রিভেইরা লাউঞ্জে ভরপেট খাওয়া দাওয়া।
আমি সহ আমার পরিবারের সকলেই বাইরে খাওয়া-দাওয়া করতে খুবই পছন্দ করে। সামনে যেহেতু রমজান মাস তাই সেদিন পরিবারের নিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম রেস্টুরেন্টে হালকা কিছু খাওয়া-দাওয়া করতে। গত পরশুদিন আমাদের ভেতর কথা হচ্ছিলো। হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল এই মাসের শুরুর দিকে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম খাওয়া-দাওয়া করতে। সেখানকার খাবারের সাদ আর পরিবেশ দুটোই আমাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছিলো। তাই সেখানে বসেই পরিকল্পনা করেছিলাম একদিন সন্ধ্যার পরে সেই রেস্টুরেন্টে আবার যেতে হবে।
যখন এই কথা আমরা আলোচনা করছিলাম গত পরশুদিন। তখন মনে পড়ে গেল আর মাত্র একদিন বাদেই তো রমজান মাস শুরু হবে। তাহলে আগামী এক মাসের ভেতর আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া হবে না। কারণ রমজান মাসে আমার রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করতে খুব একটা ভালো লাগে না। দিনভর রোজা থাকার পরে ইফতারের পর একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিলে ভালো লাগে। সেজন্য আমার রেস্টুরেন্টে খুব একটা ইফতার করা হয় না। এই কারণে আমি আর আমার স্ত্রী দুজনে মিলে ঠিক করলাম তাহলে চলো সন্ধ্যার পরে গিয়ে সেই রেস্টুরেন্ট থেকে হালকা খাওয়া-দাওয়া করে আসি। পরিকল্পনাটি দুজনেরই পছন্দ হলো। আর আমার মেয়ে তো শোনার সাথে সাথেই খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। তার রেস্টুরেন্টের খাবার ছাড়া এখন বাড়ির খাবার খুব একটা ভালো লাগে না। যদিও এটা নিয়ে এখন বেশ সমস্যা ফেস করছি।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা হলো। আমরা বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে শহরের ভেতরে একটি লেক আছে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো। তারপর সেখান থেকে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে তারপর বাসায় ফিরব। কিন্তু বাসা থেকে বের হতে হতে বেশ দেরি হয়ে গেলো। যার ফলে লেকের পাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনাটা আপাতত স্থগিত করতে হলো। চিন্তা করলাম রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে যদি হাতে সময় থাকে তখন লেকের পাড়ে যাওয়া যাবে। মাগরিবের নামাজের পরে আমরা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।
আমাদের শহরটি একেবারেই ছোট একটি শহর। যার ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। আর বর্তমানে সব ইঞ্জিন চালিত রিকশা হওয়ার কারণে সময় এখন আরো কম লাগে। যার ফলে বাসা থেকে বের হয়ে অল্প সময়ে আমরা সেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। তবে আগে থেকে যেটা অনুমান করেছিলাম সেটাই সত্যি হলো। রাতের বেলা রেস্টুরেন্টটি বাইরে থেকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছিল। রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলাম সেখানে বেশ কিছু কাস্টমার বসে রয়েছে। কেউ খাচ্ছে আর কেউ খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা বসার কিছুক্ষণ পরে একজন ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিলাম। কি কি খাব সেটা আগে থেকেই মোটামুটি ঠিক করে গিয়েছিলাম। যার ফলে আমাদের খাবার অর্ডার করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। আমরা অর্ডার করেছিলাম মেক্সিকান নাচোস, মিট ব্লাস্ট মিটবক্স, চিকেন সিজলিং চাউমিন আর সাথে ড্রিংকস। যাইহোক খাবার অর্ডার দিয়ে আমরা বসে নিজেদের ভেতর গল্প করছিলাম। এর ভিতরে এক ফাঁকে উঠে রেস্টুরেন্টের বাইরের একটা সাইড থেকে ঘুরে এলাম। আমরা যেখানে বসেছিলাম সে জায়গাটা গ্লাস দিয়ে ঘেরা ছিল। ভেতরে এসি থাকার কারণে বেশ আরামদায়ক পরিবেশ ছিল। কিন্তু বাইরের জায়গাটা একটু খোলামেলা। ঠিক নদীর লাগোয়া হওয়ায় সেই জায়গা থেকে বর্ষাকালে নদীর বেশ চমৎকার একটা ভিউ পাওয়া যাবে। যদিও এখন নদীতে পানি না থাকায় সেখানে কোন লোক বসেনি। তাছাড়া অন্ধকারের জন্য নদীটা দেখাও যাচ্ছিল না।
যাইহোক আমরা খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়লাম। এই রেস্টুরেন্টের সবকিছুই আমাদের ভালো লেগেছে। শুধু খাবার সার্ভ করতে দেরি করার ব্যাপারটা বাদে। এর ভেতর আমার মেয়ে বারবার আমার কানের কাছে এসে বলছিল বাবা খাবার দিতে আর কতক্ষণ সময় লাগবে? আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমি ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম আর কত সময় লাগবে খাবার দিতে? সে বলল স্যার আর একটু বসুন। অল্প সময়ের ভেতরেই আমরা খাবার পরিবেশন করছি। এই কথা বলার ৮ থেকে ১০ মিনিটের ভেতরে তারা সব খাবার একসাথে পরিবেশন করলো।
যদিও আমি বলেছিলাম যে খাবারটা আপনারা তাড়াতাড়ি পরিবেশন করতে পারবেন। সেটা আগে দিন। যাই হোক খাবার টেবিলে আসার পরে আমরা কয়েকটা ছবি তুলে তারপর খাওয়া শুরু করলাম। প্রথমে মনে করেছিলাম এই খাবারে আমাদের হয়তো পেট ভরবে না। তবে যখন খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম তখন দেখি আর কারো পেটে জায়গা নেই। প্রথমে আমরা খাওয়া শুরু করেছিলাম মেক্সিকান নাচোস। এই খাবারটি আমার আর আমার মেয়ের কাছে বেশ ভালো লেগেছিল। যদিও আমার স্ত্রীর মুখ দেখে মনে হল তার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি খাবারটা। তারপরে আমরা খাওয়া শুরু করলাম মিটবক্স। এই খাবারটা আমাদের সকলেরই বেশ পছন্দ হয়েছিল। মিট বক্সের ভেতরে ছিল বেশ কিছুটা বোনলেস চিকেন, চিকেন সসেজ আর ওয়েজেস। সাথে দারুন মজার একটি সস দেয়া ছিল। সবকিছু মিলিয়ে খাবারটা দারুন ছিলো। তবে সবচাইতে মজা লেগেছে আমার কাছে সিজলিং চাওমিনটা। এই খাবারটি এর আগেও আমি একবার এই রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়েছি। সেই খাবারটি অত্যন্ত মজা লাগার কারণে আমরা আবার খাবারটি অর্ডার করেছিলাম। এই সিজলিং চাউমিন আমাদের সকলের কাছেই বেশ মজা লেগেছিলো।
কথায় আছে না পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। বেশ মজা করে পেট ভরে খাবার খাওয়ার কারণে আমরা সকলেই তাদের দেরিতে খাবার পরিবেশন করার ব্যাপারটা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে সবাই বেশ রিলাক্স মুডে ছিলাম। অবশ্য খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আর সেখানে খুব একটা দেরি করতে পারিনি। কারণ ততক্ষণে বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা তাড়াতাড়ি বিল মিটিয়ে সোজা বাড়ির পথে রওনা হলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | চর কমলাপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন পরিবার নিয়ে পড়ে ভাল লাগলো। আর রোজা রেখে এত মজার মজার খাবার দেখলে কেমন লাগে বলেন??😔খুব সুন্দর ছিল আপনার খাবারের রিভিউ।এত মজার খাবার খেয়ে তাদের দেরি করে খাবার সার্ভ করার বিষয়টি একেবারেই ভুলে গেলেন।খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।
খাবারগুলো শুধু দেখতে না খেতেও অনেক মজার ছিলো। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইয়া, রেস্টুরেন্ট যতই সৌন্দর্যময় কিংবা ভালো হোক না কেন খাবারের অর্ডার করার পরে খাবার দিতে যদি দেরি করে সেটা খুবই বিরক্তিকর লাগে। যাহোক শেষ পর্যন্ত অনেক সুস্বাদু খাবার খেয়ে পেট ভরপুর করেছেন। আর খাবারে পেট ঠান্ডা থাকলে দুনিয়াটা এমনিতেই ঠান্ডা মনে হয়।
ক্ষুদা পেটে খাবারের জন্য অপেক্ষা করা আসলেই খুব কষ্টের। তবে খাবার খাওয়ার পরে সব কিছুই ভুলে গিয়েছিলাম।