হার না মানার গল্প (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


সাফি সরাসরি হোটেলের মালিকের কাছে গিয়ে বললো তার একটি কাজ খুব প্রয়োজন। সে সমস্ত কিছু হোটেলের মালিককে খুলে বললো। হোটেল মালিক তখন তার কাছে তার ঠিকানা জানতে চাইলো। পরে সাফি তাকে সবকিছু খুলে বললো। তখন হোটেলের মালিক তাকে বলল আচ্ছা তুমি তাহলে আজকে থেকে কাজ শুরু করো।প্রথম দুইদিন তোমার কাজ দেখবো। যদি কাজ ভালোভাবে করতে পারো তাহলে কাজটা তোমাকে দেয়া যাবে। সাফি প্রচন্ড খুশি হল চাকরিটা পেয়ে। হোটেলের মালিককে ধন্যবাদ দিল তাকে চাকরিটা দেয়ার জন্য। তারপর তার ব্যাগটা হোটেলের এক কোনায় রেখে সাথে সাথেই সে কাজে লেগে পড়লো।

Polish_20220703_213230651.jpg

কিছুক্ষণ পর হোটেলের মালিক তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো সারাদিন কিছু খাওয়া-দাওয়া করেছে কিনা। তখন সাফি তাকে জানালো গতকাল থেকে সে অভুক্ত অবস্থায় আছে। কথাটি শুনে হোটেল মালিকের খুব খারাপ লাগলো। সে তখন সাফিকে বলল তুমি এখন বসো। আগে খাওয়া দাওয়া করে নাও তারপর কাজ করবে। সাফি তাকে বললো থাক আমি একবারে কাজ শেষ করে তারপর খাবো। হোটেলের মালিক তখন তাকে ধমক দিয়ে খেতে বসতে বললো। প্রায় দেড় দিন পর সাফির সামনে খাবার এসেছে। সাফি সামান্য একজন কর্মচারী হলেও দেখতে পেল তার সামনে মাছ-মাংস দু রকমের আইটেম রাখা আছে খাওয়ার জন্য। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার ফলে সে গোগ্রাসে খেতে লাগলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সে মন থেকে হোটেল মালিকের জন্য অনেক দোয়া করলো।

তারপর আবার কাজে লেগে পরলো। শাফি মনে মনে ঠিক করেছে সে খুব ভালোভাবে এখানে কাজ করবে যাতে হোটেল মালিক তার কাজে তার উপর খুশি হয়। সাফির প্রচন্ড পরিশ্রম করা দেখে অল্প সময়ে সে হোটেল মালিকের খুব আস্থাভাজন হয়ে উঠলো। সে সেখানে কাজ শুরু করেছিলো ওয়েটার হিসাবে। হোটেল মালিক তাকে কয়েক মাস পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ দিলো। এভাবে শাফি সেখানেও ভালোভাবে কাজ করতে থাকলো। এর ভিতর হোটেল মালিকের সাথে তার অনেক সখ্যতা হয়েছে। সাফির সততা এবং পরিশ্রমে খুশি হয়ে হোটেল মালিক সাফিকে হোটেলের ম্যানেজার বানিয়ে দিলো।

এভাবে সাফির দিনকাল ভালোই চলছিলো। দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে গেলো। সাফি এখন হোটেল ব্যবসার অনেক কিছুই শিখে ফেলেছে। এদিকে হোটেল মালিকের বয়স হয়ে যাওয়ায় সে আর এখন হোটেলে খুব একটা আসে না। সবকিছু সাফিকেই সামলাতে হয়। এর ভিতর হোটেলে মালিক খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। যার ফলে হোটেলের সমস্ত টাকা পয়সা মালিকের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হতে লাগলো। দেখতে দেখতে হোটেল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। সাফি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সে চিন্তা করছিলো হোটেল বন্ধ হয়ে গেলে সে কি করবে?

এখানে তার দিনকাল বেশ ভালোই কাটছিলো। এর ভিতরে হঠাৎ হোটেল মালিক মারা গেলো। হোটেল মালিক মারা গেলে তার পরিবার হোটেল চালাতে অস্বীকৃতি জানালো। এমনকি তারা হোটেল কর্মচারীদের পাওনা বেতনও দিলো না। তারা সবাইকে অপবাদ দিল যে তারা হোটেলের টাকা মেরে খেয়েছে। এই বলে সবাইকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো। আর হোটেলের মালপত্র সব অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দিলো। এতদিন শাফি এই হোটেলে প্রায় মালিকের মতোই ছিলো। এখন হঠাৎ করে সেখান থেকে চাকরি যাওয়ার ফলে সে অন্য হোটেলে গিয়ে চাকরি করতে চাইছিল না।

তার মাথায় ঘুরছিল নিজে থেকেই কিছু একটা করবে সে। তার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। এতোদিন কাজ করে সে যে টাকা পেয়েছে প্রায় সব টাকাই জমিয়েছে। কিন্তু সেই টাকায় কোন দোকান বা হোটেল দেওয়া সম্ভব না। তাই সে চিন্তা করছিল কি করা যায়? সে বিকাল বেলায় রাস্তা দিয়ে হাটছিলো আর চিন্তা করছিলো যে কি করা যায়? সাফি হঠাৎ দেখতে পেলো একলোক ফুটপাতে বসে ভাজাপোড়া বিক্রি করছে। অনেক লোকজন সেগুলো কিনে খাচ্ছে। এই লোকটির খাবার যে বেশ জনপ্রিয় সেটা লোকজনের ভীড় দেখে বোঝা যাচ্ছে। সাফি সেখান থেকে কিছু কিনে খেয়ে দেখলো। হঠাৎ করে তার মাথায় বুদ্ধি এলো সে ও এরকম কোন একটি জায়গায় ফুটপাতে একটি ভাজাপোড়ার দোকান দেবে।

চিন্তাটি মাথায় আসা মাত্রই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল এই কাজটি সে করবে। কিন্তু কোথায় দোকান দেয়া যায় সেটা চিন্তা করতে লাগলো। পরে তার মনে পড়ল সে যে এলাকায় আছে। সেই এলাকায় ভাজাপোড়ার তেমন কোন দোকানপাট নেই। সেখানেই কাউকে বলে ফুটপাতে সে একটি ভাজাপোড়ার দোকান দেবে। সেখানে এক মুদি দোকানদার আছে তার খুব পরিচিত। যার সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক। সাফি দোকানদারকে বললো আপনার দোকানের সামনে আমি একটি ভাজাপোড়ার দোকান দিই। তাতে আমারও ব্যবসা হবে। আবার আপনার দোকানের বিক্রিও বাড়বে। সেই দোকানদারের বুদ্ধিটি পছন্দ হলো। সে সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো।

সাফি পরদিন প্রয়োজনীয় সমস্ত সমস জিনিসপত্র কিনে নিয়ে এলো। দুই-তিন দিনের ভিতরে সবকিছু গুছিয়ে শাফি তার ভাজাপোড়ার দোকান শুরু করে দিলো। যেহেতু তার বাবুর্চির কাজ জানা আছে। সে সেই অভিজ্ঞতাটি কাজে লাগালো। অল্প সময়ে তার ভাজাপোড়ার দোকানের সুনাম চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো। বছর খানেকের ভিতরে সাফি ফুটপাত থেকে নিজে একটি ছোট হোটেল দিলো। সেখানে তার ব্যবসা বেশ জমে উঠেছিলো। আস্তে আস্তে করে তার হোটেলটি বড় হতে থাকলো। তার বেচা বিক্রিও বাড়তে থাকলো। এভাবে দেখতে দেখতে কয়েক বছরের ভেতরে শাফি বড় একটি হোটেলের মালিক হয়ে উঠলো।

এরপর একটি থেকে দুটি দুটি থেকে তিনটি এভাবে করে সাফি সেই শহরে প্রায় চার-পাঁচটি হোটেলের মালিক হয়ে গেলো। একদিন অবসর সময়ে বসে সাফি চিন্তা করছিলো। বাড়ি থেকে বের হয়েছে সে আজ প্রায় ১৪ বছর হলো। আর কোনদিন সে বাড়িতে ফিরে যায়নি। এখন মাঝে মাঝে তার বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু তার ভাইয়ের সেই কথাগুলো মনে পড়ে তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা মিলিয়ে যায়। ইতিমধ্যে সাফি বিয়ে করেছে। তার সন্তান-সন্ততিও হয়েছে। সাফির এখন অনেক টাকা। সাফি শহরের উপর জায়গা কিনে বাড়ি করেছে। কিছুদিন হলো সে একটি নতুন গাড়ি ও কিনেছে। এখন সে প্রায়ই অলস সময়ে বসে বসে তার ছেলেবেলার কথা চিন্তা করে। মাঝে মাঝে তার গ্রামে গিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে সেখানকার সবাই কেমন আছে? (সমাপ্ত)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আসলে ভাইয়া কত পড়বে পড়েছিলাম সাফি হোটেলে ঢুকলো, হোটেলের মালিককে তার সকল ঘটনা শুনলে এবং তাকে কাজ করতে দিলে। সাথে দুদিন হলো খায় না, তাকে খেতে বলল আসলে এই ভাবেই হোটেলের মালিক তাকে খুবই ভালোবাসো এবং হোটেলের ভালোভাবে চলতে থাকল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হোটেল মালিক মারা যাওয়ার কারণে হোটেলের সব কিছু বিক্রি করে দেয়া হলো। চিন্তায় পড়ে গেল সে কি করবে। সে নিজে নিজেই একটি দোকান দিলো এবং একটি দোকান থেকে আরও একটি দোকানের মালিক হলো। শেষমেষ নিজের টাকা দিয়ে শহরে বাড়ি করলো এবং গাড়ি কিনেছে, পরিশ্রম এবং সততার সাথে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। এই গল্পটি দ্বারা এটাই প্রমাণ পেলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া একজন সৈনিকের গল্প লিখেছেন। ভাইয়া এরকম আমাদের মাঝে হাজারো মানুষ আছে যে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছে। তবে তার পরিশ্রম নিঃস্বার্থ সততা জন্যই সেই সব কিছু সফলতা অর্জন করেছে। আমাদের মাঝে হার না মানা গল্প শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

হার না মানার গল্প টি পড়ে এতো বেশি ভালো লাগলো যে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। সাফি চেষ্টা করেছেন সফল পেয়েছেন। সত্যিই বড় হতে হলে চেষ্টারও কোন বিকল্প নেই। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 2 years ago 

সাফি শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু গ্রামের কথা মনে পড়লেও যেতে পারছে না তার ভাইয়ের কথা ভেবে আসলে এরকমটা হয়ে থাকে। অনেক সুন্দর গল্পের সমাপ্তি দিয়েছেন। এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হার না মানা জীবনের গল্প পড়ে ভালো লাগলো। আমিও চাইছিলাম যে সাফি চাকরি টা পাক। পেয়েছে ভালো লাগলো। তবে শেষটা পড়ে আরো বেশি ভালো লাগলো। আপনার গল্পগুলো আসলে খুবই ভালো লাগে। দোয়া রইল ভাই

 2 years ago 

সাফির সততা এবং পরিশ্রমে খুশি হয়ে হোটেল মালিক সাফিকে হোটেলের ম্যানেজার বানিয়ে দিলো।

সাফি একজন সৎ মানুষ এবং পরিশ্রমী মানুষ ছিল বলেই আজ সফল হতে পেরেছে। রাগ করে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে যখন শহরে এসেছিল সে একেবারেই খালি হাতে এসেছিল। এরপর নিজের মেধা এবং পরিশ্রমে আজ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ভাইয়া আপনার লেখা এই গল্পটি ভালো লেগেছে আমার। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হার না মানার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। আমাদের প্রত্যেক উচিত জীবনের সফল হওয়ার জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং সৎভাবে এগিয়ে যাওয়া। সততা এবং পরিশ্রম মানুষকে সফলতার পথে নিয়ে যায় সেই প্রমাণটি বারবার আমরা পেয়েছি। আপনি আপনার গল্পের মাধ্যমে অনেক সুন্দর ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা উপস্থাপন করেছেন এবং শিক্ষামূলক অনেক দিক তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। ♥️♥️♥️

 2 years ago (edited)

ভাইয়া আপনার গল্পটি শেষ পর্যন্ত আজ পড়েই ফেললাম। আমি বাস্তবেও এমন অনেক ঘটনার কথা জানি। একসময় অপমান অপদস্ত হয়ে গ্রাম ছেড়েছিল অথচ এতপরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছে পুরো গ্রাম বাসীকে দাওয়াত দিয়েছিল অনুষ্ঠান করে।
ধন্যবাদ ভাইয়া। এমন সুন্দর এবং শিক্ষামুলক গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

আমি বলবো গল্পটির একটি চমৎকার পরিসমাপ্তি হয়েছে। এবং সাফির চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে পাঠকের আকাঙ্খা পূরন হয়েছে। ধন্যবাদ ০৩পর্বের চমৎকার একটি সামাজিক গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60935.93
ETH 2645.60
USDT 1.00
SBD 2.56