কাজের প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার অভিজ্ঞতা।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ডাক্তারের চেম্বারের সামনে নোটিশ ঝুলছে। কপালটা এমনই খারাপ যে ডাক্তারের চেম্বার গতকালকেই বন্ধ ছিলো। যাইহোক কি আর করা এদিকে যেহেতু বাসায় রান্না বান্না করা হয়নি তাই আর বাসায় ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ পেয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রেস্টুরেন্টের যাওয়ার। আমি সবসময় বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ঠিক করে রাখি কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কি খাবো। তবে গতকাল সেটা করা হয়নি। পরবর্তীতে যখন ক্লিনিক থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দেবো তখন আমি আমার স্ত্রী আর মেয়েকে বললাম কি খাবে সেটা এখনই ঠিক করে নাও। কারণ যে ধরনের খাবার খাবো আমাদেরকে সেই ধরনের রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। আমার স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার। মেয়েও প্রথমে তার সাথে রাজি হয়েছিলো। কিন্তু রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার একটু আগে মেয়ে তার মত পরিবর্তন করে জানালো সে ফ্রাইড রাইস খাবে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই এক সমস্যা। ক্ষনে ক্ষণে তাদের মত পাল্টায়।
যাই হোক পরবর্তীতে আমি চিন্তা ভাবনা করতে লাগলাম যেহেতু দুইজন দুই রকম খাবার খেতে চাচ্ছে। তাই আমাকে এমন একটি রেস্টুরেন্টে যেতে হবে যেখানে এই দুই ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে স্টার কাবাব এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ সেখানে চাইনিজ খাবার যেমন পাওয়া যায় তেমনি ভালো মানের মাটন কাচ্চিও পাওয়া যায়। আমি অবশ্য এই দুই ধরনের খাবারই পছন্দ করি। কিন্তু আমার স্ত্রী যেহেতু মাটন কাচ্ছি খেতে চাচ্ছিলো তাই আমি ঠিক করলাম মেয়ের জন্য একটা চাইনিজ সেট মেনু অর্ডার করবো। আর আমাদের দুজনের জন্য মাটন কাচ্চি নেবো। যাইহোক সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে আমরা সেই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
যেহেতু আমাদের শহরটা ছোটো। তাই কোন জায়গায় যেতেই খুব একটা বেশি সময় লাগে না। রিক্সা করে মাত্র মিনিট দশকের ভেতরে আমরা সেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। যেহেতু কি খাবো সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। তাই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেই আমি সেই খাবারগুলোর অর্ডার করলাম। তখন ওয়েটার আমাকে জিজ্ঞেস করল স্যার সব খাবার কি একসাথে দেবো? তার প্রশ্ন করার একটা কারণ ছিলো। কারণ আমরা দুই রকমের খাবার অর্ডার করেছিলাম। চাইনিজ সেট মেনু পরিবেশন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু মাটন কাচ্চি তারা চার পাঁচ মিনিটের ভেতরে সার্ভ করতে পারবে। এই জন্য সে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি চিন্তা ভাবনা করে বললাম সব খাবার একসাথেই দিয়েন। কারণ আমরা দুজন খাওয়া শুরু করব আর মেয়ে তাকিয়ে দেখবে এটা তো হয় না। আমি অবশ্য আমার মেয়েকে বলেছিলাম এক কাজ করো তুমি আমাদের সাথে প্রথমে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়া শুরু করো। তারপর তোমার খাবার আসলে তুমি সেটা খাবে। কিন্তু সে রাজি হলো না।
যাইহোক আমি ওয়েটারকে বললাম সব খাবার একসাথে পরিবেশন করতে। মিনিট পনেরোর ভেতরে আমাদের সামনে চলে এলো খাবার গুলো। খাবার গুলো দেখতেও বেশ ভালো লাগছিলো। আমার মেয়ে জন্য যে চাইনিজ সেট মেনু অর্ডার করেছিলাম সেখানে ছিলো ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, চিকেন সিজলিং, চাইনিজ ভেজিটেবল। আর আমরা দুজন যে কাচ্চি প্লাটার অর্ডার করেছিলাম সেখানে ছিল চার পিস মাটন সহ পর্যাপ্ত পরিমাণে রাইস। আর সাথে দুটো জালি কাবাব। খাওয়া শুরু করার পর বুঝতে পারলাম আমাদের দুজনের জন্য অর্ডারটা বেশি হয়ে গিয়েছে। এটা আসলে আমাদের তিনজনের জন্য ঠিক ছিলো। কাচ্চির সবই ভালো ছিল তবে আমার স্ত্রী এক পিস মাংস পেলো যেটাতে একেবারে পিওর হাড্ডি ছিলো। পরে ওয়েটারকে ডেকে সেটা দেখাতে সে সেই মাংসের পিসটা নিয়ে গিয়ে নতুন আরেকটা মাংস এনে দিলো। অবশ্য সাথে দু পিস আলুও এনেছিলো। কারণ আমি ওয়টারকে বলেছিলাম কাচ্চির ভেতরে কোন আলু পাইনি। কাচ্চির আলু একটা দারুন মজার জিনিস। কাচ্চি বিরিয়ানির ভেতরে আলু না থাকলে মনে হয় যে কাচ্চি বিরানী খাওয়াটা ভালো হলো না। যাই হোক আমরা তিনজনে মিলে ধীরে সুস্থে খাওয়া-দাওয়া করছিলাম। কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত খাবার শেষ করতে পারিনি। আমি আর আমার স্ত্রীর খাওয়া শেষ করার পরেও রাইস প্রায় অর্ধেকটা রয়ে গিয়েছিলো। ওদিকে মেয়ের প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখি তারও একই অবস্থা। যেহেতু পেট ভরে গিয়েছিল সবারই সেই কারণে আর খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমরা বাড়ি চলে এলাম। এভাবে পরিবার নিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে সময় কাটাতে খাওয়া-দাওয়া করতে বেশ ভালই লাগে। এতে করে পরিবারের সবার মন ও ভালো থাকে। বর্তমান সময়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন বাইরে ঘোরাফেরা করতে বাইরের খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কিন্তু বিষয়গুলো এমন ছিলো না। আমরা বাইরে ঘুরতে যাওয়া মানে বুঝতাম কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। আর বাড়ির মহিলাদের রেস্টুরেন্টে খাওয়া হোতো হঠাৎ কালেভদ্রে। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় বাসাতেই বিভিন্ন পছন্দের জিনিস রান্না করে খাওয়া হতো। সময় পরিবর্তন হয়েছে সেই পরিবর্তনের সাথে আমাদেরকেও মানিয়ে চলতে হবে। যাই হোক ভালো এক দফা খাওয়া-দাওয়া করে সবাই উৎফুল্ল মনে বাড়িতে ফিরলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলেই ভাই ছোট বাচ্চারা ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। যাইহোক কাচ্চি বিরিয়ানি দেখতে বেশ লোভনীয় লাগছে ভাই। তবে কাচ্চি বিরিয়ানিতে পিউর হাড্ডি থাকলে বিরক্ত লাগে। এটা ঠিক যে কাচ্চি বিরিয়ানির আলু খেতে দারুণ লাগে। বর্তমানে অনেকেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্রায়ই খাওয়া দাওয়া করে এবং সেজন্যই রেস্টুরেন্টের সংখ্যা এতো বেশি। আসলেই সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলেই ঠিক বলেছেন। এখন রেস্টুরেন্টের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে মনে হচ্ছে কাস্টমারের থেকে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেশি হয়ে গিয়েছে। আর মানুষেরও রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। তার পরেও প্রতিদিন যেমন নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট চালু হচ্ছে তেমনি অনেক রেস্টুরেন্ট আবার বন্ধও হয়ে যাচ্ছে। আর কাচ্চি বিরিয়ানি টা খেতে আসলেই অনেক ভালো ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
ডাক্তার দেখাতে গিয়ে চেম্বার বন্ধ পেয়ে পরিবার নিয়ে খাবার খেতে গেলেন।মেয়ের জন্য ফ্রাইড রাইস আর আপনাদের জন্য মাটন কাচ্চি।ফটোগ্রাফিতে ও ভালো ই মনে হচ্ছে।তবে এটা ঠিক কাচ্চিতে আলু না থাকলে কাচ্চির মজাই নষ্ট হয়ে যায়। এতো পরিমান খাবার ছিল যে আপনারা কেউই খাবার শেষ করতে পারলেন না।এরপর খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে চলে গেলেন।অনুভূতি গুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।
আমিও ওয়েটারকে সেটাই বলেছিলাম। পরে ওয়েটার দু পিস আলু দিয়ে গিয়েছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে।