অসাধারণ, অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য ম্যাক্সওয়েল। প্রসঙ্গ আফগানিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে The project নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে
এদিন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা সবাই সেট হয়ে তারপর নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম জাদ্রাণের চমৎকার একটি শতরান এবং শেষের দিকে রশিদ খানের একটি ছোট্ট ক্যামিয়র কল্যাণে আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত ২৯১ রান করতে সমর্থ হয়। স্কোরবোর্ডে ২৯১ রান তোলার পর আফগানিস্তানের প্লেয়াররা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সেই সাথে ক্রিকেট বিশ্লেষকেরাও বলাবলি করছিলো আফগানিস্তানের বোলিং লাইনআপ যেহেতু যথেষ্ট শক্তিশালী তাই এই ম্যাচ জেতা অস্ট্রেলিয়ার জন্য সহজ হবে না। বাস্তবে দেখা গেলো ও তাই। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়া ক্রমাগত একের পর এক উইকেট হারিয়ে যাচ্ছিলো। একসময় উইকেট হারাতে হারাতে তারা ৯১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে।
তখন সবাই আরেকটি আফগান রূপকথার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মোটামুটি সকলেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এই ম্যাচ আফগানিস্তান বড়ো ব্যবধানে জিতবে। কারণ তখন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে শুধু ক্রিজে ছিলেন ম্যাক্স ওয়েল। কিন্তু কেউ ই ধারণা করতে পারেনি পরের সময়টাতে সবার জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে। ম্যাক্সওয়েল প্রথমে কিছু বল দেখে খেললেও তারপর থেকে তার স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু তখনও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো অনেক রানের। কেউই চিন্তা করতে পারেনি ম্যাক্সওয়েল শেষ পর্যন্ত প্যাট কামিনস কে সাথে নিয়ে ম্যাচটি জিতে যাবেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হচ্ছিল ম্যাক্সওয়েল আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারলে হয়তো ম্যাচটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য দানবীয় ব্যাটিংয়ের কাছে আফগানিস্তানের প্রতিরোধ হার মানছিলো। ম্যাক্সওয়েল সেদিন এমন একটা ইনিংস খেলেছে যেটা হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা ইনিংস।
খেলার একপর্যায়ে ম্যাক্সওয়েল শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার খেলা চালিয়ে যান। অবস্থা এমন হয়েছিলো যে ম্যাক্সওয়েল তার ক্রীজ থেকে কোনরকম ফুটওয়ার্ক ছাড়া শুধু হ্যান্ডআই কো-অর্ডিনেশনের উপরে ভর করে আফগানিস্তানের বোলারদের বেধড়ক পেটাচ্ছিলো। আমি দীর্ঘদিন যাবত ক্রিকেট খেলা দেখি। কিন্তু আমি আমার জীবনে এই ধরনের ইনিংস কখনোই দেখিনি। একজন আনফিট প্লেয়ারের এমন ধ্বংসাত্মক রূপ এটা ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল। ম্যাক্সওয়েল সেদিন এমন এক রূপকথার জন্ম দিয়েছে যেটা হয়তো পরবর্তী আরো ১০০ বছর মানুষ মনে রাখবে। আমি যখন পিটিভি এর পোস্ট ম্যাচ এনালাইসিস দেখছিলাম। তখন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামকে বলতে শুনলাম আমি ২০ বছর ক্রিকেট খেলেছি, আরো ২০ বছর ধরে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু আমি আমার জীবনে কখনোই এমন কোন ইনিংস দেখিনি।
ম্যাক্সওয়েলের সেদিন সেই অবিশ্বাস্য ইনিংসের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটে ম্যাচটি জিতে যায়। অবশ্য অপরপ্রান্ত থেকে ব্যাট কামিনস তাকে দারুন সঙ্গ দিয়েছেন। এরই ফলশ্রুতিতে সেদিন আফগান রূপকথার পরিবর্তে ম্যাক্সওয়েল হয়ে ওঠে রূপকথার নায়ক। সত্যিই তো সেদিন ম্যাক্সওয়েল যে ইনিংসটা খেলেছে এই ধরনের ইনিংস রূপকথাতেই মানায়। ভারতীয় ধারাভাষ্যকর হার্ষাভোগলে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস নিয়ে বলছিলেন এটি এমন একটি ইনিংস যেটি দেখার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হবে গতকাল রাতে দারুন একটি স্বপ্ন দেখেছি। কারণ বাস্তবে যে কেউ এই ধরনের ইনিংস খেলতে পারে এটা মানুষের কল্পনাতেও ছিলো না সেদিনের। ম্যাচটা আসলেই দারুন উপভোগ্য হয়েছিলো। আশাকরি বিশ্বকাপে পরবর্তীতে এমন আরো উপভোগ্য ম্যাচ দেখতে পাবো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শুধুমাত্র আপনার ক্ষেত্রে নয় ভাইয়া এটা প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রেই যেন একটা স্বপ্নের মত। এমন সুন্দর খেলা এর আগে কেউ দেখেছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তানের এই খেলাতে ম্যাক্সওয়েল যা দেখিয়েছে সেটা সত্যিই প্রত্যেকের মনে থাকবে সারা জীবন।
এই ম্যাচটি আজীবন মনে রাখবে ক্রিকেট ভক্তরা। ওয়ার্ল্ড কাপের মঞ্চে ম্যাক্সওয়েল এর এমন অবদান অস্ট্রেলিয়ানরা সবসময়ই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। কারণ ম্যাক্সওয়েল একজন যোদ্ধা এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। পায়ের এমন ব্যথা নিয়ে এমন দুর্দান্ত শট গুলো দেখে চোখ দুটি একেবারেই জুড়িয়ে গিয়েছিল। যেভাবেই ব্যাট চালাচ্ছিল সেটাই বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি হয়ে যাচ্ছিল। একেবারে স্বপ্নের মতো একটি ইনিংস দেখলাম ম্যাক্সওয়েল এর কাছ থেকে। দলীয় ৯১ রানে যখন ৭ উইকেট পড়ে যায়, তখন ভেবেছিলাম ১৫০ রানের আগেই মনে হয় অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয়ে যাবে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।