দারুন উপভোগ্য পাকিস্তান বনাম সাউথ আফ্রিকা ম্যাচের বিশ্লেষণ।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে BPC Media নামক চ্যানেল থেকে
কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। কারণ মাত্র বিশ রানের মাথায় তারা তাদের ইনফর্ম ওপেনার আবদুল্লাহ শফিকের উইকেটটি হারিয়ে বসে। পরে ব্যাটিং করতে নামে বাবর আজম। এদিন তিনি দেখেশুনে খেলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার সাথে ইমামুল হকের জুটিটাও বড় হয়নি। দলীয় ৩৮ রানে ইমামুল হক আউট হয়ে যান। তিনি যথারীতি এই বিশ্বকাপে তার বাজে ফর্ম ধরে রেখেছেন। তারপর নামে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম ভরসা মোঃ রিজওয়ান। এদিন রিজওয়ান শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে থাকেন। তিনি চেষ্টা করছিলেন পাকিস্তানের রানের গতি বাড়াতে। কিন্তু এই দিন তিনিও বেশি রান করতে পারেননি। মাত্র ২৭ বলে ৩১ রান করে তিনি আউট হয়ে যান। তারপরে নামে ইফতিকার আহমেদ। কিন্তু তিনি ও তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তিনি মাত্র ২১ রান করে আউট হয়ে যান।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে BPC Media নামক চ্যানেল থেকে
তারপর খেলতে নামে পাকিস্তানের তরুণ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সউদ শাকিল। সউদ শাকিল নামার কিছুক্ষণ পরেই দলীয় ১৪১ রানে বাবর আজম আউট হয়ে যান। যদিও এদিন তার উচিত ছিলো শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দলকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই দিনও তিনি মোটামুটি ভাবে বলা চলে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও আউট হওয়ার আগে তিনি তার ৫০ রান পূরণ করেছিলেন। কিন্তু তার মত ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে সকলের আশা ছিল আরো অনেক বেশি। বাবর আজম আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার সাদাব খান। তিনি এসেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে থাকেন। সৌদ শাকিল এবং সাদাব খান মিলে বেশ দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন। একটা সময় মনে হচ্ছিলো পাকিস্তান হয়তো ৩০০ রান পেরিয়ে যাবে। কিন্তু সাদাব খান এবং সউদ শাকিল দ্রুত পরপর আউট হয়ে গেলে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৪৬ ওভার ৪ বলে ২৭০ রানে অলআউট হয়ে যায়। এবারের বিশ্বকাপে এই ধরনের স্কোর জেতার জন্য মোটেই যথেষ্ট ছিলো না। সকলে ধারণা করেছিল এই রান সাউথ আফ্রিকা খুব সহজেই অতিক্রম করে যাবে।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে BPC Media নামক চ্যানেল থেকে
কিন্তু এই দিন পাকিস্তানি বোলাররা ছিলেন অন্যরকম মুডে। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে তারা এখন পর্যন্ত খুবই বাজে বলে করেছিলেন। এ দিনের শুরুটাও খুব একটা ভালো হয়েছিলো না। তবে শাহিন আফ্রীদি তার দ্বিতীয় ওভারে কুইন্টন ডিককের উইকেটটি তুলে নিলে তখন পাকিস্তানি সমর্থকদের ভেতর আশা জাগে এবার হয়তো পাকিস্তান এইরানে লড়াই করতে পারবে। যদিও কুইনটিন ডিকক প্রচন্ড আক্রমণাত্মকভাবে শুরু করেছিলেন। তিনি শাহীন আফ্রিদির প্রথম ওভার থেকে ১৯ রান নিয়েছিলেন। দলীয় ৩৪ রানে কুইন্টিন ডি কক এর উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ভ্যানডার ডুসেন। তিনি এসে টেনডা বাভুমার সাথে ছোটখাটো একটি পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। দলীয় ৬৭ রানে সাউথ আফ্রিকা টেন্ডা বাভুমার উইকেট হারায়। তারপর ক্রিজে আসেন এইডেন মার্করাম। তিনি শুরু থেকেই দেখেশুনে বেশ দারুন খেলতে থাকেন।
দলীয় ১২১ রানে ডুসেন আউট হয়ে যান। তারপর ক্রিজে আসেন সাউথ আফ্রিকার সবচাইতে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ক্লাসেন। যদিও তিনি এসে দ্রুত আউট হয়ে যান। মূলত ক্লাসেন আউট হওয়ার পর পাকিস্তানী দলের ভেতর আত্মবিশ্বাস জেগেছিল তারা এই ম্যাচটা হয়তো জিততে পারে। কিন্তু ক্লাসেন আউট হওয়ার পর ডেভিড মিলার এসে মার্করাম এর সাথে দারুন এক জুটি গড়ে তোলেন। ২০৬ রানে মিলারের উইকেট হারানোর পর মার্করাম জেনসেন এর সাথে একটি ছোট্ট কিন্তু কার্যকর জুটি গড়ে তোলেন। জেনসেন আউট হয়ে গেলে পরবর্তীতে সাউথ আফ্রিকা দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায়। এক পর্যায়ে তাদের স্কোর হয়ে যায় ২৫০ রানে ৮ উইকেট। তখনও তাদের জেতার জন্য ২১ রান দরকার ছিলো। ২৬০ রানে হারিস রাউফের দারুন বোলিংয়ে লুঙ্গি এনগিডি আউট হয়ে গেলে সাউথ আফ্রিকা আর ও চাপে পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল পাকিস্তান হয়তো ম্যাচটা জিতে যাবে। কিন্তু কেশব মহারাজের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকা ম্যাচটি এক উইকেট হাতে রেখে জিতে যায়। এবারের বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত সবচাইতে রোমাঞ্চকর ম্যাচ হয়েছে এটি। যেই হারুক জিতুক ম্যাচটি ক্রিকেটপ্রেমীরা দারুন ভাবে উপভোগ করেছেন।
আসলে এই ধরনের ম্যাচই টুর্নামেন্ট গুলোর আসল সৌন্দর্য। এই ধরনের ম্যাচ যত বেশি হবে বিশ্বকাপটা আরো তত বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠবে। এই ম্যাচ হারের ফলে পাকিস্তান একরকম বলতে গেলে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে গেলো। এখন পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে। পাকিস্তানি বোলাররা পুরো টুর্নামেন্টে অত্যন্ত বাজে বোলিং করলেও এদিন তারা দারুণ বোলিং করেছেন। যদিও এদিনও তারা একজন ভালো স্পিনারের অভাব বোধ করেছেন। এদিন পাকিস্তান সাদাব আহমেদের কনকাসন সাব হিসাবে ওসামা মীরকে খেলিয়েছেন। তিনি একটু বেশি রান দিলেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকা ম্যাচ জিতে যায়। এই ধরনের ম্যাচে সাউথ আফ্রিকা বেশিরভাগ সময় হেরে যায়। তাই এই জয়টি সাউথ আফ্রিকার প্লেয়ারদের মনোবল আরো বাড়িয়ে দেবে। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল ইন্ডিয়ার সাথে লড়াই করার মত কোন দল নেই। তবে সাউথ আফ্রিকার খেলা দেখে মনে হচ্ছে তারাই হয়তো ইন্ডিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে। আমি তো এই বিশ্বকাপটি দারুন উপভোগ করছি। আশা করি আপনারাও আমার মত বিশ্বকাপটা উপভোগ করছেন।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া সত্যি কিন্তু পাকিস্তান বনাম সাউথ আফ্রিকার খেলাটি একটি উপভোগ্য খেলা ছিল। অবশেষে খেলাটি শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠেছিল। যদিও প্রথমদিকে মনে হয়েছিল পাকিস্তান সাউথ আফ্রিকার সাথে পাত্তাই পাবে না। তবুও অবশেষে পাকিস্তানের প্লেয়াররা উপভোগ করে তুলতে পেরেছিল খেলাটিকে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
এই ম্যাচটি দারুণ উপভোগ করেছি। এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে আসলেই খুব ভালো লাগে। আজকেও এমন একটি ম্যাচ দেখলাম অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের। যাইহোক পাকিস্তানের বোলাররা সত্যিই দুর্দান্ত বোলিং করেছে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। আমিও ভেবেছিলাম খুব সহজেই এই ম্যাচটি জিতে যাবে সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু শেষমেশ তো হারতে হারতে ম্যাচটি জিতেছে সাউথ আফ্রিকা। এবারের বিশ্বকাপে বাবর আজম এবং আফ্রিদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারছে না। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের ভেতরকার ম্যাচের শেষ অংশটুকু আমিও দেখেছি। দুর্দান্ত লড়াই করেছে নিউজিল্যান্ড। এত বড় স্কোর চেজ করতে গিয়ে তারা একটুও ঘাবড়ায়নি। তবে বরাবরের মতো তাদের কপাল খারাপ। শেষ পর্যন্ত অল্প রানের ব্যবধানে হেরে গেলো। আসলে এই ধরনের খেলা দেখার মজাই অন্যরকম। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
সত্যি ভাইয়া গত রাত্রে পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ম্যাচটি অত্যন্ত জমজমাট এবং টানটান উত্তেজনাকর একটি ম্যাচ ছিল। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার হার না মানা ব্যাটিংয়ের উপর নির্ভর করেই তারা জয় ছিনিয়ে নেয়।
গতকালকে মার্করাম ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোন ব্যাটসম্যান খুব একটা ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি। আমি তো প্রথমে মনে করেছিলাম এই ম্যাচ ৪০ ওভারের ভেতরেই সাউথ আফ্রিকা শেষ করে দেবে। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হয়। তারা যে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি নিতে পেরেছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার। তবে কেশব মহারাজকে আলাদা করে কৃতিত্ব দিতেই হবে। ঠান্ডা মাথায় সে যেভাবে ম্যাচটা বের করে নিয়েছে সেটা আসলেই প্রশংসার যোগ্য।
হ্যাঁ ভাই এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে টানটান উত্তেজনার ম্যাচ এটিই কেননা প্রতিটা ম্যাচেই অনেক ডিফারেন্সে জয় লাভ হচ্ছে। ক্রিকেটে এরকম শেষ ওভারের দিকে টানটান উত্তেজনা না হলে কি খেলা দেখে মজা হয়। যাইহোক সাউথ আফ্রিকা তাদের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
এ পর্যন্ত যতগুলো আমি বিশ্বকাপ খেলার ম্যাচ দেখছি তার মধ্যে এটাই ছিল সব থেকে আমার কাছে এক্সাইটিং একটি ম্যাচ। বলতে গেলে এই ম্যাচে কি ছিল না সব সময় টান টান উত্তেজনা। বাবারদের ভাগ্য ভালো ছিল না তাই তারা এই ম্যাচটি জিততে পারে নাই। তবে দুই দল যথেষ্ট লড়েছে। শেষ পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকা এক উইকেটে জয়লাভ করে। আফ্রিকার এই জয়ের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে। তবে সত্যি ম্যাচটি বেশ উপভোগ করেছিলাম।
পাকিস্তানের কোন ব্যাটসম্যানই সেরকম ধরে খেলতে পারেনি। সেজন্য রানটা খুব একটা ভালো হয়নি। তবে তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং নিয়মিত উইকেট তুলে নেওয়ার জন্য ম্যাচটা বেশ দারুণ অবস্থানে যায়। একপর্যায়ে গিয়ে মনে হচ্ছিল কখনো সাউথ আফ্রিকা জিতবে আবার কখনো মনে হচ্ছিল পাকিস্তান জিতবে। শেষ দিকে একটা আম্পায়ারস কলে বেঁচে যায় সাউথ আফ্রিকা। এবং ম্যাচ হারার মাধ্যমে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের।