বিশেষ দিনে পরিবারের সাথে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার অভিজ্ঞতা।
পারিবারিক একটা বিশেষ দিন উপলক্ষে আজ আমার পরিবার নিয়ে বাইরে খাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। কয়েকদিন আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আজকের দুপুরের খাওয়াটা আমরা বাইরে কোন রেস্টুরেন্টে খাবো। কোন রেস্টুরেন্টে খাব সেটা নিয়ে আমাদের ভেতর কিছু কথাবার্তা হয়েছিলো। পরে আমরা ঠিক করেছিলাম নতুন কোন একটা রেস্টুরেন্টে যেতে হবে যেখানে এখন পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তারপর আমি আমার পরিবারের সবাইকে প্রস্তাব দিলাম রিভেরা নামের একটি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য। তারা সবাই সানন্দে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো। এই রেস্টুরেন্টটির ফেসবুকে আমি অনেক রিভিউ দেখেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে যাওয়া হয়নি। যাইহোক পরিকল্পনা ছিল দুপুরে জোহরের নামাজের পরে আমরা সেই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেব।
তবে এদিকে আজকে আবার বাংলাদেশ ইংল্যান্ড এর মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ চলছিল। আমি আবার খেলা পাগল মানুষ। বাংলাদেশের খেলা আমি পারত পক্ষে মিস দিই না। তারপরেও কি আর করা যেহেতু আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে যে আজ বাইরে খাবো। তাই বাসায় কোন কিছু রান্নাও করা হয়নি। সেজন্য আমি জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে তৈরি হতে লাগলাম। সাথে আমার স্ত্রী এবং কন্যাও তৈরি হতে লাগলো। তবে আপনারা তো জানেন মেয়ে মানুষের তৈরি হতে সময় কিছুটা বেশি লাগে। তাই আমাদের বাসা থেকে বের হতে হতে প্রায় বেলা আড়াইটা বেজে গেল। ততক্ষণে পেটের ভিতর ছুঁচোর নাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি এই ধরনের রেস্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার করলে সেই খাবার টেবিলে পৌঁছাতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। কারণ এই সমস্ত রেস্টুরেন্টে অর্ডার দেয়ার পর খাবার প্রস্তুত করা হয়।
যাইহোক আমরা বাসা থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুপুরের সময়টাতে রিক্সা একটু কম পাওয়া যায়। তাই বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি রিকশা পেলাম। তারপর সে রিক্সায় উঠে আমরা রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতে অবশ্য কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কারণ আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম সে রাস্তাটি নির্মাণ কাজের জন্য বন্ধ করে রাখা। তাই আমাদের বেশ খানিকটা ঘুরে তারপর সেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতে হয়েছে। যাওয়ার পথে আমার স্ত্রী কিছুটা সংশয় প্রকাশ করে বলছিলো যে নতুন রেস্টুরেন্টের খাবার কেমন হবে কে জানে। আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম এই রেস্টুরেন্টের রিভিউ ভালো দেখেছি। আশা করি তাদের খাবারের মানও ভালো হবে।
এই রেস্টুরেন্টটি মূলত একটি নদীর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে। ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর নামক এলাকায় একটি ব্রিজের শেষ মাথায় এই রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। রেস্টুরেন্টটির পাশ দিয়ে নদী বয়ে গিয়েছে। পাশে নদী থাকলেও এখন শুকনো মৌসুম হওয়ায় নদীতে পানি নেই বললেই চলে। তবে বর্ষা মৌসুমে এই রেস্টুরেন্টটি আসলেই সময় কাটানোর মতো একটি চমৎকার স্থান হবে। রেস্টুরেন্টে পৌঁছে আমাদের মোটামুটি ভালই লাগলো। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টের একটি পাশের ভিউটা ছিল চমৎকার। সেখান থেকে পাশের নদীটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।
আমরা সেখানে পৌঁছেই কিছুক্ষণ পর পরিকল্পনা করে ফেললাম বর্ষা মৌসুমে একবার এই রেস্টুরেন্টে আসতে হবে। যাইহোক রেস্টুরেন্টে পৌঁছে আমরা মেনু কার্ড দেখে খাবারের অর্ডার করলাম। অর্ডার করেছিলাম থাই সুপ, চিকেন সিজলিং, আর তিনটি সেট মেনু। সেই সেট মেনুতে ছিল ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, চাইনিজ ভেজিটেবল, কলস্লো সালাদ, আর সাথে একটা সস। আর সাথে আমরা বাড়তি ড্রিংকস এর অর্ডার করেছিলাম। অর্ডার করার পর ওয়েটারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম খাবার পরিবেশন করতে কত সময় লাগবে। সে আমাদেরকে জানালো ৩০ মিনিট মতো সময় লাগবে। এতটা সময় লাগবে শুনে তো খিদে আরো বেড়ে গেলো। যাইহোক ওয়েটারকে বললাম চেষ্টা করবেন খাবারটা একটু তাড়াতাড়ি পরিবেশন করতে।
খাবার অর্ডার করে আমরা রেস্টুরেন্টের টেলিভিশনে খেলা দেখছিলাম। তবে বেলা অনেক হয়ে যাওয়ায় পেটের খিদেটা বার বার জানান দিচ্ছিল। এদিকে ওয়েটার ৩০ মিনিটের কথা বললেও ৪০ মিনিট পার হয়ে গেলেও দেখি খাবার পরিবেশন করার কোন নাম নেই। তখন ওয়েটারকে একটু তাড়া দিলাম। তার কিছুক্ষণ পর সে আমাদের টেবিলে একটি ডিস সার্ভ করল। কিন্তু সেই ডিস দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ আমরা অর্ডার করেছিলাম চিকেন সিজলিং। কিন্তু সেই ওয়েটার টেবিলে দিয়ে গিয়েছে সিজলিং চাওমিন। আমি রেস্টুরেন্টের একাউন্টসে বসে থাকা লোককে ব্যাপারটা জানালাম। তারপর তাকে ডেকে দেখলাম যে আমি অর্ডার করেছি একটি খাবার কিন্তু তারা টেবিলে দিয়ে গেছে অন্য খাবার। কাউন্টারে বসা লোকটি ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তারপর ওয়েটার এসে আমাদের টেবিল থেকে চাওমিন নিয়ে গেল। তার কিছুক্ষণ পর সে এসে জানালো সিজলিং হতে তো এখনো অনেকটা দেরি হবে। আপনাদের খাবার প্রায় রেডি হয়ে গিয়েছে এখন কি করব? তখন আমি আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে তাকে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে যেহেতু আপনি ভুল করেই ফেলেছেন। তাই সেই সিজলিং চাউমিনটাই টেবিলে দিয়ে যান। আমরা ওটাই খেতে থাকি। আপাতত কোন কিছু দিয়ে পেট তো ঠান্ডা হোক। এই কথাটি বলায় ওয়েটার খুশি হয়ে গেলো। সে দ্রুত গিয়ে সেই সিজলিং চাউমিন আমাদের টেবিলে দিয়ে গেলো।
যদিও আমরা খাবারটি অর্ডার করি নাই। কিন্তু খাবারটি দেখে মনে হয়েছিল খেতে বেশ মজা হবে। খাবারটি যখন প্লেটে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। তখন বুঝতে পারলাম খাবারটি আসলেই অনেক মজার। যাই হোক আমরা সেই চাওমিন খাওয়া শেষ হলে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যদিও ওইটার আরো বেশ কিছুক্ষণ আগে আমাদেরকে জানিয়েছিল যে আমাদের খাবার রেডি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও তারা খাবার পরিবেশন করতে দেরি করছিল। পরবর্তীতে ওয়েটারকে ডেকে যখন আবার জিজ্ঞেস করলাম। তখন তারা বলল তাদের কিছু সামগ্রী ফুরিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো বাজার থেকে আনতে একটু দেরি হয়েছে। এই জন্য খাবার পরিবেশন করতে দেরি হচ্ছে।
যাইহোক তার অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই আমাদের টেবিলে তারা থাই স্যুপ দিয়ে গেলো। আমরা ধীরেসস্থে খেতে লাগলাম। খাবার মুখে দিয়েই আমার স্ত্রী বুঝতে পারল যে এদের খাবারের স্বাদ মোটেই খারাপ না। বরং বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টের থেকে এদের খাবারের স্বাদ ভালো। আমরা দুজনেই খাবারের স্বাদের ব্যাপারে একমত হলাম। আর প্রথমে অনেকটা চাওমিন খেয়ে নেয়াতে আমাদের পেট কিছুটা ভরে গিয়েছিল। তাই পরবর্তী খাবারগুলি শেষ করতে আমাদের বেশ কষ্ট হয়েছে। যদিও আমার মেয়ে চাওমিন আর থাই সুপ খাওয়ার পরে সে আর তার বাকি খাবার খেতে পারেনি। তখন আমরা ওয়েটারকে তার খাবারটা পার্সেল করে দিতে বললাম। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তড়িঘড়ি করে বিল মিটিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কারণ এদিকে বেলা প্রায় সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছে।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | চর কমলাপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শুনে ভালো লাগলো আপনিও ক্রিকেট খেলা ভক্ত! আমিও কিন্তু বাংলাদেশের খেলা হলে তো সবকিছু বাদ দিয়ে দেই! যদিও আজকে বাংলাদেশ হেরেছে 🙂। যাক, ফরিদপুরে ব্রিজের পাশে রিভেরা রেস্টুরেন্ট টি আসলেই দারুণ। কিন্তু এতো লেইট করে খাবার সার্ভ করে। আমি হলে চলে আসতাম । এতোক্ষণ বসে থাকার ধৈর্য নেই। আশ্চর্য হলাম যে আপনারা অর্ডার দিয়েছেন চিকেন সিজলিং আর দিল দিল চিকেন চাউমিন! এমন কেন হয় রেস্টুরেন্ট এ 😐
নদীর পাড়ে রেস্টুরেন্ট গুলো আসলেই বর্ষার সময় বেশি সুন্দর লাগে। তাছাড়া রেস্টুরেন্টের সৌন্দর্য টা বিদেশি রেস্টুরেন্টের মতো,ডেকোরেশ বেশ ভালো লেগেছে। আবার খাবার গুলো তো বেশ লোভনীয় মনে হচ্ছে। আবার ভাবী বুঝতে পেরেছে খাবারের টেষ্ট ভালো। সত্যি বলতে রেস্টুরেন্ট টা থেকে ঘুরে আসার ইচ্ছা জেগেছে।
খেলার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ নেই তাই জানিও না যে কবে কোন দলের খেলা হচ্ছে। কাল যে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের খেলা ছিল এটা আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম। আর নদীর পাড়ের ভিউ দেখতে দেখতে রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে খাবার সার্ভ করতে করতে ৩০-৪০ মিনিট লাগিয়ে দিয়েছে, তারপর আবার শেষে এসে ভুল খাবার দিয়ে গেল। হা হা হা... যাই হোক বেশ ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে রূপক ভাই।
ভাইয়া আমিও খুবই ক্রিকেট ভক্তের জন্য মানুষ। নিজ দেশের ক্রিকেট খেলা দেখতে খুবই ভালো লাগে আমার।রিভেরা রেস্টুরেন্টে দেখতে খুবই উন্নত মানের মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন বিদেশি কোন একটা রেস্টুরেন্ট। তবে ভাইয়া খাবার পরিবেশন করার ক্ষেত্রে দেরি করা এবং একটি খাবার চাইলেন কিন্তু দিল অন্যরকম খাবার এটা কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগলো না।