জীবনে প্রথম ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে এবার যাত্রার নয় দিন আগেই ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছিলাম। যদিও ট্রেনের যেই সিটে ভ্রমণ করতে চেয়েছিলাম সেটার টিকিট পাইনি। তারপরেও যেহেতু ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে মাত্র দু ঘন্টা সময় লাগে তাই সাধারণ সিটের টিকেট পেয়ে সেটাই কেটেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৩০ তারিখ এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পরিবার নিয়ে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলাম। যদিও জানতাম আমাদের দেশের রেলের সুনাম অনুযায়ী ট্রেন কিছুটা লেটে আসবে। তবে সেদিন কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১০ মিনিট পরেই স্টেশনে চলে এসেছিলো। শুনেছিলাম ট্রেন স্টেশনে খুব বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। সেজন্য কিছুটা তাড়াহুড়ো করে পরিবার নিয়ে ট্রেনের যেই বগিতে আমাদের সিট ছিল সেটাতে উঠে বসলাম।
তবে সেখানে উঠতে গিয়ে ব্যাপক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিলো। কারণ সেই কম্পার্টমেন্টটা ছিলো রীতিমতো লোকজনে ঠাসা। এই অবস্থা দেখে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো কেন যে শুধু শুধু ট্রেনের টিকেট কাটতে গেলাম? কারণ এই ভিড় ঠেলে নিজেদের সিটে গিয়ে বসা রীতিমতো যুদ্ধ করার সামিল মনে হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত যখন নিজেদের সিটের কাছে পৌঁছলাম সেখানে দেখি স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরা বসে রয়েছে। যদিও তাদেরকে প্রথমে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম একজন মহিলা বাচ্চা কোলে বসে রয়েছে। যার ফলে তাকে উঠানো আমার কাছে খুব একটা সমীচীন মনে হোলো না। তবে তার পাশের যে পুরুষযাত্রী বসেছিলো তাকে উঠিয়ে সেখানে আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাকে বসার ব্যবস্থা করে দিলাম। আর সেই পুরুষ লোকটাকে আমি একটু রাগারাগি করলাম যে কেনো তারা স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে অন্যের সিটে বসে ভ্রমণ করছে?
যাইহোক শেষ পর্যন্ত ট্রেন যখন চলতে শুরু করলো তখন আশেপাশের যাত্রীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো। অনেকেই ট্রেনের এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করছিলো। এর ভিতর যখন ট্রেনের টিটি এলো টিকেট চেক করতে। তখন আমি তাদেরকে বললাম আপনাদের শুধু কি টিকেট বিক্রি করেই দায়িত্ব শেষ ? তারা বললো কেনো কি হয়েছে ? তখন আমি বললাম এই যে এখানে অনেক যাত্রি স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটে সিটে বসে রয়েছে। এগুলো তো আপনাদের দেখার দায়িত্ব আমরা কেনো যাত্রীদের সাথে ঝামেলা করতে যাবো? তখন তারা বললো কোন কোন সিটে বসে রয়েছে আমাদেরকে বলুন আমরা উঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর তারা আমাদেরকে নানা রকম কথা বলে বুঝ দিতে লাগলো। যাই হোক এইভাবে কথাবার্তা বলতে বলতে একসময় ট্রেন ভাঙ্গা স্টেশনে গিয়ে পৌঁছালো। সেখানে পৌঁছানোর পর খেয়াল করে দেখলাম সব ষ্ট্যান্ডিং যাত্রী নেমে গেলো। তারপর ট্রেন কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেলো। তখন আমরা সবাই যার যার আসনে বসে পড়লাম। ট্রেন থেকে বাড়তি যাত্রী নেমে যাওয়ার পর আর পরিবেশটা তেমন খারাপ লাগছিলো না। বরং তখন ট্রেন জার্নিটা বেশ ভালোই মনে হচ্ছিলো। জীবনের প্রথম ট্রেনে করে ঢাকা যাচ্ছিলাম। এটা অনেকটা আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো। অনেকদিন আগে থেকেই মনে হতো যদি আমরা ট্রেনে করে ঢাকা যেতে পারতাম। তাহলে কতোই না ভালো হোতো। কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই কোনো ফেরি বা লঞ্চ পার হতে হবে না। নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে খুব অল্প সময়ে ঢাকা চলে যেতে পারতাম। শেষ পর্যন্ত যখন সেই স্বপ্নটা পূরণ হোলো সেই অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম ছিলো।
তবে যে ট্রেনটাতে করে আমরা ঢাকা গিয়েছিলাম সেটার অবস্থা একেবারেই খারাপ ছিলো।সেই মান্ধাতা আমলের একটা ট্রেন দেখলেই বোঝা যায় ট্রেনটার বয়স হয়েছে অনেক। তাছাড়া ট্রেনটা চলেছেও বেশ আস্তে। ট্রেনটা যদি দ্রুত গতিতে চলতো তাহলে আমরা এক থেকে দেড় ঘন্টার ভিতরে ঢাকা পৌঁছে যেতে পারতাম। তবে আশা করি ভবিষ্যতে সরকার আমাদের এদিকের জন্য আলাদা করে একটা নতুন ট্রেন দেবে। তাহলে আমরা খুব অল্প সময়ে এবং ঝামেলা বিহীনভাবে ঢাকায় আসা যাওয়া করতে পারবো। শেষ পর্যন্ত আমরা নির্ধারিত সময়েই ঢাকায় পৌঁছে ছিলাম। কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেন পৌঁছানোর পর আমরা ট্রেন থেকে নেমে আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। তবে যাওয়ার পথে চিন্তা করছিলাম যদি আমাদের সিটটা অন্য কোনো কম্পার্টমেন্টে হোতো তাহলে হয়তো জার্নিটা আরো আরামদায়ক হোতো। তাই মনে মনে পরিকল্পনা করলাম যাওয়ার সময় চেষ্টা করতে হবে ট্রেনের ভালো কোন কম্পার্টমেন্টে জার্নি করতে।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ট্রেন জার্নি আমারও ভীষণ পছন্দ। তবে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে এতো বেশি মানুষ থাকলে বিরক্ত লাগে। যাইহোক অবশেষে তাহলে আপনার স্বপ্ন সত্যি হলো ভাই। কারণ অনেকদিন আগে থেকেই আপনার ইচ্ছে ছিলো ট্রেনে চড়ে ঢাকা আসবেন। যদিও জার্নিটা ততোটা আরামদায়ক হয়নি আপনাদের। আশা করি ফরিদপুর যাওয়ার সময় ভালো কম্পার্টমেন্টে বসে যেতে পারবেন। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
ট্রেনে জার্নি আমার ও ভীষণ পছন্দ। আমি বেশ অনেক আগে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ ইনজয় করেছিলাম। আপনি ট্রেনে যেতে নয় দিন আগেই টিকিট করে রেখেছিলেন।আপনার অনুভূতি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনার ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়েছে জেনে ভীষণ আনন্দ লাগলো ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
আমারও ট্রেনে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল, বেশি দূর যেতে পারিনি গাজীপুর গিয়েছিলাম, আমি সেদিনই কানে ধরেছি আমি আর কখনো লোকাল ট্রেনে উঠবো না। আমি অনেক জানি করতে পারি কিন্তু ঐদিন এত মানুষ মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিলাম সাথে ছিল গিটার আমার এত কষ্ট হয়েছে। ট্রেন থেকে যখন নামলাম তখন রীতিমতো আমরা ঘামে গোসল করে ফেলেছি আমি আর ট্রেনে ওঠেনি 😅😅