দিকে রওনা দেবো।
এই কথা বলে আমি একটি অটো রিক্সায় উঠে সামনের একটি মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে। পরিকল্পনা করেছিলাম নামাজ পড়া শেষ হলে আমি ফেরদৌসকে ফোন দিয়ে সেখানে আসতে বলবো। তারপর সেখান থেকে দুজন বাড়ীর উদ্দেশে রওনা দেবো। কিন্তু নামাজ শেষ হতে হতে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি শেষ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন হল বন্ধুবান্ধবদের সাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। সেদিন মনে করেছিলাম আজ অনেকদিন পর দুই বন্ধু মিলে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো। কিন্তু বৃষ্টি থেমে যাওয়ার কারণে আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলো না। যাইহোক কি আর করা? শেষ পর্যন্ত নামাজ শেষ করে দুজনে ধীরেসুস্থে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | গজারিয়া |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে ভাইয়া আষাঢ় মাসের সময় যে কোন সময়ে বৃষ্টি চলে আসতে পারে। যাহোক ঈদের পূর্বে আপনার বন্ধুদের সাথে বেশ ভাল রকম সময় কাটিয়েছেন। তবে নামাজের পরে আপনারা দুই বন্ধু মিলে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে হয়তো আপনাদের আরও বেশি ভালো লাগতো। তবে এখনকার বৃষ্টিতে না ভেজায় উত্তম। যাহোক অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।