কৈশরের স্বপ্ন (প্রথম পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সুজন ও রাজিব এতিমখানার সামনের মাঠের এক কোণে বসে গল্প করছিলো। যদিও এই বিকালের সময়টা তাদের খেলাধুলা করার কথা। কিন্তু খেলাধুলার সরঞ্জামের অভাবে এতিমখানার বাদবাকি ছেলেদের মত তারাও দুজন বসে বসে গল্প করে। অনেকে অবশ্য সারা মাঠ ভরে দুষ্টুমি করে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু সুজন আর রাজিব তাদের মত এতটা দুষ্টু নয়। তারা দুজনেই কিছুটা শান্তশিষ্ট স্বভাবের। রাজীব সুজনের থেকে দু বছরের ছোট। রাজিব যখন প্রথম এতিমখানায় আসে তখন তার বয়স মাত্র চার বছর। সুজনের বয়স তখন ৬ বছর।

Polish_20230523_231439321.jpg

সুজন রাজীবের অনেক আগে থেকেই এতিমখানায় ছিলো। রাজিবের বাবা-মা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। পরে তার নিকট আত্মীয়রা কেউ তার দায়িত্ব নিতে না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার ঠাই হয় এতিমখানায়। আর সুজন জন্মের পর থেকেই এতিমখানায় রয়েছে। কারণ জন্মের পরপরই তাকে কে বা কারা এতিমখানার গেটের কাছে রেখে চলে গিয়েছিলো। তারপর থেকে এই এতিমখানায় তার ঘরবাড়ি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এতিমখানার অবস্থা খুবই খারাপ। জরাজীর্ণ একটি বিল্ডিং এ তাদেরকে থাকতে হয়। সেই বিল্ডিংয়ে বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানিতে ভরে যায়। বাথরুম গুলোর অবস্থাও শোচনীয়। তাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও একই রকম। তারপরেও যেহেতু তাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে এখানেই থাকতে হচ্ছে।

অবশ্য অনেক ছেলে পেলে এখান থেকে পালিয়ে চলে যায়। তাদের ভেতর কেউ কেউ অবশ্য ফিরে আসে আবার অনেকে আর কোনদিনই ফেরেনা। আর যাদের কপাল কিছুটা ভালো তাদেরকে অনেক নিঃসন্তান দম্পতি এসে এডোপ করে নিয়ে যায়। যারা এভাবে বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায় তাদের জীবনটা পাল্টে যায়। তারা আর কখনোই তাদের পুরনো এই স্থানে ফিরে আসে না। সুজন ও রাজিব স্বপ্ন দেখে তাদের জীবনও এক সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে। হয় কোন ধনী দম্পতি তাদেরকে নিয়ে যাবে অথবা এখান থেকে বের হয়ে তারা ভালো কোন কাজ করবে। সেই কাজ করে তারা জীবনে উন্নতি করবে।

তাদের লেখাপড়া খুবই সামান্য হয়েছে সরকারি। এই এতিমখানায় থাকা ছেলেদের সব রকমের সুবিধা দেয়ার কথা কাগজ কলমে সবই আছে সেই সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য টাকাও আসে। কিন্তু সেই টাকা দুর্নীতির কারণে আর সুজন রাজীবদের মতো এতিমদের পর্যন্ত পৌঁছায় না। কাগজে-কলমে বলা আছে এতিমখানার প্রত্যেকটি ছেলেকে লেখাপড়া শেখানো হবে। ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকবে তাদের জন্য সাথে কারিগরি কাজও শেখানো হবে। কিন্তু এই সমস্ত কথা শুধু খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এগুলোর কোন প্রয়োগ নেই।

এতিমখানার পরিবেশ খারাপ হওয়ার কারণেই কিছুদিন পরপর এখান থেকে বাচ্চারা পালিয়ে যায়। পালিয়ে গিয়ে সে সমস্ত বাচ্চা পথশিশু হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। তাদের ভেতর কেউ চুরি করে, কেউ ভিক্ষা করে, আবার কেউ টোকাইয়ের কাজ করে। তবে সুজন ও রাজিব ঠিক করে রেখেছে তারা এখান থেকে বের হয়ে কোন একটা জায়গায় আগে কাজ শিখবে। তারপর তারা সেই কাজ করতে শুরু করবে। এভাবে গল্প গুজব করতে করতে তাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে গেলো। ঘর বলতে এতিমখানার যে ঘরটাতে তারা থাকে সেই ঘরে। এতিমখানায় যে শুধু খাবারের মান খারাপ তা নয়। তাদেরকে রেগুলার খাবারও দেয়া হয় না। যখনই কোন সরকারি কর্মকর্তা ইনস্পেকশনের জন্য এতিমখানায় আসে। তারা আগে থেকেই সবাইকে শিখিয়ে দেয়া হয় সবাই যেন বলে সবকিছু ভালো চলছে। যদি কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে তার কপালে জোটে চরম শাস্তি। এতিমখানায় সুযোগ সুবিধা না থাকলে কি হবে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে প্রচুর। (চলবে)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 11 months ago 

এরকম এতিম খানা ভুরি খানিক পাওয়া যাবে। যেখানে আদর আর আপ্যায়নের বদলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। ভাইয়া কৈশরের স্বপ্ন গল্পটি পড়ে সুজনও রাজিব এর জন্য বেশ কষ্ট হচ্ছে। আসলে এ সমস্ত ছেলেরাই একসময় হয়ে যায় অবাঞ্চিত। এরা কেউ বা ভিক্ষা করে । কেউ আবার চুরি করে। বেশ সুন্দর লেখেছেন। আগামীর অপেক্ষায় রইলাম।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

আসলে ভাইয়া দুর্নীতি যেখানে আমাদের রগে রগে সেখানে এতিম বাচ্চারা কি আর ভালো খাবার পাবে ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারবে কখনোই না। আর এরাই এক সময় হয়ে ওঠে অনেক বড় সন্ত্রাসী অথবা ছেচরা চোর অথবা রাস্তাঘাটে পড়ে মরে থাকে, তাদের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। তবে সুজন ও রাজিব তারা শান্ত স্বভাবের হওয়াতে ভালো একটা সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। হয়তো তারা নিজেদের জীবনকে খুব বেশি ভালোবাসে বলেই এরকম একটি ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। গল্পটি পড়ে মনে হচ্ছে সামনে আরো ভালো কিছু জানতে পারবো। যাইহোক ভাইয়া পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 11 months ago 

আসলেই ভাইয়া এতিম বাচ্চাদের দেখলে মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগে। বেশিরভাগ মানুষ দিন দিন বিবেকহীন হয়ে যাচ্ছে। এতিম বাচ্চাদের নামে ডোনেশন উঠিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করা লোকের সংখ্যা অনেক। তাইতো এতিম বাচ্চারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া পায় না, পায় শুধু শাস্তি। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.11
JST 0.033
BTC 64207.05
ETH 3065.15
USDT 1.00
SBD 3.87