ভূমিদস্যুদের কবল থেকে জমি উদ্ধারের অভিযান।
আমি দেশ এবং দেশের বাইরের খবর রাখতে পছন্দ করি। সে কারণেই মাঝে মাঝে বিভিন্ন রকম খবর দেখি। একটা সময় ছিল যখন আমরা খবরের কাগজ পড়তাম খবরের জন্য। কিন্তু এখন তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আমাদেরকে আর খবরের কাগজ পড়তে হয় না। ফেসবুক অথবা ইউটিউব থেকেই আমরা সব ধরনের খবর পেয়ে যাই। দুদিন আগে হঠাৎ করে একটি খবরে চোখ আটকে গেলো। খবরটি ছিল বিআইডব্লিউটিএ সরকারি জায়গা উদ্ধারে নেমেছে। জায়গা উদ্ধার করতে নেমে তারা বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই স্থাপনা গুলির মালিকেরা চেষ্টা করছে বি আই ডব্লিউ টি এর কাজ বাধাগ্রস্ত করতে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি সরকার তার দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধারে বেশ তৎপর হয়েছে। অবশ্য মাঝে মাঝেই এই তৎপরতা কমে আসতে দেখছি। প্রথম প্রথম যখন সরকারি জায়গা উদ্ধারের এই তৎপরতা শুরু হয় তখন বেশ আশান্বিত হয়েছিলাম। মনে করেছিলাম এইবার মনে হয় সরকার তার হারিয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার করে সেগুলো মানুষের কাজে লাগাবে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের জলাশয়, খাল-বিল গুলো সব ভূমিদস্যরা দখল করে নিয়েছে। যার ফলে প্রতিবছরই ঢাকা শহরে বৃষ্টির পানি জমে বন্যার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া খাল বিল সব ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে আরো নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা শহরে যে খাল গুলো দিয়ে এক সময় নৌকায় মানুষ চলাফেরা করতো মালপত্র আনা নেয়া করতো সেই সমস্ত খাল বিলগুলো সব ভূমিদস্যরা দখল করে নিয়েছে। সেই সমস্ত জায়গা দখল করে তারা বিভিন্ন রকম কলকারখানা স্থাপন করেছে, কোথাও কোথাও তারা বস্তি বানিয়েছে, আবার কোথাও সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরি করেছে। আর এ সমস্ত কিছুই করেছে তারা অপরিকল্পিতভাবে। যার ফলে পুরো ঢাকা শহরের পরিবেশ এখন হুমকির সম্মুখীন। কয়েক বছর আগে বিআইডব্লিউটিএ তাদের এই জায়গা দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু করেছিলো। শুরুর দিকে অভিযানটা বেশ জোরদার হয়েছিলো। এই অভিযানের কারণে তখন বিপুল পরিমাণ জায়গা ভূমি দসুদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে এই উদ্ধার অভিযান তার গতি হারিয়ে ফেলে। এখানে অনেকেই সন্দেহ করছে যে হয়তো সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কারো স্বার্থে আঘাত হানছিলো এই অভিযান। যার ফলে হয়তো অভিযান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
আসলে এই যে জায়গা দখলের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এটা শুধু যে ভূমিদস্যরা একা করে সেটা নয়। এই জায়গা দখলের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের আর সাথে থাকে কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা। জায়গা দখলমুক্ত করার অভিযান যখন প্রথম শুরু হয়েছিল তখন চিন্তা করেছিলাম ঢাকার ভেতরের সেই নৌপথ গুলো আবার ফিরে আসবে। সেই খাল বিলগুলো দিয়ে আবার আগেকার মতো নৌকা চলাচল করবে। তাতে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের উপর থেকে চাপ কিছুটা হলেও কমবে। মানুষ অনেকেই নদীপথে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে এমন স্বপ্ন আমাদের দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আর সব প্রকল্পের মত এই প্রকল্পটিও আর শেষ হয়নি। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ভূমি দখলমুক্ত করার অভিযানটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু গত পরশুদিনের খবরটা দেখার পর আবার মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। মনে হচ্ছে হয়তো সেই অসমাপ্ত কাজ আবার শুরু হবে। ঢাকা শহরের দখল হয়ে যাওয়া খাল বিল জলাশয় গুলো উদ্ধার হওয়া অত্যন্ত জরুরী। এইসব জলাশয় দখল হয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকা শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। শহরের ভেতর একসময় সুপেয় পানির অনেকগুলো আধার ছিল। আজকে ঢাকা শহরের ভেতর হাতেগোনা দু-চারটে পুকুর ছাড়া আর কোন জলাশয় দেখা যায় না। অথচ এক সময় এই ঢাকা শহরে প্রচুর খাল বিল পুকুর এগুলি ছিল। এখন কোন জায়গায় দুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিসের পানির জন্য সমস্যা হয়ে যায়। কিছুদিন আগে বঙ্গ বাজারে যখন আগুন লেগেছিলোধ তখন পাশের একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবস্থিত সরকারি পুকুর থেকে ফায়ার সার্ভিস পানি নিয়েছিল আগুন নেভানোর জন্য। কিন্তু এই সুবিধা এখন ঢাকা শহরের বেশিরভাগ জায়গাতেই নেই। ঢাকা শহরের মত একটি শহরে এই ধরনের জলাশয়গুলো যে মানুষের জন্য কতোটা জরুরি এটা হয়তো আমরা চিন্তাও করতে পারছি না।
তবে যখন এই ধরনের বিপদে সম্মুখীন হয় মানুষ তখন তারা এই জলাশয় গুলোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। সরকারের উচিত তার দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে সেগুলিতে আগের মত খাল বিল জলাশয় তৈরি করা এবং পুরো ঢাকা শহরে একটি পানিপথের নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যাতে ঢাকা শহরের রাস্তার উপর থেকে যানবাহনের এবং মানুষের চাপ অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া মানুষ পানিপথ দিয়ে চলাফেরা করতে বেশ পছন্দও করে। কারণ সেখানে কোন জ্যাম থাকে না। যেমন হাতিরঝিল প্রকল্পের যে ওয়াটার বাস সার্ভিস আছে এটা মানুষজনের কাছে খুবই পছন্দের। এই এলাকার অনেক মানুষই তাদের গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য এই ওয়াটার বাস সার্ভিস ব্যবহার করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ঢাকা শহরের খাল গুলো যদি পুনরায় উদ্ধার করা সম্ভব হয় আর সেখানে যদি এমন ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা যায়। তাহলে তাহলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। এখন দেখা যাক যাদের এটা নিয়ে চিন্তা করার কথা তারা চিন্তা করে কিনা?
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া, বর্তমানে দেশের অনেক জায়গায় সরকারি জমিগুলো অনেকেই গায়ের জোরে কিংবা ক্ষমতা দেখিয়ে দখল করে ভোগ করছে। সরকার যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে খুব সহজেই দখলে চলে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। তাই আমি মনে করি সরকারের উচিত, সারা বাংলাদেশে দখল করা সরকারি জমিগুলো পুনরুদ্ধার করে যথার্থভাবে কাজে লাগানো।