প্রকৃতির প্রতিশোধে বিপর্যস্ত জীবন।
গত কয়েকদিন ধরে গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্মরণকালের ভেতর সবচাইতে ভয়াবহ তাপদাহের কবলে পড়েছে পুরো দেশের মানুষ। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা চিন্তা করার চেষ্টা করছে তারা তাদের জীবনে কখনো এমন গরম দেখেছে কিনা। আমার নিজেরই তো মনে পড়ছে না এত গরম কখনো এর আগে দেখেছি কিনা। রোদের তেজ এতটাই প্রখর যে বাইরে গিয়ে পাঁচ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। মনে হয় যে গায়ের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। আর এই তীব্র তাপদাহের ফলে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে অথবা টেলিভিশনের নিউজ চ্যানেল ছাড়লেই দেখা যাচ্ছে কোনো না কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
দেশের প্রতিটা মানুষ যার যার মত করে এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। সবাই কাউকে না কাউকে দোষারোপ করছে। সাধারণত আমরা যেটা করে থাকি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি? আজকের এই পরিস্থিতির পেছনে আমাদের অবদান কতটুকু? আমার মতে দেশের সমস্ত মানুষ আজ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। দেশের সর্বোচ্চ স্তরের লোক থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরের সকলেই দায়ী আজকের এই অবস্থার জন্য। সবাই যার যার জায়গা থেকে প্রকৃতি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। সেজন্য প্রকৃতি আজ আমাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
আমার এখনো মনে পড়ে। যখন একেবারে ছোটবেলায় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলাম। তখন শহরে এসে খুব একটা খারাপ লাগেনি। কারণ শহরের যে এলাকাতে আমি ছিলাম। সেখানে আমার বাড়ির আশেপাশে প্রচুর গাছপালা ছিল। আমার বাড়ি থেকে এক দেড়শ গজের ভেতরে প্রায় চার-পাঁচটি পুকুর ছিল। আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে ছিল একটা জংলা মত জায়গা। যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর গাছপালা থাকার কারণে আমরা ছোটবেলায় সেখানে সহজে যেতাম না। আর বাড়ির আশেপাশে ছিল বেশ কয়েকটি খোলা জায়গা। যে সমস্ত জায়গায় আমরা খেলাধুলা করতাম।
আজ এসব কিছুই স্মৃতি। সবগুলো পুকুর ভরাট হয়ে গিয়েছে। আর সে সমস্ত জায়গায় গড়ে উঠেছে বড় বড় দালানকোঠা। এখন আর আগের মত প্রত্যেক বাড়িতেই গাছপালা নেই। দু একটি বাড়ি বাদে আজকাল সব বাড়ি হয়েছে ইট কাঠের জঙ্গল। এখনকার মানুষ বাড়ি করার সময় এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চায় না। এমন ভাবে বাড়ির ডিজাইন করে। যাতে সে তার পুরো জায়গাটা জুড়ে বাড়ি করতে পারে। অথচ প্রত্যেকটি মানুষ যদি কিছুটা জায়গা ছেড়ে বাড়ি করতো। সেই জায়গায় যদি কিছু গাছপালা লাগাতো। তাহলে আজকে আমাদের চারপাশের চেহারা হতো অন্যরকম।
একটা সময় ছিল যখন গরমের দিনে আমরা এলাকার ছেলেরা ছায়াঘেরা কোন জায়গায় বসে আড্ডা দিতাম। কিন্তু এখন আর তেমন কোন জায়গা এলাকায় অবশিষ্ট নেই। আমাদের এলাকার অবস্থান শহরের একেবারে মাঝা মাঝি হওয়ায় এখানে জায়গার দাম বেড়েছে অনেক বেশি। তাই সকলেই তার জায়গার সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহারের চেষ্টায় রত। আজকে আমরা যে প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ছি। এটা আমাদের কৃতকর্মের ফল। আজকে আমরা যদি প্রতিটি বাড়িতে কয়েকটি করে গাছ লাগাতাম। এলাকায় যদি পর্যাপ্ত জলাশয় থাকতো। তাহলে এতটা গরম অনুভূত হতো না।
শৈশবে আমরা যখন ইচ্ছা ফল গাছে উঠে ফল পেরে খেয়েছি। পুকুরে বা নদীতে গিয়ে ঝাপাঝাপি করেছি। কিন্তু আজকালকার জেনারেশনের জীবন কাটে তাদের ঘরের কোনে। তাদের জীবন আজ মোবাইল স্ক্রিন আর কম্পিউটার স্ক্রিনের ভেতর সীমাবদ্ধ। কারণ তাদের আসলে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আমাদের সময় যেমন অনেক খেলার মাঠ ছিল। এখন পুরো এলাকায় একটিও খেলার মাঠ নেই। সেজন্য বর্তমান সময়ে শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটছে। আজকাল শিশুদের এই সমস্যার জন্য আমরাই দায়ী। কারন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছি। তাদের নিঃশ্বাস নেয়ার মত কোন জায়গা অবশিষ্ট রাখিনি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ঠিক বলেছেন ভাই, ছোটবেলায় গ্রামের দিনগুলো এবং সময় গুলো অনেক ভালো কেটেছে, বর্তমানে গ্রামে গেলে কেমন যেন একটা শুন্যতা কাজ করে...
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া আমরা নিজ হাতে আমাদের প্রকৃতিকে নষ্ট করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা। আর সে কল কারখানা দিয়ে আমরা উত্তপ্ত করে দিচ্ছি আমাদের প্রকৃতিকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি আজ আমাদের সাথে এরকম বিরূপ আচরণ করছে। কিন্তু এর জন্য মূলত দায়ী আমরাই। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করা। খুবই সময়োপযোগী এবং বাস্তব সম্মত একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রকৃতি নীরব ভাবে আমাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আসলে প্রকৃতির এই ভয়ংকর রূপ আমাদের ভুলের জন্যই হয়েছে। আমরা গাছ কেটে একেবারে সাবার করে ফেলছি। উঁচু উঁচু দালানকোঠার কারণে আবহাওয়া দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে। আসলে ছোটবেলায় আমরা দেখতাম চারপাশে গাছে গাছে ভরা থাকতো। ফলের গাছ ফুলের গাছ দেখতে ভালো লাগতো। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যাচ্ছে। তাই তো গরম, অগ্নিকাণ্ড এসব ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। শান্তিতে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো জায়গা নেই অবশিষ্ট। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।