সীমাহীন ভোগান্তির সমাপ্তি।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


বেশ কিছুদিন থেকেই পরিকল্পনা করছিলাম ঢাকা যাওয়ার জন্য। অবশ্য ঘোরার জন্য নয় ব্যক্তিগত একটি জরুরী কাজে ঢাকা যাওয়ার খুবই প্রয়োজন ছিলো। প্রথমে পরিকল্পনা করেছিলাম ২৯ তারিখে ঢাকা গিয়ে দুই তিন দিন থেকে সব কাজ শেষ করে আসবো। যদিও কাজ খুব বেশি সময়ের নয়। এর ভিতরে সেদিন যখন বন্ধু রাফসানের শোরুমে গিয়েছিলাম আড্ডা দিতে। ও কথায় কথায় জানালো কয়েকদিন আগে ও ঢাকায় গিয়েছিল একটি কাজে। সকালে গিয়ে কাজটি শেষ করে বিকালের ভেতর বাড়ি ফিরেতে পেরেছিলো ও।কথাটি শোনার পর আমারও মনে হল তাহলে আমি শুধু শুধু ঢাকা গিয়ে ২-৩ দিন বসে থেকে লাভ কি? একবার চেষ্টা করে দেখি না এভাবে দিনে দিনে কাজ করে ঢাকা থেকে ফিরে আসা যায় কিনা।

Polish_20230530_213306114.jpg

সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আজ সকাল সাড়ে আটটার বাসে ঢাকায় রওনা দিয়েছিলাম। ঢাকা পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছিলো। সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা পৌঁছে আমি সরাসরি আমার কাজের জায়গায় গন্তব্যে চলে গিয়েছিলাম। তারপর সেখানে বেশ কিছুক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। মোটামুটি ঘন্টা দুয়েকের ভেতর আমি আমার সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এই সামান্য সময়ে কাজ শেষ করতে গিয়ে আমার অবস্থা হয়েছিল ভয়াবহ। আজকে এতটাই গরম পড়েছিল যে এক মিনিটও বাইরে থাকা কষ্টকর মনে হচ্ছিলো। আমি ঢাকা পৌঁছানোর পর থেকে একটু পর পর ঘামে আমার শরীর ভিজে যাচ্ছিল। কিন্তু কি আর করা যেহেতু জরুরী কাজে গিয়েছি তাই গরম লাগলেও কিছু করার নেই।

এর ভেতরেই আমার কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষ করার পর একটি জায়গা থেকে হালকা কিছু খাবার খেয়ে খাবার ফিরতি পথ ধরেছিলাম। আমার ফেরার বাসের সময় ছিল বেলা একটা পাচ্চল্লিশ মিনিট। তবে প্রচন্ড এই গরমের ভিতরে আমার ইচ্ছা ছিল এসি বাসে আসার। কিন্তু কাউন্টারে পৌঁছে শুনি আমি কাউন্টার পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই তাদের দুপুরের একমাত্র এসি বাসটি ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রচন্ড গরমে নন এসি বাসে আসতে একেবারে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু আমি যদি তখন এসি বাসের সন্ধানে বের হতাম তাহলে আমাকে আবার সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে গুলিস্তানে আসতে হতো। আমি আর সেই ঝামেলাতে যাইনি।

চিন্তা করেছিলাম বাড়ি পৌঁছতে মাত্র তো ঘন্টা দুয়েক লাগবে তাই কষ্ট করে এখন নন এসি বাসেই চলে যায়। যদিও তাদের কাউন্টারে যেখানে বসার ব্যবস্থা সেখানটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ছিলো। সেখানে বসে বসে আমি পুরনো দিনের কথা মনে করছিলাম। আগে একটা সময় ছিল যখন সকালে বাড়ি থেকে বের হলে ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছতে আমাদের দুপুর পার হয়ে যেতো। অথচ রাস্তা ছিল মাত্র ১৩০ কিলোমিটার। কিন্তু এই পথটা পার হতেই আমাদের পুরো দিনটা প্রায় শেষ হয়ে যেত। কতদিন এমন হয়েছে বাড়ি থেকে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছি। খুব ভয়ে থাকতাম যে ফেরিঘাটে জ্যাম আছে কিনা। সেটা নিয়ে থাকতো আমাদের সবচাইতে বেশি টেনশন। একবার ফেরিঘাটের সিরিয়ালে পড়লে কয়েক ঘন্টা সময় সেখানেই নষ্ট হতো।

তখন শুধু মনে মনে চিন্তা করতাম যে কখনো কি আমাদের এই ভোগান্তির অবসান হবে? পদ্মা সেতু যখন শুরু হয়েছিল তখন ও আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে এই সেতুটা আমাদের জন্য এতটা আশীর্বাদ স্বরূপ হবে। যে ঢাকায় যেতে আমাদের প্রায় পুরো দিনটা নষ্ট হত এখন সেখানে আমরা সকালে গিয়ে কাজ শেষ করে দুপুরের ভিতর বাড়ি ফিরতে পারি। আজকে এত দ্রুত বাড়ি ফিরতে পেরে আমার যে কেমন অনুভূতি হয়েছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একেবারেই পছন্দ করি না। কারণ তাদের ভিতরে শতকরা ৯৯ ভাগ থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত।

তবে আজকে পদ্মা সেতু দিয়ে এত দ্রুত বাড়ি ফিরতে করার কারণে মনে হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি ধন্যবাদ দেই। কারণ এই পদ্মা সেতু টা আমাদের দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো। আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হয়েছে এই পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে। একটা সময় ঢাকা যাওয়ার জন্য আমাদেরকে কি নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেটাই কাউন্টারে বসে বসে চিন্তা করছিলাম। পত্রিকায় এমনও খবর পড়েছি যে এম্বুলেন্সে করে ক্রিটিকাল কন্ডিশনের রোগী নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু ফেরিঘাটের জ্যামে পড়ার কারণে রোগী পথেই মারা গিয়েছিল। এমন আরো কতশত ঘটনা সাক্ষী হয়েছি আমরা। কিন্তু আজ আমাদের এলাকা থেকে ঢাকা যেতে গেলে একেবারেই সময় লাগে না। আমি আমার জীবনে কখনো ঢাকা গিয়ে একদিনেই ফিরে আসিনি। আমি ঢাকা যাব এই খবর শোনার পর থেকে আমার বোন বারবার আমাকে বলছিল তার বাসায় যেতে। কিন্তু আমি এই অভিজ্ঞতাটা নেয়ার জন্যই এবার আর তার বাসায় যেতে রাজি হয়নি। দারুন এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এবার বাড়ি ফিরেছি।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আসলেই পদ্মাসেতু দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ। আপনার পোস্ট পড়েই আমি বুঝতে পেরেছি, আপনি যখন পদ্মাসেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছিলেন,তখন আপনার অনুভূতিটা কেমন হয়েছিল। আসলে এমন ছোটখাটো অনুভূতি গুলো আমাদের মনটাকে একেবারে প্রফুল্ল করে তোলে। সকালে রওনা দিয়ে কাজ শেষ করে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরেছেন। একদিনের মধ্যেই সব কাজ কমপ্লিট। এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 61797.74
ETH 2429.84
USDT 1.00
SBD 2.64