বৃষ্টি ভেজা বারোই মেলায় কিছুক্ষণ।
প্রতিবছর এই সময়ে গজারিয়ায় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গজারিয়া স্থানটি আমাদের শহর থেকে ১০-১১ কিলোমিটার মতো দূরে। আমাদের বন্ধু রাফসানের বাড়ি সেখানে হওয়ায় মাঝে মাঝেই সেখানে যাওয়া হয় তার সাথে আড্ডা দিতে। তেমনি একবার আড্ডা দিতে গিয়েই এই মেলার সন্ধান পেয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রতিবারই এই মেলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। এই মেলাটি একটু অদ্ভুত রকমের মেলা। কারণ আমি এত স্বল্প স্থায়িত্বের আর কোন মেলা কখনো দেখিনি।
এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মাত্র একদিনব্যাপী। সকালে শুরু হয়ে রাতেই শেষ। আমি প্রথমবার যখন এই তথ্য জানতে পারি তখন অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মাত্র একদিনের জন্য কিভাবে এতগুলো স্টল হতে পারে সেটা আমার মাথায় ঢুকছিলো না। তবে একদিনব্যাপী মেলা হলেও মেলাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ওই এলাকার মানুষজনের কাছে। কারণ যতবারই এই মেলায় গিয়েছি ততবারই সেখানে দেখেছি লোকের লোকারণ্য হয়ে আছে পুরো মেলার স্থানটি। দুদিন আগে বন্ধু প্রদীপ আমাকে ফোন দিয়ে বলল গজারিয়া বারই মেলা আগামী পরশুদিন যাবি নাকি সেখানে? আমি শোনার সাথে সাথে বললাম হ্যাঁ যাবো। তারপর দুজন মিলে পরিকল্পনা করলাম বিকাল চারটার দিকে আমরা মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।
সেদিন রাতে আবার বন্ধু রাফসান ফোন দিয়ে মেলার কথাটা জানালো। আমি তখন ওকে বললাম আমি মেলায় আসছি তুইও থাকিস। পরবর্তীতে আমাদের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এলো। কারণ আমার বাসায় এক গেস্ট আসার কথা ছিল আজকে বিকালে। তাই আমি বন্ধু প্রদীপ কে ফোন দিয়ে বললাম আমরা বেলা তিনটার দিকে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। তাহলে ঘোরাফেরা শেষ করে বেলা পাঁচটার ভেতরে বাসায় ফিরে আসতে পারবো। বন্ধু প্রদীপ তাতে দ্বিমত করল না। কিন্তু প্রকৃতির ছিল আজ অন্যরকম প্ল্যান। সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা হয়ে ছিলো। দুপুরের পর থেকেই ইলশে গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। তখন বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিয়ে বললাম এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে আমরা আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর মেলায় যাই।
তারপর আমরা বেলা চারটার দিকে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখনো অবশ্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। কিন্তু সে বৃষ্টি এমন জোরালো ছিল না যে তার জন্য আমাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে। যাই হোক আমরা একটি অটোরিক্সা করে মেলায় পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছে আমি বন্ধু প্রদীপকে বললাম তুই মেলায় ঘুরতে থাক। আমি চার রাকাত নামাজ পড়ে আসি। নামাজ পড়ে যখন আমি মসজিদ থেকে বের হব। তখন দেখি কিছুটা জোরে বৃষ্টি শুরু হল। তখনো বুঝতে পারিনি সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে যাচ্ছে। আমি বৃষ্টির ভেতর কিছুক্ষণ একটি দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তারপর পকেট থেকে রুমাল বের করে সেটি মাথায় দিয়ে চিন্তা করলাম মেলা থেকে একটু ঘুরে আসি। মেলায় পৌঁছে আমি বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিলাম। ফোন দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম প্রদীপ দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। তারপর দুই বন্ধু মিলে সেই অল্প বৃষ্টির ভেতরেই মেলায় ঘুরতে লাগলাম। অবশ্য ততক্ষণে অনেক দোকানদার তাদের দোকানের সামনে বাড়তি পলিথিন টানিয়ে রেখেছে মেলার দর্শনার্থীদের জন্য। আমরা কিছুদূর পর পর সেই পলিথিনগুলোর নিচে গিয়ে দাড়াচ্ছিলাম। যাতে বৃষ্টিতে ভিজতে না হয়। এভাবে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করতে করতে আমি টুকিটাকি দু একটা জিনিস কিনলাম।
তারপরই শুরু হলো রীতিমতো মুষলধারে বৃষ্টি। আমরা বেশ কিছুক্ষণ একটি দোকানের সামনে টানানো পলিথিনের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ দেখছিলাম না। বরং বৃষ্টিপাত বেড়েই চলছিল। এর ভেতরে আমরা দু একজন দোকানদারের সাথে কথা বললাম। বুঝতে পারলাম তাদের সকলের মন খারাপ। কারণ মাত্র একদিন ব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় মূল বেচাকেনা হয় বিকাল থেকে রাত ৭ টা ৮ টা অব্দি। এই সময় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেলায় আগত দর্শনার্থী এবং দোকানদার সকলেরই মন খারাপ ছিল। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর যখন বুঝতে পারলাম এই বৃষ্টি আর সহজে কমছে না। তখন দুই বন্ধু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | গজারিয়া |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বারোই মেলা একদিনের জন্য হলেও লোকজনের অনেক সমাগম দেখতে পেলাম ভাইয়া। একদিনের জন্যও যে মেলা হয় সেটা এই প্রথম জানতে পারলাম আপনার পোস্টের মাধ্যমে। আমি যতটুকু দেখেছি নরমালি অন্তত ৩ দিন হয় যেকোন মেলা। যাইহোক মেলার দোকান গুলোর ফটোগ্রাফি দেখে খুব ভালো লাগলো। বৃষ্টির জন্য তেমন ঘুরাঘুরি করতে পারেননি। আপনি যেখানে যান আগে নামাজ আদায় করে নেন,আর আপনার এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমিও এমনটা করি প্রায় সময়। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়।