দীর্ঘ দিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কয়দিন ধরে বাইরে তেমন একটা ঘোরাফেরা করা হচ্ছে না। কারণ যে বন্ধুর সাথে সবসময় ঘোরাফেরা করতাম সে এখন জীবিকার প্রয়োজনে ফরিদপুর শহর ছেড়ে অনেক দূরে রয়েছে। সেজন্য ঘোরাফেরা এক রকমের প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে সেদিন বন্ধু রাসেল ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করল আমি কোথায়? রাসেল ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। আমি ওর ফোন পেয়ে কিছুটা অবাক হলাম। আমি উত্তর না দিয়ে ওকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম তুই এখন কোথায়? ও জানালো ছুটিতে ফরিদপুর এসেছে। সাথে সাথে আমি ওকে বললাম তাহলে চল বিকালে দুজন বের হই। পর মুহুর্তেই আমি ওকে জানালাম আজকে বের হতে আমার একটু সমস্যা আছে। তবে আগামীকাল বিকালে চল কোথাও আড্ডা দেই। ও সানন্দে রাজি হয়ে গেল।

IMG_20230304_174453.jpg

আমরা কলেজ লেভেল থেকেই ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা নামক একটি স্থানে আড্ডা দিতাম। কারণ আমাদের বেশিরভাগ বন্ধু বান্ধবের বাড়ি ওই একই এলাকায়। দীর্ঘ ১০-১৫ বছর আমরা সেখানে আড্ডা দিয়েছি। আমি আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম টেপাখোলা যাওয়ার জন্য। কারণ আমার কিছু বন্ধুবান্ধব কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়া থেকে ট্যুর শেষ করে ফিরেছে। ওদের কাছ থেকে ট্যুরের অভিজ্ঞতা শোনার জন্য আমি এমনিতেই টোপাখোলায় যেতে চেয়েছিলাম। সাথে বন্ধু রাসেলকে পেয়ে যাওয়ায় আরো ভালো হলো। মনে মনে চিন্তা করলাম ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শোনা হবে। সাথে জম্পেশ একটা আড্ডাও হবে।

IMG_20230304_174641.jpg

যাইহোক নির্ধারিত সময়ে আমরা দুই বন্ধু টেপাখোলায় উপস্থিত হলাম। তবে সেখানে যাওয়ার আগে বন্ধু প্রদীপের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম। পথেমধ্যে পেয়ে গেলাম বন্ধু রনিকে। চার বন্ধু একসাথে হওয়ায় আমার বেশ ভালো লাগছিল। কারণ এখন চার পাঁচ বন্ধু একসাথে জড়ো হওয়া বিশাল ব্যাপার। একটা সময় ছিল আমদের আড্ডা দেওয়ার সময় মিনিমাম ১৫ থেকে ২০ জন বন্ধুবান্ধব সেখানে থাকতো। কিন্তু আজকাল দিন এমন হয়েছে যে ৪-৫ জন বন্ধু একসাথে হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়। যাইহোক চার বন্ধু একসাথে হওয়ার পর আমার বেশ ভালো লাগতে লাগলো।

IMG_20230304_174445.jpg

অনেকদিন পর এভাবে চার বন্ধু একসাথে আড্ডা দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমরা একসাথে হওয়ার পর গুচ্ছগ্রামের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। গুচ্ছগ্রামের অবস্থান পদ্মা নদীর পাড়ের বেশ কাছাকাছি। আমরা যখনই আড্ডা দিই তখন বেশিরভাগ সময় গুচ্ছগ্রাম গিয়ে বসি। সেখানকার নিরিবিলি পরিবেশ আমাদের বেশ পছন্দের। তাছাড়া সেখানে একটি চায়ের দোকান আছে। যেখানে গরুর দুধের তৈরি চা পাওয়া যায়। যদিও আমি চা খুব একটা পছন্দ করি না। তবে আমার বাকি বন্ধুদের কাছে সেই দোকানের চা খুবই পছন্দের। এজন্য আমাদের বেশিরভাগ আড্ডার স্থান হয় গুচ্ছগ্রাম।

যাইহোক চার বন্ধু গল্প করতে করতে গুচ্ছগ্রামের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। একটা সময় ছিল যখন এই রাস্তাটা বেশ নিরিবিলি ছিলো। তবে এখন আর শহরের কোন রাস্তা নিরিবিলি নেই। ট্রাক নামক যন্ত্র দানবের অত্যাচার সব জায়গাতেই লক্ষ্য করা যায়। একটু পর পর আমাদের পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছিল ট্রাক। সেই সাথে উড়ছিল ধুলোর ঝড়। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে একসময় গুচ্ছগ্রামে পৌঁছে গেলাম। সেখানে একটি স্কুলের মাঠ আছে। সেখানে বসে চার বন্ধু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। তবে ঘুরে ফিরে আমরা বন্ধু প্রদীপের কাছ থেকে ইন্ডিয়া টুরের গল্প শুনতে চাচ্ছিলাম। ওর কাছ থেকে ট্যুর সংক্রান্ত খুঁটিনাটি সবকিছু জেনে নিলাম।

শেষ পর্যন্ত যখন ওর কাছ থেকে খরচের ব্যাপারটা জানলাম। তখন আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত অল্প টাকায় যে এতগুলো স্পট থেকে ঘুরে আসা যায় এটা আমি কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। ও জানালো সে বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিল। প্রায় সাত দিন ওরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। সাথে ফেরার সময় ও কিছু কেনাকাটাও করেছে। তারপরেও ওর পুরো টাকা খরচ হয়নি। তাছাড়া ওরা ইন্ডিয়া যাওয়ার অনেক আগে থেকেই কিভাবে রিজনেবল প্রাইসে ইন্ডিয়া থেকে ঘুরে আসা যায় সেটা নিয়ে অনেক বিচার বিশ্লেষণ করেছিল। যার ফলে ওদের খুব একটা বেশি টাকা খরচ হয়নি। অবশ্য যে কোন টুরিস্ট স্পটেই আপনি ইচ্ছা করলে অনেক টাকা খরচ করে থাকতে পারেন। আবার কম টাকাতেও সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে কম টাকায় ঘুরে আসবেন এমন স্পটের সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশে পর্যটকদের তুলনামূলক খরচ অনেক বেশি হয়।

যাই হোক ওর কাছ থেকে ট্যুর সংক্রান্ত সবকিছু শোনার পর আমার ইন্ডিয়ায় ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। অবশ্য আমাদের কথার এক ফাঁকে বন্ধু রনি জানালো ও দু-তিন দিনের ভেতরেই আরও তিন চার জনের সাথে কলকাতায় যাচ্ছে। আমার ভিসা করানো থাকলে হয়তো ওদের সাথে আমিও রওনা দিতাম। কিন্তু এখন আর সময় নেই। সেজন্য ওই চিন্তা আপাতত মাথা থেকে বের করে ফেললাম। চার বন্ধু মিলে গল্প করতে করতে কখন যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। মাগরিবের আজান কানে গেলে বুঝতে পারলাম যে সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গিয়েছে। ওদের বসিয়ে রেখে আমি নামাজ পড়তে গেলাম। আমি নামাজ পড়ে আসার পরে চা খেয়ে চার বন্ধু আবার টেপাখোলার দিকে ফিরতে লাগলাম। ফেরার সময় অবশ্য টেপাখোলা বাজার থেকে কিছু মাছ কিনেছিলাম। সেই গল্প অন্য আরেকদিন হবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানটেপাখোলা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

সত্যি দারুণ ভাই। এক সাথে বন্ধুরা এক হতে পেরেছেন। আসলেই একটা সময় অনেক বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দেওয়া হতো। দিন দিন সেটা কমে গিয়েছে। অনেকেই নানান কাজে ব্যস্ততায় পরে গিয়েছে। এভাবে আড্ডায় বন্ধুদের সংখ্যাও কমতে কমতে এক সময় নাই হয়ে যায়। তবে নেকদিন পর ৪ বন্ধু মিলে আড্ডা দিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। আর এতো কম টাকায় ৭ দিনের টুর কিভাবে সম্ভব ভাই। এ নিয়ে বিস্তারিত একটা পোস্ট করিয়েন পারলে। যেহেতু জেনেছেন। ভালো হবে।

 last year 

অনেক দিন পর চার বন্ধু মিলে আড্ডা দিয়েছেন।আসলে বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো খুবি সুন্দর হয়।আপনাদের আড্ডার মুহূর্তে গল্প পড়ে খুবি ভালো লেগেছে।

 last year 

এটা আসলেই ঠিক ভাই যার সঙ্গে সাধারণত ঘোরাঘুরি করি সে বাইরে চলে গেলে আর ঘোরাঘুরি হয়ে উঠে না। ট্রাকের নামটা আমার পছন্দ হয়েছে এবং একেবারে যুক্তিযুক্ত নাম এই যন্ত্রদানব। অনেক দিন পর সেই পুরানো বন্ধুরা মিলে সেই টেপাখোলায়। আমিও শুনেছি বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া ঘুরতে নাকী কম টাকা লাগে। যাইহোক ভাই সুন্দর ছিল আপনার বিকেলের সময় টা।

কিন্তু আজকাল দিন এমন হয়েছে যে ৪-৫ জন বন্ধু একসাথে হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়।

আমার কাছে অনেকটা তাই মনে হয়, এখন বন্ধুবান্ধবরা এবং আমি নিজেও এত ব্যস্ত হয়ে গেছি যে তাদের সাথে দেখা করার সময় পাইনা। তবে যখন দেখা হয় তখন জমিয়ে আড্ডা দেই।

আসলে আমরাও যখন ঘুরতে বেরোই তখন গ্রামের দিকেই যাই। কারণ শহর এলাকা ঘোরাঘুরি বা স্বাচ্ছন্দের সাথে কথা বলার জন্য পারফেক্ট জায়গা নয়। এ ক্ষেত্রে গ্রামের পরিবেশটাই আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়।

আর কুড়ি হাজার টাকায় ইন্ডিয়া ৭ দিনের ট্যুর তো অনেক কম বলেছে, আরো বেশি দিন ঘোরা যেত। আমি তো কয়দিন আগে একটা ট্যুর দিয়ে আসলাম সর্বমোট আমার ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে দুই দিনে।

 last year 

সত্যিই, এখনকার ব্যস্ত সময়ে এতগুলো বন্ধু জড়ো হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ঠিকই বলেছেন ভাইয়া।আপনারা সবাই মিলিত হয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন জেনে ভালো লাগলো ।গুচ্ছগ্রাম নামটি বেশ সুন্দর তো।তাছাড়া আমাদের ইন্ডিয়াতে ট্যুর করতে বেশি খরচ হয় না কারন ট্রেনের প্রচুর সুবিধা রয়েছে।কিন্তু ট্যুর স্পটে খরচ আছে।যাইহোক বন্ধুদের সঙ্গে দারুণ সময় পার করেছেন ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 64038.60
ETH 3148.89
USDT 1.00
SBD 3.97