ধ্বংসের মুখে পৃথিবী।

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


এ বছর হঠাৎ করে আবহাওয়ার কোনো হিসেবেই মিলাতে পারছি না। মাঝে মাঝেই দেখছি আবহাওয়া কেমন উল্টোপাল্টা আচরণ করছে। আষাঢ় মাসে যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো সেই মাসটা প্রায় বৃষ্টি ছাড়াই কেটে গেলো। শ্রাবণের শেষের দিকে শুরু হলো ব্যাপক বৃষ্টি। এখন বছরের এই সময়টাতে গরম কমে যাওয়ার কথা। আর কিছুদিন পর থেকেই হালকা শীতের অনুভূতি হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েকদিনের আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে এটা মনে হচ্ছে আষাঢ় বা শ্রাবণ মাস। দু-তিন দিন ধরে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে রয়েছে। মাঝেমাঝেই দু এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। আজকে দুপুরে তো রীতিমতো মুষলধারে বৃষ্টি হোলো এক দফা। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি আরও হতে পারে। বৃষ্টির সাথে ছিল দমকা বাতাস। মনেই হচ্ছে না আর কিছুদিন পরই শীতের আগমন ঘটবে।

IMG_20230919_150252.jpg

তবে এগুলো কি একেবারেই আচমকা এসে পড়েছে? ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তেমন না। গ্লোবাল ওয়ার্মিং শব্দটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু সেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব যে এত দ্রুত আমাদের জীবনে এসে পড়বে এটা কখনো চিন্তা করিনি। একটা সময় মনে করতাম গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাবে শুধু আমাদের মত অনুন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার উন্নত রাষ্ট্রগুলোও এর প্রভাবমুক্ত নয়। তবে এটাতো কেবল শুরু। সামনের বছরগুলো থেকে আমাদেরকে আরো ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। যার ফলে এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। আবার এদিকে ব্রাজিল তার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিশাল অংশ ইতিমধ্যে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। সেখানে তারা নানারকম বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।


যেদিকে তাকাই শুধুই ধ্বংসের খবর। আশা জাগানোর মত কোন খবর কোথাও দেখতে পাই না। বিশ্ব নেতারা সবাই ব্যস্ত কিভাবে তারা আরো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারে আরো ক্ষমতাবান হতে পারে সেই প্রতিযোগিতা নিয়ে। কিন্তু এদিকে আমাদের একমাত্র বাসস্থান পৃথিবী নামক এই গ্রহটাকে যে আমরা তিলে তিলে ধ্বংস করে ফেলছি সেদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রতিনিয়ত আমরা সমুদ্র দূষণ, নদী দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, ভূগর্ভস্থ খনিজের অতিমাত্রায় উত্তোলন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিমাত্রায় ব্যবহার করে পৃথিবীর ধ্বংসটাকে ত্বরান্বিত করছি। অথচ আমরা এটা চিন্তা করছি না এই পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে গেলে আমরা কোথায় থাকবো আমরা কিভাবে বাঁচবো?


দুদিন আগে আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ইউটিউবারের একটি ভিডিও দেখছিলাম। তিনি ইন্ডিয়ান একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। যদিও তিনি ইন্ডিয়াতে থাকেন না। তার নাম ধ্রুব রাঠি। তিনি ইন্ডিয়ার নদী দূষণের একটা ভয়াবহ চিত্র তার কন্টেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তার ভিডিওর সাথে আমি বাংলাদেশের প্রচুর মিল দেখতে পেলাম। ইন্ডিয়াতে যেভাবে দূষণের মাধ্যমে নদীগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থাও একই রকম। নদীর উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই টাকাগুলো কোন কাজেই লাগছে না। কারণ নদীতে অপরিশোধিত ফ্যাক্টরি এবং মনুষ্য বর্জ্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে কোটি কোটি লিটার। যার ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে নদীর পানিটা রীতিমতো বিষাক্ত পানিতে পরিণত হয়েছে। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছে যে সেই নদীগুলোতে এখন মানুষ গোসল পর্যন্ত করতে পারেনা।


অথচ ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মানুষের জীবনের উপরে নদীর প্রভাব অনেক। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোটিকোটি মানুষ এই নদীর উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য। আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি আমার মত অতি সাধারণ একজন মানুষ এগুলো নিয়ে চিন্তা করছে। অথচ যারা চিন্তা করলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতো তাদের ভেতরে কোনরকম সচেতনতা নেই। তারা শুধু মুখে বড় বড় বুলি ফোটাতে ব্যস্ত। কিন্তু পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে কাউকেই আগ্রহী মনে হচ্ছে না। এখন মনে হচ্ছে অন্যের দিকে না তাকিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষকে এই বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আর সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে সবার দেশের সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে। না হলে অতি দ্রুত আমরা আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটাকে হারিয়ে ফেলবো। সেই সাথে নিজেরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন দাদা পৃথিবী ধবংসের দ্বার প্রান্তে। আবহাওয়ার উল্টোপাল্টা আচরণ তাই বলছে। পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরে যা বলে আসছে এখন তাই ঘটছে। কোথাও কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই পবিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায়। যা হচ্ছে তা লোক দেখানো। আপনি ঠিক বলেছেন আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে । প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা মূলক এই পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।আসুন আমাদের পৃথিবী আমরাই বাচাই।

 11 months ago 

আমরা এখন বুঝতে পারছি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ইফেক্ট। কিন্তু শুরুতেই যে এমন ইফেক্ট পড়ছে, তাহলে ১০ বছর পর কেকন অবস্থা হবে সেটা চিন্তা করে হলেও প্রত্যেকের নিজেদের অবস্থান থেকে এর পরিবর্তন করতে কাজ করা প্রয়োজন। সেটাও কি আমরা করছি?? বছরে কয়টা গাছ লাগাচ্ছি? আমরাও কি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছি না? আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কথাও চিন্তা করছি না আসলে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

খুব সত্যি কথা ভাইয়া পৃথিবী ধ্বংসের মুখে।পরিবেশ আজ বিরুপ প্রতিক্রিয়া ধারণ করেছে।আর এজন্য আমরাই দায়ী। এই পরিবেশকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।সুন্দর একটি বিষয়ে পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।

 11 months ago 

একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন ভাই বাংলাদেশে অনেক ছোট খাট নদী এখন পানিশূণ‍্য ব‍্যবহারযোগ‍্য। একশ্রেণির লোক এটা নিজের সুবিধায় ব‍্যবহার করছে আবার কেউ ইচ্ছামতো আবর্জনা ফেলছে।

আর পরিবেশের এইরকম হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনে কিন্তু আমরাই দায়ী ভাই। এই অবস্থা আমাদের ভয়ের কারণ। এখন ক্রমেই প্রকৃতি তার বিরুপ রুপ প্রদর্শন শুরু করবে।।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

দাদা আপনি বর্তমানের প্রেক্ষাপটটি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আসলে দাদা আপনি ঠিকই বলেছেন আজকে পৃথিবীটা সত্যিই ধ্বংসের দিকে। আসলে আজকে আমাদের দেশে দুর্নীতিতে ভরা কেউ কোনো কিছু উন্নয়নের কথা বলে কোটি কোটি টাকা মেরে খাচ্ছে। তাই আমরা নিজেরাই যদি নিজ স্থান থেকে সচেতন হতে পরি তবেই এই ধ্বংস থেকে কিছুটা হলে ও রেহাই পাবো। এমন সচেতনতা মূলক পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 11 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাই আমরা দিন দিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর এর জন্য প্রকৃতপক্ষে আমরা যেমন দায়ী, তেমনি বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও দায়ী। প্রত্যেকটি বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থার যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ থাকা উচিত। তবে দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হতে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি নিউযে শুনেছিলাম, যে মাটির নিচে এমন একটি মেশিন বসানো হয়েছে। যেটি দিয়ে যে কোথাও কৃত্রিম ভূমিকম্প ঘটাতে পারবে। তাহলে বুঝেন এখন নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনছে। যাইহোক ভাই খুব ভালো লাগলো আপনার ব্লগটি পড়ে ধন্যবাদ।

 11 months ago 

এখনকার আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে বর্ষাকাল চলছে। বাহিরে বের হয়ে শান্তি পাই না। কিছুক্ষণ রোদ থাকে,আবার কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়। ৩/৪ দিন ধরে মাঝেমধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে আমাদের এখানে। ৩ দিন আগে বাহিরে থাকা অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম। তাই সর্দি লেগে গিয়েছে। যাইহোক গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে বর্তমানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরো কয়েকবছর পরে যে কি হবে সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে। তবে এখনই কিছু করার সময়। নয়তো ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। যাইহোক চমৎকার লিখেছেন ভাই। সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59596.75
ETH 2659.83
USDT 1.00
SBD 2.45